মূখ্য শব্দ বুগরা খান, আমির খসরু, পাÐুয়া ও বাহরাম শাহ
ভূমিকা
বাংলায় তুর্কি শাসকগণ দিল্লির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করায় দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন বাংলার
শাসক মুঘিস উদ্দিন তুঘরিল-এর বিরুদ্ধে নিজপুত্র বুগরা খানকে প্রেরণ করেন। বুগরা খান তুঘরিলকে দমন
করে নিজে এখানে অবস্থান করতে শুরু করলে বাংলায় সরাসরি বলবনী শাসনের সূত্রপাত ঘটে। নিচে বাংলায় বলবনী
শাসকদের ধারাবাহিক শাসন কার্যক্রম সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
বুগরা খান (১২৮৭-১২৯০ খ্রি.)
দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মুঘিস উদ্দিন তুঘরিলকে হত্যা করলে বাংলায় স¦াধীন তুর্কি
শাসনের অবসান ঘটে। তিনি বাংলাকে দিল্লির অধীনস্থ প্রদেশে পরিণত করে পুত্র নাসিরুদ্দিন মাহমুদ খান বা বুগরা খানকে
লখনৌতির শাসনকর্তা নিযুক্ত করে দিল্লিতে ফিরে যান। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন পুত্র
বুগরা খান দিল্লির অধীনে শাসন পরিচালনা করেন। কিন্তু ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পর বুগরা খান বাংলাকে দিল্লির
নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলায় স্বাধীন সালতানাতের প্রতিষ্ঠা করেন।
বুগরা-কায়কোবাদ দ্ব›দ্ব
বুগরা খান ‘‘সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ’’ উপাধি ধারণ করে ১২৮৭ খ্রি. থেকে ১২৯১ খ্রি. পর্যন্ত স¦াধীন সুলতান
হিসেবে বাংলা শাসন করেন। পিতা বলবনের অনুরোধ সত্তে¡ও দিল্লির শাসনভার গ্রহণ না করায় বলবন বুগরা খানের পুত্র
কায়কোবাদকে দিল্লির শাসক নিযুক্ত করেন। কিন্তু তরুণ সুলতান আরাম আয়াসে দিনাতিপাত করতে থাকেন। এ সুযোগে
মন্ত্রী নিজামউদ্দিন রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে উঠে ও রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে বুগরা খান দূর থেকে পুত্রকে পত্র লিখেও
সৎপথে আনতে ব্যর্থ হন। বিরক্ত হয়ে তিনি একটি বাহিনী নিয়ে দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সংবাদে কায়কোবাদ
সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হলে সরযু নদীর উভয় তীরে দু, পক্ষের শিবির স্থাপিত হয়। কিন্তু পুত্র কাযকোবাদ স্বপ্রণোদিত হয়ে
পিতা বুগরা খানের নিকট সমঝোতার প্রস্তাব দিলে উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়। পিতা-পুত্রের এ মিলনের ঘটনাকে কেন্দ্র
করে ‘ভারতের তোতা পাখি’ খ্যাত কবি আমির খসরু ‘কিরান-উস-সাদাইন’ নামক কালজয়ী কাব্য গ্রন্থ রচনা করেন। বুগরা
খান পুত্রকে রাজ্য শাসন সংক্রান্ত অনেক উপদেশ দিয়ে বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন। এভাবে দিল্লির সুলতান বাংলার
স্বাধীনতাকে স¦ীকার করে নেয়। বুগরা খান তাঁর রাজ্যকে বিহার, সাতগাঁও, বঙ্গ (পূর্ববঙ্গ) এবং দেবকোট (উত্তরবঙ্গ)-এ
চারটি প্রদেশে বিভক্ত করেন। তিনি বেশিদিন শাসনকার্য পরিচালনা করেননি। পুত্র কায়কোবাদ নিহত হলে তিনি সে¦চ্ছায়
পুত্র কাইকাউসের উপর রাজ্য শাসনের ভার দিয়ে সিংহাসন পরিত্যাগ করেন।
সুলতান রুকন উদ্দিন কায়কাউস (১২৯১-১৩০১ খ্রি.)
