মূখ্য শব্দ মনসবদারি ব্যবস্থা, মীর বকশী, কাজী-উল-কুজ্জাত, রাজা টোডরমল ও সুবাদার
শাসনব্যবস্থা:
মুঘল শাসকদের মধ্যে সম্রাট আকবরই সর্বপ্রথম সুসংহত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। রাজ্যবিস্তারের
পাশাপাশি সাম্রাজ্যে শাসন সুদৃঢ়করণে মহামতি আকবর ছিলেন ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি উদারনীতি
অনুসরণ করেছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি ভারতীয়, পারসিক, তুর্কি ও সুলতানি আমলের শাসনব্যবস্থাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ
করেছিলেন। শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন ও স¤প্রসারণে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। পূর্ববর্তী দুই শাসক সম্রাট
বাবর ও সম্রাট হুমায়ুন যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত থাকার সাম্রাজ্যের সুদৃঢ়করণে কোন শাসন প্রণালী প্রবর্তন করতে পারেননি। কিন্তু
সম্রাট আকবর শুরু থেকেই তার প্রতিভাবান শাসননীতি ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন এর মাধ্যমে ভারতে দীর্ঘস্থায়ী মুঘল
সাম্রাজ্যের ভিত্তি রচনা করে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরবর্তীকালে তার উত্তরাধিকারীগণ যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত
হয়েছিলেন।
কেন্দ্রিয় শাসন ব্যবস্থা:
শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সম্রাট নিজে। সম্রাট নিজেই রাষ্ট্রের সর্বময়কর্তা ও সর্বপ্রধান ব্যবস্থাপক। আকবর সকল
ধর্মীয় গোড়ামীমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। রাজকার্যে তিনি তার সভাসদ, মন্ত্রী ও উচ্চ
রাজকর্মচারিদের মতামত গ্রহণ করতেন। কেন্দ্রিয় সরকারের অধীনে কতগুলো বিভাগের মাধ্যমে তিনি শাসনপ্রণালী কার্যকর
করতেন।
প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা:
সুবিশাল ভারতকে শাসন করার জন্য আকবর তার সাম্রাজ্যকে ১৫৮২ খ্রি. ১৫টি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করেন এবং সুবার
শাসক হিসেবে ১ (এক) জন সুবাদার নিয়োগ করেন।
সুবাগুলো হচ্ছে১) দিল্লি (২) আগ্রা (৩) আজমির (৪) বাংলা (৫) বিহার (৬) এলাহাবাদ (৭) অযোধ্যা (৮) মুলতান (৯) লাহোর (১০)
কাবুল (১১) গুজরাট (১২) মালব (১৩) খান্দেশ (১৪) বেরার ও (১৫) আহমেদনগর।
সুবাদার ছাড়াও প্রদেশের এ শাসনকার্যে একজন দিওয়ান, আমিল, ফৌজদার, কাজি ইত্যাদি পদের রাজকর্মচারি ছিলেন।
শাসনকার্যের সুবিধার জন্য প্রত্যেক সুবাকে কতগুলো সরকার ও প্রত্যেক সরকারকে কতগুলো পরগনায় বিভক্ত করেছিলেন।
শাসন সংস্কার:
রাজস্ব সংস্কার
রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য আকবর শের শাহের রাজস্ব নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। মোজাফফর খান তুরবতী ও
রাজা টোডরমল রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। টোডরমল ‘ইলাহীগঞ্জ’ নামক রাশের চেইন ব্যবহার করে
আবাদ যোগ্য জমির সঠিক পরিমাণ করেন। তিনি জমিকে উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী পোলাজ, পারউতি, চাচর ও বন্জর
এ চারভাগে বিভক্ত করেন। রাজস্ব হিসেবে ফসলের এক তৃতীয়াংশ রাষ্ট্র আদায় করত। এই ব্যবস্থা রায়তোয়ারি ব্যবস্থা বা
‘যাবতি’ পদ্ধতি নামেও পরিচিত। রাজস্বের উৎস হিসেবে ভূমি রাজস্ব ছাড়াও বাণিজ্য শুল্ক, টাকশাল, উপটোকন ইত্যাদি
হতেও রাজস্ব আয় হত।
বিচার ব্যবস্থা
আকবর ন্যায়বিচারের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। সপ্তাহের ১টি
দিন তিনি বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। তিনিই ছিলেন
সর্বোচ্চ বিচারক। তার পরই ছিলেন কাজী উল কুজ্জাত,
মুফতি ও মীর আদিল।
সামরিক ব্যবস্থা
সম্রাট আকবর পদাতিক, অশ্বারোহী, গোলন্দাজ ও নৌবাহিনী এই চার ভাগে তার সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করেন।
মীর-ই-বকশি, মীর-ই-আতিশ এবং আমির-ই-বহর ছিলেন
যথাক্রমে গোলন্দাজ পদাতিক বাহিনী বাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রধান। সম্রাট নিজে ছিলেন সেনাবাহিনীর
সর্বাধিনায়ক।
