মূখ্য শব্দ জৈনুদ্দিন খান, ময়মুনা ও আমিনা
ভ‚মিকা: নবাব আলীবর্দী খানের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তাঁর তিন মেয়ে ছিল। তাদের নাম যথাক্রমে আমিনা,
ময়মুনা ও ঘষেটি বেগম ময়মুনা ও আমিনার দুই ছেলে ছিল। তবে ঘষেটি বেগমের কোনও সন্তান ছিল না।
আলীবর্দী খান আমিনার ছেলে সিরাজউদ্দৌলাকে অত্যন্ত ¯েœøহ করতেন। এ কারণে নবাব তাঁকেই তাঁর জীবিত কালে বাংলার
সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে গিয়েছিলেন। সিরাজের জন্ম ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম ছিল জৈনুদ্দিন
খান। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যু হলে মাত্র ২৩ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলা বাংলা ও বিহারের সিংহাসনে
আরোহণ করেন।
সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে বসার পর থেকেই ঘরে-বাইরে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র ও বাধা বিপত্তির মুখে পড়েছিলেন। তাঁর
নবাবির দায়িত্ব গ্রহণকে আলীবর্দী খানের অন্য দুই মেয়ে সহজভাবে মেনে নিতে
পারেননি। তারা সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার শুরু করে। এতে তাদের
সঙ্গে যুক্ত হয় পূর্ণিয়ার শাসক শওকত জঙ্গ এবং ঘষেটি বেগমের দিওয়ান রাজা
রাজবল্লব। সুযোগ বুঝে ইংরেজরা এই ষড়যন্ত্রে পুরোপুরি অংশ গ্রহণ করে।
সিরাজউদ্দৌলা পারিবারিক ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তবে এ ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল রাজ দরবারের প্রভাবশালী দেশীয় রাজন্যবর্গ। তাদের
অপকর্মে ইন্ধন যোগায় সুবিধাভোগী ইংরেজ বেনিয়ারা। ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে হিন্দু
মুসলমান উভয় সম্পদায়ের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। তারা
সিরাজের বিরুদ্ধে দিনরাত নানামুখী ষড়যন্ত্রের ডানা মেলতে থাকে। তাদের সব
ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে এক নির্মম পরিণতি হয়ে এসেছিল পলাশীর যুদ্ধ। ১৭৫৭
সালে ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে সংঘটিত এ যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব
সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। তাঁর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় স্বাধীন শাসনের
সমাপ্তি ঘটে। অন্যদিকে বাংলায় প্রতিষ্ঠা পেতে দেখা যায় ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির শাসন।
সিংহাসনে আরোহনের পর নানা দিক থেকে চাপে ছিলেন নবাব সিরাজ। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে তার অনেক
সময় লেগে যায়। বলতে গেলে ঘরে বাইরে সবদিক থেকে বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। এই সুযোগ কাজে
লাগায় সুবিধাভোগী ইংরেজগণ। তারা সিরাজউদ্দৌলাকে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্বীকৃতি প্রদান করেনি। এমনকি ক্ষমতা
গ্রহণের পর তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ পর্যন্ত করতে আসেনি। আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে তারা কোনো ধরণের
উপঢৌকনও প্রেরণ করেনি। ইংরেজদের এরূপ অবাধ্যতার জন্য নবাব স্বভাবতই তেেদর প্রতি বিরাগভাজন হন। ইংরেজরা
বহুদিন থেকে বাংলার শাসনকার্যে হস্তক্ষেপ করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। শওকত জঙ্গ, ঘষেটি বেগম তাদের সামনে সে
সুযোগ নিয়ে আসে। পাশাপাশি দিওয়ান রাজবল্লভ সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ায় তাদের কাজ আরও সহজ হয়ে
যায়। অন্যদিকে ইংরেজরা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতিটি ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছিল। ফলে সিরাজ এই বিদেশী
রবার্ট ক্লাইভ
শত্রæদের প্রতি ক্ষ্ব্ধু ছিলেন শুরু থেকে। তারা শেষ পর্যন্ত সরাসরি বিদ্রোহে যুক্ত হয়ে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। নবাব
আলীবর্দী খানের সময়ে ইংরেজরা বাণিজ্য করার অনুমতি পেয়েছিল। প্রথমবারের মত
তাদের এই অনুমতি প্রাপ্তি মূলত সব সর্বনাশের সূচনা করে। তবে তারা তখন দুর্গ নির্মাণ
করার অনুমতি পায়নি। এদিকে সিরাজের রাজত্বকালে তারা নানা বিশৃঙ্খলা থেকে
