মুঘল সাম্রাজ্যের পতন: কারণ ও ফলাফল

মূখ্য শব্দ নাদির শাহ, আহমদ শাহ আবদালী, হিন্দু নবজাগরন ও সিপাহী বিদ্রোহ
আওরঙ্গজেব পরবর্তী মুঘল স¤্রাটগণ
১৭০৭ খ্রি. সম্রাট আওরঙ্গজেব মৃত্যুবরণ করেন। আওরঙ্গজের পরবর্তী মুঘল শাসকগণ হলেন যথাক্রমে;
১। বাহাদুর শাহ (১৭০৭-১২) ২। জাহান্দর শাহ (১৭১২-১৩)
৩। ফররুখ শিয়ার (১৭১৩-১৯) ৪। মুহাম্মদ শাহ (১৭১৯-৪৮)
৫। আহমদ শাহ (১৭৪৮-৫৪) ৬। দ্বিতীয় আলমগীর (১৭৫৪-৫৯)
৭। দ্বিতীয় শাহ আলম (১৭৫৯-১৮০৬) ৮। দ্বিতীয় আকবর (১৮০৬-৩৭)
৯। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭-৫৮)
মুঘল বংশের সর্বশেষ শাসক ছিলেন দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। তিনি কবি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তবে ইংরেজদের বেতনভোগী
পুতুল সম্রাট ছাড়া তিনি আর কিছুই ছিলেন না। ১৮৫৭ সালে ইংরেজ শাসন বিরোধী সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার
জন্য তাকে দায়ী করে ইংরেজরা এবং রেঙ্গুনে (ইয়াংগুন) নির্বাসন দেয়। সেখানেই তার জীবনাবসান ঘটে এবং এরই মধ্য
দিয়ে ১৫২৬ সালে জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মহাপরাক্রমশালী মুঘল সা¤্রাজ্যের অবসান ঘটে।
মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণঃ
প্রথমত; শাসকের দুর্বলতা: আওরঙ্গজেব পরবর্তী সকল সম্রাটগণ ছিলেন দুর্বল এবং ব্যক্তিগত ও চারিত্রিক শৌর্য বীর্যের
অভাবহেতু কোন শাসকই বিশাল মুঘল সাম্রাজ্যের ভাঙন ঠেকাতে পারেননি।
দ্বিতীয়ত; বিশাল সাম্রাজ্য: উত্তরে আফগানিস্তান হতে আসাম এবং কাশ্মীর হতে মহীশুর পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল
বিশাল। এত বিশাল সাম্রাজ্যকে সুরক্ষার জন্য যে দক্ষ ও যোগ্য শাসক ও শাসনব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল তা আওরঙ্গজেব
পরবর্তী শাসকদের মধ্যে ছিল না।
তৃতীয়ত; সুষ্ঠ উত্তরাধিকার নীতি: মুঘল সাম্রাজ্যে কোন উত্তরাধিকার নীতি ছিল না। এর ফলে সম্রাটের জীবদ্দশাতেই পিতার
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও ভ্রাতৃ সংগ্রাম পরিলক্ষিত হত। জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব ও পরবর্তী শাসকগণ প্রায় সবাই
নিষ্কন্টকভাবে সিংহাসন পাননি। বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে সিংহাসন দখল করতে হয়েছিল।
চতুর্থত; এককেন্দ্রিক রাজতন্ত্র: শাসনতান্ত্রিকভাবে মুঘল সাম্রাজ্য ছিল এককেন্দ্রিক রাজতান্ত্রিক শাসন। ১৭ জন সম্রাটের
মধ্যে মাত্র ৬ জন যোগ্য শাসক ছিলেন। ব্যক্তিগত দুর্বলতাও দক্ষতার অভাবে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিশৃংখলা রোধ করা
শাসকদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
পঞ্চমত; আদর্শহীন রাজনীতি: আদর্শহীনতা ও নৈতিকতার অভাবে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল।
পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং সকলেই স্বার্থের জন্য কোন না কোন পক্ষ অবলম্বন করেছিল।
ষষ্ঠত; নৈতিকস্খলন: শাসক ও অভিজাত শ্রেণির মধ্যকার নৈতিক স্খলন, ইন্দ্রিয়াসক্ততা ও বিলাস ব্যসন, হেরাম প্রথা মুঘল
সাম্রাজের ভিতকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
সপ্তমত সামরিক দুর্বলতা: গৌরবের যুগের সেই শৌর্যবীর্য মুঘলদের রক্তে আর ছিল না। শ্রেষ্ঠ শাসক ও তাদের সুদক্ষ
সেনাপতি যারা ভারতীয় পারসিক, তুর্কি ও আফগান বংশোদ্ভূত ছিলেন তাদের অভাবে মুঘল সেনাবাহিনীর ভিত দুর্বল হয়ে
পড়ে। সৈন্যদের বিশৃংখলা, বিলাসীতা, ব্যক্তিগত স্বার্থ নৈপুণ্যতাকে ঢেকে দিয়েছিল।
অষ্টমত অর্থসংকট: বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন ও বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিপালনে যে অর্থের দরকার ছিল তা মুঘল শাসকগণ আহরণ
করতে পারেনি। বিলাসীতা, ইমারত, স্থাপত্য ও প্রশাসনিক ব্যয় মুঘল কোষাগার শূণ্য করে দিয়েছিল।
নবমত কেন্দ্র-বিচ্ছিন্নতা: বিভিন্ন আঞ্চলিক শাসক, সুবাদার, নবাব নিজ নিজ অঞ্চলে কেন্দ্রের দুর্বলতা ও দূরত্বের সুযোগ
নিয়ে স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে, এতে কেন্দ্র তার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
দশমত হিন্দু জাতীয়তাবাদ: শিবাজীর নেতৃত্বে দাক্ষিণাত্যে মারাঠা শক্তির উত্থান ও একক হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা মুঘল
