তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলকের পাঁচটি পরিকল্পনা সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলকের কার্যাবলি মূল্যায়ন করতে পারবেন।

মূখ্য শব্দ কারাউনা তুির্ক, উলুঘ খান, আমির-ই-আখুর, আমির-ই-কোহী ও দিওয়ান-ই-কোহী
[
প্রেক্ষাপট
১৩১৬ খ্রিস্টাব্দের ২ জানুয়ারি সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মৃত্যুর পর ‘মালিক তাজ-উল-মালিক কাফুরী’
উপাধি প্রাপ্ত এবং ‘হাজার দিনারী’ খ্যাত প্রধানমন্ত্রী মালিক কাফুর সুলতানের পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুপুত্র
শিহাবউদ্দিন ওমরকে দিল্লির মসনদে বসান এবং নিজে তাঁর অভিভাবক নিযুক্ত হন। তিনি সুলতানের অপর দুই পুত্র খিজির
খান ও সাদী খানের চক্ষু উৎপাটন করে তাদেরকে কারারুদ্ধ করেন এবং আলাউদ্দিনের বিধবা স্ত্রীকে জোরপূর্বক বিবাহ
করেন। কিন্তু মালিক কাফুরের স্বৈরাচারী শাসন সকল সীমা অতিক্রম করলে অভিজাত শ্রেণির বিশেষ সহায়তায় সুলতানের
দেহরক্ষীরা ৩৬ দিন পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর সুলতান আলাউদ্দিন খলজির তৃতীয় পুত্র মুবারক
‘কুতুবউদ্দিন মুবারক শাহ’ উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু মুবারক শাহ ছিলেন অলস, অকর্মণ্য
ও ভোগবিলাসী। তিনি বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে রাজ্যের সমস্ত শাসনভার দাক্ষিণাত্যের শাসন কর্তা খসরু খানের
উপর ন্যস্ত করেন। এমনকি তিনি পিতা আলাউদ্দিন খলজির শাসন ব্যবস্থার কঠোর নীতি শিথিল করেন। তিনি অনেক
আইন কানুন বাতিল করে উদারতার পরিচয় প্রদানে সচেষ্ট হন। তিনি ‘খলিফা’ উপাধিও ধারণ করেন। এমতাবস্থায়
সাম্রাজ্যের সর্বত্র অরাজক পরিস্থিতির সুযোগে খসরু খান মুবারক শাহকে হত্যা করে দিল্লির মসনদে আরোহণ করেন। তিনি
নাসিরউদ্দিন খসরু শাহ উপাধি ধারণ করেন। সমসাময়িককালের মুসলিম ঐতিহাসিকগণ খসরু শাহের শাসনকালকে
সন্ত্রাসের রাজত্ব বলে চিহ্নিত করেছেন।
খসরু খানের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে দিল্লির অভিজাত আমির উমারাহগণ পাঞ্জাবের অন্তর্গত দীপালপুরের শাসক গাজী
মালিককে দিল্লির মসনদ দখলের জন্য আহŸান করেন। ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে গাজি মালিক দিল্লির উপকণ্ঠে সংঘটিত এক
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে খসরু খানকে পরাজিত ও নিহত করেন। গাজী মালিক গিয়াসউদ্দিন তুঘলক উপাধি ধারণ করে ১৩২০
খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে উপবেশন করেন। তিনি ছিলেন তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তুঘলক বংশকে ‘কারাউনা তুর্কি’
বংশ নামেও অভিহিত করা হয়। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক, মুহম্মদ বিন তুঘলক এবং ফিরোজশাহ তুঘলক ছিলেন এই বংশের
তিনজন শ্রেষ্ঠ সুলতান। ১৩২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই বংশের সর্বমোট ৯জন শাসক প্রায় ৯৩ বছর যাবৎ
ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেন।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন তুঘলক (১৩২০-১৩২৫খ্রি.)
গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের বাল্য নাম ছিল গাজী তুঘলক। তিনি ছিলেন কারাউনা তুর্কি গোষ্ঠীর অন্তর্গত। গিয়াস উদ্দিন
তুঘলকের পরিবার সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের শাসনামলে দিল্লিতে আসেন। তার পিতা বলবনের অধীনে একজন তুর্কি
দাস হিসেবে নিযুক্ত হন এবং পাঞ্জাবের এক জাঠ রমণীকে বিবাহ করেন। গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের ধমনীতে তাই তুর্কি ও
রাজপুত রক্তের যৌথ উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণকারী গিয়াসউদ্দিন তুঘলক একজন সাধারণ সৈনিক
হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও স্বীয় মেধা, প্রতিভা, দৃঢ় মনোবল এবং প্রবল আত্মবিশ্বাসের গুণে সুলতান আলাউদ্দিন
খলজির অধীনে ‘সেনাবাহিনীর প্রধান রক্ষক’ পদে নিযুক্ত হন। ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তাঁকে পাঞ্জাবের
অন্তর্গত দীপালপুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এসময় উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে প্রায় ২৯ বার মোঙ্গল আক্রমণ মোকাবিলা
করে তিনি সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মন:তুষ্টি অর্জন করেন। এতে খুশি হয়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিনকে ‘মালিক উল
গাজি’ বা ‘গাজি মালিক’ উপাধি প্রদান করে। ১৩২০ খ্রিস্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর নাসিরউদ্দিন খসরু শাহকে পরাজিত ও নিহত করেন। গাজী মালিক সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক উপাধি ধারণ করে ভারতীয় উপমহাদেশে তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠা
করেন। ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে দিল্লির ছয় মাইল অদূরে আফগানপুর নামক স্থানে তোরণ ধ্বংসের কারণে সুলতান
গিয়াসউদ্দিন তুঘলক মৃত্যুবরণ করেন।
মুহম্মদ বিন তুঘলক (১৩২৫-১৩৫১ খ্রি.)ঃ
মুহম্মদ বিন তুঘলকের ঘটনাবহুল রাজত্বকাল
তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের জ্যেষ্ঠপুত্র ফখরুদ্দিন মুহম্মদ জুনা খান বাল্যকালে সামরিক ও
বেসামরিক উভয় শিক্ষায় শিক্ষিত হন। একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। খলজি বংশের
শাসনামলে সুলতান নাসির উদ্দিন খসরু শাহ জুনা খানকে ‘আমির-ই-আখুর’ তথা রাজকীয় অশ্বশালার তত্ত¡াবধায়ক নিযুক্ত
করেন। তুঘলক বংশ প্রতিষ্ঠায় জুনা খান পিতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলককে সহায়তা করেন। সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক পুত্র
জুনা খানকে ‘উলুঘ খান’ উপাধি প্রদান করে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে জুনা খান মুহম্মদ
বিন তুঘলক উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬
বছর মুহম্মদ বিন তুঘলক দিল্লির সুলতান হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
মুহম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক গৃহীত পাঁচটি পরিকল্পনা হলো১. দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর (১৩২৬-১৩২৭খ্রি.);
২. খোরাসান অভিযান (১৩২৭-১৩২৮ খ্রি.);
৩. প্রতীক তাম্র মুদ্রা প্রচলন (১৩২৯-১৩৩০ খ্রি.);
৪. কারাচিল অভিযান (১৩৩২-১৩৩৩ খ্রি.)এবং
৫. দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি (১৩৩৪ খ্রি.)।
১. দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর (১৩২৬-১৩২৭ খ্রি.)
কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ক্রমাগত মোঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কা, দাক্ষিণাত্যের ধন-দৌলত,
মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার এবং সর্বোপরি সাম্রাজ্যের মধ্যস্থলে অবস্থানের কারণে ১৩২৬-২৭ খ্রি. সুলতান মুহম্মদ
বিন তুঘলক দিল্লি হতে ৭০০ মাইল দূরে অবস্থিত দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। দেবগিরির নতুন নামকরণ করেন
দৌলতাবাদ। প্রায় ৮ বছর দৌলতাবাদে অবস্থানের পর সুলতান সবাইকে নিয়ে পুনরায় দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করেন। ফলে
সুলতানের রাজধানী স্থানান্তর পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
২. খোরাসান অভিযান (১৩২৭-১৩২৮ খ্রি.)
