সৈয়দ বংশ (১৪১৪-১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ) শাসকদের শাসনকাল সম্পর্কে বিবরণ দিতে পারবে

মূখ্য শব্দ সৈয়দ, তৈমুর লঙ, রায়াত-ই-আলা, মোবারকবাদ ও তারিখ-ই-মোবারকশাহী
[
সৈয়দ বংশের পরিচয়
দিল্লি সালতানাতের পাঁচটি রাজবংশের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী রাজবংশ ছিল সৈয়দ বংশ। ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে
খিজির খান এই বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। মধ্য এশিয়ার সমরকন্দের অধিবাসী দুর্ধর্ষ বিজেতা তৈমুর লঙ এক
বিশাল তুির্ক সৈন্যবাহিনী নিয়ে ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেন। ১৩৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ অগণিত লুণ্ঠিত দ্রব্য,
যুদ্ধবন্দী এবং কতিপয় বিখ্যাত শিল্পীসহ সমরকন্দে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে খিজির খানকে লাহোর, মুলতান ও দিপালপুরের
শাসনভার অর্পণ করেন। অর্থাৎ সমরকন্দের অধীনে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন খিজির খান। সুলতান
নাসির উদ্দিন মাহমুদ ছিলেন তুঘলক বংশের সর্বশেষ সুলতান। তিনি ১৩৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লির
সুলতান ছিলেন। ১৪১৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদের পতনের পর প্রায় দুই শত বছরের তুর্কি শাসনের
অবসান ঘটে। দিল্লির অভিজাত শ্রেণি, আমির, উমারাহ এবং মালিকগণ দৌলত খান নামক জনৈক ব্যক্তিকে দিল্লির শাসন
ক্ষমতা অর্পণ করেন। ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে আমির তৈমুর লঙ কর্তৃক নিযুক্ত মুলতান, লাহোর এবং দিপালপুরের শাসক খিজির
খান অকস্মাৎ দিল্লি আক্রমণ করে দৌলত খানকে পরাস্ত করলে তিনি খিজির খানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। ১৪১৪
খ্রিস্টাব্দে খিজির খান সুলতান হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করে ইতিহাস প্রসিদ্ধ সৈয়দ বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। খিজির
খান, মুবারক শাহ, মুহাম্মদ শাহ এবং আলাউদ্দিন আলম শাহ ছিলেন সৈয়দ বংশের চারজন সুলতান। ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দ
থেকে ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ বছর সৈয়দ বংশের শাসকেরা শাসন করে। সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান খিজির
খান নিজেকে হজরত মুহাম্মদ (স.) এর বংশধর বলে দাবি করতেন। তাই ইতিহাসে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বংশ সৈয়দ বংশ নামে পরিচিত।
খিজির খান (১৪১৪-১৪২১ খ্রি.)
সৈয়দ বংশের ইতিহাসে অন্যতম সফল শাসক ছিলেন খিজির খান। ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী খিজির খান মুলতানের শাসক
মালিক নাসির উল মুলক এর নিকট লালিত পালিত হন। খিজির খান ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে দৌলত খানকে পরাজিত করে সৈয়দ
বংশের গোড়াপত্তন করেন। কোন ধরণের রাজকীয় উপাধি গ্রহণ না করে শুধুমাত্র ‘রায়াত-ই-আলা’ উপাধি গ্রহণ করে
খিজির খান প্রথমে আমির তৈমুরের এবং তাঁর মৃত্যুর পর তৎপুত্র শাহরুখের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য শাসন করেন। তিনি
কামপিল, পাতিয়ালা, গোয়ালিয়র, এটোয়া এবং মেওয়াট প্রভৃতি অঞ্চলে সফলতার সাথে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা
করেন। খিজির খান ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রজাবৎসল, ধার্মিক, দয়ালু এবং ন্যায়
পরায়ণ শাসক। এই সফল শাসক ১৪২১ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি নিজ পুত্র মুবারক শাহকে সিংহাসনের
উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেন।
মুবারক শাহ (১৪২১-১৪৩৪খ্রি.)
