মূখ্য শব্দ পলাশী যুদ্ধ, অন্ধকূপ হত্যা, আলী নগরের সন্ধি ও মুহাম্মদী বেগ
ভ‚মিকা: ক্ষমতা গ্রহণ করেই ইংরেজদের নানা ধরণের অবাধ্যতা প্রত্যক্ষ করেন নবাব সিরাজুদ্দৌলা। তিনি
তাদরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সমুচিত শাস্তি দিতে মনস্থ করেন। এজন্য কলকাতার দিকে অগ্রসর হন
তিনি। পথিমধ্যে নবাব কাশিম বাজারের ইংরেজ কুঠি দখল করেন। নবাবের এ অতর্কিত আক্রমণে ভীত হয়ে গভর্নর ড্রেক
ও তাঁর সাথীরা ফোর্ট উইলিয়াম ছেড়ে ‘ফলতা’ নামক স্থানে আশ্রয় নেয়। নবাব কলকাতা দখল করেন এবং আলীবর্দী
খানের নামানুসারে এর নাম রাখেন ‘আলীনগর’। হলওয়েল ও তার সাথীরা পরাজিত হয় নবাবের বাহিনীর কাছে। তারা
অনেকেই আত্মসমর্পণে বাধ্য হন। আত্মসমর্পণের পর তাদের উপর কোন রকম অত্যাচার করা হয়নি। ‘অন্ধক‚প হত্যা’
নামক বীভৎস কাল্পনিক কাহিনীর জন্ম দেয় ইংরেজরা। কথিত আছে নবাবের আদেশে ১৪৬ জন ইংরেজ বন্দীকে ছোট
একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। জুন মাসের প্রচন্ড গরমে এদের মধ্যে ১২৩ জন শ্বাসবন্ধ হয়ে মারা যায় বাকী ২৩ জন কোন
রকমে বেঁচে যায়।
কলকাতা অধিকার করে মানিকচাঁদকে এর দায়িত্বে রেখে নবাব মুর্শিদাবাদে ফিরে যান। ইতোমধ্যে ইংরেজরা মাদ্রাজ থেকে
অধিক সৈন্য সংগ্রহ করে। ওয়াটসন ও রবাট ক্লাইভের নেতৃত্বে মানিক চাঁদের নামমাত্র প্রতিরোধ ভেঙ্গে কলকাতা পুনরায়
দখল করে নেয়। ফলে ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের শত্রæতা ধীরে ধীরে চূড়ান্ত রূপ নিতে থাকে। নবাব বেশ ভালবাবে বুঝতে
পেরেছিলেন কোনোরকম ছাড় দিতে থাকলে ইংরেজরা কতটা হিং¯্র, ধ্বংসাত্মক এবং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
ইংরেজরা আবার কলকাতা অধিকার করেছে এমন সংবাদ পেয়ে নবাব আবারও কলকাতা অভিমুখে অগ্রসর হন। কিন্তু তাঁর
সেনাপতির বিশ্বস্ততা সম্পর্কে তাঁর সন্দেহ জাগে। আহমদ শাহ আবদালীর আক্রমণের সম্ভাবনাও তাঁর জন্য অস্বস্তির কারণ
ছিল। এবার নবাব ইংরেজদের সাথে আরও একটি সন্ধি করেন। ইতিহাসে এটি ‘আলীনগরের সন্ধি’ নামে খ্যাত। ১৭৫৭
সালের ৯ ফেব্রæয়ারি এ সন্ধি স্বাক্ষর করা হয়েছিল। অন্যদিকে এ সন্ধির শর্তানুসারে নবাব দিল্লির সম্রাট কর্তৃক ইংরেজদের
প্রদত্ত সকল বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি প্রদান, টাকশাল নির্মাণ এবং দুর্গ সংস্কার করার অনুমতি প্রদান
করেন। ‘আলীনগরের সন্ধি’ ইংরেজ নেতা রবার্ট ক্লাইভকে খুশী করতে পারেনি। তিনি ইংরেজ কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণের
জন্য সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। এ উদ্দেশ্যে একটি স্বার্থান্বেষী চক্রের সাথে গোপন ষড়যন্ত্রে
লিপ্ত হন তিনি। বিশেষ করে নানা ধরণের দুর্নীতি, অপকর্ম আর ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত নানা দেশীয় মানুষ
তার এই ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়। ইতোমধ্যে ইউরোপে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ শুরু হলে তার
প্রতিক্রিয়া ভারতীয় উপমহাদেশেও দেখা দেয়। নবাবের নিদের্শ অমান্য করে ইংরেজরা ফরাসিদের কুঠি চন্দননগর অধিকার