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির ন্যায় সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলকও ছিলেন একজন উচ্চাভিলাষী ও সাম্রাজ্যবাদী শাসক।
মুহম্মদ বিন তুঘলকের সমসাময়িক পারস্যের ইলখানি শাসক ছিলেন আবু সাঈদ। ১৩২৭-১৩২৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মুহম্মদ
বিন তুঘলক বিভিন্ন কারণে খোরাসান অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে সুলতানের দরবারে আশ্রয়প্রাপ্ত
কতিপয় বিদ্রোহী আমিরের প্ররোচনা, ট্রান্সঅক্সিয়ানার মোঙ্গল শাসক তারমাশিরিন এবং মিসরের মামলুক সুলতান আল
নাসিরের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস এবং ইলখানি শাসক আবু সাঈদের দুর্বলতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। খোরাসান
অভিযানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সুলতান ৩,৭০,০০০ সৈন্যের এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং পূর্ণ
এক বছর তাদের বেতন ভাতাদি প্রদান করেন। কিন্তু মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, উপযুক্ত সামরিক শক্তির
অভাব, ভৌগোলিক অসুবিধা, ট্রান্সঅক্সিয়ানার তারমাশিরিনের ক্ষমতাচ্যুতি, মিসরের সুলতান আল-নাসির ও ইলখানি
সুলতান আবু সাঈদের মধ্যে সুস্পর্ক স্থাপন এবং সর্বোপরি হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথে সৈন্য প্রেরণের অসুবিধা প্রভৃতি
কারণে সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক খোরাসান অভিযান পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হন।
৩. প্রতীক তাম্র মুদ্রা প্রচলন (১৩২৯-১৩৩০খ্রি.)
বিশাল সেনাবাহিনীর ব্যয় সংকুলান, সুলতানের দানশীলতা, শাসনকার্যে অত্যাধিক ব্যয়, দোয়াব অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ, উত্তরপশ্চিম সীমান্তে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতকরণ, রাজ্য বিজয় পরিকল্পনা, দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তরজনিত ব্যয়ভার
প্রভৃতি কারণে রাজকোষে আর্থিক সংকট দেখা দিলে ১৩২৯-১৩৩০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক পরীক্ষামূলক
পদক্ষেপ হিসেবে প্রতীক তাম্র-মুদ্রা প্রর্বতন করেন। সুলতান ২০০ গ্রেনের স্বর্ণমুদ্রা (দিনার) এবং ১৪০ গ্রেনের রৌপ্যমুদ্রার
(আদালী) প্রবর্তন করেন। এডওয়ার্ড থমাস সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলককে ‘চৎরহপব ড়ভ গড়হবুবৎং’ বা ‘মুদ্রা প্রবর্তকদের
রাজকুমার’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুলতানের এই পরিকল্পনাও বিফলতায় পর্যবসিত হয়।
৪. কারাচিল অভিযান (১৩৩২ খ্রি. ১৩৩৩ খ্রি.)
চীন ও হিন্দুস্থানের মধ্যবর্তী হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত
কারাচিল ছিল একটি অন্যতম শক্তিশালী হিন্দু রাজ্য। কারাচিল
কারাজল বা কুর্মাচল নামেও পরিচিত ছিল। সাম্রাজ্যের উত্তর
সীমান্তে অবস্থিত কারাচিল রাজ্যটি ছিল দিল্লি সালতানাতের জন্য
হুমকিস্বরূপ। ১৩৩২-১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মুহম্মদ বিন
তুঘলক খসরু মালিকের নেতৃত্বে কারাচিলে এক বিশাল সামরিক
অভিযান প্রেরণ করেন। উল্লেখ্য কারাচিলে পাহাড়ি অঞ্চলে
বসবাসরত স্থানীয় গোত্রগুলো প্রায় সময় উত্তর দিক থেকে
সুলতানি সাম্রাজ্য আক্রমণ করে এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নানা
প্রকার উপদ্রব সৃষ্টি করে সুলতানকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখত।
সুলতান কর্তৃক প্রেরিত খসরু মালিকের নেতৃত্বে পরিচালিত
রাজকীয় বাহিনী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও পার্বত্য
সর্দাররা সন্ধি স্বাক্ষর করে বাৎসরিক কর প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়।
৫. দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি (১৩৩৪খ্রি.)
