মুর্শিদ কুলি খান: নাববি শাসন প্রতিষ্ঠা

বাংলার ইতিহাস: নবাবি আমল (১৭০৭-১৭৫৭ খ্রি:)
ভূমিকা:
বাংলার ইতিহাসের পট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নবাবি আমলের গুরুত্ব সর্বাধিক। মুর্শিকুলি খানের শাসন কাঠামোয় আবির্ভাব
থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে বদল এসেছিল তারই ধারাবাহিক পরিণতি হিসেবে ব্রিটিশরা ক্ষমতা দখল
করেছিল বাংলার। অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান মুর্শিদকুলি খান প্রথমে সাধারণ একজন দিউয়ান হিসেবে কাজ শুরু
করেছিলেন। নানা স্থানে দিউয়ানীর কাজে তাঁর অভিজ্ঞতা সম্রাট আওরঙ্গজেবকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিল। আওরঙ্গজেব
তাঁকে হায়দারাবাদের দিওয়ান নিযুক্ত করার পর তাঁকে “করতলব খান’’ উপাধিও প্রদান করা হয়। অভিজ্ঞতা ও কর্ম
নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট হয়ে আওরঙ্গজেব মুর্শিদকুলি খানকে বাংলার অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও রাজস্ব সংস্কারের দায়িত্ব প্রদান
করেছিলেন। বলতে গেলে তার মাধ্যমেই বাংলায় নবাবি শাসনের উত্থান হয়েছিল। তারপর পরবর্তীকালের শাসকদের
অদূরদর্শীতা, অদক্ষতা ও বিশৃঙ্খল আচরণ শেষ পর্যন্ত নবাবি শাসনের পতন ডেকে আনে।
মূখ্য শব্দ মুর্শিদকুলি খান, করতলব খান ও মুর্শিদাবাদ
ভ‚মিকা: মুর্শিদকুলি খান দক্ষিণ ভারতের একটি দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি। হাজী শফী
ইস্পাহানী ছিলেন দাক্ষিণাত্যে শায়েস্তা খানের দিওয়ান। তিনি অল্প বয়সী মুর্শিদ কুলিকে কিনে নিয়ে ইসলাম
ধর্মে দীক্ষিত করেন। প্রথমে তার নাম রাখা হয় মুহাম্মদ হাদী। ১৬৯৬ সালের দিকে হাজী শফীর মৃত্যু হলে তিনি বেরার
প্রদেশে চলে যান। সেখানে দেওয়ান হাজি আব্দুল্লাহ খোরাসানীর অধীনে চাকরি নিয়েছিলেন।
অবস্থার পরিবর্তন
রাজস্ব আদায়ের কাজে তাঁর অভিজ্ঞতা শেষ পর্যন্ত সম্রাট আওরঙ্গজেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কর্মদক্ষতার গুণে আপ্লুত
আওরঙ্গজেব তাঁকে হায়দারাবাদের দিওয়ান নিযুক্ত করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে “করতলব খান’’ উপাধি প্রদান
করেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও কর্ম নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট হয়ে আওরঙ্গজেব বাংলার অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও রাজস্ব সংস্কারের দায়িত্ব
প্রদান করেন। পাশাপাশি মুকসুদাবাদের ফৌজদারের দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর উপরেই।
পটভূমি
স¤্রাট আকবরের সময় থেকে প্রত্যেক সুবায় সুবাদার ও দিউয়ান নামে দুটি পদে স্বতন্ত্র
কর্মচারি নিয়োগ শুরু হয়েছিল। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত দক্ষ কূটনৈতিক হিসেবে একটু ভিন্ন
চিন্তা করেছিলেন স¤্রাট আওরঙ্গজেব। তিনি এই দুটি পদ অক্ষুন্ন রাখলেও পদ দুটির
কর্মকাÐ সীমিত করে দিয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের কারো
এককভাবে শক্তিশারী হয়ে ওঠার সুযোগ কমে এসেছিল। এই দুই পদে অধিষ্ঠিত দুজন
কর্মকর্তার ক্ষমতায় ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
স¤্রাট আওরঙ্গজেব ১৭০০ সালে মুহাম্মদ হাদিকে সম্মানসূচক 'করতলব খান' উপাধি দিয়ে