করে নেয়। নবাব তাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হন। পাশাপাশি পলাতক ফরাসিরা নবাবের দরবারে আশ্রয় নেয়। এরপর তারা
ফ্রাঙ্কো-বাংলা আক্রমণের আশঙ্কা করে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়
ইংরেজদের। পাশাপাশি দরবারের ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে যোগ দিতে দেখা গেছে তাদের। নবাব বিরোধী ষড়যন্ত্রে যোগ
দিয়েছিলেন ধনকুবের জগৎশেঠ, নবারের সেনাপতি মীরজাফর ও রায়দুর্লভ, আস্তাভাজন উঁমিচাদ, দিওয়ান রাজবল্লভ
প্রমুখ। তাঁরা মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসানোর প্রতিশ্রæতি দেয়। এর বিনিময়ে মীরজাফর ইংরেজদেরকে পৌনে দুই
কোটি টাকা দেওয়ার জন্য অঙ্গীকার করেছিলেন। উঁমিচাঁদ এ গোপন চুক্তি ফাঁসের ভয় দেখায়। তখন ক্লাইভ তাকে প্রচুর
পলাশীর যুদ্ধ ক্ষেত্র
অর্থ প্রদানের অঙ্গীকারসহ একটি জালচুক্তি পত্র তৈরি করেন। তবে এই জাল চুক্তিপত্রের ভুলগুলো সেভাবে ধরতে পারেননি
উমিচাঁদ। ফলে তিনি প্রতারিত হন।
পলাশীর যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ
বিশ্বাসঘাতকতা, জালিয়াতি, স্বার্থপরতা ও দেশদ্রোহিতার নিকৃষ্ট এক উদাহরণ সৃষ্টির উপলক্ষ হয়ে এসেছিল পলাশী যুদ্ধ।
বাংলার ইতিহাসে এখনও নেতিবাচক কোনো অধ্যায় বলতে এই পলাশী যুদ্ধকেই বোঝানো হয়ে থাকে। ক্লাইভ নবাবের
বিরুদ্ধে সন্ধি ভঙ্গের মিথ্যা অজুহাতে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। নবাব আগে থেকেই ইংরেজদের দুরভিসন্ধি এবং তাদের
কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। এ কারণে তিনি ৫০টি কামানসহ ৫০ হাজার পদাতিক ও ১৮ হাজার অশ্বারোহী
সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী প্রস্তুত করেন। নবাব তার বাহিনী মুর্শিদাবাদের ২৩ মাইল দক্ষিণে ভাগীরথী নদীর তীরে
মোতায়েনের আদেশ দেন। অন্যদিকে ক্লাইভ ৮টি কামানসহ ১০০০ জন ইউরোপীয় ও ২০০০ জন দেশীয় সৈন্যসহ
পলাশীর আমবাগানে অবস্থান গ্রহণ করে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে বাংলার
ইতিহাস নতুন করে লিখতে হয়েছিল। বিশেষত এই লড়াই যতটা না যুদ্ধ ছিল তার থেকে অনেকাংশেই নবাবের ভাগ্য
পরীক্ষা হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। মীর মদন ও মোহন লাল নবাবের পক্ষে প্রাণপণ যুদ্ধ করেন। কিন্তু সেনাপতি মীরজাফর ও
রায়দুর্লভ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সেনাদল নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকেন। মীরমদন যুদ্ধ ক্ষেত্রে গোলার আঘাতে শহীদ
হন। এদিকে মোহনলালের বীর বিক্রমে লড়াই ধীরে ধীরে ইংরেজদের বিপক্ষে চলে যায়। এ সময় মীরজাফরের কুপরামর্শে
যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়া হয়।
যুদ্ধ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে নতুনভাবে সংঘটিত হয়ে
ইংরেজরা পাল্টা আক্রমণ চালায়। এতে নবাবের
বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। নবাব কোন রকম প্রাণ
নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান। প্রাথমিকভাবে
যুদ্ধে নবাবের ৫০০ জন সৈন্য নিহত হয়েছিলেন।
তবে মোহনলাল প্রথম দিকে যুদ্ধে যেভাবে এগিয়ে
গিয়েছিলেন তাতে ইংরেজদের ২৩ জন্য সৈন্য
শুরুতেই নিহত হয়েছিল। তবে যুদ্ধে বন্ধের আদেশ
