মূখ্য শব্দ দস্তর-উল-আমল, খুররম ও নুর-জাহান
সম্রাট জাহাঙ্গীর
সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র সেলিম ৩৬ বছর বয়সে ১৬০৫ খ্রি. ২৪ অক্টোবর নূর উদ্দীন
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজী উপাধি নিয়ে মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন শিক্ষিত, মার্জিত চরিত্র ও
আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সিংহাসনে আরোহণ করেই তিনি প্রজা কল্যাণের দিকে মনোনিবেশ করেন। স¤্রাট আকবর
আদর করে তাঁকে শেখু বাবা বলে ডাকতেন।
জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীঃ
দস্তর-উল-আমল
স¤্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি দস্তর-উল-আমল নামক ১২টি আইন প্রণয়ন করে ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত
স্থাপন করেন।
নওরোজ পালন
স¤্রাট জাহাঙ্গীর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য ১৬০৬ খ্রি. মার্চ মাসে
জাকজমকের সাথে নওরোজ উৎসব পালন করেন।
শাহজাদা খুসরুর বিদ্রোহ ও শিখগুরু অর্জুনের হত্যা
সম্রাটের জ্যেষ্ঠপুত্র খুসরু পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। রাজা মান সিং, খান-ই-আজম, আজিজ কোকা খুসরুকে
সমর্থন দান করেন। খুসরু পাঞ্জাবে পলায়ন করলে সেনাপতি দিলওয়ার খান জলন্ধরের যুদ্ধে খুসরুকে পরাজিত ও বন্দী
করেন। দশবছর কারারুদ্ধ থাকার পর অন্ধ খুসরু ১৬২২ খ্রি. মৃত্যুবরণ করেন। শিখগুরু অর্জুন শাহজাদা খুসরুকে বিদ্রোহী
অবস্থায় অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। সম্রাট তার নিকট অর্থের কৈফিয়ত তলব করলে অর্জুন উদ্ব্যত্ত প্রকাশ করেন।
সম্রাট তাকে রাজদ্রোহিতার অপরাধে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
মেবার বিজয় (১৬১৫ খ্রি.)
মেবারের রাজা বীর কেশরী রানা প্রতাপের পুত্র ছিলেন অমর সিংহ। স¤্রাট জাহাঙ্গীর স¤্রাট আকবরের নীতি অনুসরণ করে
মেরার জয় করার সংকল্প করেন। শাহজাদা পারভেজ, আব্দুল্লাহ খান ও মহব্বত খান এর অভিযান ব্যর্থ হয়। অবশেষে
১৬১৫ খ্রি. শাহজাদা খুররম অমর সিংহকে পরাজিত করে মেবার জয় করেন।
কাংড়া বা নাগরকেটি দুর্গ জয় (১৬২০ খ্রি.)
পাঞ্চাবের শাসক মূর্তজা খান কাংড়া দুর্গ দখলে ব্যর্থ হলে শাহজাদা খুররম সুরক্ষিত দুর্গটি ১৬২০ খ্রি. অধিকার করেন।
দাক্ষিণাত্য অভিযান
আহমেদ নগরের মন্ত্রী মালিক আম্বর মুঘল প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তিনি মারাঠাদেরকে তার
সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেন। ১৬১৭ খ্রি. খুররম মালিক আম্বরের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এবং আহমেদনগর দুর্গ
ও বালাঘাট অঞ্চল অধিকার করেন। এই বিজয় গৌরবে সম্রাট খুররমকে শাহজাহান (পৃথিবীর রাজা) উপাধি প্রদান করেন।
শাহজাহান ও মহব্বত খানের বিদ্রোহ
১৬২৩ খ্রি. শাহজাহান সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন কিন্তু মহব্বত খান ও পারভেজের নিটক পরাজিত হন।
সম্রাট তাকে ক্ষমা করেন। মূলত সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে মহব্বত খান বিদ্রোহ করেন
এবং সম্রাটকে কাবুল যাওয়ার পথে বন্দি করেন। নূরজাহানের বুদ্ধিমত্তায় সম্রাট মুক্তি লাভ করেন এবং মহব্বত খান
দাক্ষিণাত্যে পলায়ন করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬২৭ খ্রি. মৃত্যুবরণ করেন।
নূরজাহানের প্রভাব
নূরজাহানের প্রকৃত নাম মেহের-উন-নিসা। তিনি ছিলেন ইরানের ইস্পাহান হতে আগত ভাগ্য অম্বেষণকারী মির্জা গিয়াস
বেগের কন্যা। নুরজাহান ছিলেন অপূর্ব রূপসী ও বহুবিদ গুণের অধিকারী। যুবরাজ সেলিম নূরজাহান দ্বারা প্রভাবিত হলেন।
কিন্তু সম্রাট আকবরের নির্দেশে পারসিক যুবক আলীকুলি খানের সাথে নূরজাহানের বিবাহ সম্পন্ন হয়। আলীকুলী খানকে
বাংলার বর্ধমানে জায়গীর প্রদান করা হয়। কিন্তু ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি এক সামরিক অভিযানে মৃত্যুবরণ করেন। অতপর,
১৬১১ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট মেহের উন নিসাকে বিবাহ করেন এবং তার উপাধি দেন ‘নূর মহল’ (প্রাসাদের আলো) ও পরে
নূরজাহান (পৃথিবীর আলো)। সম্রাটের রাজকার্যে নূরজাহানের প্রভাব ছিল অপরিসীম। তার ভ্রাতা আসফ খান ও পিতা