বুগরা খান স্বেচ্ছায় পুত্র কায়কাউস এর হাতে বাংলা ও বিহারের শাসনক্ষমতা অর্পণ করলে কায়কাউস ১২৯১ খ্রি. সিংহাসনে
বসেন। তিনি প্রায় দশ বছর কৃতিত্বের সাথে রাজত্ব করেন। দিল্লিতে তুর্কি-মামলুকদের পতন ঘটিয়ে খলজিগণ ক্ষমতা দখল
করলে বহু তুর্কি বাংলায় চলে আসেন। দিল্লির খলজি সুলতানদের আমলে বাংলা আক্রান্ত না হওয়ায় বাংলার সুলতান
কায়কাউস নির্বিঘেœ শক্তি বিস্তার ও শাসন সুদৃঢ় করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় বহু মুসলিম সুফি, আলেম, ফকির
দরবেশ বাংলায় এসে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও মুসলিম সংস্কৃতি বিস্তারের চেষ্টা করেন। এ সকল আলেম ও সুফিদের মধ্যে
কাজী রুকনউদ্দিন সমরকন্দী, শেখ জালাল উদ্দিন তাবরেজী ও মাওলানা শেখ শরফউদ্দিন আবু তাওয়ামা সবিশেষ
উল্লেখযোগ্য ছিলেন। সুলতানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বাংলায় বিভিন্ন স্থানে অনেক মসজিদ ও খানকাহ নির্মিত হয়। হিন্দু
মুসলিম নির্বিশেষে পীর-দরবেশদের খানকায় গমনের ফলে বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ স¤পর্ক
গড়ে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটে।
সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৩০১-১৩২২ খ্রি.)
রুকনউদ্দিন কায়কাউসের পর সুলতান হন শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ। তিনি একুশ বছর বাংলা শাসন করেন। মেধা ও
যোগ্যতাবলে প্রথমে তিনি বিহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। একজন বিজেতা হিসেবেও তিনি সুনাম অর্জন করেন। সুলতান
শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের রাজত্বকালে বাংলার মুসলিম রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোনারগাঁও ও
সাতগাঁও ছাড়াও ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চল তাঁর সময়ে মুসলমানদের কর্তৃত্বাধীনে আসে। তাঁর সময় সুফি-দরবেশগণ
বাংলায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারে নিবেদিত ছিলেন। ফিরোজ শাহ একজন শক্তিশালী ও বিচক্ষণ সুলতান ছিলেন। তিনি
লখনৌতি হতে পাÐুয়ায় তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং পাÐুয়ার নাম দেন ফিরোজাবাদ। ফিরোজ শাহ তাঁর
রাজত্বের শেষ বার বছর পশ্চিম বঙ্গ ও বিহারের উপর তার কর্তৃত্ব অক্ষুণœ রেখেছিলেন। বাংলা মুসলিম রাজ্য স¤প্রসারণে
তাঁর অপরিসীম অবদান ছিল।
শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের পুত্রদের মধ্যেকার দ্ব›দ্ব
সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর তিন পুত্র যথা: শিহাবউদ্দিন বুগরা শাহ, নাসিরউদ্দিন ইব্রাহিম শাহ ও
গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাঁধে। তেজস¦ী ও উচ্চাকাঙ্খী বাহাদুর শাহ লখনৌতির সিংহাসন অধিকার
করলে তাঁর কনিষ্ঠ ভাই নাসির উদ্দিন ইব্রাহিম দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুগলকের সাহায্য প্রার্থনা করেন। গিয়াসউদ্দিন
তুঘলক বাহাদুর শাহের বিরুদ্ধে একটি সৈন্য দল প্রেরণ করেন। বাহাদুর শাহ যুদ্ধে পরাজিত হলে পূর্ববঙ্গে তাতার খানকে
এবং পশ্চিম বঙ্গে নাসিরউদ্দিন ইব্রাহিম শাহকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর পরাজিত গিয়াসউদ্দিন বাহাদুরকে
সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুগলক বন্দি করে দিল্লি নিয়ে যান। গিয়াস উদ্দিন তুগলকের মৃত্যুরপর মুহাম¥দ বিন তুগলক দিল্লির
