মূখ্য শব্দ আফগান, মুঘল, বারলাস, দাদরাহ, চুনার, দুর্গ, সুরুজগড়, জান্নাতাবাদ ও বিলগ্রাম
প্রাথমিক জীবন ও সিংহাসনারোহণ
মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবরের জ্যেষ্ঠপুত্র হুমায়ুন ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে শিয়া মাতা মাহিম
বেগমের গর্ভে কাবুলে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর অপর তিন ভ্রাতা ছিলেন কামরান, আসকারী এবং হিন্দাল। বাল্যকালেই
হুমায়ুন আরবি, ফার্সী ও তুর্কী ভাষাসহ কাব্য ও সাহিত্যের পাশাপাশি গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে পাÐিত্য
অর্জন করেন। বাবরের শাসনামলে হুমায়ুন বাদাখশান, হিসার ফিরোজা এবং সম্বলের শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পিতা বাবরের মৃত্যুর পর ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে ডিসেম্বর মাত্র ২৩ বছর বয়সে পিতৃ মনোনয়ন অনুসারে হুমায়ুন ‘নাসির
উদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন’ নাম ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সিংহাসনে আরোহণের অব্যবহিত পর সম্রাট হুমায়ুন পিতৃ নির্দেশ অনুসারে তাঁর ভ্রাতা কামরানকে কাবুল ও কান্দাহারের,
হিন্দালকে আলওয়ার ও মেওয়াটে এবং আসকারীকে সম্বলের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন। এছাড়াও পিতৃব্য পুত্র মির্জা
সুলায়মানকে তিনি বাদাখশানের শাসনভার অর্পণ করেন। সম্রাট হুমায়ুনের রাজত্বকালকে দু’টি পর্বে বিভক্ত করা যায়। প্রথম
পর্বে ১৫৩০-১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্বে ১৫৫৫-১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল
বংশের দ্বিতীয় শাসক হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। মধ্যখানে ১৫৪০-১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি শের খান (শের
শাহ) কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে পারস্যের শাসক শাহ তাহমাসপের রাজদরবারে আশ্রিত ছিলেন।
মুঘল-আফগান দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত
আফগান শক্তির বিরোধিতাই ছিল সম্রাট হুমায়ুনের রাজত্বকালের সর্বাপেক্ষা কঠিন সমস্যা। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের
প্রথম যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত সুলতান ইব্রাহিম লোদীর ভ্রাতা মাহমুদ লোদীকে দিল্লির সিংহাসনে উপবেশন করার ষড়যন্ত্রে
আফগান অভিজাত শ্রেণির সাথে বুন্দেলখÐের শাসনকর্তাও লিপ্ত ছিলেন। ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন বুন্দেলখÐের রাজার
বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়ে কালিঞ্জর দুর্গ অবরোধ করেন। কিন্তু অদূরদর্শী সম্রাট হুমায়ুন প্রচুর অর্থের বিনিময়ে এই অবরোধ
প্রত্যাহার করে নেন। ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির লোদী বংশের সর্বশেষ সুলতান ইব্রাহীম লোদীর ভ্রাতা মাহমুদ লোদীর
নেতৃত্বে আফগানরা জৌনপুরের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জৌনপুরের মুঘল শাসক জুনাইদ বারলাসকে বিতাড়িত
করেন। আফগান বাহিনীর বিশৃঙ্খলার সুযোগে হুমায়ুন ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে লক্ষেèৗর সন্নিকটে দাদরাহ বা দৌরাহর যুদ্ধে
