মূখ্য শব্দ জিজিয়া, ফতোয়া-ই-আলমগিরি, শিবাজী, রাজসিংহ, মীর-জুমলা ও অহমরাজ্য
সম্রাট আওরঙ্গজেব
মুঘল রাজবংশের শেষ শক্তিধর শাসক ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। তিনি ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের তৃতীয়
পুত্র। তার প্রকৃত নাম ছিল মুহিউদ্দিন মুহাম্মদ আলমগীর। তিনি দাক্ষিণাত্যের ধুদে নামক স্থানে ১৬১৮ খ্রি. জন্মগ্রহণ
করেন। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি আরবি, ফার্সি, তুর্কিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় দক্ষতা অর্জন
করেন। সামরিক দিক থেকেও তিনি পারদর্শিতার পরিচয় দেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের সুবাদারের
দায়িত্ব লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ১৬৪৫ খ্রি. গুজরাট, ১৬৪৮ থেকে ১৬৫২ খ্রি. পর্যন্ত সিন্ধু ও মুলতানের শাসনকর্তার
পদে নিয়োজিত ছিলেন।
সিংহাসনে আরোহণ
শাহজাহানের চারপুত্রের মধ্যকার গৃহযুদ্ধে আওরঙ্গজেব বিজয়ী হন। তিনি বৃদ্ধপিতা শাহজাহানকে আগ্রার দুর্গে বন্দি করে
১৬৫৮ খ্রি. সিংহাসন অধিকার করেন। আওরঙ্গজেব তাঁর প্রতিদ্ব›দ্বী দুই ভাই শাহ সুজা ও দারাশিকোকে পরাজিত করে
১৬৫৯ খ্রি. রাজ্য অভিষেক ঘটান এবং আবুল মুজাফ্ফর মুহিউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব আলমগীর বাদশাহ গাজী উপাধি
গ্রহণ করেন।
প্রাথমিক কার্যাবলী
সম্রাট আওরঙ্গজেব একজন নিষ্ঠাবান সুন্নি মুসলমান ছিলেন। তিনি মুঘল রাজ দরবারের ভোগ বিলাস পরিত্যাগ করেন।
সম্রাটের ঝরোকা দর্শন, নওরোজ উৎসব, সংগীত ও তাজিয়া মিছিল নিষিদ্ধ করেন। মসজিদ ও খানকাহ সংস্কার, নির্মাণ
এবং ইমাম ও সুন্নি ধর্মবেত্তাদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে দেন। প্রজাদের প্রায় ৪০ প্রকার কষ্টসাধ্য কর বাতিল করেন। মুদ্রায়
কলেমা অঙ্কন ও চন্দ্রমাসের বর্ষপঞ্জিও চালু করেন।
সাম্রাজ্যবিস্তারঃ
উত্তর-পূর্ব সীমান্তনীতি
উত্তর-পূর্ব সীমান্তনীতির অংশ হিসেবে আওরঙ্গজেব আসামে অভিযান প্রেরণ করেন। আসাম তখন অহমী হিন্দু জন জাতি
কর্তৃক শাসিত ছিল। ১৬৫৮ খ্রি. উত্তররাধিকার সংগ্রামের সময় আসাম সম্রাট শাহজাহানের সময়কার সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে।
আওরঙ্গজেব তার সেনাপতি মীর জুমলাকে বাংলার সুবাদারি অর্পণ করেন। মীর জুমলা ১৬৬১ খ্রি. আসামে অভিযান
পরিচালনা করেন। ১৬৬২ সালে কুচবিহার মুঘল অধিকারে আসে এবং এক নৌযুদ্ধে আসাম রাজ পরাজিত হন এবং ১৬৬৩
খ্রি. আসাম রাজা পুনরায় মুঘলদের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন।
সুবাদার শায়েস্তা খান
শায়েস্তা খান ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব এর মাতুল আসফ খানের পুত্র। মীর জুমলার মৃত্যুর পর আওরঙ্গজেব
শায়েস্তাখানকে বাংলার সুবাদার নিয়োগ করেন। আসামের রাজা জয়ধবজের মৃত্যুর পর আসাম ও কামরূপ রাজা
চক্রধবজের দখলে আসে। শায়েস্তা খান কামরূপও আসামে মুঘল আধিপত্য স্থাপনে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কুচবিহার
