বাংলায় তুর্কি শাসন (১২২৭-১২৮১ খ্রি.)

মূখ্য শব্দ তুর্কি, মুঘিস উদ্দিন ও বুগরা খান
দিল্লির সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের নিকট পরাজিত ও নিহত গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খলজির মৃত্যুর পর
১২২৭ খ্রি. হতে ১২৮৭ খ্রি. পর্যন্ত ষাট বছর বাংলা দিল্লি সালতানাতের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। এ সময়
দিল্লির সুলতান কর্তৃক মনোনীত ১৫ জন প্রাদেশিক শাসনকর্তা বাংলা শাসন করেন। এদের মধ্যে দশ জন ছিলেন মামলুক
বা দাস। তবে তারা সবাই তুর্কি ছিলেন বলে এ যুগকে তুর্কি শাসনামল বলাই যুক্তি সঙ্গত। বাংলায় তুর্কি শাসনের সময়
দিল্লিতে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বিরাজমান ছিল। বাংলার মত দূরবর্তী প্রদেশের প্রতি দিল্লির সুলতানদের তৎপর হওয়ার
সুযোগ ছিল না। বাংলার তুর্কি শাসকগণ অনেকটা স¦াধীনভাবে দেশ পরিচালনা করতেন। নিচে বাংলায় তুর্কি শাসকদের
ধারাবাহিক শাসন কার্যক্রম সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
নাসিরুদ্দিন মাহমুদ (১২২৭-১২২৯ খ্রি.): সুলতান ইলতুৎমিশের পুত্র, অযোধ্যার শাসনকর্তা নাসিরুদ্দিন মাহমুদ ছিলেন
বাংলার প্রথম তুর্কি শাসক। তিনি গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজিকে পরাজিত করে অযোধ্যার সাথে বাংলাকে একত্রিত
করেছিলেন। তিনি মাত্র দেড় বছর বাংলা শাসন করেন।
মালিক ইখতিয়ার উদ্দিন বলকা খলজি (১২২৯-১২৩০ খ্রি.): ১২৩১ খ্রি. সুলতান ইলতুৎমিশ বিহারের শাসনকর্তা মালিক
আলাউদ্দিন জানীকে লখনৌতির শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তিনি মালিক ইখতিয়ার উদ্দিন বলকা খলজি উপাধি ধারণ
করেন। তিনি মাত্র এক বছর কয়েক মাস বাংলা শাসন করেন।
মালিক সাইফুদ্দিন আইবক (১২৩২-১২৩৫ খ্রি.): ইলতুৎমিশ আলাউদ্দিন জানীকে অপসারণ করে বিহারের শাসনকর্তা
মালিক সাইফুদ্দিন আইবককে লখনৌতির শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন একজন তুর্কি ক্রীতদাস। তিন বছর
কৃতিত্বের সাথে তিনি বাংলা শাসন করেন।
আওর খান আইবক (১২৩৫-১২৩৬ খ্রি.): সুলতান ইলতুৎমিশের মৃত্যু হলে দিল্লিতে গোলযোগ দেখা দেয়। এ সুযোগে
আওর খান আইবক লখনৌতির ক্ষমতা দখল করে নেন। তবে অল্পকাল পরেই বিহারের শাসনকর্তা তুঘরিল তুঘান খানের
হাতে তাঁর পরাজয় ঘটে।
তুঘরিল তুঘান খান (১২৩৬-১২৪৫ খ্রি.): আওর খানকে পরাজিত করে তুঘরিল তুঘান খান ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলার
শাসনক্ষমতা দখল করেন। তিনি অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে ৯ বছর বাংলা শাসন করেন।
মালিক কমরউদ্দিন তমর খান (১২৪৫-১২৪৭ খ্রি.): তুঘরিলের মৃত্যুর পর মালিক কমরউদ্দিন তমর খান বাংলার শাসনভার
লাভ করেন। তিনি মাত্র দুই বছর লখনৌতি শাসন করেন।
জালাল উদ্দিন মাসুদ জানি (১২৪৭-১২৫১ খ্রি): তমর খানের পর জালাল উদ্দিন মাসুদ বাংলা শাসন করেন। তিনি
লখনৌতিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। তিনি ১২৫৫ খ্রি.‘‘মুঘিস উদ্দিন’’ উপাধি ধারণ করে স¦াধীনতা ঘোষণা
করেন। ১২৫৭ খ্রি. তিনি কামরূপ আক্রমণ করতে গিয়ে পরাজিত ও নিহত হন।
সুলতান মুঘিসউদ্দিন উযবক (১২৫১-১২৫৭): জালালুদ্দিনের মাসুদ জানির পর অযোধ্যার শাসনকর্তা মালিক ইখতিয়ার
উদ্দিন উযবক বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তিনি প্রায় ছয় বছর বাংলা শাসন করেন।
মালিক ইযউদ্দিন বলবন-ইউযবকী (১২৫৭-১২৫৯): সুলতান মুঘিসউদ্দিনের নিহত হওয়ার পর মাসুদ জানির জামাতা
মালিক ইযউদ্দিন ইউযবক লখনৌতির সিংহাসন অধিকার করেন এবং দু’বছর প্রায় স¦াধীনভাবে বাংলা শাসন করেন।
তাজউদ্দিন আরসালান খান (১২৫৯-১২৬৫ খ্রি.): তিনি খাওয়ারিযমের জনৈক আমিরের পুত্র ছিলেন। তিনি বাহুবলে লখনৌতির সুলতান নিযুক্ত হন।
মুহাম¥দ তাতার খান (১২৬৫-১২৬৮ খ্রি.): আরসালান খানের পর তাতার খান বাংলার শাসনকর্তা হন। তিনি দিল্লির প্রতি