সম্মিলিত আফগান শক্তিকে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। নিরূপায় হয়ে মাহমুদ লোদী পাটনা এবং কয়েকদিন
পর বাংলায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। মাহমুদ লোদী বাংলায় মৃত্যুবরণ করলে লোদী আফগান বংশের পরিসমাপ্তি ঘটে।
আফগান বাহিনীর একটি বিরাট অংশ আফগান নেতা শের খানের নেতৃত্বে বারানসীর দক্ষিণ-পশ্চিমে গঙ্গার তীরে অবস্থিত
চুনার দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সম্রাট হুমায়ুন চুনার দুর্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। হুমায়ুন দীর্ঘ ৪ মাস ধরে চুনার দুর্গ
অবরোধ করে রাখেন। কিন্তু ইতোমধ্যে গুজরাটের শাসক বাহাদুর শাহ আগ্রা অভিযান করেন। এ সংবাদে বিচলিত হয়ে
সম্রাট হুমায়ুন শেরখানের মৌখিক আনুগত্যে বিশ্বাস স্থাপন করে বিহার ও চুনার দুর্গ রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করে
আগ্রায় প্রত্যাবর্তন করেন। চুনার দুর্গটি শেরখানের হস্তে সমর্পণ করে সম্রাট হুমায়ুন রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয়
দেন। কেননা এই দুর্গকে কেন্দ্র করে শেরশাহ নিজের শক্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন এবং হুমায়ুনের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী
শত্রæতে পরিণত হন।
হুমায়ুন ও বাহাদুর শাহের সংঘর্ষ
গুজরাটের বাহাদুর শাহ ছিলেন একজন উচ্চাভিলাষী ও প্রভাবশালী শাসক। তিনি ছিলেন পাঠান শক্তির উৎস। প্রবল
প্রতাপশালী সুলতান বাহাদুর শাহের রাজত্বকালকে গুজরাটের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করা হয়। তাঁর শাসনামলেই
গুজরাটের সমধিক বিস্তৃতি সাধিত হয়েছিল। বাহাদুর শাহ ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে মালব, ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে রায়সীন দখল এবং
১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে চিতোরের শিশোদীয় নেতৃবৃন্দকে পরাস্ত করেন এবং বেরার, খান্দেশ ও আহমদনগরের বিরুদ্ধে সফল
অভিযান পরিচালনা করেন।
উচ্চাকাক্সক্ষী বাহাদুর শাহ দিল্লি অধিকারের উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ জামান মীর্জাকে আশ্রয় ও সহযোগিতা প্রদান করে সম্রাট
হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে প্ররোচনা দান করেন। এছাড়া ও তিনি আফগান নেতা আলম খান লোদীর পুত্র তাতার খানকে
মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত বিয়ানা অঞ্চল অধিকার করার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এছাড়া সুলতান বাহাদুর শাহ
অসংখ্য বিদ্রোহী আফগান নেতৃবৃন্দকে তার রাজ্যে আশ্রয় প্রদান করে সম্রাটের ক্রোধের উদ্রেক করেন। ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দের
শেষের দিকে সম্রাট হুমায়ুন মালব গমন করার সময় গুজরাটীদের দ্বারা অত্যাচারিত ও উৎপীড়িত হয়ে মেবারের রাণী
কর্ণাবতী সম্রাট হুমায়ুনের সাথে রাখী বন্ধনের (ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের) প্রস্তাবসহ সাহায্য কামনা করলে সম্রাট বাহাদুর শাহের
বিরুদ্ধে এক বিপুল সৈন্যবাহিনী নিয়ে অগ্রযাত্রা করেন।
মান্দাসোর যুদ্ধ (১৫৩৫ খ্রি.)
