মূখ্য শব্দ বাংলার আফগানি যুগ, হাবশি, শ্রীকৃষ্ণ বিজয় ও মহাভারত
ভ‚মিকা
বাংলার স্বাধীন সুলতানি শাসনামলে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে ইলিয়াস শাহী রাজবংশের
শাসনের সূচনা করেন। এই বংশের শাসনের প্রথম দিকে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ, সিকান্দর শাহ ও গিয়াসউদ্দিন আজম
শাহ প্রমুখ সুলতানগণ যোগ্য শাসক ছিলেন। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের মৃত্যুর পরবর্তী ইলিয়াস শাহী শাসকদের দুর্বলতার
সুযোগে হিন্দু জমিদার রাজা গণেশ ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনে একটি ছেদ টেনে দেন। কিন্তু ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে রাজা
গণেশের বংশের পতন ঘটলে বাংলায় পুনরায় ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর এ বংশের শাসকগণ
১৪৮৭ খিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা শাসন করেন।
নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৪২-১৪৫৯খ্রি.)
গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মৃত্যুর পর ইলিয়াস শাহী শাসকদের শাসন দুর্বলতার সুযোগে রাজা গণেশ কর্তৃক স্বল্পকালীন
হিন্দু শাসনের সূচনা হয়। গণেশের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে দেশের অরাজক অবস্থা প্রেক্ষিতে গণেশের
উত্তরাধিকারীদের হটিয়ে আমিরগণ ইলিয়াস শাহের বংশধর নাসির উদ্দিনকে ‘নাসির উদ্দিন আবুল মুজাফ্ফর মাহমুদ শাহ’
উপাধি দিয়ে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করলে আবার ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনের সূচনা হয়। নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে
ইলিয়াস শাহী বংশের পুনরভ্যুদয় বাংলার ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়।
নাসির উদ্দিনের রাজ্য শাসন
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ পরবর্তী ইলিয়াস শাহী রাজবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতার
সাথে রাজ্য পরিচালনা করেন এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। খান জাহান আলীর সমাধি গাত্রে খোদিত
লিপি থেকে জানা যায় যে, তাঁর শাসনামলে যশোর ও খুলনার কিছু অংশ ইলিয়াস শাহী শাসনের অধিকৃত হয়েছিল এবং
মুসলিম বাংলার সীমানা অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। এ সময় হিন্দু-মুসলিম স¤প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং শিল্প সাহিত্যের
ব্যাপক অগ্রগতি ঘটলে তা সুলতানি বাংলার সমাজ ও রাজনীতিতে সুগভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।
শিক্ষ-সাংস্কৃতিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাÐ
নাসিরউদ্দিন মাহমুদের রাজত্বকাল ছিল শান্তিপূর্ণ। রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এ মহান সুলতান শিল্প ও স্থাপত্যের উন্নতি
বিকাশে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শিক্ষা-দীক্ষার প্রসার, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের একজন একনিষ্ঠ
পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এজন্য তাঁর শাসনামলকে ঐতিহাসিকগণ ‘বাংলার অগাস্টান যুগ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি
রাষ্ট্রীয় খরচে রাজধানী গৌড়, পাÐুয়া, সাতগাঁও, ঢাকা, বাগেরহাট প্রভৃতি জনপদে মসজিদ, খানকাহ, সেতু, তোরণ, সমাধি
ও প্রাসাদ এর মত নানা স্থাপনা নির্মাণে সহায়তা করেছেন।
চরিত্র চিত্রণ
নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ জ্ঞানী, চরিত্রবান, দরদি, প্রজাবাৎসল, উদার ও ধর্মপায়ণ শাসক ছিলেন। তিনি ধনী, আমির,
উমরাহ, দরবেশ, সাধু, সুফি, বৃদ্ধ, যুবক সকলের প্রতি সদয় ছিলেন এবং উদার হস্তে সকলকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
মহানুভব ও সুশাসক মাহমুদ শাহ প্রায় ২৪ বছর রাজত্ব করে ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
রুকন উদ্দিন বরবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি.)
সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদের মৃত্যুর পর পুত্র রুকনউদ্দিন বরবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি.) বাংলার সিংহাসনে আরোহণ
করেন। তিনি পিতার ন্যায় একজন যোগ্য ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। তাঁর সুশাসনে বাংলাদেশের সুখ-শান্তি আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত
হয়। তিনি নিজে পÐিত ছিলেন। জ্ঞানী ও গুণীরা তাঁর নিকট খুব সমাদর পেতেন। তিনি সে যুগের বিখ্যাত কবি মালাধর
বসুকে গুণরাজ খান উপাধি দিয়েছিলেন। বৃহস্পতি মিশ্র, কৃত্তিবাস, মনসুর সিরাজী প্রমুখ কবি বরবক শাহের পৃষ্ঠপোষকতা
লাভ করেন। তাঁর সভা কবি ছিলেন আমির জয়েনউদ্দিন হাববী। তিনি বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে
রুকনউদ্দিন বরবক শাহ কমপক্ষে ৮০০০ আবিসিনীয় ক্রীতদাসকে রাজ্যের বিভিন্ন পদে নিযোগ করেন যা রাজ্যের জন্য
বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে আসামের কামরূপ অভিযানকালে সেখানকার হিন্দু রাজা নীলাম্বরে সাথে
এক যুদ্ধে লিপ্ত হন কিন্তু তিনি সেখানে কাক্সিক্ষত সাফল্য লাভ করতে পারেননি।
দ্বিতীয় শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ (১৪৭৪-৮১ খ্রি.)
