মূখ্য শব্দ মসলিন, তাজিয়া, দরগাহ ও টোল
বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা
বাংলায় সেন শাসনের অবসান ঘটিয়ে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের মতো
বাংলাও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে থাকে। এরই ধারায় সুলতানি শাসনামলে বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের পুনরুজ্জীবণ ঘটলে
এর অর্থনৈতিক অবস্থাও সমৃদ্ধ হয়। এমতাবস্থায় বাংলায় আফগান শাসন পেরিয়ে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দের পর মুঘল সুবাদারি
শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এর আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও নবজোয়ার সৃষ্টি হয়।
অর্থনৈতিক অবস্থা
নদীমাতৃক বাংলার ভূমি চিরদিনই প্রকৃতির অকৃপণ আশীর্বাদে পরিপুষ্ট। এখানকার কৃষিভূমি অস্বাভাবিক উর্বর। মুঘল
সুবাদারি শাসনামলে এখানকার উৎপন্ন ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ধান, গম, তুলা, রেশম গুটি, ইক্ষু, ভুট্টা, পাট,
আদা, জোয়ার, সিম, তিল, তিষি, সরিষা ও ডাল। কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ, শশা প্রভৃতি ছিল
উল্লেখযোগ্য। আম, কাঁঠাল, কলা, মোসাব্বর, খেজুর ইত্যাদি ফলমূলের ফলনও ছিল প্রচুর। পান, সুপারি, নারকেলও প্রচুর
পরিমাণে উৎপন্ন হতো। গালা বা দ্রাক্ষাও উৎপন্ন হতো প্রচুর। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পণ্য বাংলার বাইরেও রপ্তানি
হতো। বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল উৎস ছিল কৃষি। কৃষি ফলনের প্রাচুর্য থাকলেও এ সময়ের চাষাবাদ পদ্ধতি ছিল
অনুন্নত। আধুনিক সময়ের মতো পানি সেচ ব্যবস্থা সে যুগে ছিলনা। কৃষককে অধিকাংশ সময়েই সেচের জন্য বৃষ্টির উপর
নির্ভর করতে হতো। খরার বিরুদ্ধে তাদের করার কিছুই ছিল না। কৃষি প্রধান দেশ বলে বাংলার অধিবাসীর বৃহত্তর অংশ
ছিল কৃষক। বাংলার মাটিতে কৃষিজাত দ্রব্যের প্রাচুর্য ছিল। ফলে উদ্বৃত্ত বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হতো। এ
ব্যবসায়িক তৎপরতা কালক্রমে শিল্পের ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়।
সমকালীন বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায় যে, এ সময় কৃষি পণ্যকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণ, শাসক ও অভিজাতবর্গের চাহিদা
পূরণের জন্য বস্ত্র শিল্প, লবণ শিল্প, রেশম শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, মুদ্রা শিল্প, চিনি শিল্প, কাগজ শিল্প, স্থাপত্য শিল্প, তেল
শিল্প, অস্ত্র শিল্প, অলংকার শিল্প, কাঠ শিল্প সহ নানা ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ও উৎপাদন হয়েছিল।
এ সময় বাংলার বস্ত্র শিল্পের অগ্রগতি ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এখানকার নির্মিত বস্ত্রগুলো গুণ ও মানের বিচারে যথেষ্ট
উন্নত ছিল। তাই বিদেশে এগুলোর প্রচুর চাহিদা ছিল। নিজেদের ব্যবহারের জন্য রঙিন কাপড় এবং বিদেশে রপ্তানি করার
জন্য সাদা কাপড় এখানে তৈরি করা হতো। ঢাকা ছিল মসলিন নামক বিশ্বখ্যাত সূ² বস্ত্রশিল্পের প্রধান প্রাণকেন্দ্র।
ইউরোপে এর প্রচুর চাহিদা ছিল। এ বস্ত্র এতই সূ² ছিল যে ২০ গজ মসলিন কাপড় একটি কৌটায় ভরে রাখা যেত। পাট
ও রেশমের সাহায্যে বস্ত্র তৈরিতে বাংলার কারিগররা বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিল। মুঘল শাসকদের উদার পৃষ্টপোষকতায়
বাংলায় চিনি ও গুড় তৈরি এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। মধ্যযুগে বাংলার রকমারি ক্ষুদ্র শিল্পের কথা
জানা যায়। এ প্রসঙ্গে ধাতব শিল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তখন লৌহ নির্মিত দ্রব্যাদির ব্যাপক প্রচলন ছিল।
কর্মকারগণ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি নির্মাণ করত। এছাড়া দুধারী তরবারি, ছুরি, কাঁচি, কোদাল ইত্যাদি নিত্যব্যবহার্য ধাতব
দ্রব্য তৈরি হতো। কলকাতা ও কাশিম বাজারে এদেশের লোকেরা কামান তৈরি করত। কাগজ, গালিচা, ইস্পাত প্রভৃতি
শিল্পের কথাও জানা যায়।
ধর্মীয় অবস্থা
বর্তমানকালের মতো সুবাদারি শাসনামলেও বাংলার অমুসলিমরা বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি-নীতি ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করত।
