সর্বোপরি আলাউদ্দিন হোসেন শাহের কৃতিত্ব আলোচনা করতে পারবে

মূখ্য শব্দ হোসেন শাহী বংশ, নৃপতি তিলক, সত্যপীর ও গুনরাজ খাঁ
হোসেন শাহী বংশ
বাংলার স¦াধীন সুলতানদের যুগে হোসেন শাহী বংশের শাসন ছিল একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। মধ্যযুগের
সুলতানি শাসন আমলে ইলিয়াস শাহী শাসনের সমাপ্তির পর হোসেনশাহী রাজ বংশের উত্থান বাংলার ইতিহাসের একটি
অনন্য অধ্যায়। হাবশি শাসকদের হটিয়ে সৈয়দ বংশীয় আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কর্তৃক এ রাজ বংশের শাসনের সূচনা
হয়েছিল। এ বংশের ৪ জন শাসক প্রায় ৪৫ বছর (১৪৯৩-১৫৩৮ খ্রি.) বঙ্গদেশ শাসন করেন। তাঁদের শাসনকালে বাংলায়
ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, কৃষি-শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়। হোসেন শাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ
রাজবংশটি প্রায় ৪৫ বছর বাংলা শাসন করে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে মধ্যযুগীয় বাংলাকে উন্নতির শীর্ষে
নিয়ে গিয়েছিল।
হোসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠা
হোসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ছিলেন আরবের সৈয়দ বংশের লোক। পিতা সৈয়দ আশরাফ আল
হুসেনি এবং ভাই ইউসুফের সাথে তিনি হাবশি সুলতান বরবক শাহের আমলে বাংলায় আসেন এবং চাকুরি গ্রহণ করেন।
হোসেন শাহ পরবর্তী হাবশি সুলতান সাইফউদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৪৮৭-১৪৯০ খ্রিস্টাব্দ) দ্বিতীয় মাহমুদ শাহ (১৪৯০ খ্রি.)
এর অধীনে উচ্চ পদে নিয়োজিত ছিলেন। সর্বশেষ হাবশি সুলতান মুজাফ্ফর শাহ তাঁকে উজির নিযুক্ত করেন। মুজাফ্ফর
শাহের সৈ¦র শাসনে দেশে বিদ্রোহ দেখা দেয়। গৌড়ের অনেক অধিবাসীকে তিনি নির্মমভাবে হত্যা করেন। দেশের এরূপ
পরিস্থিতিতে হোসেন শাহ হাবশি শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলার সিংহাসনে বসেন। তিনি আলাউদ্দিন হোসেন শাহ উপাধি গ্রহণ করেন। তাঁর নামানুসারেই তাঁর বংশের নাম হয় হোসেন শাহী বংশ।
রাজ্য শাসন
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেই কঠোর হস্তে রাজ্য শাসন শুরু করেন। তিনি রাজ্যময় আইনের শাসন
প্রতিষ্ঠা করেন। সর্ব প্রথমেই তিনি হাবশি আমির ও সৈন্যদেরকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেন এবং স্থানীয় আমির ও
সৈন্যদেরকে নিজ নিজ পদে পূর্ণবহাল করেন। তিনি রাজধানী গৌড় থেকে একডালাতে স্থানান্তরিত করেন। রাজ্যে
লুটতরাজ বন্ধ করে শান্তি ও শৃংখলার ব্যবস্থা করেন। রাজ্যের প্রায় ১২ হাজার লুন্ঠনকারীকে তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন।
বাংলার শাসন ক্ষেত্রে তিনি সৈয়দ, আফগান ও মোঙ্গলদের প্রাধান্য দেন। রাজ্যের নিরাপত্তা ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করে হোসেন
শাহ রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন।
দিল্লির সুলতানের সাথে সম্পর্ক
সিংহাসনে আরোহণের পর হোসেন শাহের সাথে দিল্লির সুলতান সিকান্দর লোদীর সংঘর্ষ বাধে। জৌনপুরের বিতাড়িত
সুলতান হোসেন শাহ শর্কীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় সিকান্দর লোদী হোসেন শাহের বিরুদ্ধে অভিযান করেন। কিন্তু
এ অভিযান ব্যর্থ হয়। উভয়ের মধ্যে সন্ধি স¦াক্ষরিত হয় এবং সিকান্দর লোদী স¦সৈন্যে দিল্লি ফিরে যান।
হোসেন শাহী বংশ
রাজ্য বিস্তার
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ স¦াধীন বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান ছিলেন। তাঁর সময়ে বাংলার রাজ্যসীমা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়।