মুঘলদের পদানত হয়। ঠিক একই-সময়ে দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলায় পর্তুগীজ ও মগ জলদস্যুদের অত্যাচার বেড়ে যায়।
শায়েস্তা খান এক শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করেন এবং স›দ্বীপ দখল করেন। ১৬৬৬ সুবাদার শায়েস্তা খান এর পুত্র বুজুর্গ
উমেদ খান চট্টগ্রামকে আরাকানী জলদস্যু হতে মুক্ত করেন এবং নাম রাখেন ইসলামাবাদ।
উত্তর-পশ্চিম সীমান্তনীতি
সম্রাট আওরঙ্গজেব উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে বসবাসকারী ইউসুফ জাই, আফ্রিদি, খটক ইত্যাদি আফগান উপজাতিদের দমন
করার জন্য বদ্ধ পরিকর হন। ১৬৬৭ খ্রি. ইউসুফ জাই গোত্র মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাদের দলপতি ভাগু মোল্লার
অধীনে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাপতি শমসির খান, আমিন খান ও আটোকের ফৌজদার কালিম খান এই বিদ্রোহ
সফলভাবে দমন করেন। ১৬৭২ খ্রি. আফ্রিদি উপজাতি তাদের দলনেতা আকমল খানের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে। আটোক
থেকে কান্দাহার পর্যন্ত আফগান বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৭৪ খ্রি. তার সেনাপতি আকবর খান,
শাহজাদা আকবর ও উজির আসাদ খানকে নিয়ে পেশোয়ার এ উপস্থিত হন। সম্রাট বিদ্রোহ দমনে কূটনীতির আশ্রয় গ্রহণ
করেন। এতে আফগান ঐক্যের মাঝে ফাটল ধরে। ১৬৭৫ খ্রি. সীমান্তের বিদ্রোহ প্রশমিত হলে সম্রাট রাজধানীতে ফিরে
আসেন।
রাজপুত-নীতি
সম্রাট আকবর ও সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুসৃত রাজপুত নীতি সম্রাট আওরঙ্গজেব অনুসরণ করতে পারেনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে
তার রাজপুত নীতি ব্যর্থ হয়েছিল।
মারওয়ার অধিকার
১৬৭৮ খ্রি. যশোবন্ত সিংহের মৃত্যুর পর মারওয়ার রাজ্যে উত্তরাধিকার সংকট দেখা দেয়। তবে এক রাণীর গর্ভে শিশুপুত্র
জন্মলাভ করলে তার নামকরণ হয় অজিত সিংহ। সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে রাজদরবারে রেখে প্রতিপালন করতে চাইলে
রাজপুতরা এতে অপমানিত বোধ করেন এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সম্রাট যশোবন্ত সিংহের ভ্রাতুষ্পুত্র ইন্দ্রসিংহকে শাসক
নিয়োগ করেন কিন্তু তিনি রাজপুতদের দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সম্রাট তাকে পদচ্যুত করেন। এরপর সম্রাট শাহজাদা
আকবর ও আজমিরের ফৌজদার এর নেতৃত্বে অভিযান প্রেরণ করেন। ১৬৭৯ খ্রি. অবশেষে যোধপুর ও মারওয়ার মুঘল অধিকারে আসে।
মেবার বিজয় ও উদয়পুর চুক্তি
মারওয়ারের রাজপুত্র অজিত সিংহের মাতা ছিলেন মেবারের রাজকন্যা। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মেবারের রাজা উদয়
সিংহ মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই সময় জিজিয়া করকে কেন্দ্র করে রাজপুত ও সম্রাটের মধ্যকার দ্ব›দ্ব চরম
আকার ধারণ করে। অপর রাজপুত রাজা জয়সিংহ ও দুর্গাদাস রানা রাজসিংহের সাথে চুক্তি করেন। সম্রাট এতে ক্ষুব্ধ হন
এবং মেবার বিজয়ে অগ্রসর হন। রাজপুত শক্তি পরাজিত হয় এবং রানা রাজসিংহ পলায়ন করেন। মেবারের শাসনভার
