মুইজউদ্দিন মুহম্মদ ঘোরির চরিত্র ও কৃতিত্ব

মূখ্য শব্দ মুলতান, আনহিলওয়ার, কনৌজ ও বারাণসী
ভূমিকা: মুহম্মদ ঘোরি ভারতে অনেকগুলো অভিযান প্রেরণ করেন। তিনি দিল্লি ও এর আশেপাশের এলাকা
দখল করেন এবং ভারতে সর্বপ্রথম স্থায়ীভাবে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব অর্জন করেন। মুহাম্মদ ঘুরি
১২০৬ খ্রিস্টাব্দে একজন শিয়া আততায়ীর হাতে নিহত হন। তাঁর নিকট শত্রæ-মিত্র সকলেই ন্যায় বিচার পেতেন। জাতিধর্ম নির্বিশেষে তিনি সকলের প্রতি ন্যায়বিচার করতেন। মানুষ হিসেবে তিনি আকর্ষনীয় চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী
ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল দৃঢ় মনোবল, আত্মপ্রত্যয়, ধর্মনিষ্ঠা, সত্যবাদিতা ও দানশীলতা ইত্যাদি।
সততা ও বিশ্বস্ততা ছিল তার চরিত্রের উজ্জ্বল দিক। জেষ্ঠ্য ভ্রাতা গিয়াস উদ্দিনের প্রতি তাঁর আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা ইতিহাসে
তাঁকে উচ্চ স্থানে উন্নীত করেছে। এজন্যই হয়তো ঐতিহাসিক আবুল কাশিম ফিরিস্তা তাকে আল্লাহভীরু, সত্যনিষ্ঠ এবং
প্রজারঞ্জক সুলতান হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি দয়ালু ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। শিক্ষা, সাহিত্য ও
শিল্পকলার প্রতি তাঁর যথেষ্ট অনুরাগ ছিল।
মুহম্মদ ঘোরির চরিত্র ও কৃতিত্ব
মুহম্মদ ঘোরি ছিলেন একজন বিজেতা। তিনি ছিলেন বাস্তববাদী রাজনীতিবিদ। তিনি সুচতুর ও অধ্যবসায়ী ছিলেন। কোন
ব্যর্থতা কোনদিন তাঁকে দমাতে পারেনি। তাঁর মনোবল ও সংগঠনী শক্তি ছিল অসাধারণ। অন্য ধর্মের লোকের প্রতিও তিনি
সদয় আচরণ করতেন। বড় ভাইয়ের প্রতি তিনি যে আনুগত্য দেখান ইতিহাসে তার দৃষ্টান্তবিরল। তিনি দয়ালু ও
ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্পকলার প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল। তিনি ভারতে স্থায়ী মুসলমান
শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর স্থান ইতিহাসে অ¤øান। মুহম্মদ ঘোরির অভিযানের ফলে
ভারতের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক জীবনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। নতুন অঞ্চল বিজিত হওয়ায় মুসলমান শিক্ষাবিদ, ধর্মপ্রচারক
ও শিল্পীগণ নতুন ও বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রের সন্ধান পান। অনেক ধর্মীয় নেতা ও সুফি দরবেশ এদেশে আসেন। তাঁরা ধর্মপ্রচারে
ব্রতী হন। বিজিত অঞ্চলে মক্তব, মাদ্রাসা ও খানকাহ্ গড়ে উঠতে থাকে। মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থা এদেশে নতুন সভ্যতার সূচনা
করে। ভারতীয় স্থাপত্যরীতিতেও সাধিত হয় ব্যাপক পরিবর্তন। মুসলিম বিজেতাগণ প্রয়োজনের তাগিদে এবং ইসলামের
গৌরব প্রকাশের জন্য সুদৃশ্য ইমারত, মসজিদ ও মিনার নির্মাণ করেন। এ সকল স্থাপত্য নির্মাণে স্থানীয় উপকরণ ব্যবহৃত
ও শ্রমিক নিয়োজিত হয় এবং ফলে ভারতীয় ও মুসলিম স্থাপত্য কৌশলের সংযোজন ঘটে।
রাষ্ট্রনায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা:
মুহম্মদ ঘোরি ছিলেন একজন দূরদর্শী ও বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন রাজনীতিবিদ। লক্ষ্য ছিল তাঁর ভারতে স্থায়ী মুসলিম সা¤্রাজ্য
