মুর্শিদ কুলি খানের রাজস্ব সংস্কারের প্রভাব কি ছিল তা আলোচনা কর

মূখ্য শব্দ বাণিজ্য শুল্ক, খাজনা ও ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি
মুর্শিদ কুলি খান যখন বাংলার শাসক হয়ে আসেন তখন এখানকার রাজস্ব ব্যবস্থা সঠিক ছিলনা। শের শাহের
মত তিনিও বাংলার প্রায় পুরো জমি পরিমাপের চেষ্টা করেন। এরপর কর্মচারিদের বেতনের পরিবর্তে জায়গীর
হিসেবে নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোর আয় হিসেব করেছিলেন। তখন ভ‚মি রাজস্ব থেকে সরকারের তেমন আয় হত না। রাজকোষের
একমাত্র আয়ের উৎস ছিল বাণিজ্য শুল্ক। এর বাইরে ভ‚মি রাজস্ব নির্ধারণে নিয়মিত ভ‚মি জরিপও প্রচলিত হয়নি তখন।
জমিদাররা সরকারকে নির্দিষ্ট রাজস্ব দিয়েই নিজের দায় শেষ করতেন।
অনেক ক্ষেত্রে তারা সুযোগ বুঝে প্রজাদের নিকট থেকে নিজেদের নির্ধারিত হারের বেশি খাজনা আদায় করতেন। এক্ষেত্রে
প্রজারা নানা দিক থেকে নির্যাতিত হতেন। এদিকে তারা জনগণের থেকে অতিরিক্ত আয় করলেও তার থেকে বিন্দুমাত্র গিয়ে
রাজকোষে জমা হওয়ার সুযোগ ছিল না। নতুনভাবে ক্ষমতা দখলের পর মুর্শিদ কুলি খান এই পদ্ধতি সংস্কারের চেষ্টা করেন।
রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য মুর্শিদকুলি খান প্রথমে নানাবিধ সংস্কার নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রধানত দুটি পদ্ধতি
গ্রহণ করেছিলেন। প্রথমত, তিনি মুঘল কর্মচারীদের প্রায় প্রতিটি জায়গীরকে খাসজমিতে পরিণত করা এবং এর পরিবর্তে
কর্মচারীদেরকে ঊড়িষ্যার অনুন্নত অঞ্চলে জায়গীর বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব
জমিদারদের থেকে ইজারাদারদের উপর বর্তায়। তারা বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে এই দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেতেন। এই
সংস্কার প্রস্তাবের উপযুক্ত বাস্তবায়ন করতে পারায় নানা দিক থেকে বাংলা সরকারের আয় বেড়ে গিয়েছিল। মুর্শিদ কুলি
খানের সংস্কারের আগে বাংলার জমিদারগণ বার্ষিক নির্দিষ্ট হারে সম্রাটকে রাজস্ব দিতেন। এতে বেশিরভাগ জমিদার অলস
হয়ে পড়েন, রাষ্ট্রও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল। শকার হন। জমিদারগণ সময়মত নির্দিষ্ট পরিমাণের রাজস্ব প্রদান
করতে পারছিলেন না। ফলে মুর্শিদকুলি খান অনেকটা বাধ্য হয়ে জমিদারদের বদলে ইজারাদারদেরকে রাজস্ব আদায়ের
দায়িত্ব অর্পণ করেন। এই রাজস্ব ব্যবস্থা ‘মাল জামিনি’ নামে পরিচিত ছিল। মুর্শিদকুলি খান বেছে বেছে এমন লোকদের
এই ইজারাদার পদে নিয়োগ করেছিলেন যাদের কাছ থেকে পাওনা আদায় তার পক্ষে সহজ ছিল। অন্যদিকে রাজস্ব
কর্তৃত্বের প্রতি অধিকতর অনুগত একটি শ্রেণিকে এক্ষেত্রে দায়িত্ব দিতে দেখা যায়।
রাজস্ব সংস্কারের ফলে মুর্শিদ কুলি খান নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত অর্থ দাবী করা থেকে ইজারাদারদের প্রতিরোধ
করতে পেরেছিলেন। এতে মুঘল কর্মচাররিগণ কোনরূপ অতিরিক্ত কর আদায় করতে পারত না। রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে
কঠোরতা অবলম্বন করলেও গৃহীত নিয়ম বাস্তবায়নে তেমন বেগ পেতে হয়নি তাঁকে। এদিকে ইজারাদারগণ নির্দিষ্ট সময়ে
রাজস্ব প্রদানে অসমর্থ হলে বা কোনরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন করলে মুর্শিদ কুলি খান তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করতেন। ব্যর্থ