আড়ম্বর ও জাঁকজমকের সাথে হিন্দুরা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করত। এঁদের মধ্যে ল²ী, সরস্বতী, গণেশ, শিব, শিবলিঙ্গ,
চÐী, মনসা, বিষ্ণু, কৃষ্ণ, সূর্য, মদন, নারায়ণ, ব্রহ্ম, অগ্নি, শীতলা, ষষ্ঠী, গঙ্গা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাঙালি হিন্দুর
সামাজিক জীবনে দুর্গা পূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হিন্দুরা দশহরা, গঙ্গা স্নান, অষ্টমী স্নান এবং মাঘী সপ্তমী স্নানকে
পবিত্র বলে মনে করত। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের নিকট গঙ্গার জল ছিল অত্যন্ত পবিত্র। তারা দোলযাত্রা, রথযাত্রা, হোলি ইত্যাদি
ধর্মীয় উৎসব পালন করত। জাতিগত শ্রেণিভেদ ছাড়াও হিন্দু সমাজে কতকগুলো ধর্মীয় স¤প্রদায় ছিল। যেমন শৈব, শাক্ত
ইত্যাদি। হিন্দু জাতির মধ্যে এ সময় বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবও উল্লেখযোগ্য ছিল। এ সময়ে হিন্দু সমাজের বিভিন্ন ধর্মীয়
স¤প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য ও স¤প্রীতির অভাব ছিল। এক স¤প্রদায়ের সহিত অন্য স¤প্রদায়ের বিরোধ ও বিদ্বেষ অতি
পরিচিত ঘটনা ছিল।
মুসলমানরাও বর্তমান সময়ের মতো বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি-নীতি ও আচার অনুষ্ঠান পালন করত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা
মুসলমান সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হতো। ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রই পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখা
এবং শব-ই-বরাতের দিন এবাদত বন্দেগীতে রাত্রীযাপন করত। উৎসব অনুষ্ঠানে মুসলমানগণ তাদের সাধ্যমত নতুন এবং
পরিচ্ছন্ন পোশাকে সজ্জিত হতো; একে অন্যের গৃহে গিয়ে কুশল ও দাওয়াত বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের সৌর্হাদ্যও
ভ্রাতৃত্বভাবকে সুদৃঢ় করত। সুবেদারগণ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে জনগণের সান্নিধ্যে আসতেন। বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গে
মুসলমানগণ মুহাম্মদ (স.) এর জন্মদিন পালন করতেন। বর্তমান সময়ের ন্যায় সুবাদারি শাসনামলেও মর্হরম উৎসব
পালিত হতো। শিয়া স¤প্রদায়ের একটি প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে এটি পরিচিত ছিল। এ দিবসে শিয়ারা ‘তাজিয়া’
তৈরি ও মর্হরমের মিছিল আয়োজন করত। মুসলমানদের বর্ষপঞ্জী অনুসারে মর্হরমের প্রথম দিনকে নববর্ষ হিসেবে পালন
করা হয়। মর্হরমের চন্দ্র উদয়কে মুসলমানগণ আনন্দ ও উৎসবের সঙ্গে বরণ করত।
এ যুগে ধর্মপ্রীতি মুসলমান সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
পড়তেন। এছাড়া, তারা নিয়মিত কোরআন ও হাদিস পাঠ করতেন। সমাজে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হতো।
ছেলে মেয়ে উভয়কেই ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের জন্য মক্তবে প্রেরণ করা হতো। সমাজে ধর্মীয় জ্ঞানের জন্য এবং ধর্মীয়
অনুষ্ঠানাদি পরিচালনার জন্য মোল্লা স¤প্রদায়কে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হতো। বিভিন্ন ব্যাপারে এবং অনেক সমস্যা সমাধানে
মোল্লাগণ কোরান-হাদিসের নির্দেশ অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করতে উপদেশ প্রদান করতেন। গ্রামীণ জীবনে ধর্মীয়
উৎসবাদিতে এবং বিয়ে-শাদির মতো সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে মোল্লা স¤প্রদায়ের উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য। মুসলমান
সমাজে সুফি ও দরবেশ নামে পরিচিত পীর বা ফকির স¤প্রদায়ের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তাঁরা ধর্মশাস্ত্রে সু-পÐিত ছিলেন এবং
সর্বদা আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন থাকতেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁরা ধর্ম সাধনার জন্য ‘দরগাহ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
শাসকবর্গ ও জনগণ সকলের কাছেই তাঁরা শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। বাংলায় ইসলামের বিস্তৃতির সাথে সাথে মুসলমান সমাজও
