মূখ্য শব্দ কররাণী, সুলায়মান খান র্করাণী, দাউদ খান র্করাণী ও রাজমহলের যুদ্ধ
র্করাণীদের পরিচয়
দিল্লি ও বাংলায় শূর রাজবংশের পতনের সুযোগে পশতুন রক্তধারার আফগান জাতিভুক্ত কররাণী গোত্রের তাজ
খান র্করাণী কর্তৃক ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় র্করাণী রাজবংশের যাত্রা শুরু হয়। তাজ খান শেরশাহের অধীনে অমাত্য
হিসেবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন শুরু করেন (১৫৬২-১৫৬৪ খ্রি.) এবং পরবর্তীতে মুহম্মদ শাহের পরাজয়ের পর তিনি
দক্ষিণ-পূর্ব বিহার ও পশ্চিম বাংলা দখল করে নেন এবং পরবর্তীতে সোনারগাঁ দখল করে রাজধানী হিসেবে কার্যক্রম শুরু
করে। তাজ খান র্করাণী (১৫৬৪-১৫৬৬ খ্রি.) কর্তৃক এ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হলে পরবর্তীকালে সুলাইমান খান র্করাণী
(১৫৬৬-১৫৭২ খ্রি.), বায়েজিদ খান র্করাণী (১৫৭২-জুন ১৫৭২ খ্রি.), দাউদ খান র্করাণী (জুলাই ১৫৭২-১৫৭৬ খ্রি.)
র্করাণীদের শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সেনাপতি মুনিম খানের আক্রমণে রাজমহলের
যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এ বংশের শাসনের সমাপ্তি ঘটে।
তাজ খান র্করাণী (১৫৬৪-১৫৬৬ খ্রি.)
তাজ খান র্করাণী প্রাথমিককালে শেরশাহের একজন কর্মচারী ছিলেন। কনৌজের যুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শেরশাহ
তাঁকে বিহারে জায়গীর প্রদান করেন। ইসলাম শাহের শাসনামলে তিনি সেনাপতি ও রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে
বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর তার নাবালক পুত্র ফিরোজ শাহের রাজত্বকাল তাজ খান উজির
পদে নিয়োগ পান। ফিরোজ-এর মামা আদিল শাহ শূর ভাগ্নে ফিরোজকে হত্যা করে সিংহাসনে আসীন হলে ১৫৫৭
খিস্টাব্দে তাজ খান র্করাণী পালিয়ে বিহারে আসেন এবং তিনি বাংলার সুলতান বাহাদুর শাহ শূরের নিকট নামমাত্র বশ্যতা
স্বীকার বিহারের শাসন ক্ষমতা দখল করেন। তিনি ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব বিহার ও পশ্চিম বাংলা জয় করে স্বাধীন
র্করাণী বংশের শাসনের সূচনা করেন। এরপর সুযোগ বুঝে মুহম্মদ শাহী বংশের শেষ সুলতান তৃতীয় গিয়াসউদ্দিন শাহকে
পরাজিত ও হত্যা করে গৌড় দখল করে বাংলায় কররাণীদের অবস্থানকে সুসংহত করেন। এভাবে তাজ খান র্করাণী
বাংলায় স্বাধীন র্করাণী রাজবংশের শাসনের সূত্রপাত করেন।
সুলাইমান খান র্করাণী (১৫৬৬-১৫৭২ খ্রি.)
ভ্রাতা তাজ খানের মৃত্যুর পর সুলাইমান খান র্করাণী এ বংশের শাসন নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এ বংশের সবচেয়ে
যোগ্যতা সম্পন্ন শাসক ছিলেন। সুলায়মান র্করাণী বিজ্ঞ উজির লোদী খানের পরামর্শে মুঘল সম্রাট আকবরের সাথে
সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলছিলেন। এ দক্ষ শাসক কৌশলে আফগান নেতাদের তাঁর দলভুক্ত করেন। এভাবে বাংলা ও বিহারের
অধিকাংশ এলাকা তাঁর অধিভুক্ত হয়। উড়িষ্যাতেও তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি গৌড় থেকে রাজধানী তাÐা বা তাঁড়া
শহরে স্থানান্তর করে প্রশাসনিক উৎকর্ষ সাধনের দিকে নজর দেন। সুলাইমান এ লক্ষে পুত্র বায়েজিদ ও সেনাপতি
কালাপাহাড়ের নের্তৃত্বে ১৫৬৮ উড়িষ্যার গজপতি শাসক মুকুন্দ দেবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে পুরী সহ সমগ্র
উড়িষ্যা দখল করে লোদী খানকে উড়িষ্যা ও কুতলু খান লোহানীকে পুরীর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৫৭২ খিস্টাব্দে
সুলায়মান র্করাণীর মৃত্যু হয়।
ঈসা খান
বায়েজিদ খান র্করাণী (১৫৭২-জুন ১৫৭২ খ্রি.)