সার্বভৌমত্বের প্রতি সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল। ক্রমাগত মুঘল-মারাঠা বিদ্রোহ সাম্রাজ্যের ভিতকে দুর্বল করে দেয়।
প্রত্যক্ষ কারণ:
প্রথমত নাদির শাহ এর অভিযান: পারস্যের শাসক নাদির শাহ ১৭৩৯ সালে কান্দাহার থেকে মুঘল সাম্রাজ্যে আক্রমণ
করেন। দুর্বল শাসক মুহাম্মদ শাহ তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে সন্ধি করতে বাধ্য হন। নাদির শাহ ভারত হতে বিপুল
ধনরতœ, কোহিনূর, হীরা ও ময়ুর সিংহাসন পারস্যে নিয়ে যান।
দ্বিতীয়ত আহমদ শাহ আবদালীর অভিযান: আহমদ শাহ আবদালী শিখ ও মারাঠাদের সাথে যুদ্ধ করেন। ১৭৫৬ খ্রি. ২য়
আলমগীরকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করেন। সম্রাট আপোষ করে তার অস্তিত্বকে রক্ষা করেন কিন্তু এতে মুঘল
সাম্রাজ্যের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়।
তৃতীয়ত ইউরোপীয়দের আগমন: বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে আগত ইউরোপীয় বণিকগণ ক্রমশই শক্তিশালী হতে থাকে এবং
রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ শুরু করে। তারা মুঘল প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের সুযোগ নেয় এবং রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
চতুর্থত সিপাহী বিদ্রোহ ও চূড়ান্ত আঘাত: ১৮৫৭ সালে ইংরেজবিরোধী সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হলে ক্ষমতাবান ইংরেজরা
তার দায়ভার শেষ শাসক ২য় বাহাদুর শাহের কাধে অর্পণ করে। তাকে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করে এবং সেখানেই তিনি
মৃত্যুবরণ করেন। এরই মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ৩০০ বছরের মুঘল শাসনের অবসান ঘটে।
মুঘল শাসনের পতনের ফলাফল:
মুঘল শাসনের পতনের প্রভাব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। মুঘল শাসনের পতনের ফলে:
১) ভারতবর্ষের রাজনীতির ঐক্য শেষ হয়ে যায়
২) ইংরেজ প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
৩) ভারতবর্ষ ইংরেজ শোষণের শৃংখলে আবদ্ধ হয়।
৪) ভারতীয় মুসলমানদের পতনের সূত্রপাত হয়।
সারাংশ
মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন ছিল ইতিহাসের এক মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় কারণই এই
বিশাল সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ার পিছনে দায়ী ছিল। সর্বোপরি, সম্রাটদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা, আঞ্চলিক স্বাধীনতা, হিন্দু
নবজাগরণ, ও বৈদেশিক আক্রমণ বিশেষকরে ইংরেজদের রাজনৈতিক ও সাম্রাজ্যবাদী নীতি মুঘল বংশের পতনের
সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কারণ হিসাবে বিবেচিত। মুঘল শাসনের পতনের ফলে ভারত প্রায় ২০০ বছরের পরাধীনতার শৃংখলে
আবদ্ধ হয় এবং সেই ভারতবর্ষের ঐশ্বর্য ও আভিজাত্যের যবনিকাপাত ঘটে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.১০
১) মুঘল বংশে মোট কতজন শাসক ছিলেন?
ক) ১৭ জন খ) ১৮ জন গ) ১৯ জন ঘ) ২০ জন
২। সর্বশেষ মুঘল শাসক কে ছিলেন?
ক) ২য় বাহাদুর শাহ খ) ২য় আকবর গ) ২য় আলমগির ঘ) ২য় শাহ আলম
৩। সিপাহী বিপ্লবের দায়ভার ইংরেজরা কার উপর অর্পণ করে?
ক) আকবর খ) শিবাজী গ) ২য় বাহাদুর শাহ ঘ) সুজাউদ্দৌলা
৪। আহমেদ শাহ আবদালী কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন?
ক) মারাঠা খ) রাজপুত গ) ইউরোপীয় ঘ) বাংলা
বিল্লাল হোসাইন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বললেন- ভারত উপমহাদেশে পর্যায়ক্রমে বহু রাজবংশের উত্থান ও পতন
ঘটেছে। বিশ্ব ইতিহাস বড় নির্মম, আজ যে জাতি উন্নতির চরম শিখরে কাল তার পতন ঘটবেই। তেমনি মুঘল বংশ ও দীর্ঘ
৩০০ বছর ভারতবর্ষের শাসন পরিচালনা করেও পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
১. মুঘল বংশের পতন ঘটে কত খ্রিস্টাব্দে? ১
২. দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ সম্পর্কে কি জানেন? ২
৩. দীর্ঘ ৩০০ বছরের প্রতিষ্ঠিত এই রাজবংশটির পতনের কারণগুলো আপনার পাঠ্যবইয়ের আলোকে তুলে ধরুন। ৩
৪. স¤্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের ক্ষমতাচ‚্যতির সঙ্গে সঙ্গে মুঘল শাসনের পতন ঘটে- আপনার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দিন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]