বিস্তৃত হতে থাকে। বাংলায় মুসলমান সমাজে দুটি পৃথক শ্রেণি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। একটি বিদেশ হতে আগত মুসলমান,
অন্যটি স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুসলমান। বিদেশী ও স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে কৃষ্টি ও রীতি-নীতির পার্থক্য থাকা সত্তে¡ও উভয়
স¤প্রদায়ের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দেয়নি। মুসলমান শাসকদের উদারতা এবং স্থানীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির প্রতি তাঁদের
উদার পৃষ্ঠপোষকতাই এর কারণ।
ভাষা, সাহিত্য ও শিক্ষা
মুঘল যুগে বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। তবে মুঘল শাসকগণ সুলতানি যুগের
শাসকদের ন্যায় ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষকোনো সহযোগিতা করেন নি। বাংলার জমিদারগণ স্বীয় প্রচেষ্টায় সে
ঐতিহ্য অক্ষুণœ রেখেছিলেন। মুসলমান যুগে প্রতিবেশি আরাকানের সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল। ফলে আরাকানে
বাংলা সাহিত্যের প্রসার ঘটতে শুরু করে। আরাকান রাজসভার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন দৌলত কাজী। আলাওল ছিলেন
রাজসভার আর একজন কবি। তাঁর ছয়টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘পদ্মাবতী’ সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি কয়েকটি ফারসি কাব্য গ্রন্থ বাংলায়
অনুবাদ করেন। এছাড়া, ‘রাগমালা’ নামে একটি সঙ্গীত শাস্ত্রবিষয়ক গ্রন্থও তিনি রচনা করেছিলেন। বাহরাম খান রচনা
করেন ‘লাইলি-মজনু’ কাব্য গ্রন্থ। ‘জঙ্গনামা’ ও ‘হিতজ্ঞান বাণী’ গ্রন্থগুলো কবি কাজী হায়াৎ মাহমুদ রচিত। কবি শাহ
গরীবুল্লাহ ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ পুঁথি সাহিত্যিক। বাংলার মুসলামন শাসন কেবল রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেই নয়,৭
শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। বাংলায় মুসলমান শাসনকালে শিক্ষার দ্বার হিন্দু-মুসলমান সকলের জন্য
উন্মুক্ত ছিল। শেখদের খানকাহ ও উলেমাদের গৃহ শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। মুসলমান শাসনের সময় বাংলার
সর্বত্র অসংখ্য মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। এ সকল মসজিদের সঙ্গেই মক্তব ও মাদ্রাসা ছিল। মক্তব ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা
উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করত। বালক-বালিকারা একত্রে মক্তব ও পাঠশালায় লেখাপড়া করত। প্রাথমিক শিক্ষা সকল মুসলমান
বালক-বালিকার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তবে স্ত্রী শিক্ষার বিশেষ প্রচলন ছিল না। মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণও মেয়েদের জন্য
বাধ্যতামূলক ছিল না। ফলে সাধারণ মুসলমান মেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ হতে বঞ্চিত ছিল। শাসকবর্গের ভাষা ছিল ফারসি।
ফলে এ ভাষা প্রায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করেছিল। নবাব ও মুসলমান অভিজাতবর্গ ফার্সী ভাষা ও সাহিত্যের উৎসাহদাতা
ছিলেন। সরকারি চাকরি লাভের আশায় অনেক হিন্দু ফারসি ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতেন। মুসলমান শিক্ষকগণ ফার্সি ও
আরবি ভাষায় বিশেষ অভিজ্ঞ ছিলেন। এ যুগে বাংলা ভাষা বিশেষ সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। আরবি ও ফার্সি ভাষায় অজ্ঞ
সাধারণ মুসলমানেরা যেন ইসলামের ধ্যান-ধারণা বুঝতে পারে সেজন্য অনেকেই বাংলা ভাষায় পুস্তকাদি রচনা করেন।
তাঁদের রচনাবলী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভাÐারকে সমৃদ্ধ করেছে।
মুসলমান শাসনের পূর্বে বাংলার হিন্দু সমাজে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া অধিকার ছিল।
মুসলমানদের শাসন-ব্যবস্থায় হিন্দু সমাজের সকল শ্রেণির জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। পাঠশালায় হিন্দু বালক-বালিকারা
প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করত। গুরুর আবাসস্থল কিংবা বিত্তবানদের গৃহে পাঠশালা বসত। কখনও কখনও একই ঘরের চালার