প্রতিষ্ঠার। ভারতের বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ ও কোনো পরাজয়ে হতোদ্যম না হয়ে তিনি লক্ষ্য
বাস্তবায়নে স্থির ছিলেন। এজন্য তিনি বাঙলা থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত এক বিশাল সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।
তিনি শুধু সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে ইতিহাসে পরিচিতি হন নি বরং একটি সুশৃঙ্খল ও ন্যায়সংগত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন যা তাকে ইতিহাসে স্থায়ী আসন দিয়েছে।
সমরনেতা ও সংগঠক:
মুহম্মদ ঘোরি একজন অসাধারণ সামরিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ইতিহাসবিদ এ বি এম হবীবুল্লাহর মতে, “শীর
দরিয়া থেকে যমুনা পর্যন্ত সামরিক অভিযান তাঁর সমর কুশলতা উল্লেখযোগ্যরূপে প্রমাণ করে। মুহম্মদ ঘোরি অসংখ্য তুর্কী
ক্রীতদাসদের যুদ্ধকৌশল ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শিক্ষাদান এবং প্রতিভা অন্বেষণে ছিলেন সিদ্ধহস্ত নেতা ও সংগঠক। তিনি সে
সময়ের খ্যাতিমান সমরবিদ কুতুবউদ্দিন আইবেক, ইয়ালদুজ ও তুগ্রিল বেগের ন্যায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের তাঁর বিজয়াভিযান
ও রাজ্য গঠনে সাফল্যের সাথে কাজে লাগাতে সক্ষম হন। মুহাম্মদ ঘোরি তাঁর বিশ্বস্ত ক্রীতদাস ও সেনাপতি কুতুবউদ্দিন
আইবেককে ভারতবর্ষের অধিকৃত অঞ্চলে প্রতিনিধি ও শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন বলেই ভারতে তথাকথিত দাস
বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ভারতে মুসলমানদের স্থায়ী সা¤্রাজ্য আর রাজনৈতিক কাঠামো তৈরী হয়েছিল।
শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক:
মুহম্মদ ঘোরির প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সা¤্রাজ্য ভারতে ৭০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এ বি এম হবীবুল্লাহ বলেন, “সমরক্ষেত্রে
কর্মব্যস্ততার কারণে তিনি (মুহম্মদ ঘোরি) হয়তো শিল্প-সংস্কৃতির দিকে মনোযোগ দিতে পারেন নি। কিন্তু তিনি জ্ঞানচর্চার
প্রতি উদাসীন ছিলেন না।” তাঁর দরবার অলংকৃত করেছিল খ্যাতনামা দার্শনিক ফখরুদ্দিন আল রাজী, কবি নিজামী,
সাহিত্যিক মুবারক শাহ প্রমুখ পÐিতগণ। কুতুব উদ্দিন আইবেক আজমিরে ‘আড়াই দিনকা ঝোপড়া মসজিদ ও
দিল্লিতে ‘কুওয়াতুল ইসলাম’ নামে মসজিদ নির্মাণ করেন এবং এতে ইন্দো-মুসলিম স্থাপত্য রীতির সূচনা করেন।
মুহম্মদ ঘোরি দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি ভারতের
ধনসম্পদ হস্তগত করেই থেমে যান নি বরং সেখানে স্থায়ী সা¤্রাজ্য
প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ দিক থেকে মুহম্মদ ঘোরি সুলতান
মাহমুদ অপেক্ষা অধিকতর কুশলী ছিলেন। তিনি সে সময়ে ভারতের
রাজনৈতিক দূর্বলতা ও বিশৃংঙ্খলার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেন এবং
ভারতে স্থায়ী সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নে সফল হন। ভারতীয়
ইতিহাসের খ্যাতিমান শাসকের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে শিল্প, সংস্কৃতিচর্চা
ও পৃষ্ঠপোষকতায় সুলতান মাহমুদ অপেক্ষা মুহম্মদ ঘোরি অনেক বেশী
