মূখ্য শব্দ শিকদার-ই-শিকদারান, মুনসিক-ই-মুনসিফান, কবুলিয়ত, পাট্টা, রায়তওয়ারী ও তঙ্কা
মধ্যযুগীয় ভারতীয় ইতিহাসে শেরশাহ ছিলেন সুযোগ্য, ন্যায়পরায়ণ ও প্রজাহিতৈষী শাসক। ঐতিহাসিক
ঈশ্বরীপ্রসাদ শেরশাহকে মধ্যযুগের ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসকদের অন্যতম বলে অভিহিত করেছেন। শেরশাহ
ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি ছিলেন একাধারে একজন অসামান্য যুদ্ধকৌশলী, পারদর্শী সমরনায়ক, দ্বিধাবিভক্ত ও হতাশাগ্রস্ত আফগান জাতির একজন দক্ষ সংগঠক, একজন প্রগতিশীল সংস্কারক এবং প্রজাবৎসল শাসক।
ধূমকেতুর ন্যায় ভারতের ভাগ্যাকাশে শেরশাহের আবির্ভাব ঘটে। সামান্য একজন জায়গীরদারের পুত্র হয়ে এবং প্রাথমিক
জীবনে বিমাতার গভীর ষড়যন্ত্রে নানামুখী ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়েও নিজস্ব মেধা, মনন, প্রতিভা, আত্মবিশ্বাস,
বিচক্ষণতা ও কর্মনিপুণতার দ্বারা শেরশাহ ভারতীয় উপমহাদেশে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শেরশাহের চরিত্রে আকর্ষণীয় গুণাবলীর এক অপূর্ব সমন্বয় পরিলক্ষিত হয়।
রাজনীতিবিদ হিসেবে
শেরশাহ ছিলেন একজন উদারপন্থী এবং আদর্শ রাজনীতিবিদ। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ধর্ম
পরায়ণ ছিলেন কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ও সুলতান মুহম্মদ ঘুরীর ন্যায় শেরশাহ কখনও উলেমা
স¤প্রদায় দ্বারা অথবা ধর্মীয় সংকীর্ণতা দ্বারা আবদ্ধ ছিলেন না। শেরশাহ হিন্দু, মুসলিম, তুর্কি, আফগান, খলজি প্রভৃতি
বিভিন্ন জাতি ও ধর্মবিশ্বাসের লোকদের রাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চ পদে নিযুক্ত করেন। ভারতীয় উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু
স¤প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে উন্নতি বিধানের জন্য শেরশাহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ
করেন। তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ কার্যকলাপের ফলে হিন্দু ও মুসলিম উভয় স¤প্রদায়ের নিকট তিনি ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র।
ইংল্যাÐের দ্বিতীয় হেনরীর ন্যায় শেরশাহ সাম্রাজ্যে আইনের রাজত্ব’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। শেরশাহ নিজে আইন
মান্য করতেন এবং জনসাধারণকে ও আইন মেনে চলতে বাধ্য করতেন। সম্রাট আকবরের পূর্বে কেবলমাত্র শেরশাহ ছাড়া
অন্য কেউ জনসাধারণকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এরূপ আইন প্রণয়ন করতে পারেননি। সম্রাট আকবরের শাসনামলে
কয়েকটি আইন শেরশাহের কানুনের আদর্শে গঠিত হয়েছিল।
সমর-নায়ক হিসেবে
শেরশাহ ছিলেন একজন সুযোগ্য সময় নায়ক। তিনি ছিলেন সামরিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন সুযোগ্য নরপতি। রণচাতুর্য ও
ব্যুহ-রচনা কৌশলে নি:সন্দেহে তিনি তুর্কী মুঘলদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন। মুঘলদের সাথে সংঘটিত যুদ্ধবিগ্রহে
শেরশাহ নজিরবিহীন বীরত্ব ও সামরিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। বাংলা, মালব, বুন্দেল খÐ ও রাজপুতনায় অভিযান
পরিচালনা করে তিনি সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় প্রদান করেন। সামরিক নেতা শেরশাহের সমরকূটকৌশল ছিল অতুলনীয়।
শৌর্য-বীর্য ও দয়া-দাক্ষিণ্যে শেরশাহ ছিলেন বিশ্ববিজয়ী বীর আলেকজাÐারের সমতুল্য। তিনি সৈন্যবাহিনীকে নিয়মিত
তদারকি করতেন এবং তাদেরকে নিয়ম-শৃঙ্খলা পালনে উদ্দীপ্ত করতেন।
শাসক হিসেবে
শেরশাহ ছিলেন একজন সুযোগ্য প্রশাসক। তাঁর শাসন নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল শাসনব্যবস্থাকে অধিকতর সুষ্ঠু, সুদৃঢ় ও
জনহিতকর করে গড়ে তোলা। শেরশাহ বিজ্ঞানসম্মত এবং জনকল্যাণমূলক রাজস্বনীতি গ্রহণ করেছিলেন। শেরশাহ অত্যন্ত