আনুগত্য প্রকাশ করলেও কয়েক বছরের মধ্যে দিল্লির সাথে বাংলার স¤পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
শেরখান (১২৬৮-১২৭২ খ্রি.): তাতার খানের পর শেরখান লখনৌতির সিংহাসনে বসেন। তিনি প্রায় চার বছর বাংলা শাসন
করেন।
আমিন খান (১২৭২ খ্রি.): শেরখানের পর সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন কর্তৃক অযোধ্যার শাসনকর্তা আমিন খান বাংলার
শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তিনি তুঘরিল খান কর্তৃক পরাজিত হন।
সুলতান মুঘিসউদ্দিন তুঘরিল খান (১২৬৮-১২৮১ খ্রি.): বাংলার তুর্কি শাসকদের মধ্যে তুঘরিল খান ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ।
তিনি পূর্ব বাংলায় আধিপত্য স্থাপনে সক্ষম হয়েছিলেন। তুঘরিল খান ‘মুঘিসউদ্দিন’ উপাধি নিয়ে স¦াধীনতা ঘোষণা করেন।
এ সংবাদে দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন অত্যন্ত বিচলিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে বলবন প্রেরিত পর পর দুটি অভিযান-ই
ব্যর্থ হয়। অবশেষে বলবন ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজেই কনিষ্ঠ পুত্র বুগরা খানকে সাথে নিয়ে বাংলায় তুঘরিলের বিরুদ্ধে অভিযান
করেন। এই শাস্তিমূলক অভিযানে ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে তুঘরিল সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের হাতে পরাজিত ও নিহত হন।
সপরিবারে তুঘরিলকে হত্যা ও লখনৌতিকে ধ্বংস করে স¦ীয়পুত্র বুগরা খানকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে বলবন দীর্ঘ
তিন বছর পর দিল্লি প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু বুগরা খান তাঁর শাসিত বাংলা প্রদেশকে দিল্লি সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে
আবার স¦াধীন দেশে পরিণত করেন।
সারসংক্ষেপ :
বাংলায় তুর্কি যুগে প্রায় পনের জন শাসক ছিলেন। এ সময় দিল্লিতে গোলযোগ ও কোন্দোল থাকায় তুর্কি
শাসকগণ প্রায় স¦াধীনভাবেই রাজ্য শাসন করেন। দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন এ শাসনের অবসান
ঘটিয়ে বাংলায় বলবনী শাসনের সূচনা করেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.৪
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। তুঘরিল তুঘান খান বাংলা শাসন করেন?
ক) সাত বছর খ) আট বছর গ) নয় বছর ঘ) দশ বছর
২। বুগরা খান দিল্লির কোন সুলতানের পুত্র ছিলেন ?
ক) সুলতান ইলতুৎমিশ খ) সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন
গ) সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ঘ) সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুগলক
৩। বাংলায় মোট কতজন তুর্কি শাসক ছিলেন ?
ক) ১৪ জন খ) ১৫ জন চ) ১৬ জন গ) ১৭ জন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
বাংলার শাসকগণ সবসময় স্বাধীনভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করতে পছন্দ করতেন। তাই অনেক শাসকই বারবার বিদ্রোহী
হয়েছেন ও স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। তেমনই বাংলায় ইলিয়াসশাহী বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন ইলিয়াস শাহ। তিনি
সমগ্র বাংলা একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিলে। তিনি দিল্লির শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
ক. কতজন তুর্কি প্রাদেশিক শাসনকর্তা বাংলা শাসন করেন? ১
খ. বাংলায় তুর্কি শাসকদের সম্পর্কে লিখুন। ২
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত শাসকের সাথে বাংলার কোন তুর্কি শাসকের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. ‘উদ্দীপকের রাজবংশের মতো বাংলায় তুর্কি শাসকদেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ Ñবক্তব্যটি মূল্যায়ন করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]