সফল ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন। সারসংক্ষেপ :
১২০৩ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাতা গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর পর মুহম্মদ ঘোরি সুলতান হন। তাঁর অভিযানের ফলে ভারতের ধর্মীয়
এবং সাংস্কৃতিক জীবনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। নতুন অঞ্চল বিজিত হওয়ায় মুসলমান শিক্ষাবিদ, ধর্মপ্রচারক ও শিল্পীগণ
নতুন ও বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রের সন্ধান পান। অনেক ধর্মীয় নেতা ও সুফি দরবেশ এদেশে আসেন। তাঁরা ধর্মপ্রচারে ব্রতী
হন। বিজিত অঞ্চলে মক্তব, মাদ্রাসা ও খানকাহ্ গড়ে উঠতে থাকে। মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থা এদেশে নতুন সভ্যতার সূচনা
করে। ভারতীয় স্থাপত্যরীতিতেও সাধিত হয় ব্যাপক পরিবর্তন। মুসলিম বিজেতাগণ প্রয়োজনের তাগিদে এবং ইসলামের
গৌরব প্রকাশের জন্য সুদৃশ্য ইমারত, মসজিদ ও মিনার নির্মাণ করেন। এ সকল স্থাপত্য নির্মাণে স্থানীয় উপকরণ
ব্যবহৃত ও শ্রমিক নিয়োজিত হয় এবং ফলে ভারতীয় ও মুসলিম স্থাপত্য কৌশলের সংযোজন ঘটে। প্রায় সমগ্র উত্তরভারত মুসলিম প্রাধান্যের আওতায় আসে। আড়াই দিনকা ঝোপড়া মসজিদ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.৫
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের ফলে ভারতে−
র. বাণিজ্যিক পথ সুগম হয়
রর. রাজপুতদের প্রাধান্য খর্ব হয়
ররর. মুসলিম সা¤্রাজ্য স্থাপিত হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. র ও রর খ. র ও ররর
গ. রর ও ররর ঘ. র, রর ও ররর
২। কুতুব উদ্দিন আইবেক ছিলেন −
ক. সেনাপতি খ. কাঠুরিয়া গ. শ্রমিক ঘ. দিনমজুর
৩। ‘শাহনামা’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
ক. আল বিরুনী খ. আবুল কাশেম ফেরদৌসি গ. আবুল ফজল ঘ. আবুল হাসান ফিদা
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান সাহেব ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। ভারতে অবস্থিত কুতুব
উদ্দিন আইবেক কর্তৃক নির্মিত ‘কুতুব মিনার’ পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনিও দেশীয় স্থাপত্য ও শিল্প কলা নির্মানে
আর্থিক সহায়তা দান করবেন। এত করে স্থানীয় শিল্পকলার বিকাশে সহায়তা করা হল। এই শিল্পকলা একটি দেশের
ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে কাজ করে বহুদিন পর্যন্ত।
ক. কুতুব মিনার কোথায় অবস্থিত? ১
খ. মুহাম্মদ ঘোরি কোন কোন গুণের অধিকারী ছিলেন লিখুন। ২
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের স্থাপত্য নিদর্শনের বর্ণনা দিন। ৩
ঘ পূর্ববর্তী মুসলিম অভিযান অপেক্ষা মুহম্মদ ঘোরির ভারত অভিযানের ফলাফল ব্যাপক ছিল-ব্যাখ্যা লিখুন। ৪
উত্তরমালা:
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.১ : ১. খ ২. ঘ ৩. গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.২ : ১. গ ২. ক ৩. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.৩ : ১. খ ২. গ ৩. ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.৪ : ১. গ ২. ঘ ৩. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.৫ : ১. গ ২. ক ৩. খ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]