মীরজাফর ও মীর কাসিমের নবাবি লাভ বক্সারের যুদ্ধ বক্সারের যুদ্ধ পরবর্তী প্রভাব

মূখ্য শব্দ মীর জাফর, মীর কাসিম, স¤্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ও সুজাউদ্দৌলা
ভ‚মিকা: বাংলা তথা ভারত উপমহাদেশে নবাবি শাসনের পতন ঘটার পর থেকে ব্রিটিশদের আনুগত্যে থেকে
নবাবি লাভ করেছিলেন মীর জাফর। তিনি এর আগে থেকে নবাব সিরাজের প্রতি মিথ্যা আনুগত্য দেখাতেন।
পলাশীর যুদ্ধে তিনি নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিলেন। কোম্পানির অতিরিক্ত অর্থচাহিদা
পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তারা মীর কাশিমকে অল্প কিছুদিনের জন্য নবাব করেছিল। তবে তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা
নবাব। তিনি বাংলায় ইংরেজদের হস্তক্ষেপকে অযোৗক্তিক মনে করে তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি
অযোধ্যার নবাব, এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিনি ইংরেজদের প্রতিরোধে শাহ
আলমের সঙ্গে একটি সামরিক চুক্তি করেছিলেন। তারপর ২২ শে অক্টোবর ১৭৬৪ সালে তার নেতৃত্বে ইংরেজদের বিপক্ষে
বক্সারের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। তবে নবাব মীর কাসিমের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বাহিনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
সৈন্যবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। তারপর মীর জাফরকে তারা নতুনভাবে নবাব ঘোষনা করেছিল।
মীর জাফর
মূলত ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন মীর জাফর ও তার সহযোগীদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যের
কাছে পরাজিত হয়েছিলেন নবাব সিরাজ-উ-দৌলা। এরপর তাকে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হলে ইংরেজ সেনাপ্রধান কর্ণেল
রবার্ট ক্লাইভ প্রকাশ্য দরবারে মীর জাফরকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সিংহাসনে বসান। তখন তার উপাধি হয়েছিল
‘সুজা-উল-মূলক-হিশাম-উদ-দৌলা মীর মোহাম্মদ জাফর আলি খান মহাব্বত জং।’ অর্থাৎ সাহসী, সা¤্রাজ্যের তলোয়ার,
মীর মোহাম্মদ জাফর আলি খান। এর আগে মীর জাফর ক্লাইভের সাথে একটি গোপন চুক্তি করেছিলেন। ঐ চুক্তির
শর্তানুসারে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার অধিকারে থাকা রাজভাÐার থেকে প্রাপ্ত সম্পদের দখল ও ভাগাভাগির কাজ শুরু
করেছিলেন। রাজভাÐারে তখন ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা রৌপ্যমুদ্রায়, ৩২ লাখ টাকা স্বর্ণমুদ্রায়, দুই সিন্দুক ভর্তি সোনার
পাতা, চার সিন্দুক ভর্তি হীরা-জহরত ও অপেক্ষাকৃত ছোট দুই সিন্দুক ভর্তি মণিমুক্তা পাওয়া গিয়েছিল। এর পাশাপাশি
নবাবের হারেমে একটি গোপন ভাÐারে আরও ৮ কোটি টাকা ছিলো।
ক্লাইভকে বঞ্চিত করে সুকৌশলে এই ৮ কোটি টাকার পুরোটাই মীর জাফর, আমির বেগ, রামচাঁদ ও নবকৃষ্ণ নিজেদের
মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে নবাবের ভাÐারে অর্থ না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় ইংরেজরা। পাশাপাশি গোপন চুক্তির
শর্তানুসারে ক্লাইভকে দেড় কোটি টাকা দিতে ব্যর্থ হন মীর জাফর। ফলে বাধ্য হয়েই মীর জাফরকে বর্ধমান ও পার্শ্ববর্তী
অঞ্চল ইংরেজদের কাছে ইজারা দিতে হয়েছিল। সিংহাসনে বসার পর ক্লাইভ প্রচলিত রীতি অনুসারে নবাবকে আনুষ্ঠানিক
নজরানা প্রদানের পাশাপাশি তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন। তবে মীর জাফরের প্রতি বিরাগভাজন হতে তাদের
বেশি সময় লাগেনি। শেষে তারা মীর কাসিমকে বাংলার সিংহাসনে বসায়।
মীর কাসিম ও বক্সারের যুদ্ধ
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬০ সালের ২০ অক্টোবর মীর জাফরকে সরিয়ে দিয়ে তার জামাতা মীর কাসিমকে মুর্শিদাবাদের
সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। তার মাত্র চার বছরের রাজত্বকাল ১৭৬০ থেকে শুরু হয়ে ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হয়েছিল।
মীর কাসিম নবাব হয়ে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন। ইংরেজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণের বিরুদ্ধে
তিনি রুখে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। তিনি ক্ষমতায় বসার পর থেকেই কলকাতা কাউন্সিলের বেশিরভাগ সদস্য তার প্রতি
সন্দেহ ও শত্রুতা পোষণ করতে থাকেন। তবে দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে মীর কাসিম দ্বিতীয় শাহ আলমের স্বীকৃতি অর্জন
করেছিলেন। পাশাপাশি রাজকোষের আয় বাড়ানোর জন্য রাজ্যের কতকগুলো বিভাগের ব্যয় সঙ্কোচন করেছিলেন।
পাশাপাশি ধনী নগরবাসীর অতিরিক্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি জমিদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়
করে সৈন্যদল শক্তিশালীকরণে মন দিয়েছিলেন তিনি।
ক্ষমতায় বসেই শাসনকার্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন মীর কাসিম। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অন্যায়
অধিকার থেকে ইংরেজ কর্মচারীরা ব্যক্তিগত ফায়দা নিতে থাকে। এর ফলে নবাবের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। তিনি
ইংরেজ গভর্নরের কাছে এর প্রতিকার দাবি করেছিলেন। তবে তারা এর উপযুক্ত সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মীর কাসিম
পরবর্তী সময়ে দেশীয় বণিকদের ওপর থেকেও বাণিজ্য শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এতে ইংরেজ কোম্পানির
কর্মচারীদের অযৌক্তিক সুবিধা পাওয়ার পথ বদ্ধ হলে তারা তা মেনে নিতে পারেনি। নবাব মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের
বিরোধ চরমে উঠলে তা পাটনায় সংঘর্ষের রূপ নেয়। এরপর ১৭৬৩ সালের ৭ জুলাই নবাব বাহিনীর সাথে ইংরেজদের
ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। পরপর কাটোয়া, ঘেরিয়া, মুর্শিদাবাদ, সুটি, উদয়নালা ও মুঙ্গেরে নবাব বাহিনীর সাথে ইংরেজদের
যুদ্ধ হয়েছিল। নবাব তখন পরাজিত হয়ে পাটনায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মুঘল
স¤্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাহায্য নিয়ে তিনি বাংলাকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। ১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর বিহারের
বক্সার নামক স্থানে দু’পক্ষে প্রচÐ সংঘর্ষ হয়। তাদের সম্মিলিত বাহিনী বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়।
নিদারুণ দুঃখকষ্ট ও দারিদ্র ভোগ করে ১৭৭৭ সালের ৬ জুন জন্মভূমি থেকে অনেক দূরে শাজাহানাবাদের এক অখ্যাত পল্লীতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন মীর কাসিম।
কোম্পানির দেওয়ানি লাভ
পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং বক্সারের যুদ্ধে নবাব মীরকাশিম পরাজিত হওয়ার পর ইংরেজদের গতিরোধ করার
মতো শক্তি ও সাহস এদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আর তখন থেকেই বাংলার শাসন ব্যবস্থায় ইংরেজরা
সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু করে এবং বাংলার ভাগ্যবিধাতা হয়ে যায়। সিরাজউদ্দৌলা ও মীরজাফরের আমলে কেন্দ্রিয়
সরকারকে রাজস্ব দেয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে কোম্পানি হয়ে উঠেছিল পুরো দেশের আসল
শাসনকর্তা। কেন্দ্রিয় রাজনীতি তথা সমগ্র উপমহাদেশ তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল তখন। তখন কয়েকবার কোম্পানিকে
বাৎসরিক কিছু উপঢৌকনের বদলে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দিউয়ানি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন স¤্রাট দ্বিতীয় শাহ