হওয়া ইজারাদারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি অনেক ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থাও নিয়েছেন। এর আগে জমিদারদের থেকে যে
রাজস্ব আদায় করা হত তা এক অর্থে নিশ্চিত ছিল না। সংস্কারের পর প্রচলিত এ নতুন নিয়ম সরকারি আয় সুনিশ্চিত
করেছিল। মুর্শিদকুলি খান বাংলার সকল আবাদী ও অনাবাদী জমি জরিপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে
হিসেব না করে জমির উৎপাদন ক্ষমতা অনুসারে রাজস্ব ধার্য করেন। এক একটি জমির বিবরণের লিপিবদ্ধকরণের
পাশাপাশি কৃষকদের নাম ঠিকানাও লিখে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তখন। পাশাপাশি কৃষকরা কি পরিমাণ কর দিয়েছে
সেটাও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন। রাজস্ব সংগ্রহের ব্যয় কমানোর উদ্দেশ্যে তিনি পুরো বাংলাকে
১৩টি চাকলায় বিভক্ত করেছিলেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি চাকলার দায়িত্বে ছিলেন একজন পেশাদার ব্যক্তি তিনি আমীন নামে
পরিচিত ছিলেন। মুর্শিদ কুলি খানের রাজস্ব সংস্কার অনেক জমিদারকে বিপদে ফেলে। তাদের জমিদারি উচ্ছেদের পর
তারা যাতে বিপদে না পড়ে সেজন্য সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুর্শিদ কুলি খান। তিনি নানা স্থান থেকে
উচ্ছেদকৃত জমিদারদের ভরণ পোষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা হিসেবে তখন “নানকর’’ প্রচলন করা
হয়। এর পাশাপাশি জমিদারদের মধ্যে যারা রাজস্ব ব্যবস্থা ও রাজস্ব আদায়ের চুক্তি গ্রহণে সম্মত হয়েছিলেন তাঁদেরকে
ইজারাদার পদে নিয়োগ করা হয়। ফলে নিজের ভ‚মির উপর থেকে অধিকার হারানো জমিরদারগণ বিপদ থেকে রক্ষা
পেয়েছিলেন। রাজস্ব বৃদ্ধির নানা উপায় বের করার পাশাপাশি মুর্শিদকুলি খান ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেন। তিনি
পদাতিক ও অশ্বারোহী সৈন্যের সংখ্যা বেশ কমিয়ে এনেছিলেন। এর বাইরে শাসন বিভাগের বহুবিধ ব্যয় সংকোচ করে
তিনি রাজকোষের আয় বৃদ্ধি করেছিলেন। অন্তত রাজস্ব সংস্কারের পাশাপাশি তার এই ব্যয় সংকোচন নীতিই নবাবি বাংলার
কোষাগার সমৃদ্ধ করতে কার্যকর ভ‚মিকা রাখে।
মুর্শিদ কুলি খান ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বাংলার বাণিজ্য সমৃদ্ধির পাশাপাশি
রাজকোষাগার ফুলে ফেঁপে ওঠার কৃতিত্ব অনেকটাই তাঁর উপরে বর্তায়। তিনি আর্থিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ও
স্থানীয় বণিকদের প্রায় প্রত্যেকের প্রতি সহানুভ‚তি দেখিয়েছিলেন। পাশাপাশি বণিকদের নির্বিঘœ ও অবাধ পণ্য চলাচল
নিশ্চিত করতে তার পদক্ষেপ ছিল প্রশংসার দাবিদার। অন্তত বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে বণিকদের নিকট থেকে
অতিরিক্ত শুল্ক আদায় তিনি পছন্দ করতেন না। তবে তিনি ব্যবসায় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ইংলিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির
নিকট থেকে প্রচলিত স্বল্প হারে শুল্ক আদায়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা একটা পর্যায়ে সর্বনাশের কারণ হয়েছিল। মুর্শিদ
কুলি খানের নানাবিধ সংস্কারে যেমন জনজীবনে স্বস্তি মিলেছিল, তেমনি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির নানামুখী প্রচেষ্টার ফলে (১)
রাজস্ব খাত থেকে প্রাপ্ত আয় সুনির্দিষ্টকরণ সম্ভব হয়। (২) সরকারের
আয় পূর্বের তুলনায় বেশ বেড়ে যায়। (৩) রাজস্ব সংগ্রহকারী
কর্মচারীদের দাপট ও অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বাংলার