তিনি রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের কামতা ও কামরূপ অভিযান করেন।
এই স্থানগুলি দখল করে পুত্র দানিয়েলকে সেখানকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এরপর তিনি আসামের অহোম রাজার
বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়ে তাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। কিন্তু তাঁর আসাম অভিযান ব্যর্থ হয়। অতঃপর তিনি
১৫০৯ সালে উড়িষ্যার রাজা প্রতাপরুদ্রকে পরাজিত করে উড়িষ্যার সীমান্তে অবস্থিত মান্দারণ দুর্গটি দখল করেন। তিনি
পর পর চারটি অভিযান করে ত্রিপুরা রাজ্যের অনেকাংশ তাঁর রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হন। তাঁর সেনাপতি পরাগল খান
আরাকান রাজকে পরাজিত করে চট্টগ্রাম অধিকার করেন। এভাবে তিনি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাব্যাপী এক বিশাল রাজ্য
স্থাপন করতে সক্ষম হন। হোসেন শাহ তাঁর রাজ্য সীমানা শুধু বৃদ্ধিই করেননি রাজ্যের সব ধরণের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেন।
সুশাসক
রাজ্য বিস্তারের চেয়ে রাজ্য শাসনে হোসেন শাহের অবদান ছিল সর্বাধিক। হোসেন শাহ ছিলেন একাধারে সুদক্ষ সৈনিক,
অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও সুশাসক। রাজ্যের সকল ক্ষেত্রের অরাজকতা ও বিশৃংখলা দূর করে শান্তি ও নিরাপত্তা কায়েম
করেন। তাঁর আমলে বাংলাদেশে মুসলিম সভ্যতার চরম বিকাশ ঘটে। তিনি জনদরদী ও প্রজাহিতৈষী শাসক ছিলেন। তাঁর
রাজত্বে বাংলাদেশে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করত।
ধর্মীয় সহিষ্ণুতা
সুলতান হোসেন শাহ একজন পরধর্ম সহিষ্ণু ও নিষ্ঠাবান শাসক ছিলেন। জ্ঞানতাপস ও সুফি-সাধকদের তিনি ভক্তি
করতেন। তিনি পীর দরবেশদের মাজার জিয়ারত
করতেন এবং মাজার সংলগ্ন লঙ্গর খানার ব্যয় নির্বাহের
জন্য অনেক গ্রাম দান করেন। তিনি হিন্দুদেরকে
গুরুত্বপূর্ণ রাজপদে নিয়োগ দেন। তাঁর উজির ছিলেন
পুরন্দর খান। তাঁর একজন সেনাপতির নাম ছিল
গৌরমল্লিক। সাকের মল্লিক উপাধিধারী রূপ এবং দবীর
খান উপাধীধারী সনাতন নামের দুই ভাই ছিলেন
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মুকুন্দ দাস ছিলেন সুলতানের
ব্যক্তিগত চিকিৎসক। কেশব বসু ছিলেন সুলতানের
দেহরক্ষী, সুবুদ্ধি রায় ছিলেন গৌড়ের শাসনকর্তা। এ
ছাড়া টাকশালের অধ্যক্ষ অনুপ গোস¦ামী, উজির
গোপীনাথ, সেনাপতি গৌর মল্লিক ছিলেন বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। অনেক হিন্দু কবি-সাহিত্যিকও তাঁর
পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তাঁর উদারতায় মুগ্ধ হয়ে
হিন্দু প্রজাগণ হোসেন শাহকে ‘নৃপতি তিলক’ ‘জগৎভূষণ’ ‘কৃষ্ণাবতার’ প্রভৃতি উপাধি দিয়েছিলেন। এ সময়ই শ্রী
চৈতন্যদেবের অভ্যুদয় হয় এবং তিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন। হিন্দু ও মুসলমানদের মিলনের যোগসূত্র
হিসেবে তিনি ‘সত্যপীর’ নামে একটি নতুন কৃষ্টি প্রবর্তন করেন।
শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা
বিদ্যানুরাগী সুলতান হোসেন শাহের রাজত্বকালে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হয়। বাংলা
ভাষা ও সাহিত্যের চরম উৎকর্ষ সাধনে তিনি উদার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। হোসেন শাহের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায়