গঙ্গা-যমুনার মধ্যবর্তী উর্বর ভূমি দোয়াব অঞ্চল নামে পরিচিত
ছিল। রাজধানী স্থানান্তর, খোরাসান ও কারাচিল অভিযান এবং
তাম্র মুদ্রা প্রচলন প্রভৃতি পরিকল্পনা ব্যর্থতার ফলে শূন্য রাজকোষ পূর্ণ করার মানসে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দিল্লি
সালতানাতের ‘শস্যভান্ডার’ নামে পরিচিত উর্বর দোয়াব অঞ্চলে সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক ১৩৩৪ খ্রিস্টাব্দে কর বৃদ্ধির
নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এসময় অনাবৃষ্টিজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়
দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক জনগণের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে মুক্ত হস্তে অর্থ সাহায্য প্রদান
করেন, কূপ খনন এবং সরকারি লঙ্গরখানা স্থাপন করে দৈনিক ৫০০ ক্ষুধার্ত লোককে খাদ্য সরবরাহ করেন। তথাপি
দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা দূরীভূত হতে অনেক সময় লেগে যায়। প্রজাসাধারণ প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে। রায়তরা কৃষিকাজ
পরিত্যাগ করে বনে জঙ্গলে পলায়ন করে। কেউ কেউ দস্যুতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক
শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন। এভাবে সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক গৃহীত পাঁচটি পরিকল্পনা নানাবিধ কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
বিভিন্ন প্রদেশে বিদ্রোহ
মুহম্মদ বিন তুঘলকের পঞ্চ পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ক্রমাগত দূরাবস্থার প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন
স্থানে বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে মেবারের সৈয়দ জালাল উদ্দিন এবং ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলার
শাসক ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যার শাসনকর্তা আইন-উল-মুলক বিদ্রোহ
ঘোষণা করলে সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক তাকে বন্দি করেন। ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ লখনৌতির
সিংহাসন দখল করে সাতগাঁও অধিকার করেন। ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে দৌলতাবাদে বিদেশী আমিরগণ সুলতানের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সুলতান এ বিদ্রোহ দমন করলেও হাসান নামক জনৈক আমির ‘আবুল মুজাফফর বাহমান শাহ’
উপাধি ধারণ করে দৌলতাবাদে স্বাধীন বাহমনী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দাক্ষিণাত্যের হিন্দুগণ হরিহর ও বুক্কা রাওয়ের
নেতৃত্বে বিজয়নগর রাজ্যের গোড়াপওন করেন। সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক সিন্ধুর থাট্টায় বিদ্রোহ দমনরত অবস্থায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
চরিত্র ও কৃতিত্ব
সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় চরিত্রের অধিকারী। প্রতিভাধর ও অনন্য সাধারণ
চরিত্রের অধিকারী সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী শক্তি সম্পন্ন। তিনি শুধু একজন
উচ্চাভিলাষী শাসকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিদ্বান ও সুপন্ডিত। দর্শন জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, তর্কশাস্ত্র জীববিজ্ঞান,
ভাষাতত্ত¡, ধর্মশাস্ত্র এবং চিকিৎসা শাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে সুলতান ছিলেন বিশেষভাবে অভিজ্ঞ। তিনি ছিলেন একাধারে একজন
সুবক্তা, সুলেখক, কবি এবং লিপিবিদ্যায় পারদর্শী। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে তিনি বিশেষ পাÐিত্য অর্জন করেন। নিজ ধর্মে