১৫৭২ খিস্টাব্দে সুলায়মান র্করাণীর মৃত্যু হলে পুত্র বায়েজিদ সিংহাসনে বসেন। ক্ষমতায় বসেই তিনি মুঘলদের সাথে
সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু মাত্র কয়েকমাস শাসনের পরেই হানসু নামে তাঁর এক আত্মীয় এ
অত্যাচারী সুলতানকে হত্যা করেন।
দাউদ খান র্করাণী (জুলাই ১৫৭২-১৫৭৬ খ্রি.)
এবার সিংহাসনে বসেন সুলায়মান কররাণীর দ্বিতীয় পুত্র দাউদ কররাণী। তিনিই ছিলেন বাংলায় শেষ আফগান শাসক।
দাউদ কররাণী খুব অদূরদর্শী শাসক ছিলেন। বিশাল রাজ্য ও ধন ঐশ্বর্য দেখে তিনি নিজেকে সম্রাট আকবরের সমকক্ষ
ভাবতে থাকেন। এতো দিন বাংলা ও বিহারের আফগান শাসকগণ প্রকাশ্যে মুঘল সম্রাটের দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়া থেকে
কৌশলে বিরত থাকতেন। কিন্তু দাউদ স্বাধীন সম্রাটের মতো সুলতান উপাধি গ্রহণ করেন এবং নিজ নামে খুৎবা পাঠ করেন
ও মুদ্রা জারি করেন।
রাজমহলের যুদ্ধ ও র্করাণীদের পরাজয়
আফগানরা এমনিতেই ছিল মুঘলদের শত্রু। তার ওপর বাংলা-বিহার মুঘলদের অধিকারে না থাকায় সম্রাট আকবরের স্বস্তি
ছিল না। দাউদ কররাণীর আচরণ আকবরকে বাংলা আক্রমণের সুযোগ করে দিল। প্রথমে আকবর জৌনপুরের শাসনকর্তা
মুনিম খানকে নির্দেশ দেন কররাণী রাজ্য আক্রমণ করতে। প্রথমদিকে মুনিম খান সরাসরি আক্রমণ করেননি। উজির লোদি
খানের পরামর্শে মুনিম খানের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। দাউদ খান উজির লোদির পরামর্শে মুনিম খানের সাথে ধনরতœ দিয়ে
আপোস করেন। কিন্তু অচিরেই এ অবস্থার পরিবর্তন হয়। দাউদ কিছু ষড়যন্ত্রকারীর
পরামর্শে উজির লোদিকে ভুল বোঝেন। দাউদের নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়। লোদির
বুদ্ধির কারণেই এতোদিন মুঘল আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল বাংলা ও বিহার।
মুনিম খানের আর বাঁধা রইল না। লোদির মৃত্যুর পর মুনিম খান ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে বিহার
থেকে আফগানদের হটিয়ে দেন। আফগানরা ইতোমধ্যে নিজেদের ভেতর বিবাদ করে
দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এ সুযোগে মুনিম খান বাংলার দিকে অগ্রসর হন। র্করাণীদের
রাজধানী ছিল তাÐায়। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে মুনিম খান আক্রমণ করলে বিখ্যাত তুকারাই-এর
যুদ্ধে আফগানরা পরাজিত হয়ে তাÐা ছেড়ে পিছু হটে। আশ্রয় নেয় হুগলি জেলার
সপ্তগ্রামে। রাজধানী অধিকার করে মুঘল সৈন্যরাও অগ্রসর হয় সপ্তগ্রাম-এ। দাউদ খান
পালিয়ে যান উড়িষ্যায়। মুনিম খান তাÐার পরিবর্তে গৌড়ে মুঘল রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন।
এ সময় গৌড়ে প্লেগ রোগ দেখা দিলে মুনিম খানসহ অনেক মুঘল সৈন্য এ রোগে মারা
যান। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এঅবস্থার সুযোগে দাউদ কররাণী পশ্চিম ও উত্তর বাংলা
পুনরায় অধিকার করে নেন। অন্যদিকে ভাটি অঞ্চলের জমিদার ঈসা খান পূর্ব বাংলা থেকে
মুঘল সৈন্যদের হটিয়ে দেন। মুঘলদের বিরুদ্ধে শুরু হয় নতুন এক প্রতিরোধ পর্ব।
মুনিম খানের মৃত্যু সংবাদ আগ্রায় পৌঁছালে সম্রাট আকবর বাংলার শাসনকর্তা করে পাঠান খান-ই-জাহান হোসেন কুলী
খানকে। তাঁর সহকারী নিযুক্ত হন রাজা টোডরমল। দাউদ র্করাণী কালা পাহাড়, কুতলু খান এবং জুনায়েদ খানের