খিজির খানের মৃত্যুর পর তাঁর মনোনয়ন অনুযায়ী তাঁর পুত্র ‘মুবারক শাহ’ উপাধি ধারণ পূর্বক ১৪২১ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ
বংশের দ্বিতীয় শাসক হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি সিংহাসনে আরোহণের অব্যবহিত পর সাম্রাজ্যের
সর্বত্র অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। উত্তর- পশ্চিম সীমান্তে পাঞ্জাবের খোক্কার উপজাতির বিদ্রোহী নেতা জাসরাত
রাজধানী দিল্লি অধিকার করার দুরভিসন্ধি করেন। উল্লিখিত সময়ে ভাতিন্দা ও দোয়াব অঞ্চলে বিদ্রোহ শুরু হলে মুবারক
শাহ তা কঠোর হস্তে দমন করতে সক্ষম হন। পাঞ্জাব, রোহিলাখন্ড এবং দোয়াবে আধিপত্য পুন:স্থাপন করে মুবারক শাহ
দিল্লি সালতানাতের পূর্ব গৌরব পুনরুদ্ধার করেন। প্রশাসনে নিযুক্ত আমির, মালিক এবং জায়গীরদারদের বিদ্রোহী মনোভাব
দূরীভূত করার মানসে মুবারক শাহ শাসনে ব্যাপক রদবদল করেন। তিনি কামাল-উল-মুলককে সহ-উজির হিসেবে নিযুক্ত
করে উজির সারোয়ার-উল-মুলক এর বিরাগভাজন হন। উজির সরোয়ার-উল-মুলক এর নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলিম, আমিরমালিক ও জায়গীরদারদের সম্মিলিত বিরোধী শক্তির গভীর ষড়যন্ত্রে মুবারক শাহ ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রæয়ারি
মোবারকবাদের এক মসজিদে নামাজরত অবস্থায় জনৈক আততায়ীর হস্তে নির্মমভাবে নিহত হন।
মুবারক শাহ ছিলেন যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। তাঁর শাসনামলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘তারিখ-ইমুবারক শাহী’। মুবারক শাহের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ইয়াহিয়া বিন আহমদ সিরহিন্দী গ্রন্থটি
রচনা করেন। তিনি গ্রন্থটি রচনা করে মুবারক শাহের নামে
উৎসর্গ করে নামকরণ করেন ‘তারিখ-ই-মুবারক শাহী’।
মুবারক শাহ আমির তৈমুরের দুর্বল উত্তরাধিকারীদের
আনুগত্য অস্বীকার করে বরং মিশরের খলিফার প্রতি
আনুগত্য প্রদর্শন করেন। তিনি স্বাধীন শাসক হিসেবে
‘মুইজ-উদ-দীন মুবারক শাহ’ উপাধি ধারণ করে নিজ নামে
মুদ্রা অঙ্কন করেন। সুদক্ষ শাসক এবং নির্মাণ শিল্পের
পৃষ্ঠপোষক মুবারক শাহ যমুনা নদীর তীরবর্তী স্থানে
মোবারকবাদ নামক একটি শহর নির্মাণ করেন।
মুহম্মদ শাহ (১৪৩৪-১৪৪৫ খ্রি.)
মুবারক শাহের কোন পুত্র সন্তান না থাকায় ভ্রাতা ফরিদের পুত্র এবং মুবারক শাহের ভ্রাতুষ্পুত্র মুহম্মদ শাহ পরবর্তীতে
দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। মুবারক শাহের রাজত্বকালে এবং মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালের প্রথমার্ধে প্রভাবশালী
উজির ছিলেন সারোয়ার-উল-মুলক। উজির সারোয়ার-উল-মুলকের মৃত্যুরপর মুহম্মদ শাহ কামাল-উল-মুলককে উজির
হিসেবে নিযুক্ত করেন। মুহম্মদ শাহের শাসনামলে তার দুর্বলতার সুযোগে অভিজাত শ্রেণি ও প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ
বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এ সময় মালবের শাসনকর্তা মাহমুদ খল্জি এবং সিরহিন্দ ও লাহোরের শাসক বাহলুল খান লোদী
দিল্লি অধিকার করার চেষ্টা করেন। তবে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাঁর শাসনামলে গোয়ালিয়র সুলতানের নিকট কর
প্রদানে অস্বীকার করে এবং এ সময়কালে জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাহ শরকী দিল্লির কয়েকটি পরগণা অধিকার করে
নেন। ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ শাহ মৃত্যুবরণ করেন।
আলাউদ্দিন আলম শাহ (১৪৪৫-১৪৫১খ্রি.)
