বাংলায় খলজি শাসন (১২০৬-১২২৭ খ্রি.)
মূখ্য শব্দ বাংলার নৌবহর, নাসির আমিরুল মুমেনীন ও গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি
[
ভ‚মিকা
সেন শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম¥দ বিন বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়
বাংলার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। কেননা এ বিজয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলায় মুসলিম শাসন
প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাত ঘটালেও তাঁর অকাল মৃত্যুর
কারণে তিনি এখানকার শাসন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করে যেতে পারেননি। ফলে ইবনে বখতিয়ারের মৃত্যুর পর বাংলায় ক্ষমতার
দ্ব›দ্ব দেখা দেয়। এ কারণে বখতিয়ারের বঙ্গ বিজয় থেকে শুরু করে ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের স¦াধীনতা
ঘোষণা পর্যন্ত প্রায় দেড়শত বছর ছিল বাংলার ইতিহাসের গোলাযোগপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর সময়। এ সময় প্রাদেশিক
শাসনকর্তাগণ দিল্লির অধীনতা স¦ীকার করলেও অনেকে বিদ্রোহী হয়ে স¦াধীনতা ঘোষণা করেন। দিল্লি থেকে বাংলার দূরত্ব,
বাংলার ভৌগোলিক অবস্থা সেনাশক্তি প্রেরণের অসুবিধা, সর্বোপরি শাসনকর্তাদের স¦াধীনচেতা মনোভাবের কারণে
অনেকেই দিল্লির প্রতি আনুগত্য অস¦ীকার করতেন। তখন দিল্লির অধীনে ছিল খলজি মালিকদের শাসন তুর্কি সুলতানদের
শাসন (১২২৭-৮১ খ্রি.) এবং বলবনী শাসন (১২৮১-১৩২০ খ্রি.)।
শিরাণ খলজি
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির মৃত্যুর পর তাঁর তিন সহযোদ্ধা মুহম্মদ শিরাণ খলজি, হুসামউদ্দিন ইওয়াজ
খলজি ও আলী মর্দানের খলজির মধ্যে ক্ষমতার দ্ব›দ্ব শুরু হয়। খলজি মালিক ও সৈন্যরা এ সময় মুহম্মদ শিরাণ খলজিকে
নেতা নির্বাচিত করেন। শিরাণ খলজি মাত্র এক বছরকাল শাসকের দায়িত্ব পালন করলেও তিনি নিজ যোগ্যতাবলে আলী
মর্দান খলজিকে বন্দি করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলায় কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসে। কিন্তু ধূর্ত আলী মর্দান
খলজি কৌশলে পালিয়ে দিল্লির সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবকের নিকট আশ্রয় নিলে বাংলার রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে
পড়ে।
হুসাম উদ্দিন ইওয়াজ খলজি
শিরাণ খলজির মৃত্যুর পর হুসামউদ্দিন ইওয়াজ খলজি (১২০৮-১২১০ খ্রি.) দিল্লির অধীনস্থ শাসক হিসেবে দেবকোটের
শাসক নিযুক্ত হন। কিন্তু মাত্র দুই বছর পর আলী মর্দান খলজি দিল্লির সুলতানের সহায়তা নিয়ে দেবকোটে ফিরে আসলে
হুসাম উদ্দিন ইওয়াজ খলজি স্বেচ্ছায় শাসন ক্ষমতা ছেড়ে দেন।
আলী মর্দান খলজি
হুসাম উদ্দিন স্বেচ্ছায় শাসনক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ায় আলী মর্দান খলজি (১২১০-১২ খ্রি.) বিনা বাঁধায় শাসক নিযুক্ত হন।
আলী মর্দান খলজি দিল্লির সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক কর্তৃক নিযুক্ত হলেও কুতুবউদ্দিনের মৃত্যুর পর তিনি ‘আলাউদ্দিন’
উপাধি গ্রহণ করে স¦াধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি রাজ্যের সীমানাও বৃদ্ধি করেন। তাঁর রাজ্যে অরাজক অবস্থা বিরাজমান