মনসবদারি ব্যবস্থা
‘মনসব’ শব্দের অর্থ পদ বা পদমর্যাদা। এই পদের
অধিকারীকে মনসবদার বলা হত। সমগ্র সেনাবাহিনীকে সুশৃংখলভাবে পরিচালনা করার জন্য সম্রাট এই ব্যবস্থা গ্রহণ
করেন। এই ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনসবদাররা দশ হাজারি পদ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দশজন সৈন্য
সংরক্ষণের বিধান ছিল। সাধারণত রাজপরিবারের সদস্য ও সম্ভ্রান্ত সভাসদগণ দশ হাজারি পদ পেতেন। আকবর ১৫৭৭
খ্রিস্টাব্দে এই ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। মনসবদারগণ জাত ও সওয়ার নামক ২টি পদমর্যাদা পেতেন। এদের মাসিক
বেতন ৩২০০ টাকা হতে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল।
আকবরের কৃতিত্ব
ঈশ্বরী প্রসাদের মতে, স¤্রাট আকবর শুধুমাত্র ভারতের ইতিহাসে নয় সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে ছিলেন একজন স্মরণীর
শাসক। মুঘল বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ও প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সম্রাট আকবর। বহুমুখী প্রতিভাধর ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের
এই সম্রাটের তুলনা তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতিতে ছিল বিরল। তিনি একাধারে ছিলেন শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও সংগঠক।
শাসনসংস্কার ও সাম্রাজ্য পরিচালনায় তিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ শাসক। আকবর শুধুমাত্র একজন সমরকুশলী ও সুশাসকই
ছিলেন না, তিনি ছিলেন একই সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক। বহু জ্ঞানী তার দরবার অলংকৃত
করেছিলেন। তাঁর রাজসভায় ‘নবরত্ম’ ছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত গুণী তানসেন, বীরবল প্রমুখ। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজস্ব
ব্যবস্থা, বিচার ও সামরিক বিভাগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি আমুল সংস্কার সাধন করেন। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষে আধুনিক
শাসনের রূপকার ও শ্রেষ্ঠ মুঘল সম্রাট।
শিক্ষার্থীর কাজ আকবরের কেন্দ্রিয় শাসন ও প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে লিখুন।
সারাংশ
সম্রাট বাবরের সদ্য প্রতিষ্ঠিত মুঘল সা¤্রাজ্যকে সম্রাট আকবর এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তিনি ছিলেন একাধারে
সমরকুশলী, রাজনীতিবিদ ও সুদক্ষ রাষ্ট্র সংগঠক। তিনি ছিলেন সমসাময়িক বিশ্বের অগ্রগণ্য ণৃপতি এবং ভারতের
সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।
ফতেহপুর সিক্রি
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৬
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১) আকবর তার সাম্রাজ্যকে কয়টি সুবায় বিভক্ত করেন?
(ক) ১১ (খ) ১২ (গ) ১৪ (ঘ) ১৫
২) রাজা টোডরমলের ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার নাম কি ছিল?
(ক) যাবতি ব্যবস্থা (খ) জমিদারী ব্যবস্থা (গ) কবুলিয়াত (ঘ) পাট্টা
৩) মুঘল বিচার ব্যবস্থার সর্বময় কর্তা কে ছিলেন?
(ক) কাজী-উল-কুজাত (খ) মুফতি (গ) সম্রাট (ঘ) উলেমাগন
৪) কত সালে মনসবদারি প্রথা চালু হয়?
(ক) ১৫৭৭ (খ) ১৫৭৮ (গ) ১৫৬০ (ঘ) ১৫৫৬
তারাশঙ্কর ছিলেন একজন প্রজাদরদী স্বৈরাচারী শাসক। ঐতিহাসিকগণ তাঁর শাসনব্যবস্থাকে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি শুধু বিশাল সা¤্রাজ্য রচনা করেই ক্ষান্ত ছিলেন না; তার সুষ্ঠু প্রশাসনের জন্য
এক অতি উৎকৃষ্ট শাসন প্রণালীর প্রবর্তন করে বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ শাসন সংস্কারক হিসেবে অপরিসীম খ্যাতি অর্জন করেন।
১. মনসব শব্দের অর্থ কি? ১
২. মনসবদারী প্রথা সম্পর্কে লিখুন। ২
৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের শাসন প্রনালীর সাথে আপনার পাঠ্যবইয়ের কোন শাসকের মিল রয়েছে বর্ণনা করুন। ৩
৪. বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ সংস্কারক হিসেবে পাঠ্যবইয়ে উল্লিখিত শাসকের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র