সুযোগ গ্রহণ করে। অন্যদিকে দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজরা কলকাতায় দুর্গ
নির্মাণ করে। তাদের দেখাদেখি ফরাসিরাও চন্দননগরে দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। নবাব
সিরাজ তাদের দুর্গ নির্মান বন্ধ করতে আদেশ দেন। ফরাসিরা তার এ আদেশ মেনে
নিয়েছিল। তবে সুযোগ সন্ধানী ও উ””াভিলাষী ইংরেজরা তার নির্দেশ অমান্য করে দুর্গ
নির্মাণ চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে নবাব তাদের উপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সরাসরি যুদ্ধ
করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অন্যদিকে হলওয়েলের কল্পকাহিনীতে ‘অন্ধকূপ হত্যা’ বেশ গুরুত্ব
পেয়েছিল যা এক অর্থে নবাবের সম্মান হানি করে।
সিরাজের বিরুদ্ধে খালা ঘষেটি বেগম এবং পূর্ণিয়ার শাসক শওকত জঙ্গ বিদ্রোহ ঘোষণা
করে। এই সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা নবাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের সমর্থন জানায়। এর ফলে ইংরেজদের উপর
ক্ষোভ প্রকাশ্য শত্রæতায় রূপ নেয়। এদিকে রাজবল্লভের পুত্র দ্ধৃষ্ণদাস প্রচুর ধনরতœসহ পালিয়ে যায় কলকাতায়। সে সেখানে
গিয়ে ইংরেজদের আশ্রয়লাভ করে। সম্পদসহ কৃষ্ণদাসকে ফেরৎ দিতে পুরো অস্বীকার করে ইংরেজরা। শুধু অস্বীকার
করেই তারা চুপ থাকেনি। উপরন্তু নবাবের প্রেরিত দূতকে পর্যন্ত ইংরেজরা অপমানিত করে তাড়িয়ে দেয়। নবাব আলীবর্দী
এক অর্থে বাংলার সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন ইংরেজদের বাণিজ্য করার অনুমতি দিয়ে। তারা নানা ধরণের ষড়যন্ত্রে ইন্ধন
যোগানোর পাশাপাশি প্রদত্ত সকল বাণিজ্যিক সুবিধার অপব্যবহার অব্যাহত রেখেছিল। কোম্পানির কর্মচারিরা
ব্যক্তিগতভাবে বেআইনী ব্যবসায় যুক্ত ছিল। তারা এভাবে অনেক শুল্ক ফাঁকি দিত। নবাব এর প্রতিকার দাবি করেন। তার
জবাবে ঔদ্ধত্যের সব সীমা অতিক্রম করে ইংরেজ গভর্নর ড্রেক তা উপেক্ষা করে বসেন। সবথেকে বড় সমস্যা হয়ে দেখা
যায় নবাব আলীবর্দী খানের সাথে সন্ধির যাবতীয় শর্ত ভঙ্গ করার বিষয়টি। এই সন্ধি অগ্রাহ্য করে ইংরেরজরা জনসাধারণের
উপর অত্যাচার শুরু করে। পাশাপাশি তারা নবাবকে কর প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের
সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান অবনতি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে মোড় নেয়।।
সারসংক্ষেপ:
বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে উপমহাদেশে আগত ইংরেজরা বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত
ক্ষমতায় আরোহণ করে। স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে তারা অনেক আগে থেকেই ক্ষমতায় আরোহনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন
করেছিল। পরের দিকে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় তাদের ক্ষমতা গ্রহণের একটি সাধারণ উপলক্ষ্য হয়ে
দেখা দেয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১
১। নবাব সিরাজউদ্দৌলা কত খ্রিস্টাব্দে মসনদে বসেন?
ক) ১৭৫৫ খ) ১৭৫৬ গ) ১৭৫৭ ঘ) ১৭৫৮
২। “অন্ধকুপ হত্যা” নামক কল্প কাহিনীর জনক কে?
ক) হলওয়েল খ) ড্রেক গ) রবার্ট ক্লাইভ ঘ) ওয়াটসন
সৃজনশীল প্রশ্ন:
মার্কিন বাহিনী ইরাক আক্রমণের পর সেখানকার শাসক কাঠামোতে পরিবর্তন আসে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী বন্দী করে
ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে। ঈদের দিন বিকালে প্রকাশ্যে তাঁর ফাসি কার্যকর করা হয়। টেলিভিশন
সংবাদ দেখে অনেক মন খারাপ হয় আকিবের। তার বাবা বললেন বাংলার ইতিহাসও এমনি নৃশংস নানা ঘটনার স্বাক্ষী।
এভাবেই বিশ্বাস ঘাতকের দল হত্যা করেছিল বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে।
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিনÑ
১. নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে ছিলেন ? ১
২. নবাবের বিরুদ্ধে কিভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল? ২
৩. কিভাবে বাণিজ্য সুবিধার অপব্যবহার করেছিল? ৩
৪. পলাশী যুদ্ধের পটভূমি লিখুন? ৪
<
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র