আলম। অন্যদিকে যুদ্ধের পর কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে। পাশাপাশি বাংলার
রাজনৈতিক পরিবেশ খারাপ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ কোম্পানির দুর্নীতি দমন ও স্বার্থ বৃদ্ধির জন্য
নতুনভাবে ক্লাইভকে লর্ড উপাধি দান করে বাংলায় দ্বিতীয়বার প্রেরণ করেন (১৭৬৫-১৭৬৭ খ্রি.)। বাংলায় এসে ক্লাইভ
সবার আগে মীর কাশিমের মিত্র অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের প্রতি নজর
দিয়েছিলেন। তিনি বক্সার যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা আদায় করেন। পাশাপাশি কারা ও এলাহাবাদ জেলা দু’টি
জায়গীর হিসেবে নিয়ে অযোধ্যার নবাবের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন। তারপর তিনি দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ
আলমের সাথে সন্ধিচুক্তি করেন। বাস্তবে ক্লাইভ কারা ও এলাহাবাদ জেলা দু’টি থেকে বাৎসরিক ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদানের
বিনিময়ে সম্রাটের নিকট হতে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দিউয়ানি লাভ করেছিলেন। বস্তুত ১৭৬৫ সালের ১২ আগস্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিউয়ানির সনদ লাভ করেছিল।
সারসংক্ষেপ:
নবাবি শাসনের পতন ঘটার পর থেকে ব্রিটিশদের আনুগত্যে থেকে নবাবি লাভ করেছিলেন মীর জাফর। পলাশীর যুদ্ধে
তিনি নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিলেন। কোম্পানির অতিরিক্ত অর্থচাহিদা পূরন করতে
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র
ইউনিট ৭ পৃষ্ঠা ১৯০
ব্যর্থ হলে তারা মীর কাশিমকে অল্প কিছুদিনের জন্য নবাব করেছিল। তবে তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা নবাব।
তিনি বাংলায় ইংরেজদের হস্তক্ষেপকে অযোৗক্তিক মনে করে তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। ২২ শে অক্টোবর ১৭৬৪
সালে তার নেতৃত্বে ইংরেজদের বিপক্ষে বক্সারের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। নবাব মীর কাসিমের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত
বাহিনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্যবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৭
১। মীর কাসিমের মিত্র কে ছিলেন
ক) সুজাউদ্দৌলা খ) কার্টিয়ার গ) ওয়াটসন ঘ) কর্নওয়ালিস
২। কত খ্রিস্টাব্দে ক্লাইড দ্বিতীয় বার বাংলায় আসেন?
ক) ১৭৬৪ খ) ১৭৬৫ গ) ১৭৬৬ ঘ) ১৭৬৭
৩। ইংরেজদের পাশাপাশি দেশীয় ব্যবসায়ীদের শুল্ককর মওকুফ করেছিলেন কে?
ক) মীর কাসিম খ) শাহ আলম গ) ক্লাইড ঘ) সুজাউদ্দৌলা
সৃজনশীল প্রশ্ন:
হাসান ও রুবেল দুই বন্ধু। হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে রুবেলের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। রুবেল হাসানকে শায়েস্তা
করতে স্থানীয় সন্ত্রাসী বিপুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিপুল সুযোগ বুঝে একদিন পেছন থেকে ছুরিকাঘাতে হাসানকে
চরম আহত করে। এরপর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তার রোষের শিকার হয় রুবেলও। মার খেয়ে আহত অবস্থায়
হাসপাতালে ভর্তি হয় রুবেল। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তার মনে হয় পলাশী যুদ্ধের ইতিহাস। সে ভাবতে থাকে
বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হয়? উদ্দীপকটি পড়ে উত্তর দিন১. বাংলায় নবাবি শাসনের পতন কবে হয়েছিল। ১
২. বাংলায় নবাবি শাসনের পতন কিভাবে হয়েছিল? ২
৩. বক্সারের যুদ্ধের কারণগুলো লিখুন? ৩
৪. নবাবি শাসন পতনের ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন? ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]