দিউয়ান হিসেবে বাংলায় পাঠিয়েছিলেন। নতুন দায়িত্ব পেয়ে নিজস্ব সৈন্যের বহর নিয়ে
ঢাকায় আসেন তিনি। রাজস্ব ও অর্থনৈতিক প্রশাসনে যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে স¤্রাটের
আস্থা অর্জনে সময় লাগেনি তাঁর। তিনি ছিলেন সৎ এবং স¤্রাটের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। কিন্তু
রাজকীয় স্বার্থ রক্ষা করতে বাংলার নাজিম ও স¤্রাটের দৌহিত্র আজিম-উস-শান এর সঙ্গে
তাঁর বিবাদ বেধেছিল। ফলে এক পর্যায়ে করতলব খানের জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল। এরই সূত্র ধরে স¤্রাটের হস্তক্ষেপে
করতলব খানের প্রতি সুবিচার করা হয়। ১৭০২ সালে স¤্রাট তাঁকে গঙ্গার তীরবর্তী (ভাগীরথী শাখা) মকসুদাবাদে দফতর স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয় ।
উপাধি লাভ
কলতলব খানের সঙ্গে বিরোধের কারণে স¤্রাট আওরঙ্গজেব আজিম উস শানকে পাটনায় প্রেরণ করেন। তিনি তাকে
নায়েবের মাধ্যমে প্রদেশ শাসনের আদেশ দিয়েছিলেন। করতলব খানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রাজ্যের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়
তখন। এরপর ১৭০৩ সালে তিনি সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দাক্ষিণাত্য গিয়েছিলেন। নবাবের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর
তিনি ‘মুর্শিদকুলী খান’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে সম্রাট তাঁকে উড়িষ্যার সুবাদার হিসেবে নিয়োগ
দিয়েছিলেন। অন্যদিকে বাংলা বিহার ও ঊড়িষ্যার দিওয়ানিও লাভ করেছিলেন তিনি। এদিকে প্রায় ৫টি জেলার ফৌজদার
পদের দায়িত্বও অর্পিত হয় তার উপর। এরপর সম্রাট তাকে “মুর্শিদ কুলি খান’’ উপাধিতে ভ‚ষিত করেছিলেন। পরে তাঁর
নামানুসারে মুকসুদাবাদের নাম পরিবর্তন করে ‘মুর্শিদাবাদ’ রাখার অনুমতি মেলে। ১৭০৪ সালের দিকে সেখানে প্রতিষ্ঠা
করা হয় একটি রাজকীয় টাকশাল। প্রায় ১৩ বছর পর ১৭১৭ সালের আগস্ট মাসে তাঁকে বাংলার পূর্ণ সুবাদারের মর্যাদা দেয়া হয়।
শাসন ক্ষমতা লাভ
১৭০৭ সালে মুঘল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়। এরপর পুরো মুঘল সা¤্রাজ্যে গোলযোগ দেখা দেয়। এ সময় থেকে
অনুপস্থিত নাজিমের পক্ষে তিনিই বাংলার নায়েব এ নাজিম হিসেবে শাসন করতে থাকেন। এরপর বাহাদুর শাহের সময়
মুর্শিদ কুলি খানকে দাক্ষিণাত্যে বদলি করা হয়। তবে বাংলার নতুন করে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তাকে মাত্র দুই বছরের
মধ্যে এখানে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। ১৭১০ সালে বাংলায় ফিরে আসার পর তিনি নতুনভাবে শক্তিমত্তা প্রদর্শন শুরু
করেন। এখানকার শাসক হিসেবে তিনি নানা ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দেন। একটা পর্যায়ে পুরো সা¤্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা
দিলে তার সমাধান করেছিলেন মুর্শিদ কুলি খান। তাঁর এই সাফল্য শেষ পর্যন্ত ১৭১৬ সালের দিকে তার বাংলার নাজিম
পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। তিনি অসংখ্য উপাধি ও পদবিতে ভূষিত হন। প্রথমে তাঁকে ‘জাফর খান’ উপাধি
দেয়া হয়েছিল পরে তাঁকে ‘মুতামিন-উল-মুলক আলা-উদ-দৌলা জাফর খান নাসিরী নাসির জঙ্গ বাহাদুর' উপাধিতে ভূষিত