মালাধরবসু ‘ভগবদ গীতা’, কৃত্তিবাস ‘রামায়ন’ সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। রামায়ন অনুবাদের জন্য হোসেন
শাহ তাঁকে ‘গুনরাজ খাঁ’ উপাধি দেন। তাছাড়া কবি মালাধর বসু, মনসা মঙ্গল এর রচিয়তা বিজয় গুপ্ত, মনসা বিজয়ের
লেখক বিপ্রদাস অনেকেই তাঁর সহযোগিতা পেয়েছিলেন। তাঁর অধীনস্থ চট্টগ্রামের শাসনকর্তা পরাগল খাঁর পৃষ্ঠপোষকতায়
কবীন্দ্র পরমেশ্বর নামক জনৈক পÐিত বাংলা ভাষায় ‘মহাভারত’ অনুবাদ করেন।
শিল্প ও স্থাপত্যের নির্মাতা
সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শিল্প স্থাপত্যের একজন শ্রেষ্ঠ নির্মাতা ছিলেন। গৌড়ের বিখ্যাত ছোট সোনা মসজিদ,
মানিকগঞ্জ জেলার নাচাইল মসজিদ, গোমতি ফটক ছাড়া অগণিত মসজিদ, মাদ্রসা, সমাধি ও দূর্গ নির্মাণ করে তিনি
ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তিনি ‘বাদশাহী সড়ক’ সহ সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের চলাচলের জন্য অনেক রাস্তাঘাট
নির্মাণ করেন। সুদীর্ঘ ২৬ বছর গৌরবময় রাজত্ব শেষে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে হোসেন শাহ ইন্তেকাল করেন। আলাউদ্দিন হোসেন
শাহ নিঃসন্দেহে মধ্যযুগীয় বাংলার ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ নরপতি ছিলেন।
সারসংক্ষেপ :
হাবশি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের নেতৃত্বে হোসেনশাহী বংশের
প্রতিষ্ঠা হয়। হোসেন শাহ ছিলেন বাংলার স¦াধীন সুলতানদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য শাসক। রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন,
রাজ্য বিস্তার ও শিল্প সাহত্যের উৎকর্ষ সাধনে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। একজন পরমত সহিষ্ণু, প্রজাদরদী ও
উদার শাসক হিসেবে অমর হয়ে আছেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.৭
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। শেষ হাবশি সুলতানের নাম কী?
ক) বরবক শাহ খ) শামসউদ্দিন মুজাফ্ফর শাহ
গ) সাইফউদ্দিন ফিরোজ শাহ ঘ) দ্বিতীয় মাহমুদ শাহ
২। হোসেন শাহের রাজত্বকালে দিল্লির কোন সুলতান বাংলায় আক্রমণ করেন?
ক) ইব্রাহিম লোদি খ) বাবুর গ) হুমায়ুন ঘ) সিকান্দর লোদি
৩। হোসেন শাহের উজির ছিলেনÑ
ক) গৌরমল্লিক খ) পুরন্দর খান গ) পরাগল খান ঘ) অনুপ গোস¦ামী
৪। ছোট সোনা মসজিদের নির্মাতা ছিলেন?
ক) হোসেন শাহ খ) নুসরত শাহ গ) মাহমুদ শাহ ঘ) ফিরোজ সহ
সৃজনশীল প্রশ্ন:
শিক্ষক মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, সম্প্রতি মুসলিম বিশে^র ম্যধকার একটি উন্নত
দেশ হিসেবে মালয়েশিয়া খুব সুনাম অর্জন করেছে। এর উন্নতির পেছনে মাহাথির বিন মোহাম্মদ নামে একজন রাষ্ট্রনায়ক
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলায় এমন উন্নত অবস্থা কখনও ছিল কি-না তা জনতে চেয়ে
একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করলে শিক্ষক বলেন, বাংলার ইতিহাসেও এমন গৌরবোজ্জ্বল শাসনামলের সন্ধান পাওয়া যায়।
ক. হোসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? ১
খ. কাকে এবং কেন হোসেন শাহী বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান বলা হয়? ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকের সাথে সুলতানি বাংলার কোন শাসকের কার্যক্রমের মিল খুঁজে পাওয়া যায় তার বর্ণনা দিন। ৩
ঘ. রাজবংশের শাসন উন্নতিতে উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকের মত সুলতানি বাংলার শাসকের শাসন কর্যক্রম পর্যালোচনা করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]