বরবক শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় শামসউদ্দিন আবু মুজাফ্ফর ইউসুফ শাহ (১৪৭৪-৮১ খ্রি.) বঙ্গের সিংহাসনে
আরোহণ করেন। তিনি বিচক্ষণ, ধৈর্যশীল, প্রজাহিতৈষী, ধর্মভীরু ও আদর্শবান সুলতান ছিলেন। তিনি বিদ্বান ও জ্ঞানীদের
প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি রাজ্যব্যাপী মদ্যপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণ
বিজয়’ রচনা সমাপ্ত হয় এবং বিজয় পÐিত ‘মহাভারত’ এর বঙ্গানুবাদ করেন। স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি গৌড়ের
কদম রসুল মসজিদ, তাঁতিপাড়া মসজিদ ও পাÐুয়ার চতুষ্কোন মসজিদ নির্মাণ করেন।
জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ (১৪৮১-১৪৮৭ খ্রি.)
ইউসুফ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সিকান্দর শাহ বাংলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু অযোগ্যতার জন্য মাত্র তিন মাস
পরে তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করে তাঁর ভাই জালালউদ্দিন ফতেহ শাহ (১৪৮১-১৪৮৭ খ্রি.) কে বাংলার সিংহাসনে বসানো
হয়। তিনি উদার, বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ছিলেন। তাঁর সময়ে হাবশি ক্রীতদাসদের ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়ে যায়। এ
প্রভাব খর্ব করতে গিয়ে তিনি বরবক নামক জনৈক হাবশি ক্রীতদাসের হাতে ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর সাথে
সাথে ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনের অবসান হয় এবং বাংলা ছয় বছরের জন্য (১৪৮৭-১৪৯৩ খ্রি.) হাবশি মালিকদের
শাসনে চলে যায়।
সারসংক্ষেপ :
রাজা গণেশ প্রতিষ্ঠিত রাজবংশটি ইলিয়াস শাহী শাসনের ছেদ টেনে প্রায় ২৮ বছর বাংলা শাসন করেন। অতঃপর
পরবর্তী ইলিয়াসশাহী সুলতানগণ (১৪৪২-১৪৮৭ খ্রি.) আবার বাংলা শাসন করেন। এ বংশের যোগ্যতম শাসক ছিলেন
নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ। এ বংশের অপর একজন সুশাসক ছিলেন রুকনউদ্দিন বরবক শাহ। তিনি জ্ঞানী ও গুণী
ব্যক্তিদের সমাদর করতেন। এ সময় বাংলা শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে যথেষ্ঠ উন্নতি লাভ করেছিল।
হাবশি ক্রীতদাসদের ষড়যন্ত্রে জালালউদ্দিন ফতেহ শাহের মৃত্যুর পর এ বংশের শাসনের অবসান ঘটে এবং বাংলায় ছয়
বছরের জন্য (১৪৮৭-১৪৯৩ খ্রি.) হাবশি মালিকদের শাসনের সূচনা হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.৫
১। পরবর্তী ইলিয়াস শাহী রাজবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন-
ক) নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ খ) রুকনউদ্দিন বরবক শাহ
গ) শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহ ঘ) জালাল উদ্দিন ফতেহ্ শাহ
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র
ইউনিট ৫ পৃষ্ঠা ১৩৮
২। বাংলার অগাস্টান যুগ বলা হয়-
ক) নাসিরউদ্দিনের শাসনামলকে খ) বরবক শাহের শাসনামলকে
গ) গণেশের শাসনামলকে ঘ) ইউসুফ শাহের শাসনামলকে
৩। ষাট গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
ক) যশোরে খ) খুলনায় গ) বাগেরহাটে ঘ) রামপালে
৪। গুণরাজ খান উপাধি প্রাপ্ত হন-
ক) বৃহস্পতি মিশ্র খ) মালাধর বসু গ) কৃত্তিবাস ঘ) মনসুর সিরাজী
সৃজনশীল প্রশ্ন:
শ্রেণিকক্ষে মাহমুদ ও আল-আমিনের মধ্যে আব্বাসীয় শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শাসক কে ছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক চলছিল এ
সময় মাহমুদ বলে খলিফা হারুন-অর-রশিদের শাসনামল ‘অগাস্টান যুগ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। অন্যদিকে আল-আমিন
বলে খলিফা মামুনের সময় আব্বাসীয়দের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ চরম শীর্ষে আরোহণ করেছিল বলে সে এ শাসককে
শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক প্রবেশ করলে তারা থেমে যায়।
ক. ‘মহাভারত’ এর বঙ্গানুবাদ করেন কে? ১
খ. কোন শাসকের সময়কালকে ‘বাংলার অগাস্টান যুগ’ বলা হয়? বর্ণনা দিন। ২
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত যুগের সাথে সুলতানি বাংলার কোন শাসনামলের সিল রয়েছে এর যথার্থতা নিরূপণ করুন। ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে পরবর্তী ইলিয়াস শাহী বংশের শিক্ষা-সাংস্কৃতিক গৌরবের বিশেষ উল্লেখপূর্বক বাংলার অগাস্টান
যুগের স্বরূপ বিশ্লেষণ করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র