করতে দেখা যায়। এর পাশাপাশি তাঁকে সাত হাজারি মনসব প্রদান করা হয়েছিল। ১৭১৭ সালে প্রাদেশিক শাসনকর্তা
হিসেবে নিয়োগ পেয়ে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে সম্রাট দ্রæত সময়ের মধ্যে ঊড়িষ্যার সুবাদার নিয়োগ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে বাংলা বিহার ও ঊড়িষ্যার
দিওয়ানিও লাভ করেছিলেন তিনি। এদিকে প্রায় ৫টি জেলার ফৌজদার পদের দায়িত্বও অর্পিত হয় তার উপর। এরপর
সম্রাট তাকে মুর্শিদ কুলি খান উপাধিতে ভ‚ষিত করেছিলেন। পরে তাঁর নামানুসারে মুকসুদাবাদের নাম পরিবর্তন করে
মুর্শিদাবাদ রাখার অনুমতি দেন। ১৭০৪ সালের দিকে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি রাজকীয় টাকশাল। এর প্রায় ১৩
বছর পর ১৭১৭ সালের আগস্ট মাসে তাঁকে বাংলার পূর্ণ সুবাদারের মর্যাদা দেয়া হয়। তিনি মুর্শিদাবাদকে বাংলার রাজধানীতে পরিণত করেছিলেন। ১৭২৭ সালে মুঘল সম্রাট ফররুখশিয়ারের মৃত্যু অবধি এই পদে বহাল ছিলেন তিনি।
শিক্ষার্থীর কাজ মুর্শিদ কুলি খানের শাসন ক্ষমতা লাভের উপর একটি নিবন্ধ লিখুন।
সারসংক্ষেপ:
নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতায় দক্ষিণ ভারতের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও শেষ পর্যন্ত নবাব পদে অধিষ্ঠিত
হয়েছিলেন মুর্শিদ কুলি খান। কর্মদক্ষতার গুণে আপ্লুত আওরঙ্গজেব তাঁকে হায়দারাবাদের দিউয়ান নিযুক্ত করেন। সম্রাট
আওরঙ্গজেব তাঁকে “করতলব খান’’ উপাধি প্রদান করেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও কর্ম নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট হয়ে আওরঙ্গজেব তাকে বাংলার অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও রাজস্ব সংস্কারের দায়িত্ব প্রদান করেন ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.১
১. কোন মুঘল সম্রাট মুর্শিদ কুলি খানকে ‘মুর্শিদ কুলি’ উপাধি দেন।
ক) সম্রাট শাহজাহান খ) সম্রাট আওরঙ্গজেব গ) সম্রাট ফররুখশিয়ার ঘ) সম্রাট শাহ আলম
২. ‘করতলব খান’ উপাধি ছিল
ক) মুর্শিদকুলি খানের খ) সরফরাজ খানের গ) শুজাউদ্দিন খানের ঘ) আলীবর্দী খানের
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র
ইউনিট ৭ পৃষ্ঠা ১৭২
৩. মুর্শিদ কুলি খানের ক্ষমতা গ্রহণের সময় আয়ের একমাত্র উৎস ছিল
ক) ভ‚মি রাজস্ব খ) বাণিজ্য শুল্ক গ) কৃষি কর ঘ) আবগারী শুল্ক
৪. মুর্শিদ কুলি প্রবর্তিত রাজস্ব ব্যবস্থার নাম ছিল
ক) ‘মাল জামিনি’ খ) নানকর গ) পথ কর ঘ) ভ‚মিকর
সৃজনশীল প্রশ্ন:
জামান তার মামার কাছে শুনেছে নবাব সিরাজুদ্দৌলা ছিলেন মুর্শিদকুলি খানের বংশধর। এটা ভুল না সঠিক সে ঠিকমত
মনে করতে পারছে না। তার খুব জানতে ইচ্ছে করে মুর্শিদকুলি খান কিভাবে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। এজন্য সে
লাইব্রেরিতে গিয়ে নবাবি বাংলার ইতিহাসের উপর একটি বই উল্টেপাল্টে দেখতে থাকে। উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্ন
গুলোর উত্তর দিনÑ
১. মুর্শিদ কুলি খান কে ছিলেন? ১
২. কর্মময় জীবনে কি কি পদক্ষেপ মুর্শিদ কুলি খানকে অমর করেছে? ২
৩. উদ্দীপকের মুর্শিদ কুলি খান কিভাবে তার ক্ষমতা সংহত করেন। ৩
৪. মুর্শিদ কুলি খান যে উপাধি প্রাপ্ত হন তার সক্ষমতা কতটুকু ছিল-ব্যাখ্য করুণ? ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]