যুবরাজ আকবরের উপর অর্পণ করা হয়। রানা রাজসিংহ মৃত্যুবরণ করলে তার উত্তরাধিকারী হন তার পুত্র জয়সিংহ।
ক্রমাগত মুঘল ও রাজপুত শক্তির মধ্যকার দ্ব›দ্ব সংঘাতে উভয় পক্ষই শান্তির পথ অনুসন্ধান করেন। ১৬৮১ খ্রি. উভয়
পক্ষের সম্মতিতে ১টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যার শর্তানুসারে জয়সিংহকে মেবারের রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
দাক্ষিণাত্য-নীতি
সম্রাট আওরঙ্গজেব রাজপুতনার সাথে শান্তি স্থাপন করে এবার দক্ষিণ ভারতের দিকে নজর দেন। তার দাক্ষিণাত্যনীতির
সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে ছিল মুঘল-মারাঠা সংঘর্ষ।
দাক্ষিণাত্যনীতির প্রেক্ষাপট
প্রথমত; দাক্ষিণাত্যনীতি ছিল মুঘলদের সাম্রাজ্য বিস্তারের অংশ। উত্তর ভারতের আধিপত্য বজায় রেখে দক্ষিণ ভারতেও
মুঘল শক্তি স¤প্রসারণের ইচ্ছাই ছিল আওরঙ্গজেব এর দাক্ষিণাত্যনীতির প্রধান উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয়ত; বিজাপুর, গোলকুন্ডা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিয়া মুসলিম রাজ্যগুলো মুঘল অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
সুতরাং সা¤্রাজ্যে স¤্রাট এ অবস্থা চলতে দিতে পারেন না।
তৃতীয়ত; বিজাপুর, গোলকুন্ডা নিয়মিত বার্ষিক কর প্রদানের অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল।
চতুর্থত; মারাঠারা এই সময় তাদের দলনেতা শিবাজীর নেতৃত্বে স্বাধীন মহারাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি তৎপর হয়। যা ছিল মুঘল
সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। আওরঙ্গজেবের সাথে মারাঠাদের সংঘর্ষের বিবরণ নি¤œরূপ:
ক) প্রথম পর্যায়
ভারতে মারাঠাশক্তির অগ্রদূত ও মহানায়ক ছিলেন শিবাজী। শিবাজী ছিলেন শাহজী ভোসলে ও জিজাবাই এর পুত্র। তিনি
১৬২৭ খ্রি. কর্ণাটে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই ভারতীয় সংস্কৃতির মহানায়কদের বীরত্বগাথা শুনে শিবাজী স্বাধীন
হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেরণা পান। যৌবনে তিনি মারাঠা শক্তিকে নেতৃত্ব দিয়ে এক ঐক্যবদ্ধ জাতিতে রূপান্তরিত করেন।
মূলত ১৬৪৬ খ্রি. হতে ১৬৭৪ খ্রি. পর্যন্ত মুঘলদের সাথে শিবাজী এক দীর্ঘ সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। আওরঙ্গজেব এর
প্রধানমন্ত্রী আফজাল খানকে শিবাজী হত্যা করলে সম্রাট শায়েস্তা খান ও শাহজাদা মুয়াজ্জেমকে দাক্ষিণাত্যে সুবাদার করে
পাঠান। শাহজাদা মুয়াজ্জেম কিছুটা সফল হন। তিনি ২৫টি দুর্গ দখল করতে সমর্থ হন। শিবাজী মুঘলদের সাথে পুরন্দরের
চুক্তি সম্পন্ন করে। ১৬৭৪ খ্রি. শিবাজী ছত্রপতি উপাধি লাভ করে এবং এক হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৬৮০ খ্রি. শিবাজী
মৃত্যুবরণ করে।
খ) দ্বিতীয় পর্যায়
১৬৮০-৮৭ খ্রি. পর্যন্ত সময়কালে, শিবাজীর মৃত্যুর পর মারাঠা শক্তি শিবাজীর পুত্র শম্ভুজীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।
দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গোলকুন্ডা মুঘলদের করদ রাজ্য ছিল। তারা চুক্তি অস্বীকার করলে সম্রাট ১৬৬৫, ১৬৮০ ও