উপরোল্লিখিত কারণ সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে মান্দাসোর নিকট একটি কৃত্রিম হৃদের তীরবর্তী
স্থানে সুলতান বাহাদুর শাহ ও সম্রাট হুমায়ুনের সেনাবাহিনীর মধ্যে এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে বাহাদুর শাহ
সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হন এবং মুঘল সেনাবাহিনী কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে একপর্যায়ে পর্তুগীজদের অধিকৃত দিউ নামক দ্বীপে
আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হলেন। হুমায়ুন অতঃপর মালব, চাম্পানের দুর্গ এবং দ্রæতগতিতে গুজরাটের রাজধানী আহমদাবাদ
হস্তগত করেন। এসময় মুঘল বাহিনী গুজরাট এবং চাম্পানের দুর্গ থেকে প্রচুর ধনরতœ লাভ করে। সম্রাট হুমায়ুন গুজরাটের
শাসন ভার তার ভাই আসকারীর উপর ন্যস্ত করে আগ্রায় চলে আসেন। কিন্তু আসকারী ছিলেন অযোগ্য ও অকর্মণ্য। তার
অপশাসনে গুজরাটে অরাজকতা দেখা দেয় এবং এই অরাজকতা ও গোলযোগের সুযোগে বাহাদুর শাহ পর্তুগীজদের
সহায়তায় মুঘলদের হাত থেকে পুন:রায় গুজরাট উদ্ধার করেন।
হুমায়ুনের সাথে শেরখানের সংঘাত
শেরখানের বাল্য নাম ছিল ফরিদ। তিনি ছিলেন আফগান জাতির শুর উপদলভুক্ত। তাঁর পিতা হাসান ছিলেন বিহারের
সাসারামের জায়গীরদার। ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে চান্দেরী দুর্গবিজয়ের সময় সম্রাট জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবরকে শেরখান
(শেরশাহ) সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা প্রদান করেন। প্রীত হয়ে সম্রাট বাবর পুরস্কারস্বরূপ শেরখানকে পিতৃ জায়গীর
সাসারামে পুন: প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে শেরখান বারানসীর নিকটবর্তী চুনার দুর্গের অধিপতি তাজ খানের বিধবা
পত্মী লাদ মালিকাকে বিবাহ করার মাধ্যমে চুনার দুর্গের কর্তৃত্ব লাভ করেন। শেরখানের ক্রমবর্ধমান শক্তিবৃদ্ধিতে শঙ্কিত
হয়ে সম্রাট হুমায়ুন ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে চুনার দুর্গ অবরোধ করেন।
কিন্তু অত্যন্ত কূটকৌশলী এবং রাজনীতিতে দূরদর্শী শেরখান হুমায়ুনের মৌখিক আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি অবরোধ
প্রত্যাহার করে নেন। ইতবৎসরে শেরখানের উত্তরোত্তর শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্খিত হয়ে বিহারের অভিজাত শ্রেণি ও শাসক
জালালখান বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদের সহায়তায় শেরখানকে দমন করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। বাংলা
ও বিহারের সম্মিলিত বাহিনী এবং শের শাহের নেতৃত্বে আফগান বাহিনীর মধ্যে মুঙ্গেরের নিকটবর্তী কিউল নদীর তীরে
অবস্থিত সুরুজগড় নামক স্থানে এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে সংঘটিত এই যুদ্ধে বাংলা ও
বিহারের সম্মিলিত বাহিনীকে শের খান শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে জয়লাভের পর শের খান প্রকৃতপক্ষে
বিহারের অবিসংবাদিত অধিপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। শেরখান বাংলার শাসনকর্তা মাহমুদ শাহের বিরুদ্ধে ১৫৩৬
খ্রিস্টাব্দে অগ্রসর হলে দুর্বল শাসক মাহমুদ শাহ তের লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা এবং কিউল হতে সকরিগিলি পর্যন্ত অঞ্চলটি শের খানের
অধীনে ন্যস্ত করে নিজে সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। শেরখান ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে পুনরায় বাংলা আক্রমণ
করে রাজধানী গৌড় অবরুদ্ধ করলেন। এ সময়কালে সম্রাট হুমায়ুন গুজরাট অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন। শেরখানের উত্তরোত্তর