সহযোগিতায় বাংলার প্রবেশপথ রাজমহলে মুঘল সৈন্যদের বাঁধা দেন। মুঘলদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন বিহারের
শাসনকর্তা মুজাফ্ফর খান তুরবাতি। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে ১২ জুলাই রাজমহলের নিকট মুঘল ও আফগানদের মধ্যে এক তুমুল
যুদ্ধ হয়। রাজমহলের যুদ্ধে দাউদ র্করাণীর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। পরে তাঁকে মৃত্যুদÐ দেওয়া হয়। এভাবে বাংলায়
র্করাণী আফগান শাসনের অবসান ঘটিয়ে মুঘল শাসনের সূত্রপাত হয়। অবশ্য ‘বার ভূঁইয়াদের’ নেতা ঈসা খানের
প্রতিরোধের মুখে বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা আরো ত্রিশ বছর প্রলম্বিত হয়েছিল।
শিক্ষার্থীর কাজ রাজমহলের যুদ্ধের স্থান চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র তৈরি করুন।
সারসংক্ষেপ :
বাংলার ইতিহাসে শূর বংশের শাসনের মধ্যে থেকে আফগান র্করাণীদের উত্থান একটি অভূতপূর্ব অধ্যায়। র্করাণীরা শাসন
প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৪জন শাসক বাংলার সুলতান হিসেবে পররাক্রমশালী মুঘলদের বিরুদ্ধে কখনও কৌশলে আবার কখনও
অস্ত্রধারণ করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এরই ধারায় ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজমহলের যুদ্ধে মুঘল সেনাপতি হোসেন কুলীর কাছে শেষ
র্করাণী সুলতান দাউদ খান র্করাণী পরাজিত ও নিহত হলে বাংলায় এ রাজ শাসনের সমাপ্তি ঘটে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.২
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। র্করাণী বংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম কি?
ক. তাজ খান র্করাণী খ. সুলাইমান খান ক্ররাণী গ. বায়েজিদ খান ক্ররাণী ঘ. দাউদ খান র্করাণী
২। কোন র্করাণী শাসক ‘সুলতান’ উপাধি গ্রহণ করেন?
ক. তাজ খান র্করাণী খ. সুলাইমান খান ক্ররাণী গ. বায়েজিদ খান ক্ররাণী ঘ. দাউদ খান র্করাণী
৩। কত খ্রিস্টাব্দে রাজমহলের যুদ্ধ সংঘটিত হয়?
ক. ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে খ. ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে গ. ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ঘ. ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে
সৃজনশীল প্রশ্ন:
বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শিক্ষা সফরে গিয়ে সোহাগ লক্ষ্য করে যে, এখানকার ভৌত-অবকাঠামো প্রায় সব ধ্বংসপ্রাপ্ত। তিনি এ
বিষয়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করলে শিক্ষক বলেন, কালের অকাল গ্রাসে অনেক শাসক বংশের কোন চিহ্নও বিদ্যমান নেই।
মধ্যযুগে বাংলার ইতিহাসেও একটি রাজবংশের শাসনের সন্ধান পাওয়া যায় যাঁদের কোন স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়
না।
ক. র্করাণীদের প্রতিষ্ঠাতার নাম কি? ১
খ. র্করাণীরা কিভাবে বাংলায় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন? ২
গ. উদ্দীপকে ঈঙ্গিতকৃত শাসকবংশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শাসকের শাসন কৃতিত্ব নির্ণয় করুন। ৩
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকবংশের সাথে মুঘলদের সংঘর্ষের বিবরণ দাও। এতে মুঘলদের জয়ের কারণসমূহ নির্দেশ করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র