ছিল। এ অবস্থা নিরসনের জন্য অসংখ্য খলজি আমির তাঁর নির্দেশে প্রাণ হারান। দরিদ্র, দুর্বল ও শান্তি প্রিয় লোকেরা চরম
দুর্দশায় পতিত হয়। আলী মর্দান অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারীভাবে রাজ্য শাসন করায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমেই অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে
থাকে। অবশেষে তাঁর বিরোধী আমিরগণ আলী মর্দানের কর্মকাÐে বিরক্ত হয়ে তাঁকে হত্যা করে হুসামউদ্দিন ইওয়াজকে
বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খলজি
হুসামউদ্দিন ইওয়াজ খলজি ‘সুলতান গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি’ (১২১২-২৭ খ্রি.) উপাধি গ্রহণ করে পুনরায় ১২১২
খ্রিস্টাব্দে লখনৌতির সিংহাসনে উপবেশন করেন। তিনি বাংলার মুসলিম রাষ্ট্র শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করতে তৎপর হন। এ
ক্ষেত্রে তিনি কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং রাজ্যে শান্তি স্থাপন করে রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন। রাজ্য
স¤প্রসারণের উদ্দেশ্যে নিয়ে তিনি বাংলার ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি বিশাল ও সুসজ্জিত নৌবহর গঠন করেন।
এতে নৌ পথে আক্রমণের আশঙ্কাও কমে যায়। তাছাড়া তিন লখনৌতির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য বমন কোট
নামক স্থানে দুর্গ নির্মাণ করেন। লখনৌতিতে শান্তি স্থাপন করে ইওয়ায় খলজি পার্শ্ববর্তী হিন্দুরাজ্য যেমন কামরূপ, উড়িষ্যা,
দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গ ও ত্রিহুতে আক্রমণ চালনা করেন। ফলে এ সকল রাজ্যের রাজারা গিয়াসউদ্দিনকে উপটৌকন ও কর প্রদানে বাধ্য হন।
দিল্লির সুলতান ইলতুৎমিশের সাথে গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খলজির সংঘর্ষ
দিল্লির সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ গিয়াসউদ্দিনের রাজ্য বিস্তার ও শক্তিমত্তা সুনজরে দেখেননি। এছাড়া দিল্লির অধীনতা
অস্বীকার করে স্বাধীনতা ঘোষণা করায় গিয়াস উদ্দিনকে দিল্লি সালতানাতের প্রতি হুমকি স¦রূপ মনে করে সুলতান
ইলতুৎমিশ স¦য়ং তাঁকে দমনের জন্য অগ্রসর হন। ইওয়াজ খলজি স্থল পথে তাঁর সেনাদল ও নৌপথে রণতরী নিয়ে অগ্রসর
হন। দিল্লি বাহিনীর সাথে এক সংঘর্ষের পর তিনি একটি সন্ধি চুক্তি স¦াক্ষর করেন। ইওয়াজ খলজি দিল্লির সুলতানকে ৮০
লক্ষ টাকা ও ৩৮টি হাতি উপহার দেন এবং তাঁর নামে খুৎবা পাঠ ও মুদ্রা প্রচলনে স¦ীকৃত হন। ইলতুৎমিশ মালিক
আলাউদ্দিন জানীকে বিহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে দিল্লি ফিরে যান। এ সুযোগে ইওয়াজ খলজি আলাউদ্দিন জানীকে
সরিয়ে বিহার দখল করেন। অতঃপর গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি ১২২৭ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বাংলা আক্রমণ করেন। এ সময়
রাজধানী লখনৌতি অনেকটা অরক্ষিত ছিল। এ সুযোগে ইলতুৎমিশের নির্দেশে পুত্র নাসির উদ্দিন মাহমুদ লখনৌতি
আক্রমণ করেন। সংবাদ পেয়ে ইওয়াজ খলজি দ্রæত রাজধানীতে ফিরে আসেন এবং যুদ্ধে লিপ্ত হন। যুদ্ধে তিনি পরাজিত
ও বন্দি এবং পরবর্তীতে নিহত হন। ফলে লখনৌতির রাজনৈতিক ক্ষমতা আবারও দিল্লির অধীনস্থ হয়ে পড়ে।
গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খলজির কৃতিত্ব
গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি একজন দক্ষ ও সুশাসক ছিলেন। তাঁর সুশাসনে দেশে শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি
ন্যায় বিচারচক ও প্রজারঞ্জক শাসক ছিলেন। প্রজার কল্যাণে তিনি সর্বদাই সচেষ্ট ছিলেন। সামরিক মেধা, ক‚টনীতি ও
প্রশাসনিক দক্ষতার অধিকারী ইওয়াজ খলজি বাংলায় প্রথম নৌবহর গঠন এবং সর্ব প্রথম রৌপ্য মুদ্রা চালু করেন। মুদ্রায়
বাগদাদের খলিফার ন্যায় “নাসির আমিরুল মুমেনীন’’ বা “কাসিম আমিরুল মুমেনীন’’ ইত্যাদি নাম ও পদবি ব্যবহার
করেন। তিনি শিল্প-সাহিত্যের একজন উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি সুফি, দরবেশ ও আলেমদের জায়গীরের ব্যবস্থা
করেন। তাঁর শাসনামলে অনেক পীর দরবেশ মধ্য এশিয়া থেকে বাংলায় আসেন এবং ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত হন।
মুসলিম সমাজের উন্নতির জন্য তিনি বহু মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ্ নির্মাণ করেন।
শিক্ষার্থীর কাজ গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খলজির নৌ-বহর গঠনের ফলাফল লিখুন।
সারসংক্ষেপ :
বখতিয়ার খলজির মৃত্যুর পর বাংলায় তাঁর সহযোদ্ধা খলজি আমিরদের মধ্যে ক্ষমতার দ্ব›দ্ব ও সংঘর্ষ শুরু। খলজি
আমিরদের মধ্যে মুহাম¥দ শিরাণ খলজি, হুসাম উদ্দিন ইওয়াজ খলজি বা গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি, আলী-মর্দান
খলজি প্রমুখ শাসকগণ বাংলা শাসন করেন। তাঁদের সাথে দিল্লির সুলতানদের সুস¤পর্ক না থাকায় খলজি মালিকগণ
অধিককাল ধরে বাংলা শাসন করতে পারেননি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.৩
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। লখনৌতির শাসকদের মধ্যে কে প্রথম সুলতান উপাধি গ্রহণ করেন?
ক) মুহাম¥দ শিরণ খলজি খ) গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি
গ) আলীমর্দান খলজি ঘ) মালিক ইখতিয়ার উদ্দিন বলকা খলজি
২। কোন খলজি শাসক আব্বাসি খলিফার নাম মুদ্রায় অঙ্কন করেন ?
ক) গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি খ) মুহাম¥দ শিরণ খলজি
গ) আলীমর্দান খলজি ঘ) মালিক সাইফউদ্দিন আইবক
৩। বাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম নৌ-বাহিনী গড়ে তোলেন কে?
ক) বখতিয়ার খলজি খ) শিরাণ খলজি
গ) আলী মর্দান খলজি ঘ) গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খলজি
হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর মাধ্যমে আরবে উমাইয়া খিলাফতের যাত্রা শুরু হয়। অতীব ক‚টকৌশল অবলম্বন করে তিনি
ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। আরব বিশ্বে তিনিই প্রথম নৌবাহিনী গঠন করেন। তিনি মুদ্রা
জারি ও খুৎবা পাঠ করেছিলেন।
ক. বখতিয়ার খলজীর পূর্ণ নাম কী? ১
খ. প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ দিল্লির অধীনতা স্বীকার করতেন না কেন? ২
গ. উদ্দীপকের উমাইয়া শাসকের সাথে বাংলার খলজি বংশের কোন শাসকের সাদৃশ্য রয়েছে? ৩
ঘ. উদ্দীপকে সাদৃশ্যপূর্ণ বাংলার শাসকের কৃতিত্ব উল্লেখ করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র