বাংলার ইতিহাস: আফগান ও মুঘল শাসন (১৫৩৮-১৭০৭ খ্রি.)



বাংলার ইতিহাস: আফগান ও মুঘল শাসন (১৫৩৮-১৭০৭ খ্রি.)
ভূমিকা:
হোসেন শাহী বংশের পতনের পর বাংলায় আফগান র্করাণীদের শাসন সূচনা হয়েছিল। রাজমহলের যুদ্ধে র্করাণী
রাজবংশের শেষ শাসক দাউদ খান র্করাণীকে পরাজিত করে ১৫৭৬ খ্রি. বাংলায় মুঘল সুবাদারি শাসনের যাত্রা শুরু হলেও
মুঘলদের এ রাজ্য শাসন কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকা ও এর পাশর্^বর্তী জনপদগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ সময় বাংলার
নানা প্রান্তে কতিপয় মুসলিম ও হিন্দু জমিদার স্বাধীনভাবে শাসন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এ সকল স্বাধীন জমিদারগণ
‘বার ভূঁইয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন। বাংলার এ জমিদারগণ মুঘল স¤্রাটদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের
স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন যদিও পরবর্তীকালে মুঘলদের হাতেই এঁদের পতন সাধিত হয়েছিল। বাংলার ইতিহাসে তাই ‘বার ভূঁইয়া’রা অমর আসনে আসীন হয়ে রয়েছেন। মূখ্য শব্দ শের খান, জান্নাতাবাদ, চৌসার যুদ্ধ ও পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ
ভ‚মিকা
বাংলায় হোসেনশাহী শাসনের শেষদিক থেকেই মুঘল সম্রাট বাবর ও তাঁর পুত্র হুমায়ুন বাংলাকে মুঘল
অধিকারে আনার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু আফগানদের কারণে মুঘলদের এ উদ্দেশ্য প্রথম দিকে সফল হয়নি। সাসারামঅঞ্চলের জায়গিরদার আফগান নেতা শের খান শূরের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন মুঘল সম্রাট হুমায়ুন। এ সময় বিহারের
জায়গিরদার জালাল খান নাবালক বলে তাঁর অভিভাবকের দায়িত্বও শের খান গ্রহণ করেন। সমগ্র ভারতের অধিপতি
হওয়ার ইচ্ছা ছিল শের খানের। তাই গোপনে তিনি নিজের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকেন। এ লক্ষে অল্প সময়ের মধ্যে শের
খান শক্তিশালী চুনার দুর্গ ও বিহার অধিকার করেন। তিনি ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে দু’বার বাংলার রাজধানী গৌড় আক্রমণ করেন।
এবার সতর্ক হন দিল্লির মুঘল সম্রাট হুমায়ুন। তিনি শের খানের পিছু ধাওয়া করে বাংলার রাজধানী গৌড় অধিকার করে
নেন। গৌড়ের চমৎকার প্রাসাদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে হুমায়ুন এর নামকরণ করেন ‘জান্নাতাবাদ’। সম্রাট গৌড়ে ৬
মাস আমোদ ফূর্তিতে গা ভাসিয়ে দেন। এ সুযোগে শের খান নিজের শক্তি বাড়াতে থাকেন। দিল্লি থেকে খবর আসে
হুমায়ুনের সৎভাই হিন্দাল সিংহাসন দখল করার ষড়যন্ত্র করছেন। এ খবর পেয়ে হুমায়ুন দিল্লির দিকে যাত্রা করেন। এ
সুযোগ কাজে লাগান শের খান। তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন বক্সারের নিকট চৌসা নামক স্থানে। গঙ্গা নদীর তীরে এ
স্থানে হুমায়ুন পৌঁছালে শের খান তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। অপ্রস্তুত হুমায়ুন পরাজিত হন (১৫৩৯ খ্রি.)। মুঘল সম্রাট
হুমায়ুনকে পরাজিত করে শের খান ‘শের শাহ’ উপাধি নেন। তিনি বিহারে নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা
করেন। এরপর তিনি বাংলার দিকে দৃষ্টি দেন। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে মুঘল শাসনকর্তা আলী কুলিকে পরাজিত করে তিনি বাংলা
দখল করেন। এ বছরই তিনি হুমায়ুনকে কনৌজের নিকট বিলগ্রামের যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন
অধিকার করেন। এর ফলে দীর্ঘদিন পর বাংলা আবার দিল্লির শাসনে চলে আসে। চট্টগ্রাম ও সিলেট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশ
শের শাহের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। শের শাহ শূর বংশীয় ছিলেন বলে এ সময়ের বাংলার শাসন শূর আফগান বংশের শাসনকাল হিসেবে পরিচিত।
শের শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জালাল খান ‘ইসলাম খান’ নাম ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি আট
বছর (১৫৪৫-১৫৫৩ খি.) রাজত্ব করেন। কিন্তু ইসলাম খানের মৃত্যুর পর তাঁর নাবালক পুত্র ফিরুজ খানের সিংহাসনে
আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে শূর বংশের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে দলাদলি শুরু হয়। শের খানের ভাগ্নে মুবারিজ খান ফিরুজ
খানকে হত্যা করে ‘মুহম্মদ আদিল’ নাম ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ঘটনাবলী হতে এ
সময় বাংলা বিচ্ছিন্ন ছিল না। তাই ইসলাম খানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলার আফগান শাসক মুহম্মদ খান সূর স্বাধীনতা
ঘোষণা করে ‘মুহম্মদ শাহ শূর’ উপাধি ধারণ করেন। এ সময় হতে পরবর্তী কুড়ি বছর পর্যন্ত বাংলা স্বাধীন ছিল। মুহম্মদ
শাহ সূর উত্তর ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে মুহম্মদ আদিল শাহ শূরের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অবতীর্ণ হন। তিনি
জৌনপুর জয় করে আগ্রার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি পরাজিত ও নিহত হন। মুহম্মদ শাহ সূর নিহত
হলে দিল্লির বাদশাহ আদিল শাহ শাহবাজ খানকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। মুহম্মদ শাহের পুত্র খিজির খান তখন
এলাহাবাদে অবস্থান করছিলেন। পিতার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ‘গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহ’ উপাধি গ্রহণ করে
নিজেকে বাংলার স্বাধীন সুলতান বলে ঘোষণা করেন। কিছুদিন পর তিনি শাহবাজ খানকে পরাজিত করে বাংলার সিংহাসন
অধিকার করেন।
এ সময় দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নানা কারণে পরিবর্তন ঘটছিল। শের শাহের বংশধরদের দুর্বলতার সুযোগে মুঘল
বাদশাহ হুমায়ূন স্বীয় রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। কিন্তু দিল্লিতে তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলায় তিনি মুঘল আধিপত্য
বিস্তার করার সুযোগ পেলেন না। হুমায়ুনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আকবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করে শূর বংশীয়
আফগান নেতৃবৃন্দকে একে একে দমন করার জন্য অগ্রসর হলেন। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে (১৫৫৬ খ্রি.) আদিল শাহের
সেনাপতি হিমু মুঘল সৈন্যদের নিকট পরাজিত ও নিহত হন। আদিল শাহ বাংলার দিকে পলায়ন করলেন। পথিমধ্যে তিনি
সুরুজগড়ের নিকটবর্তী ফতেহপুরে সুলতান গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের সঙ্গে এক যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন (১৫৫৭
খ্রি.)।
বাংলা বিজয়ী আফগান সুলতান গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ জৌনপুরের দিকে অগ্রসর হলে মুঘল সেনাপতি খান-ই-জামান