তুঘলক বংশের সা¤্রাজ্য সীমা
প্রবল বিশ্বাস থাকলেও তিনি ছিলেন পরধর্মসহিষ্ণু। তার শাসনামলে হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকেরা রাজকীয় উচ্চপদে নিয়োগ
লাভ করে। কৃষক ও কৃষিকাজের উন্নতি সাধনের জন্য সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক ‘দিওয়ান-ই-কোহী’ নামক একটি স্বতন্ত্র
বিভাগ স্থাপন করে ‘আমির-ই-কোহী’র নিকট এর তত্ত¡াবধানের ভার অর্পণ করেন। এই বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে
‘তাকাভি’ ঋণ প্রদান করা হত। জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য সুলতান অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল এবং রাস্তাঘাট
নির্মাণ করেন। সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। অপরাধী উচ্চ বংশীয় কিংবা শাসক
পরিবারের অন্তর্গত হলেও তাকে শাস্তি দিতে কোনরূপ অনুকম্পা প্রদর্শন করা হতো না।
সারসংক্ষেপ :
‘কারাউনা তুর্কি’ বংশোদ্ভূত গাজী মালিক (গিয়াসউদ্দিন তুঘলক) ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ঘটনাবহুল রাজত্বকালে দিল্লি
থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর, খোরাসান অভিযান, প্রতীক তাম্রমুদ্রা প্রচলন, কারাচিল অভিযান এবং দোয়াব
অঞ্চলে কর বৃদ্ধি তথা পঞ্চ পরিকল্পনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তথাপি নানাবিধ কারণে সুলতানের এসমস্ত পরিকল্পনা
ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ফলশ্রæতিতে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মেবারের সৈয়দ জালাল
উদ্দিন ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে, পূর্ব বাংলার শাসক ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে এবং উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিম
বাংলায় শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যের দৌলতাবাদে
স্বাধীন বাহমনী রাজ্য এবং বিজয় নগর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সুলতান বিদ্রোহদমনরত অবস্থায় ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ
মৃত্যুবরণ করেন। নি:সন্দেহে তিনি ছিলেন এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিভা সম্পন্ন শাসক।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৮
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ‘হাজার দিনারী’ নামে খ্যাত ছিলেন-
ক. আলাউদ্দিন খলজি খ. মালিক কাফুর
গ. গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ঘ. মুহম্মদ বিন তুঘলক
২। খলজি বংশের সর্বশেষ শাসক ছিলেন-
ক. আলাউদ্দিন খলজি খ. শিহাব উদ্দিন ওমর খলজি
গ. কুতুবউদ্দিন মুবারক শাহ খলজি ঘ. নাসির উদ্দিন খসরু
৩। গাজী মালিক (গিয়াসউদ্দিন তুঘলক) ছিলেন-
ক. দীপনপুরের শাসক খ. দৌলতাবাদের শাসক
গ. দ্বারসমুদ্রের শাসক ঘ. দীপালপুরের শাসক
দেশভাগের পর শাহরিয়ার ভারতে চলে যান। তিনি ভারতে গিয়ে সুলতানি আমলের এমন এক শাসক সম্পর্কে াবগত হন
যিনি শাসন ক্ষমতায় অধিস্ঠিত হয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু সেগুলো ছিল যুগের চেয়ে অগ্রবর্তী।
ঐতিহাসিক গণ সেই মুলতানকে বিকৃত মস্তিষ্ক বলে অভিহিত করেছেন।
১. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? ১
২. প্রতীক তা¤্রমুদ্রা বলতে কী বোঝায়? ২
৩. উপরের উদ্দীপকে উল্লেখিত শাসকের সাথে তুঘলক বংশের যে শাসকের মিলগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করেন। ৩
৪. আপনি কি মনে করেন, উক্ত শাসকের গৃহীত পদক্ষেপগুলো ছিল যুগের চেয়ে অগ্রবর্তী? এর মতের স্বপক্ষে যুক্তি দেন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]