নিচে মক্তব ও পাঠশালা বসত। সকালে মুন্সি মক্তবের শিক্ষার্থীদের এবং বিকালে গুরু তার ছাত্রদের পাঠশালায় শিক্ষাদান
করতেন। বিত্তবান লোকেরা পাঠশালার ব্যয়ভার গ্রহণ করতেন। হিন্দু বালক-বালিকারা একত্রে পাঠশালায় শিক্ষা গ্রহণ
করত। ৬ বছর পর্যন্ত পাঠশালায় শিক্ষা গ্রহণ করতে হতো। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য ‘টোল’ ছিল। সংস্কৃত ভাষার মাধ্যমে
শিক্ষার্থীকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে হতো। সংস্কৃত সাহিত্যচর্চার জন্য নবদ্বীপ, বর্ধমান প্রভৃতি স্থানের নাম উল্লেখযোগ্য
ছিল। অনেক মহিলা এ যুগে শিক্ষা ও সংস্কৃত চর্চার ক্ষেত্রে নিজেদের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। ব্রাহ্মণদের মধ্যে একটি
বিশেষ শ্রেণি সর্বদা নিজেদের জ্যোতিষশাস্ত্রও জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত থাকতেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এ
যুগে সমাজে জনগণের মধ্যে জ্ঞান ও বুদ্ধি বৃত্তির বিকাশের জন্য কতগুলো সাধারণ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, যেমনÑ ধর্মীয়
সঙ্গীত, জনপ্রিয় লোক-কাহিনী ও নাটক- গাঁথা।
সারসংক্ষেপ :
মুঘল সুবাদারি শাসনামলে বাংলা কেন্দ্রের অধীনে থাকলেও এর আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে নতুন গতিলাভ হয়েছিল। এ
সময় নানা অর্থনৈতিক পণ্য উৎপাদন যেমন হয়েছিল তেমনি স্থানীয় পণ্যের উৎকর্ষতার সুযোগে এর অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবাণিজ্যও
প্রসারিত হয়েছিল। একই সাথে স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে এর শিল্প বিকশিত হয়েছিল। এছাড়া জনজীবনে শান্তি ও
সমৃদ্ধি থাকায় শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। এ সময় সকল ধর্মালম্বী ব্যক্তিবর্গ স্বাধীনভাবে স্ব স্ব ধর্ম পালন করতে পারতেন।
ফলে বাঙালি সমাজে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় ছিল।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.৫
১। মধ্যযুগে বাংলার অর্থনীতির প্রধান উৎস ছিল কোনটি?
ক. বাণিজ্য খ. কৃষি গ. শিল্প ঘ. প্রকৃতিক সম্পদ
২। বাংলার উৎপাদিত কোন দ্রব্যের বিদেশে খুব চাহিদা ছিল?
ক. খাদ্যদ্রব্য খ. শৌখিন দ্রব্য গ. বস্ত্র ঘ. আফিম
৩। বিখ্যাত মসলিন বস্ত্র কোথায় তৈরি হত?
ক. ত্রিপুরা খ. যশোর গ. চট্টগ্রাম ঘ. ঢাকা
৪। কোন শাসকরা বাংলার জাহাজ নির্মাণ শিল্পের প্রসারে অবদান রাখেন?
ক. মুঘলরা খ. হোসেনশাহীরা গ. পাঠানরা ঘ. বার ভুঁইয়ারা
সৃজনশীল প্রশ্ন:
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে নিজস্ব সাংস্কৃতিক জাগরণের জন্য নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয় যা অদ্যাবধি
চলমান। এ আন্দোলন শুধু সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য নয় এটি মূলত বাংলার আর্থ-সামাজিক মুক্তির একটি আন্দোলন। এ
আন্দোলনকারীরা দাবী করেন বাংলা ইংরেজদের আবির্ভবের পূর্বে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে উন্নত ছিল এবং
ঐ সময় বাংলায় নানা সাহিত্যিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল।
ক. বাংলার বিখ্যাত বস্ত্রের নাম কি? ১
ক. মুঘল সুবাদারি শাসনে বাংলা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল কেন? ২
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সময়কালে বাংলার ধর্মীয় পরিবেশের উল্লেখপূর্বক ধর্মীয় কর্মকাÐের পর্যালোচনা করুন। ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে মুঘল সুবাদারি শাসনামলের বাংলার সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ে একটি নাতিদীর্ঘ রচনা লিখুন। ৪
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.১ : ১. ক ২. খ ৩. ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.২ : ১. ক ২. ঘ ৩. ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৩ : ১. গ ২. গ ৩. গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৪ : ১. খ ২. খ ৩. ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৫ : ১. খ ২. গ ৩. ঘ ৪. ক
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র