সুলতান হয়ে প্রায় তের বছর বাংলার উপর তার কর্তৃত্ব বজায় রাখেন। তিনি এ সময় গিয়াসউদ্দিন বাহাদুরকে কারাগার
থেকে মুক্তি দেন। গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর বাংলায় চলে আসেন। মুহাম¥দ বিন তুগলক সোনারগাঁও এর শাসনভার যৌথভাবে
তাঁকে এবং তাতার খানকে দেন। এদিকে তাতার খান ‘বাহরাম শাহ’ উপাধি নিয়ে সোনারগাঁওয়ে মুহাম¥দ বিন তুগলকের
প্রতিনিধি হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর বিদ্রোহী হয়ে নিজ নামে মুদ্রা জারি করেন।
এতে বাহরাম শাহ তাঁর বিরুদ্ধে ১৩৩০ খ্রি. অভিযান পরিচালনা করেন। সংঘর্ষে বাহাদুর শাহ পরাজিত ও নিহত হন। এর
ফলে বাংলায় বলবনী বংশের শাসনের অবসান ঘটে এবং স্বাধীন সুলাতানি শাসনের সূত্রপাত হয়।
সারসংক্ষেপ :
বুগরা খান ছিলেন বাংলায় বলবনী বংশের প্রথম শাসক। কাইকাউস ও শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ ছিলেন এ
বংশের উল্লেখযোগ্য শাসক। শামসুদ্দিন ফিরোজের মৃত্যুর পর তার পুত্রদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ দেখা দেয়।
এ সুযোগে দিল্লির তুগলক শাসকগণ বাংলার শাসকদের ভাগ্যবিধাতা বনে যান। বাহরাম শাহ কর্তৃক
গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর সংঘর্ষে নিহত হলে বাংলায় বলবনী বংশের অবসান ঘটে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। বাংলায় বলবনী শাসনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন?
ক) কাইকাউস খ) বুগরা খান গ) শাসমউদ্দিন ফিরোজ শাহ ঘ) গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর
২। শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহ রাজধানী লখনৌতি থেকে স্থানান্তর করেন?
ক) সাতগাঁও-এ খ) সোনারগাঁও-এ গ) পাÐুয়ায় ঘ) ফিরোজাবাদে
৩। ‘বাহরাম শাহ’ উপাধি ধারণ করেন?
ক) কাইকাউস খ) গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর গ) তাতার খান ঘ) নাসিরউদ্দিন ইব্রাহিম
৪। পিতা-পুত্রের দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়েছিল-
ক) বলবন-কায়কাউসের মধ্যে খ) বুগরা খান-কায়কোবাদের মধ্যে
গ) ফিরোজ শাহ-বুগরা খানের মধ্যে ঘ) বুগরা খান-কায়কাউসের মধ্যে
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
ভারতবর্ষের মুঘলদের একজন পরাক্রমশালী শাসক ছিলেন স¤্রাট শাহজাহান। স¤্রাট শাহজাহানের জীবিত অবস্থায়ই তার
চার পুত্রের মধ্যে উত্তরাধিকার দ্ব›েদ্বর সূত্রপাত হয়। এ দ্ব›েদ্ব আওরঙ্গজেব বিশেষ নেতৃত্বগুণ ও কৌশলী বুদ্ধিমত্তার কারণে
জয়ী হয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ভারতবর্ষ কৃতিত্বের সাথে শাসন করেছিলেন।
ক. বাংলার শাসক বুগরা খানের উপাধি কী? ১
খ. বুগরা খান কেমন শাসক ছিলেন উল্লেখ করুন। ২
গ. উদ্দীপকের ভ্রাতৃদ্ব›েদ্বর সাথে বাংলার কোন বলবনী শাসকের সাদৃশ্য রয়েছে? ৩
ঘ. উদ্দীপকের সাদৃশ্যপূর্ণ বলবনী শাসকের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করুন। ৪
উত্তরমালা:
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৪.১ : ১. ক ২. গ ৩. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৪.২ : ১. গ ২. ক ৩. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৪.৩ : ১. খ ২. গ ৩. ঘ ৪. ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৪.৪ : ১. গ ২. ঘ ৩. ক ৪. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৪.৫ : ১. গ ২. ঘ ৩. ক ৪. খ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র