প্রাপ্তির পর তিনি আর লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা ধরে
রাখতে পারেননি। অন্যদিকে ফরাসি নেতা সিনফ্রেও
যুদ্ধক্ষেত্রে নবাবের পক্ষে প্রবল বিক্রমের সঙ্গে লড়াই
করেন। সিরাজ মুর্শিদাবাদে ফিরে গিয়ে একটি নতুন
সেনাবাহিনী গঠনে ব্যর্থ হন। পরে পরিস্থিতি পুরো
নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে স্ত্রী ও মেয়েকে
নিয়ে পাটনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি রাজধানী
থেকে পলায়ন কালে পথিমধ্যে রাজমহলের কাছে ধরা
পড়েন। বিশ্বাসঘাতক নতুন নবাব মীরজাফরের পুত্র
মীরন তাকে হত্যার আদেশ দেয়। এ আদেশ
বাস্তবায়ন করে মুহাম্মদী বেগ। ১৭৫৭ সালে ২
জুলাই ছুরিকাঘাতে নবাবের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলার
প্রায় দু’শ বছরের স্বাধীনতা অস্তমিত হল।
নবাবের পতনের কারণ
প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি নানা কারণে নবাব সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্য বিপর্যয় শুরু হয়েছিল অনেক আগে। আত্মীয়
স্বজনের পাশাপাশি দরবারের আস্থাভাজন অনেকে আস্থাহীন আচরণ করায় ইংরেজদের কাছে পরাজয় তার পতনের একটি
উপলক্ষ্য মাত্র। পলাশীর এই খÐযুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নবাব পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন। এ পরাজয়ের পিছনে বেশ
কয়েকটি কারণ ছিলÑ
বিশ্বাসঘাতকতাঃ মীরজাফর ও তার সহযোগীদের বিশ্বাসঘাতকতাই ছিল নবাবের পতনের মূল কারণ। বিজয়ের পূর্বক্ষণে
প্রধান সেনাপতি হিসেবে তিনি নবাবকে ভুল পরামর্শ দেন ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভুমিকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
মীরজাফর বিশ্বাস ঘাতকতা করে যুদ্ধ বন্ধের আদেশ না দিলে মোহনলাল যেভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন ইংরেজ বাহিনীর
পরাজয় সুনিশ্চিত ছিল। প্রথম দিকের নানা বিশ্বাসঘাতকতা শেষ পর্যন্ত তেমন কাজে আসেনি। অন্তত শেষ পর্যায়ে
সেনাপতি হিসেবে মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা না করলে এ যুদ্ধে নবাবেরই বিজয়ী হওয়ার কথা।
অদূরদর্শিতা ঃ তরুণ নবাবের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার অভাব এবং মাতামহের অত্যাধিক স্নেহ প্রাচুর্যে বেড়ে
উঠা সিরাজের চরিত্রে কঠোরতা ও দৃঢ়তার অভাব ছিল। জটিল পরিস্থিতিতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন এবং কুচক্রীদের
ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরেও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণে সাহসী হন নি। এই সিদ্ধান্তগত দুর্বলতার জন্যই তাকে চরম মূল্য দিতে
হয়েছিল।
অবিশ্বাস ও অনাস্থাঃ যুদ্ধ ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত বিজয়কে উপেক্ষা করে নবাবের যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা তাঁর সমরনীতির
অপরিপক্কতার ও পরনির্ভরশীলতার পরিচয় বহন করে যা তাঁর পতনকে ত্বরান্বিত করে। তিনি নিজের সেনাবাহিনীর উপর
সেভাবে আস্থা রাখতে পারেননি। ফলে মীর জাফরের মত বিশ্বাস ঘাতকের পরামর্শ তাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই
অবিশ্বাস ও অনাস্থা শেষ পর্যন্ত তার পরাজয়ের কারণ হয়ে দেখা দেয়।
দৃঢ়তার অভাবঃ নবাবের চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব থাকায় সুযোগ নিয়েছিল ইংরেজরা। ফরাসিরা তাঁর বিরুদ্ধে ইংরেজদের
ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তাঁকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল আগেই। তিনি তাদের এই পরামর্শ কানে তোলেন নি। নবাব আলীবদী
খানও মৃত্যুর আগে সিরাজকে ইংরেজদের শক্তি বৃদ্ধি সম্পর্কে সতর্ক করে গেলেও তিনি ইংরেজদের দমনে উপযুক্ত ব্যবস্থা
নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ব্রিটিশ রণকৌশলঃ নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মূল হোতা রবার্ট ক্লাইভ ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি সামরিক দিক থেকেও
এগিয়ে ছিল। সে দক্ষ ক‚টনীতি, উন্নত রণকৌশল এবং রণসম্ভারে নবাবের বিশাল বাহিনীর থেকে এগিয়ে ছিল। তার
বাহিনীর পারদর্শীতার কাছেও নবাব অনেকাংশে কুপোকাত হয়েছিলেন। ফলে ক্লাইভের নিকট নবাব সিরাজউদ্দৌলার
পরাজয় ঘটার পরোক্ষ কারণ হিসেবে ক্লাইভের দক্ষতাকেও উল্লেখ করা যায়।
ফলাফলঃ আপাত দৃষ্টিতে পলাশীর যুদ্ধ একটি খÐ যুদ্ধের চেয়ে বেশী কিছু ছিল না। তবে এর ফলাফল ছিল দীর্ঘমেয়াদী ও
সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধের রাজনৈতিক -অর্থনৈতিক- সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম এবং এর প্রভাবেই বাংলার
রাজনৈতিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন এসেছিল। বিশ্বাসঘাতকতার উপহার হিসেবে প্রথম দিকে মীর জাফর শাসন
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। নিচে পলাশী যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা করা
হলোÑ
নবাবের পতন: পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন ঘটে। এরপর পথিমধ্যে ধরা পড়ে
ঘাতকের হাতে তাঁর অকাল মৃত্যু হলে বাংলার স্বাধীনতার দীর্ঘদিনের জন্য অস্তমিত হয়।
ক্ষমতা বদলঃ পলাশীর যুদ্ধের পর মীর জাফর বাংলার সিংহাসন লাভ করলেন। কিন্তু প্রকৃত রাজক্ষমতা ইংরেজদের
নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তিনি সকল কাজই করতেন ইংরেজদের পরামর্শে। ফলে এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা মতান্তরে চলে
গিয়েছিল ইংরেজদের হাতেই।
বাংলার দেউলিয়াত্বঃ পলাশীর যুদ্ধের পর উপমহাদেশে ইংরেজদের সার্বভৌমত্ব স্থাপিত না হলেও তারা নতুন নবাবের কাছে
থেকে নগদ এক কোটি টাকা এবং চব্বিশ পরগণার বিশাল জমিদারী লাভ করেন। ফলে বাংলার রাজনীতিতে ইংরেজদের
যখন তখন হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত হয়। এর মধ্য গিয়ে বাংলা পুরোপুরি দেউলিয়া হতে বসে।
একচেটিয়া ইংরেজ বাণিজ্যঃ এ যুদ্ধের ফলে ইংরেজগণ বাংলায় একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার লাভ করেন আর এদেশীয়
বণিকদের সমাধি রচিত হয়। পাশাপাশি তারা ইউরোপের অন্য দেশের বণিকদেরও বাংলা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
ফরাসিদের দুর্ভোগঃ এ যুদ্ধে বিজয়ের ফলে ইংরেজরা বাংলাসহ দাক্ষিণাত্যে প্রভাব বিস্তার করে ফরাসি বণিকদের বিতাড়িত
