মূখ্য শব্দ ভকিল, মীর সামান, মীর বকশি সদর-উস-সুদুর, কাজী-উল-কুজ্জাত, তানসেন ও সুবাদার
স¤্রাট আকবর ও হুমায়ুন মুঘল সা¤্রাজ্যের চিত্র রচনা করলেও মুঘল প্রশাসন ব্যবস্থা মূলত: আকবরেরই সৃষ্টি।
আকবর ভারতীয় এবং বৈদেশিক শাসন ব্যবস্থার সংমিশ্রনে মুঘল প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, নি¤েœ
সংক্ষিপ্ত রূপে মুঘল প্রশাসন ব্যবস্থার উপর আলোকপাত করা হলো।
মুঘল প্রশাসন ব্যবস্থা
মুঘল প্রশাসন ব্যবস্থা দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। প্রথমত; কেন্দ্রিয় শাসন ও দ্বিতীয়ত; প্রাদেশিক শাসন
কেন্দ্রিয় শাসনব্যবস্থা
মুঘল কেন্দ্রিয় শাসনের মধ্যমণি ছিলেন সম্রাট নিজে। তিনি ছিলেন আইনপ্রণেতা এবং সকল বিষয়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কারী।
সম্রাট ছিলেন ধর্মীয়, সেনাবাহিনী ও প্রশাসন যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। তার ক্ষমতা ছিল অসীম।
উজির: সম্রাটের পরেই এই পদাধিকারী ব্যক্তি ছিলেন মূলত সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। সম্রাট ও অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে তিনি
যোগসূত্র হিসেবে কাজ করতেন।
দিউয়ান: কেন্দ্রিয় সরকারের অর্থ বিষয়ক ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন দিউয়ান।
মীর বকশি: কেন্দ্রের সামরিক ব্যবস্থাপনার প্রধান কর্মকর্তার নাম ছিল মীর বকশি। সৈন্য নিয়োগ, বেতন প্রশিক্ষণ ভাতা
প্রদান ইত্যাদি দায়িত্ব ছিল তার।
মীর সামান: মীর সামান বা খান-ই-সামান ছিলেন রাজকীয় গৃহস্থালীর প্রধান।
সদর-উস-সুদুর: সাম্রাজ্যের কেন্দ্রের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এর প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন সদর উস-সুদুর।
কাজী-উল-কুজ্জাত: কাজী-উল-কুজ্জাত বা প্রধান কাজী ছিলেন সম্রাট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় প্রধান।
প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা
কেন্দ্রের ক্ষমতা বন্টনের অবিকল রূপ ছিল প্রাদেশিক শাসন কাঠামোতে।
সুবাদার: সুবা বা প্রদেশের প্রধান। সম্রাট কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত সুবার সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রধান।
দিউয়ান: প্রাদেশিক শাসনের প্রধান অর্থ ও রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন দিউয়ান।
কাজী: প্রাদেশিক কাজী, যিনি কেন্দ্রের কাজী-উল-কুজাত দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন।
বকসী: প্রাদেশিক সামরিক বিভাগের প্রধান ছিলেন দিউয়ান।
রাজ্য শাসনের সুবিধার্থে সা¤্রাজ্যকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। মুঘল প্রশাসনিক
স্তরবিন্যাসের স্বরূপ ছিল নি¤œরূপ:
প্রশাসনিক স্তর: মোট ৩টি প্রশাসনিক ইউনিটে সব প্রদেশ বিভক্ত ছিল
(র) সরকার বা জেলা-প্রধান কর্মচারী ফৌজদার
(রর) পরগনা-প্রধান কর্মচারী শিকদার
(ররর) গ্রাম-প্রধান কর্মচারী মুকাদ্দেম।
মুঘল শাসনামলে আর্থ-সামাজিক অবস্থাঃ
ক) মুঘল অর্থনীতি
অর্থনৈতিক দিক থেকে মুঘল সা¤্রাজ্য ছিল সমৃদ্ধশালী। এই সময় স্থল ও নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্য স¤প্রসারিত হয়। আগ্রা,
লাহোর ও বাংলা বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে সুনাম লাভ করে। বণিকদের নিরাপত্তা ও সরাইখানার ব্যবস্থা করা হয়। এই সময়
সুতিবস্ত্র ও চিনি, চাল, গম ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হত। লেনদেনের জন্য মুদ্রার প্রচলন ছিল। মুদ্রার নাম ছিল
তাম্রমুদ্রা, দাম, ফুলুম ইত্যাদি। কৃষি ও শিল্পপণ্য তখন উৎপাদিত হত। কার্পাস, তামাক, নীল ও পশম উৎপন্ন হত। ঢাকার
মসলিন ছিল এই সময়ে জগৎ বিখ্যাত।
খ) সামাজিক অবস্থা
মুঘল সমাজব্যবস্থা মূলত ৩টি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল,
(র) অভিজাত শ্রেণি: এই স্তরে ছিলেন সম্রাট, মন্ত্রী, সেনাপতি, আমির ওমারাহ। তাঁরা উচ্চবিলাসী ও প্রাচুর্যপূর্ণ জীবন
যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।
(রর) মধ্যবিত্ত শ্রেণি: মূলত, সরকারি বিভিন্ন কর্মচারী, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বণিক শ্রেণী ব্যবসায়ী ও মহাজন এই
শ্রেণী ভুক্ত ছিলেন এদের জীবনযাপন ছিল সাধারণ ও রুচিশীল।
(ররর) নিম্নশ্রেণি: সর্বশেষ স্তর ছিল নিম্নশ্রেণি। এরা ছিল কৃষক, শ্রমিক, কারিগর, দাস ও সেবক ইত্যাদি। এরা খুব নগণ্য
পোশাক পরিধান করত ও অনেকটা শৃংখলিত জীবন যাপন করতো। এদের জীবন ও জীবিকা ছিল কষ্টসাধ্য। সমাজে
বহুবিবাহ রীতি প্রচলিত ছিল। বাল্যবিবাহ, সহমরণ ও সতীদাহ প্রথা হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।
মুসলিম সমাজ ঈদ উৎসব, বিবাহ ও নওরোজ উৎসব অত্যন্ত জাকজমকের সাথে পালন করতো। হিন্দু স¤প্রদায়ও পালাপার্বণ, পূজা-অর্চনা ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতো।
সাংস্কৃতিক অবস্থা
ভারতীয় উপমহাদেশে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সুকুমার বৃত্তি চর্চার সিংহভাগ কৃতিত্ব মুঘলদের। শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা
ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই মুঘল শাসন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছে। এই সময় ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও নানা রকম সামাজিক উৎসব
সমাজে প্রচলিত ছিল। বিবাহ, নামকরণ, আকিকা ও খৎনা উৎসব প্রচলিত ছিল। এই সব উৎসবে অভিজাত রুচির খাবারের
প্রচলন মুঘলরাই করেছিল। উৎসবকে কেন্দ্র করে এবং রাজদরবারে সংগীত এর প্রচলন ছিল। সম্রাট আকবরের
রাজদরবারে তানসেন নামক বিখ্যাত সংগীতশিল্পী পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। এছাড়াও ছিলেন রামদাস, বিলাস খান ও
সুরদাস প্রমুখ সংগীতশিল্পী। মুঘলসমাজে নারীরা সম্মানিত ছিল। এ যুগে কয়েকজন শ্রেষ্ঠ নারীর কথা আমরা জানতে
পেরেছি। মুঘল শাসকগণ শিক্ষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। অনেক সম্রাট নিজেই তাঁদের আত্মজীবনী রচনা
করেছিলেন। ইতিহাস চর্চা এই যুগে একটি রীতিতে পরিনত হয়। সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীর এর রাজত্বকাল ছিল মুঘল
চিত্রকলার শ্রেষ্ঠ সময়। ভারতীয়, পারসীক, তৈমুরীয় ও ইউরোপীয় রীতির চিত্রকলার বিকাশ ঘটে এই সময়।
সারাংশ
ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘলদের ইতিহাস শুধুমাত্র রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে নয় বরং মুঘলরা ভারতবর্ষে আর্থ-
সামাজিক, প্রশাসনিক শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনাকারী। আজকের এই
উপমহাদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য তার সিংহভাগ অর্জিত হয়েছে মুঘলদের তিনশত বছরের শাসনামলে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.১১
১। মুঘল প্রশাসনযন্ত্রকে কয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়?
ক) ২টি খ) ৩টি গ) ৪টি ঘ) ৫টি
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র
ইউনিট ৩ পৃষ্ঠা ১০৪
২। ভকিল’ পদটি দ্বারা কি বুঝায়?
ক) উজির খ) প্রধানমন্ত্রী গ) সেনাপতি ঘ) দ্বাররক্ষী
৩। অর্থ ও রাজস্ব বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হত-
ক) দিউয়ান খ) সেরেস্তাদ্বার গ) ভকিল ঘ) কানুনগো
৪। প্রদেশের প্রধান কর্তাকে কি বলা হত?
ক) কাজী খ) সুবাদার গ) দিউয়ান ঘ) আমির
১. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাজবংশের শেষ শাসক কে ছিলেন? ১
২. উক্ত বংশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে লিখুন। ২
৩. উক্ত বংশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন। ৩
৪. আপনি কি মনে করেন, বহি:শত্রæর আক্রমণে উক্ত রাজবংশটির পতন ঘটে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে যুক্তি তুলে ধরুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র