১৬৮২ সালে পরপর জয়সিংহ, দিলির খান ও শাহজাদা মোয়াজ্জেম কে দিয়ে ৩টি অভিযান প্রেরণ করেন। অবশেষে ১৬৮৬
সালে বিজাপুর মুঘল অধিকারে আসে। সম্রাট ১৬৮৫ খ্রি. গোলকুন্ডার সুলতান কুতুবশাহের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা
করেন। ৮ মাস দুর্গ অবরোধের পর গোলকুন্ডার প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ পনি উৎকোচ গ্রহণ করে দুর্গের ফটক খুলে দেন।
গোলকুন্ডা অবশেষে মুঘলদের হস্তগত হয়।
গ) তৃতীয় পর্যায়
এই পর্যায়ে সম্রাট ১৬৮৭-১৭০৭ পর্যন্ত মারাঠা নেতা শম্ভুজী ও অন্যান্য মারাঠা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এক কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত
ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সম্রাট মারাঠাদের সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। শম্ভুজীর পর মারাঠা নেতৃত্ব দেন
শাহুজী, শিবাজীর অপর পুত্র রাজারাম, তার বিধবা স্ত্রী তারাবাঈ ও পুত্র তৃতীয় শিবাজী। সম্রাটের দাক্ষিণাত্যনীতি ছিল
মুঘলদের জন্য অশনি-সংকেত ও সার্বভৌমত্বের এক বড় চ্যালেঞ্জ।
আওরঙ্গজেব এর ধর্মনীতি
নিষ্ঠাবান সুন্নী ধর্মাবলম্বী সম্রাট আওরঙ্গজেব এর ধর্মনীতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে।
জিন্দাপীর বা দরবেশ বাদশাহ উপাধিপ্রাপ্ত সম্রাটকে অনেক হিন্দু ঐতিহাসিক ধর্মান্ধ ও হিন্দুবিদ্বেষী বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিশেষ করে যদুনাথ সরকার, এস আর শর্মা, এ, এল শ্রীবাস্তব ও লেনপুল প্রমুখ সম্রাট আওরঙ্গজেব কে ধর্মান্ধ বলেছেন।
তারা সম্রাটের বিরুদ্ধে কতিপয় বর্ণবাদী অভিযোগ এনেছেন যেমন হিন্দু মন্দির ধ্বংস, জিজিয়া কর চালু, রাজ দরবারে
হিন্দুদের পৃষ্ঠপোষকতা কমানো ইত্যাদি। তবে এই অভিযোগগুলো ছিল ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। তিনি যেসব হিন্দু মন্দির
ধ্বংস করেছেন তা ছিল বিদ্রোহীদের অস্ত্র ভান্ডার। এটি ছিল তার রাজনৈতিক পদক্ষেপ কোন ধর্মবিদ্বেষী উদ্দেশ্য নয়।
১৬৭৯ খ্রি. অমুসলিম নাগরিকদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য সম্রাট জিজিয়া কর চালু করেন। এটি ছিল তাঁর অর্থনৈতিক
সংকট নিরসনের পদক্ষেপ। এছাড়াও সম্রাটের রাজদরবারের মদ্যপান, সংগীত, নৃত্যকলা প্রদর্শন, ঝরোকা দর্শন, ব্যয় বহুল
নওরোজ উৎসব ও বিলাসীতাকে ইসলামের পরিপন্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এটি ছিল তাঁর ধর্মনিষ্ঠার উদাহরণ কোন
রাজনৈতিক বা ধর্মবিদ্বেষী মনোভাব থেকে সম্রাট এটি করেননি। স¤্রাট আওরাঙ্গজেব রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে ইসলামী
শাসনপদ্ধতি অনুসরণ করতেন।
চরিত্র ও কৃতিত্ব:
সহজ সরল জীবনযাপনকারী আওরঙ্গজেব ছিলেন উদ্যমী, বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী। কোনরূপ ভোগবিলাস তাকে স্পর্শ করতে
পারেনি। তিনি কুরআনে হাফিজ ছিলেন এবং নিজ হস্তে কুরআন নকল করতেন ও টুপি সেলাই করতেন। ইসলামধর্মে তার