কৃষকগণ। (৪) বাণিজ্য শুল্ক নির্দিষ্ট হওয়ায় ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে
অনেক উন্নতি লক্ষ্য করা যায় । (৫) রাজস্ব আয় বেড়ে যাওয়ার
মাধ্যমে সরকার কৃষি ঋণ দিতে শুরু করে।
বিশেষত, তাঁর রাজস্ব সংস্কার দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটা
বৈপ্লবিক অগ্রগতি নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে তাঁর ’’মাল জামিনি’’ রাজস্ব
ব্যবস্থায় ইজারাদার নির্বাচনে হিন্দুদের প্রাধান্য দেওয়ায় একটি নতুন
অভিজাত শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছিল। এরাই পরবর্তীকালে লর্ড
কর্নওয়ালিসের সময় বংশানুক্রমে জমিদারী ভোগের অধিকার লাভ
করেছিল। অন্যদিকে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য মুর্শিদ কুলি খান
এমন কিছু নীতি গ্রহণ করেছিলেন যা শেষ পর্যন্ত সর্বনাশের কারণ
হয়। অন্তত বাংলা থেকে শুরু করে পুরো ভারতবর্ষে ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিস্তার লাভের দায় অনেকাংশে মুর্শিদ
কুলি খানের উপর বর্তায়। পরবর্তীকালে মুর্শিদ কুলী খানের প্রবর্তিত রাজস্ব পদ্ধতি বহুলাংশে অনুসরণ করে চিরস্থায়ী
বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস। কেন্দ্রিয় মুঘল শাসনের দুর্বলতার সময় নিয়মিত রাজস্ব পাঠানোর কারণে
মুর্শিদ কুলি খানকে বংশানুক্রমে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শাসনভার অর্পণ করা হয়। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি খান মৃত্যু বরণ করেন।।
সারসংক্ষেপ:
আওরঙ্গজেবের পরবর্তী সময়কালকে নবাবি বাংলার উত্থানপর্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তখনকার মুঘল সম্রাটদের
দুর্বলতার সুযোগে সুবাদারগণ প্রায় স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করতে থাকেন। বাংলার ইতিহাসে এই শাসকরাই নবাব
বলে পরিচিতি পান। সুবাদার মুর্শিদকুলি খান নবাব হিসেবে প্রশাসনিক অনেকগুলো সংস্কার সাধন করেছিলেন। তিনি
রাজস্ব সংস্কারের পাশাপাশি আরও অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন। নবাব মুর্শিদ কুলি খানের সমাধি
১. মুর্শিদ কুলি খানের ক্ষমতা গ্রহণের সময় আয়ের একমাত্র উৎস ছিল
ক) ভ‚মি রাজস্ব খ) বাণিজ্য শুল্ক গ) কৃষি কর ঘ) আবগারী শুল্ক
২. মুর্শিদ কুলি প্রবর্তিত রাজস্ব ব্যবস্থার নাম ছিল
ক) ‘মাল জামিনি’ খ) নানকর গ) পথ কর ঘ) ভ‚মিকর
সৃজনশীল প্রশ্ন:
বিকেলের খেলাধুলা শেষ করে বাসায় ফিরে পড়তে বসেছে মামুন। পাশের রুমে উচ্চ শব্দে টিভি দেখায় সে খুব বিরক্ত
হয়। ভলিউম কমানোর জন্য পাশের রুমে যেতে সে খেয়াল করে সবাই খুব মন দিয়ে সুলতান সুলাইমানের ডাবকৃত বাংলা
সিরিয়াল দেখছে। টিভি স্ক্রিনে চোখ রাখতে তার হঠাৎ মনে পড়ে নবাব সিরাজ সিরাজুদ্দৌলার কথা। সে কোথায় যেন
পড়েছিল নবাব সিরাজুদ্দেদৗলা ছিলেন মুর্শিদকুলি খানের বংশধর। এটা ভুল না সঠিক সে ঠিকমত মনে করতে পারছে না।
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিনÑ
১. ‘মালজামিনি’ ব্যবস্থা কি? ১
২. বাণিজ্য সংস্কারের ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ মুর্শিদ কুলি খানকে অমর করেছে? ২
৩. মুর্শিদ কুলি খান রাজস্ব ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কি কি সংস্কার করেছিলেন-বিবরণ লিখুন? ৩
৪. মুর্শিদ কুলি খানের নানাবিধ সংস্কারের ফলাফল কি ছিল বিশ্লেষণ করুণ? ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]