দূরদর্শী শাসক ছিলেন। ইতিপূর্বে প্রচলিত ভারতের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শাসন-প্রণালীর শ্রেষ্ঠ নীতিগুলি গ্রহণ করে নিজস্ব
মেধা-মনন, প্রতিভা ও উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এক অনুপম শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। পরবর্তীকালে মুঘল
সম্রাট আকবর শেরশাহের শাসন প্রণালী দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। শেরশাহ জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য শিল্পবাণিজ্যের উন্নতি বিধানে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি আন্তঃপ্রাদেশিক শুল্ক প্রত্যাহার, সামরিক বাহিনীর উন্নতি বিধান, পুলিশ ও
গুপ্তচর ব্যবস্থার সংগঠন, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার সাধন, ঘোড়ার ডাক প্রচলন, ইতিহাস প্রসিদ্ধ গ্রাÐ ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করে
একটি গতিশীল শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
জাতি গঠনকারী হিসেবে
শেরশাহ বিভিন্ন মতবাদের অনুসারীদের নিয়ে একটি ‘ভারতীয় জাতি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শেরশাহের উদ্দেশ্য ছিল
সকল ধর্ম ও মতবাদের লোকদের সমন্বয়ে তাদের ঐকান্তিকতা ও সাহায্য সহযোগিতার ভিত্তিতে এক বিশাল ভারতীয়
সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা শেরশাহের চিন্তা ও স্বপ্ন পরবর্তীকালে সম্রাট আকবরের কর্মের মাধ্যমে বাস্তব রূপ লাভ করে। হিন্দু
মুসলিম নির্বিশেষে উভয় স¤প্রদায়ের রাজনৈতিক উন্নতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য শেরশাহ নিরলসভাবে কাজ করে জাতি
গঠনের প্রাথমিক কাজ সমাপ্ত করেন।
সারাংশ
মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে শূর বংশের প্রতিষ্ঠাতা শাসক শেরশাহ ছিলেন অন্যতম আকর্ষণীয় ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন
চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী। তিনি মুঘল বংশের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ুনকে কনৌজ বা বিলগ্রামের যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে
পরাজিত এবং বিতাড়িত করেন। শেরশাহের রাজত্ব কাল মাত্র পাঁচ বছর (১৫৪০-১৫৪৫) স্থায়ী হয়েছিল। এই স্বল্প
সময়ের রাজত্বকালে শেরশাহ নিজেকে একজন সুযোগ্য শাসক হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। শেরশাহ বিভিন্ন মতবাদের অনুসারীদের নিয়ে গঠন করতে চেয়েছিলেন-
ক. একটি আফগান জাতি খ. একটি পাকিস্তানি জাতি গ. একটি ভারতীয় জাতি ঘ. একটি মুসলমান জাতি
২। শেরশাহের পিতা ছিলেন একজন-
ক. রাজস্ব কমকর্তা খ. জায়গীরদার গ. সাধারণ সৈনিক ঘ. রাজগৃহাধ্যক্ষ
৩। শেরশাহ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন-
ক. মাত্র ৩ বছর খ. মাত্র ৪ বছর গ. মাত্র ৫ বছর ঘ. মাত্র ৬ বছর
শাকিল মাহমুদ বহুবিধ ভাগ্যবিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে জীবনের পথে অগ্রসর হয়ে ভারত স¤্রাটের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
তিনি মুঘল বংশের অন্তর্বর্তী একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির উপর তার
ধর্মনীতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি স্বৈরাচারী হলেও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। বহুবিধ জনহিতকর কার্যাবলির জন্যও তিনি
ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
১. কত সালে শূর বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়? ১
২. গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড সম্পর্কে লিখুন। ২
৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের চরিত্র ও কৃতিত্ব তোমার পাঠ্যবইয়ের যে শাসকের সাথে সম্পৃক্ত তা বর্ণনা করুন। ৩
৪. আপনি কি মনে করেন, উক্ত শাসক ছিলেন স¤্রাট আকবরের অগ্রদূত? আপনার মতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র