মীর্জা গিয়াস বেগ রাজদরবারে উচ্চ পদে আসীন হন। সম্রাট তার প্রিয় সম্রাজ্ঞীর নামে মুদ্রা জারি করেন। নূরজাহান তার
প্রথম পক্ষের কন্যা লাভলী বেগমের সাথে জাহাঙ্গীরের কনিষ্ঠ পুত্র শাহরিয়ারের বিবাহ দেন। ১৬১২ খ্রি. আসফ খানের কন্যা
আরজুমান্দ বানুর সাথে শাহজাদা খুররমের বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং আসফ খান তার নিজ জামাতার সিংহাসন লাভ করার
প্রতি উচ্চাভিলাষী ছিলেন। এতে করে নূরজাহান এর জামাতা শাহরিয়ার এর সহিত খুররমের উত্তরাধিকার দ্ব›দ্ব প্রকট হয়ে
ওঠে। অবশেষে সম্রাটের মৃত্যুর পর শাহজাদা খুররম শাহরিয়ারকে পরাজিত করে মুঘল সিংহাসন দখল করেন। সম্রাট
জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর সম্রাজ্ঞী রাজনীতি হতে অবসর গ্রহণ করেন এবং লাহোরে তার একমাত্র কন্যা লাভলী বেগমকে নিয়ে
বাকী জীবন অতিবআহত করেন। ১৬৪৫ খ্রি. নূরজাহান মৃত্যুবরণ করেন। নূরজাহান ছিলেন মুঘল যুগের সবচেয়ে
আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের রমনী। তার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, বুদ্ধিমত্তা, উচ্চাকাঙ্খা, নানাবিধ গুণের উপস্থিতি তাকে সম্রাটের
নিকট অত্যন্ত প্রিয়ভাজন করে তুলেছিল। তাই সম্রাটের রাজনৈতিক জীবনে সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের প্রভাব ছিল অপরিসীম।
সম্রাট নিজেই কাব্য করে বলতেন,
জাহাঙ্গীরের চরিত্র ও কৃতিত্ব:
মুঘল সম্রাটের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর। তিনি তাঁর রাজ্য পরিচালনায় সম্রাট আকবরের নীতি অনুসরণ
করেন। তাঁর সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। তিনি সামরিক অভিযান পরিকল্পনা প্রস্তুত করতেন। তিনি
প্রশাসনে ন্যায় বিচারের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর শাসনকালে ইংরেজরা ভারতে বাণিজ্য করতে আসে। ১৬০৮ সালে
ক্যাপ্টেন হকিংস রাজা প্রথম জেমসের অনুরোধ পত্র নিয়ে তাঁর দরবারে আসেন। ১৬১৫ সালে টমাস রো পুনরায় তার
দরবারে আসেন। জাহাঙ্গীর শিল্প, সাহিত্য ও চিত্রকলার প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। তার সময়ে মুঘল চিত্রকলার চরম
উৎকর্ষ সাধিত হয়। সম্রাটের সঙ্গীতের প্রতিও বিশেষ অনুরাগ ছিল। তিনি তাঁর আত্মজীবনী তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী রচনা
করেন।
শিক্ষার্থীর কাজ নূরজাহানের প্রভাব মূল্যায়ন করুন।
সারাংশ
সম্রাট জাহাঙ্গীর রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর পিতার দেখানো পথই অনুসরণ করেন। কিন্তু তাঁর রাজত্ব কালে পুত্রদের
বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। অবশেষে শাহজাদা খুররম উত্তরাধিকারী হিসেবে বিজয়ী হন। তিনি ছিলেন সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের
দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৭
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১) সম্রাট জাহাঙ্গীরের ডাক নাম কি ছিল?
(ক) মুরাদ (খ) পারভিজ (গ) শেখু বাবা (ঘ) খুররম
২) কতসালে জাহাঙ্গীর সিংহাসনে আরোহণ করেন
(ক) ১৬০২ (খ) ১৬০৩ (গ) ১৬০৪ (ঘ) ১৬০৫
৩) নূরজাহান ও নুরমহল কার উপাধি ছিল?
(ক) মেহের উন নিসা (খ) আরজুমান্দবানু (গ) সালিমা বেগম (ঘ) যোধাবাঈ
৪) স¤্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনীর নাম কি?
(ক) আইন-ই-আকবরী (খ) আকবর নামা (গ) তুজুকই জাহাঙ্গীরী (ঘ) বাদশা নামা
আনিকা তার ভাইয়ের কাছ থেকে ভারতবর্ষের মুঘল সা¤্রাজ্যের এমন একজন শাসক সম্পর্কে অবগত হল, যার চরিত্রের
মধ্যে বিপরীত গুণাবলির সংমিশ্রন ছিল। তাঁর সিংহাসনের পশ্চাৎ শক্তি হিসেবে একজন মহীয়সী নারীর বিপুল প্রভাব ছিল।
ইউরোপীয়দের সাথেও তাঁর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। এছাড়াও তিনি তার সা¤্রাজ্যে বেশ কিছু সংস্কার সাধন করেছিলেন।
১. নূরজাহানের প্রকৃত নাম কি ছিল? ১
২. দস্তর-উল আমল সম্পর্কে লিখুন। ২
৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের সিংহাসনের পশ্চাতে এক মহীয়সী নারীর প্রভাব ছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করুন। ৩
৪. “উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের চরিত্রের মধ্যে বিপরীত গুণাবলির সংমিশ্রন ছিল”Ñপাঠ্যবইয়ের আলোকে তুলে ধরুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র