করে এবং একচেটিয়াভাবে উপমহাদেশের সম্পদ আহরণ ও ইংল্যান্ডে প্রেরণের ফলে এদেশের আর্থিক মেরুদÐ ভেঙ্গে
যায়। তবে তারা সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছিল ফরাসিদের। বলতে গেলে এই যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের
বাণিজ্য ও রাজনীতিতে ফরাসিদের সব সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল।
ভারত দখলঃ এ যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভ উপমহাদেশে ইংরেজদের বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে
সংঘটিত বক্সারের যুদ্ধে তারা মীর কাসিমকে পরাজিত করে। পাশাপাশি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে পরাজিত করে
পুরো ভারত উপমহাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।
সারসংক্ষেপ:
বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে উপমহাদেশে আগত ইংরেজরা বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত
ক্ষমতায় আরোহণ করে। স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে তারা অনেক আগে থেকেই ক্ষমতায় আরোহনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন
করেছিল। পরের দিকে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় তাদের ক্ষমতা গ্রহণের একটি সাধারণ উপলক্ষ্য হয়ে
দেখা দেয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৬
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. পলাশীর প্রান্তরে নবাবের পক্ষে প্রাণপণ দেশ প্রেমিকের মত যুদ্ধ করেন-
ক) রায়দুর্লভ খ) ইয়ার লতিফ গ) মোহন লাল ঘ) মীরজাফর
২. পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ পক্ষে সেনাপতি ছিলেন-
ক) ওয়াটসন খ) ক্লাইভ গ) সিনফ্রে ঘ) কর্ণওয়ালিস
৩. ইংরেজগণ আলীনগরের সন্ধিকে-
ক) মেনে চলে খ) নবায়ন করে গ) অমান্য করে ঘ) ভঙ্গ করে
সৃজনশীল প্রশ্ন:
ছোট চাচার কাছে মায়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির নাম শুনেছে ইকবাল। তার মনে পড়ছে সুকি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার
পর্যন্ত পেয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারে যা ঘটছে তার সঙ্গে সে কিছুতেই এই শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তির বিষয়টিকে
মেলাতে পারছে না। বিশেষ করে নারীদের উপর জঘন্য নির্যাতন, মানুষের ঘড় বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া। শিশু, নারী, বৃদ্ধ কিংবা
সবল পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করার মত জঘন্যতা সেখানে ঘটছে। টিভি খুলে এর আগে সে ইরাকের নানা
স্থানে যুদ্ধের সংবাদ দেখেছে। কিন্তু মিয়ানমারের এমন নৃসংশ গণহত্যা সে এর আগে কখনও দেখেনি। যুদ্ধের কথা
ভাবতেই তার মনে পড়ে পাঠ্য বইয়ের উল্লেখিত পলাশী যুদ্ধের কথা। উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিনÑ
১. বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব কে ছিলেন? ১
২. আলীনগরের সন্ধির বিবরণ দিন। ২
৩. উদ্দীপকের আলোকে আপনার পাঠ্য বইয়ে বর্ণিত পলাশীর যুদ্ধের বর্ণনা দিন। ৩
৪. নবাবের পতনের কারণগুলো কি কি ছিল-সংক্ষেপে লিখুন? ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র