সুলতান মুহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলাউদ্দিন দিল্লির আমির, উমারাহ ও অভিজাত শ্রেণির সমর্থনপুষ্ঠ হয়ে
‘আলাউদ্দিন আলম শাহ’ উপাধি ধারণ করে সৈয়দ বংশের সর্বশেষ শাসক হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তিনি ছিলেন সৈয়দ বংশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা দুর্বল ও অর্কমণ্য সুলতান। সুলতান আলাউদ্দিন আলম শাহের শাসনামলে
প্রধানমন্ত্রী হামিদ খান ছিলেন সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী। সুলতান ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট ক্ষমতার দ্ব›েদ্ব বাধ্য হয়ে সুলতান
আলাউদ্দিন আলম শাহ পাঞ্জাবের শাসক বাহলুল খান লোদীর সহায়তা গ্রহণ করেন। বাহলুল লোদী সুলতানের সহায়তায়
হামিদ খানকে পরাজিত ও নিহত করেন। কিন্তু তারপর বাহলুল লোদী নিজেই দিল্লি দখল করে নিলে সুলতান আলাউদ্দিন
আলম শাহ তাঁর হাতে শাসন ক্ষমতা অর্পণ করে স্বেচ্ছায় তাঁর প্রিয় স্থান বদাউনে গমন করেন। বাহলুল লোদী ১৪৫১
খ্রিস্টাব্দের ১৯ এপ্রিল নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং লোদী বংশের
গোড়াপত্তন করেন। আর এভাবেই দিল্লির ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ বংশের শাসনের অবসান ঘটে।
লোদী বংশের রাজ্য সীমা
সারসংক্ষেপ :
১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙের ভারত অভিযানে সাহায্যকারী খিজির খান পুরস্কার স্বরূপ লাহোর, মুলতান ও দিপালপুরের
শাসক নিযুক্ত হন। সমরকন্দের অধীনস্ত ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের শাসক খিজির খান ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দের দৌলত খানকে
পরাজিত করে ভারতীয় উপমহাদেশে সৈয়দ বংশ প্রতিষ্ঠা করে দিল্লির সিংহাসনে উপবেশন করেন। এ বংশের সর্বমোট
৪ জন শাসক প্রায় ৩৭ বছর ধরে উপমহাদেশে শাসন করেন। এই বংশের চারজন শাসকের মধ্যে প্রথম তিনজন
যোগ্যতার পরিচয় দিলেও সর্বশেষ শাসক আলাউদ্দিন আলম শাহ ছিলেন দুর্বল এবং অযোগ্য। তিনি পাঞ্জাবের
শাসনকর্তা বাহলুল লোদীর হাতে শাসন ক্ষমতা অর্পণ করলে সৈয়দ বংশের শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.১০
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান ছিলেন-
ক. খিজির খান খ. মুবারক শাহ
গ. মুহম্মদ শাহ ঘ. আলাউদ্দিন আলম শাহ
২। সমরকন্দের অধীনে খিজির খান ছিলেন ভারতের-
ক. পূর্বাঞ্চলের শাসনকর্তা খ. পশ্চিমাঞ্চলের শাসনকর্তা
গ. উত্তরাঞ্চলের শাসনকর্তা ঘ. দক্ষিণাঞ্চলের শাসনকর্তা
৩। তুঘলক বংশের সর্বশেষ সুলতান ছিলেন-
ক. হুমায়ুন শাহ খ. নসরত শাহ
গ. নাসির উদ্দিন মাহমুদ ঘ. দৌলত খান
৪। তৈমুর লঙ ভারত অভিযান করেন-
ক. ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে খ. ১৩৯৭ খ্রিস্টাব্দে
গ. ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে ঘ. ১৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে
দিল্লি সালতানাতের একটি রাজবংশের শাসক ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙ্কে ভারত অভিযানে সাহায্য করেছিলেন এবং
পুরস্কারস্বরুপ বেশ কিছু জায়গা লাভ করেছিলেন। এর কিছুদিন পর তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে একটি বংশ প্রতিষ্ঠা
করেন। এ বংশের সর্বশেষ শাসকের সাথে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা বাহলুল লোদী এক যুদ্ধের মাধ্যমে এ বংশটির শাসনের
পরিসমাপ্তি ঘটে।
১. দিল্লি সালতানাতের পঞ্চম রাজবংশ কোনটি? ১
২. রায়াত-ই-আলা উপাধি গ্রহণকৃত শাসকের পরিচয় লিখুন? ২
৩. “খিজির খানের বংশে মুবারকশাহ ছিলেন সর্বাপেক্ষা যোগ্যতম শাসক” এ মন্তব্যটি সম্পর্কে ধারণা দিন। ৩
৪. উদ্দীপকে উল্লেখিত রাজবংশের সাথে আপনার পাঠ্যবইয়ের সংশ্লিষ্ট রাজবংশের পতনের কারণগুলো বর্ণনা করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]