তাঁর গতিরোধ করেন। কূটকৌশলী বাহাদুর শাহ খান-ই-জামানের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে বাংলায় প্রতাবর্তন করেন।
এরপর তিনি বাংলার বাহিরে আর কোনো অভিযান প্রেরণ করেননি। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর
শাহের মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতা জালালউদ্দীন শূর ‘দ্বিতীয় গিয়াসউদ্দীন’ উপাধি গ্রহণ করে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ
করেন। তিনিও তাঁর ভ্রাতার ন্যায় মুঘলদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলতেন। ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করলে তাঁর একমাত্র পুত্র বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু তাঁর নাম জানা যায়নি। মাত্র সাত মাস রাজত্ব করার
পর তৃতীয় গিয়াসউদ্দীন নামে জনৈক আফগান দলনেতা তাঁকে হত্যা করে বাংলার সিংহাসন অধিকার করেন। কিন্তু তিনিও
বেশি দিন রাজত্ব করতে পারেননি। কররাণী বংশীয় তাজ খান কররাণী গিয়াসউদ্দীনকে হত্যা করে বাংলার সিংহাসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
শিক্ষার্থীর কাজ বাংলার আফগান ও শের খানের সম্পর্ক একটি চার্টে তুলে ধরুন।
সারসংক্ষেপ :
বাংলা সম্পদশালী হওয়ায় সর্বদা এ অঞ্চল বিদেশিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এরই ধারাবাহিকতায় হোসেন শাহী
শাসনের পতন যুগে বাংলা শক্তিশালী মুঘল ও শের শাহীদের শ্যেণ নজরে পড়ে। মুঘল স¤্রাট বাবুর ও আফগান
উচ্চাভিলাষী শের খান উভয়ই বাংলা দখলের চেষ্টা করে প্রথম দিকে ব্যর্থ হয়। এরপর স¤্রাট হুমায়ুন বাংলা দখল করে
একে জান্নাতাবাদ নামকরণ করেন। অন্যদিকে শের খান সুযোগ বুঝে দিল্লিতে ফেরার পথে হুমায়ুনকে আক্রমণ ও
পরাজিত করে বাংলা দখল করেন। পরবর্তীতে শের শাহের উত্তরাধিকারী নাবালক ফিরোজ খানের শাসনামলে দলাদলি
শুরু হলে দিল্লির শাসন দূর্বল হয়ে পড়ে এই সুযোগে বাংলার আফগান র্করাণীরা শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। কে বাংলার রাজধানী গৌড়ে দুইবার আক্রমণ পরিচালনা করেন?
ক. শের খান খ. স¤্রাট বাবুর গ. স¤্রাট হুমায়ুন ঘ. স¤্রাট আকবর
২। বাংলাকে ‘জান্নাতাবাদ’ নামকরণ করেন-
ক. স¤্রাট বাবুর খ. স¤্রাট হুমায়ুন গ. স¤্রাট আকবর ঘ. ঈসা খান
৩। আদিল শাহের বিখ্যাত সেনাপতির নাম কি?
ক. বৈরাম খান খ. রাজা মানসিংহ গ. মীর জুমলা ঘ. হিমু
সৃজনশীল প্রশ্ন:
টিভিতে হিস্ট্রি চ্যানেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ এবং এর চলমান সমস্যাবলী নিয়ে একটি প্রতিবেদন চলছিল তা দেখে রাফি
তার বাবাকে প্রশ্ন করে যে, বাবা মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি শক্তিসমূহের এত প্রভাব কেন? কেনই বা বিদেশীরা এখানে সবসময়
আস্তানা গড়তে চায়? জবাবে বাবা বলেন, এখানকার সমৃদ্ধি, তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ধর্মীয় অবস্থানের
কারণেই এখানে সর্বদা বিদেশিরা আস্তানা গড়তে চায়।
ক. কে বাংলার নাম ‘জান্নাতাবাদ’ করেন? ১
খ. বাংলায় বিদেশী শক্তিবর্গ সর্বদা অক্রমণ করেছে কেন? ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসনাঞ্চলের সাথে বাংলার কোন সময়কার শাসনের মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. উক্ত শাসনামলে পরিস্থিতি বিশ্লেষণপূর্বক বাংলায় কররাণী রাজবংশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বর্ণনা করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]