প্রগাঢ় পান্ডিত্য ছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ মুঘল শাসক। তিনি ছিলেন সুদক্ষ প্রশাসনিক জ্ঞানসম্পন্ন,
ন্যায়পরায়ণ ও নিষ্ঠাবান শাসক। আওরঙ্গজেব এর মত সুদক্ষ যোদ্ধা ও সমরকুশলী ণৃপতি মুঘল বংশে ছিল এক উজ্জল
নক্ষত্রের মত। ঐতিহাসিকরা বলেন, “লেখনী ও তরবারি তার হাতে সমান দক্ষতায় শোভা পেত”। তাঁর সময়ে সমগ্র মুঘল
সাম্রাজ্য ২১ টি সুবায় বিভক্ত ছিল। সম্রাট ছিলেন শিক্ষা ও জ্ঞানের একজন পৃষ্ঠপোষক। তিনি নিজেও আরবি ফার্সি ভাষায়
সুপন্ডিত ছিলেন। তাঁর সময়ে ‘ফতোয়া-ই-আলমগিরি’ নামক আইন সংকলন রচিত হয়। এছাড়াও ‘মাসীর-ই-আলমগিরি’
বা আলমগিরনামা, ‘মুনতা খাব আল জাবুর’ তাঁর সময়ে রচিত হয়। সম্রাট একজন সুদক্ষ আরবি লিপিকার ছিলেন। এই
মহান শাসক ১৭০৭ খ্রি. মৃত্যুবরণ করেন।
শিক্ষার্থীর কাজ স¤্রাট আওরঙ্গজেবর এর ধর্মনীতি লিখুন।
সারাংশ
সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ শাসক। তাঁর শাসনামল ছিল বিদ্রোহ বিশৃংখল ও সংগ্রামমুখর।
তিনি অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সচেষ্ট হন। তাঁর রাজপুতনীতি, ধর্মীয়নীতি
ও দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘসংগ্রাম শাসনামলের উল্লেখযোগ্য দিক। এছাড়া তিনি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে
আফগান বিদ্রোহীদের দমন ও দক্ষিণ ভারতের শিয়া রাজ্যগুলোকে করদ রাজ্যে রূপান্তর ও রাজপুত শক্তিকে কঠোরভাবে
দমন করে সাম্রাজ্য সুদৃঢ় করেন। সফলতা ও ব্যর্থতা মিলিয়ে আওরঙ্গজেব ছিলেন সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ মুঘল শাসক। তারপর
ধীরে ধীরে মুঘল বংশ দুর্বল হয়ে পড়ে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৯
১) মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ সফল শাসক কে ছিলেন?
ক) আকবর খ) জাহাঙ্গীর গ) আওরঙ্গজেব ঘ) বাবর
২) কোন মুঘল শাসক জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন করেন
ক) বাবর খ) আকবর গ) শাহজাহান ঘ) আওরঙ্গজেব
৩) আওরঙ্গজেব এর উপাধি কি ছিল?
ক) জহিরুদ্দিন খ) নাসিরুদ্দিন গ) নুরউদ্দিন ঘ) বাদশাহ আলমগীর
মুঘল বংশের ‘ক’ শাসক ধর্মীয় গুণাবলির জন্য ইতিহাসে জিন্দাপীর হিসেবে খ্যাত। বলা হয়ে থাকে যে, স্পেনের ক্ষত
যেমন বীর নেপোলিয়নকে ধ্বংস করে, দাক্ষিণাত্য ক্ষত তেমনি উক্ত শাসককে ধ্বংস করে। কোন কোন ঐতিহাসিক মন্তব্য
করেছেন তাঁর ধর্মীয় নীতি ও দাক্ষিণাত্যনীতি মুঘল সা¤্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী ছিল।
১. ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে কে আলমগীর উপাধি ধারণ করে নিজেকে স¤্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন? ১
২. সামুগড়ের যুদ্ধ সম্পর্কে লিখুন। ২
৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘ক’ শাসকের ধর্মীয় নীতি ও তার ফলাফল আলোচনা করুন। ৩
৪. আলোচ্য শাসকের ধর্মনীতি ও দাক্ষিণাত্যনীতি মুঘল সা¤্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী ছিল?Ñ যুক্তি উপস্থাপন করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র