ও ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে তিনি গুজরাট অভিযান অসম্পন্ন রেখে সৈন্যবাহিনী নিয়ে বাংলা অভিমুখে অগ্রসর
হন। সম্রাট হুমায়ুন ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে শেরশাহের প্রধান ঘাঁটি চুনার দুর্গ অবরুদ্ধ করেন। এটি ছিল সম্রাটের
অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে শেরখান ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসের মধ্যে গৌড় জয় করেন এবং একই সাথে গৌড়ের
শাসক সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহকে সেখান থেকে বিতাড়িত করেন। এছাড়াও তিনি রোটাস দুর্গটি ও দখল
করেন। ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যভাগে সম্রাট হুমায়ুন চুনার দুর্গ জয় সম্পন্ন করে বাংলার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু এটি ছিল
সম্রাটের একটি বিলম্বিত পদক্ষেপ। ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে সসৈন্যে গৌড়ে প্রবেশ করেন। গৌড়ের মনোরম
আবহাওয়া হুমায়ুনকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে। তিনি প্রীত হয়ে এর নাম রাখেন জান্নাতাবাদ। অত্যন্ত কুশলী এবং
দূরদর্শী শেরখান সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ না হয়ে হুমায়ুনকে গৌড় দখল করার সুযোগ দেন এবং স্বয়ং অগ্রসর হয়ে সমগ্র
বিহার দখল করেন। তিনি এমনকি জৌনপুর ও কনৌজ অধিকার করে হুমায়ুনের বাংলা থেকে আগ্রায় প্রত্যাবর্তনের পথ
রুদ্ধ করে দেন।
চৌসার যুদ্ধ (১৫৩৯)
সম্রাট হুমায়ুন গৌড় পরিত্যাগ করার পূর্বে জাহাঙ্গীর কুলী বেগকে বাংলার শাসনভার অর্পণ করেন। হুমায়ুন তাঁর বিশাল
সৈন্যবাহিনী নিয়ে আগ্রা অভিমুখে যাত্রা করলেন। কিন্তু দুভার্গ্যক্রমে পথিমধ্যে বক্সারের নিকটবর্তী চৌসা নামক স্থানে
শেরখান ও তাঁর আফগান অনুচরেরা সম্রাট হুমায়ুনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন চৌসায়
উভয়পক্ষের মধ্যে এক তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে চৌসার যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই
যুদ্ধে হুমায়ুন শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। শেরখানের নেতৃত্বে আফগান বাহিনী মুঘল বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
অনেক সৈন্য অনন্যোপায় হয়ে গঙ্গা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু এতে অনেকেরই সলিল সমাধি ঘটেছিল নিজাম নামের
এক ভিস্তিওয়ালার সাহায্যে সম্রাট হুমায়ুন জীবন রক্ষা করলেন। চৌসার যুদ্ধে শের খানের জয়লাভ ভারতীয় উপমহাদেশে
অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কেননা এর ফলে শের খানের রাজ্য পশ্চিম দিকে কনৌজ হতে পূর্বে আসাম ও চট্টগ্রাম এবং
উত্তর দিকে রোটাস হতে দক্ষিণ দিকে বীরভূম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এই যুদ্ধের পর শেরখান শেরশাহ উপাধি ধারণ
করেন এবং নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন ও পাঠের নির্দেশ প্রদান করেন। পক্ষান্তরে এই যুদ্ধে হুমায়ুনের পরাজয়ের মাধ্যমে
মুঘলদের সামরিক ও কূটনৈতিক দুর্বলতা প্রস্ফুটিত হয়।
কনৌজ বা বিলগ্রামের যুদ্ধ (১৫৪০)
চৌসার যুদ্ধের পরাজয়ের গøানি দূরীভূতকরণ এবং হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করার মানসে সম্রাট হুমায়ুন পুনরায় সৈন্যবাহিনী
সংগঠনে মনোনিবেশ করেন। এসময় তিনি নিজ ভ্রাতাদের কাছে প্রয়োজনীয় সৈন্য সাহায্যের আবেদন করেও ব্যর্থ হন।
অবশেষে সম্রাট হুমায়ুন গোলন্দাজ বাহিনীসহ এক বিশাল সেনাবাহিনী সহকারে শেরশাহের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। ১৫৪০
খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে কনৌজের নিকটবর্তী বিলগ্রাম নামক স্থানে মুঘল ও আফগান সৈন্যবাহিনীর মধ্যে এক তুমুল যুদ্ধ
সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ উপমহাদেশের ইতিহাসে কনৌজ বা বিলগ্রামের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে শের শাহের
সৈন্যসংখ্যা ছিল ১৫ হাজার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সম্রাট হুমায়ুন এই যুদ্ধেও আফগানদের হাতে পরাজিত হন। কনৌজের
যুদ্ধের মর্মান্তিক পরাজয়ের পর সম্রাট হুমায়ুন আশ্রয়ের সন্ধানে দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ান। অবশেষে পারস্যের
শাসক শাহ তাহমাসপের রাজ দরবারে আশ্রয় লাভ করেন এবং ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানেই
ছিলেন। এই যুদ্ধে শের শাহের জয়লাভের ফলে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুঘল
সাম্রাজ্যের সাময়িক অবসান ঘটেছিল। শেরশাহ ভারতবর্ষে আফগান শূরী বংশের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করলেন।
শেরশাহের সাফল্য ও হুমায়ুনের ব্যর্থতার কারণ:
শেরশাহের সাফল্য ও হুমায়ুনের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে উল্লেখ করা যায়।
প্রথমত; সম্রাট হুমায়ুনের অদূরদর্শিতা
শেরশাহের নিকট হুমায়ুনের পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হলো সম্রাটের অদূরদর্শিতা। পিতা সম্রাট বাবরের অন্তিম
ইচ্ছানুযায়ী হুমায়ুন সিংহাসনারোহণের অব্যবহিত পর তাঁর অপর তিন ভ্রাতা কামরান, আসকারী ও হিন্দাল এবং নিজ
পিতৃব্যপুত্র সোলেমান মীর্জার মধ্যে সাম্রাজ্য বন্টণ করে রাজনৈতিক অপরিপক্বতার প্রমাণ দেন। চৌসার যুদ্ধে পরাজিত
হওয়ার পর সম্রাট হুমায়ুন যখন কনৌজের যুদ্ধের প্র¯ুÍতির জন্য নিজ ভ্রাতাদের নিকট সৈন্য সাহায্য কামনা করেন তখন
তিনি তাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হন। ফলশ্রæতিতে সম্রাট হুমায়ুন শেরশাহের নিকট পরাজিত হয় এবং দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য
হন।
দ্বিতীয়ত; সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব
সুষ্ঠু এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব সম্রাট হুমায়ুনের ব্যর্থতার আরেকটি কারণ। একজন সুদক্ষ এবং নির্ভীক যোদ্ধা হওয়া
সত্তে¡ও তাঁর সুপরিকল্পনার বড়ই অভাব ছিল। তিনি অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী গুজরাটের বাহাদুর শাহের বিরুদ্ধে অযথা
সময় নষ্ট করেন। অথচ শের শাহের শক্তিবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ উদাসীন। চুনার দুর্গ জয়ের পর সম্রাট হুমায়ুন
দীর্ঘ সময় নষ্ট করেন। বাংলাকে ‘জান্নাতাবাদ’ নামকরণ করে তিনি বাংলায় প্রায় ৮ মাস আরাম-আয়েশে ডুবে থাকেন।
এমনি পরিস্থিতিতে দূরদর্শী শেরশাহ চুনার দুর্গ পুনরায় দখল করে বেনারস, জৌনপুর ও কনৌজ পর্যন্ত গমন করেন।
তৃতীয়ত; সুযোগ্য সেনাবাহিনীর অভাব
সম্রাট হুমায়ুন শেরশাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে সৈন্য সংগ্রহ করেন। যারা ছিল যুদ্ধ বিদ্যায়
অনভিজ্ঞ এবং অনুপযুক্ত। মুঘল সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিল বিভিন্ন জাতির লোকদের সংমিশ্রণে। যাদের মাঝে ছিনা ছিল
কোনো একতা, না ছিল কোন নিয়মশৃঙ্খলা। অন্যদিকে শেরশাহের নেতৃত্বে আফগান সৈন্যবাহিনী ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল,
একতাবদ্ধ এবং সর্বোপরি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ।
চতুর্থত; স্বীয় ভাইদের বিশ্বাসঘাতকতা
সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন সহজ সরল মানুষ তিনি ভ্রাতৃদের প্রতি বিশেষভাবে স্নেহপরায়ণ ছিলেন। কিন্তু চরম বিপদের সময়েও
হুমায়ুন তাদের কাছ থেকে কোনোরূপ সাহায্য সহযোগিতা পান নি। উপরন্তু সম্রাট হুমায়ুন নিজ ভ্রাতাদের বিশ্বাসঘাতকতার
স্বীকার হন। এছাড়াও হুমায়ুন আত্মীয়-স্বজনদের ও বিরোধিতার সম্মুখীন হন। অন্যদিকে শেরশাহ ছিলেন আফগান জাতির
আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। হুমায়ুনের বিরুদ্ধে আফগানরা শের শাহকে পূর্ণ সাহায্য-সহযোগিতা এবং একনিষ্ঠ সমর্থন প্রদান
করেন।
পঞ্চমত; হুমায়ুনের চারিত্রিক দুর্বলতা
সম্রাট হুমায়ুনের চারিত্রিক দুর্বলতা তাঁর ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনার অভাব, মানুষকে
অহেতুক বিশ্বাস করা, হেরেমের সুখে গা ভাসিয়ে দেওয়া এবং অতিরিক্ত পরিমাণ আফিম সেবন প্রভৃতি চারিত্রিক দুর্বলতা
সম্রাট হুমায়ুনের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। এসব চারিত্রিক দুর্বলতার ফলে তিনি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং কার্যকর ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে অসমর্থ ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং কূটকৌশলের অধিকারী শের শাহের মৌখিক আনুগত্যকে বিশ্বাস স্থাপনের
কারণেই সম্রাট হুমায়ুন পর পর দু’টি যুদ্ধ যথাক্রমে ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের চৌসার যুদ্ধ এবং ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের কনৌজের যুদ্ধে
পরাজিত হয়েছিলেন।
ষষ্ঠত; শেরশাহের যোগ্যতা
শেরশাহ ছিলেন সমসাময়িককালের অন্যতম যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। নিঃসন্দেহে তিনি হুমায়ুন অপেক্ষা অধিক যোগ্য
ছিলেন। রাজনৈতিক মেধা, কূটনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সামরিক নৈপুণ্যতার কারণেই শেরশাহ সফল হতে পেরেছিলেন।
অন্যদিকে শেরশাহ অপেক্ষা সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন তুলনামূলকভাবে কম যোগ্যতাসম্পন্ন শাসক। কাজেই শেরশাহের নিকট
সম্রাট হুমায়ুনের পরাজয় যুগের মাপকাঠিতে অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয় হিসাবে প্রতীয়মান হয়।
সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র
সম্রাট নাসির উদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন ছিলেন একজন আদর্শস্থানীয় পুত্র, স্বামী, পিতা ও ভ্রাতা। তিনি ভ্রাতাদের ক্রমাগত
বিরোধিতা সত্তে¡ও কখন ও তাদের প্রতি রুষ্ট হননি। নম্রতা, বদান্যতা, মহানুভবতা এবং উদারতার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন
অনন্য। সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন বিভিন্ন প্রতিভার অধিকারী। প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী হুমায়ুন জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র
এবং কাব্য চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। সম্রাট বাবরের ন্যায় তাঁর পুত্র সম্রাট হুমায়ুনও সুন্দর কবিতা রচনা করতে
পারতেন। হুমায়ুন ছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের একজন পৃষ্ঠপোষক। ঐতিহাসিক আবুল ফজলের মতে, “হুমায়ুন
আলেকজাÐারের ন্যায় উদ্যমী ও এরিস্টটলের ন্যায় জ্ঞানী ছিলেন।” খুদামীর, সাহাবউদ্দিন, কাফা, জৌহর প্রমুখ বিদ্বান
ব্যক্তি তাঁর রাজসভা অলঙ্কৃত করেছিলেন। সম্রাট হুমায়ুনের রাজত্বকালে মুঘল স্থাপত্য ও চিত্রকলার উৎকর্ষ সাধিত হয়।
পারস্য থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি মীর সৈয়দ আলী এবং খাজা আব্দুস সামাদকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এই প্রখ্যাত
চিত্রশিল্পীদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সম্রাটের পৃষ্ঠপোষকতায় মুঘল চিত্রকলার শুভ সূচনা হয়েছিল। নিষ্ঠাবান মুসলমান হওয়া
সত্তে¡ও হুমায়ুন কখনও ধর্মান্ধ ছিলেন না। নি:সন্দেহে হুমায়ুন একজন সুদক্ষ যোদ্ধা ছিলেন। পিতা জহিরউদ্দিন মুহম্মদ
বাবরের সাথে হুমায়ুন ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের পানি পথের প্রথম যুদ্ধ এবং ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের খানুয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে
বীরত্বের পরিচয় দেন। এছাড়াও তিনি গুজরাট ও মালব হয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতার
দরুণ হুমায়ুন চৌসা এবং কনৌজের যুদ্ধে শেরশাহের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন। শাসক হিসেবে হুমায়ুন
বিশেষ কোনো কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে পারেননি। কেননা ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে পিতা বাবরের মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ
করে সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্ব রক্ষায় তিনি বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হন। ফলশ্রæতিতে সাম্রাজ্যে একটি সুষ্ঠু শাসন
ব্যবস্থা প্রবর্তন তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হয়নি।
সারাংশ
সম্রাট জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবরের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নাসির উদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর
মাত্র ২৩ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি আফগান নেতা শেরশাহের প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হন।
১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের চৌসার যুদ্ধ এবং ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দের কনৌজের যুদ্ধে হুমায়ুন শেরশাহের নিকট শোচনীয়তাভাবে
পরাজিত হয়। কনৌজের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর হুমায়ুন পারস্যের শাসক শাহ তাহমাস্পের রাজদরবারে আশ্রয় গ্রহণ
করেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন পারস্যের শাসকের সহায়তায় মুঘল সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে
সক্ষম হন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত তিনি ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি গ্রন্থাগারের সিঁড়ি থেকে পরে আকস্মিকভাবে
মৃত্যুবরণ করেন। নি:সন্দেহে হুমায়ুন ছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণের সময় হুমায়ুনের বয়স ছিল-
ক. ২১ বছর খ. ২২ বছর গ. ২৩ বছর ঘ. ২৩ বছর
২। চুনার দুর্গ অবস্থিত-
ক. পদ্মার তীরে খ. যমুনার তীরে গ. বুড়িগঙ্গার তীরে ঘ. গঙ্গার তীরে
৩। মান্দাসোর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল-
ক. ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে খ. ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে গ. ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে ঘ. ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে
৪। গৌড়ের নাম ‘জান্নাতাবাদ’ রাখেন-
ক. বাহাদুর শাহ খ. মাহমুদ শাহ গ. হুমায়ুন ঘ. শেরশাহ
শামসুজ্জামান বিশাল সা¤্রাজ্যের অধিকারী ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর ভ্রাতাদের বিভিন্ন প্রদেশের শাসনভার
অর্পন করেন। তিনি নিজ কার্যের দ্বারা নিজেই নিজের হস্তকে দুর্বল করেন। শূর বংশের শাসকের সাথে তার বিভিন্ন কারণে
সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে যেটি ইতিহাসে তাকে ভাগ্য বিড়ম্বনার সাক্ষ্য করে তোলে।
১. মুঘল বংশের দ্বিতীয় শাসকের নাম কি? ১
২. চৌসার যুদ্ধের বর্ণনা দিন। ২
৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের সাথে শূর বংশের শাসকের দ্ব›েদ্বর পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করুন। ৩
৪. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসক ছিলেন ইতিহাসে ‘ভাগ্যবিড়ম্বনার সাক্ষ্য’ এ মতের পক্ষে আপনার যুক্তি দিন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র