নবাবি বাংলার আর্থিক অবস্থা সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ সামাজিক জীবন কেমন ছিল তা জানতে পারবেন।

মূখ্য শব্দ মিলাদ, সুরমা, পানদানী ও মহররম
ভ‚মিকা: নবাবি বাংলার আর্থ-সামাজিক পটভ‚মি ও বিকাশধারা বিসয়ে গবেষণা অপ্রতুল। বাংলার নবাবদের
দুর্বল শাসনের বিপরীতে নানা ধরণের স্বেচ্ছাচারিতা দেশবাসীকে হতাশ করেছিল। পাশাপাশি নানা ধরণের
ব্যবসায়ী শ্রেণি সাধারণ মানুষের উপর অনেকটাই জেঁকে বসে। এই সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর নানা উপদ্রবে নবাবি শাসনের
পতন ঘটে। পরবর্তীকালে ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে সংঘটিত হয় পলাশীর যুদ্ধ। এর আগে পর্যন্ত শিল্প,
সংস্কৃতি,সাহিত্য, অর্থনীতি এবং সামাজিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির মুখ দেখেছিল নবাবি বাংলা। বিশেষ
করে দিল্লির শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পর থেকে স্বাধীনভাবে বিকাশ লাভ করে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতি। তবে
এই সংস্কৃতিতে ক্ষমতার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল তুলনামূলক কম। বিশেষ করে কৃষিনির্ভর গ্রামীণ
সমাজকে এই সংস্কৃতি সেভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি।
নবাবি যুগের বাংলার মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে স্পষ্ট হয় তখনকার
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন কেমন ছিল। বিশেষ করে নবাবি আমলের ঢাকার সমাজ জীবন বিশ্লেষণ করতে গেলে
নানা সমৃদ্ধির কথা জানা যায়। তখনকার ঢাকায় সামাজিক জীবনও গড়ে উঠেছিল নানা জাতি-ধর্মের সংমিশ্রনে। তার
পরেও বেশিরভাগ সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসবের আয়োজন ছিল ধর্মভিত্তিক। খুব সমারোহের সঙ্গে তখন এই সব উৎসব
পালিত হতো। অনেক ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি ধর্মের মানুষ একে অপরের উৎসবে যোগ দিতো। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও
রীতি ভিন্ন ভিন্ন হলেও উৎসবে পালা-পার্বণ পালনে একত্রিত হতে দেখা গেছে সবাইকে। যেমন মুহররম আসলে হিন্দুমুসলিম মিলে মিশে তা বেশ উৎসব মূখর পরিবেশে পালন করতো। অন্যদিকে কোথাও কোনো মসজিদ তৈরি হলে
উৎসব হতো সেখানেও। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ১৭০০ সালের দিকের ঢাকায় বেগম বাজারের করতলব খানের
মসজিদ নির্মাণের শুরুতে বেশ বড় আয়োজন হয়েছিল। নবাবি বাংলায় গৃহজীবনের বিশ্লেষণ করতে গেলে চোখে পড়ে
প্রায় বেশিরভাগ বাড়িতেই বৈঠকখানা কিংবা মজলিশ ঘর থাকতো। সেখানে পান সুপারি থেকে শুরু করে আতর-সুরমা
এবং নানা উপকরণ সাজানো থাকতে। নানা রকম মশলা ও সুগন্ধী উপাদানে মেয়েরা পান বানানোর কৌশল আয়ত্ব
করেছিল। অন্যদিকে চীন থেকে আমদানী করা মাটির পাত্রে খাবার সাজিয়ে অতিথিদের সামনে পরিবেশন করা হতো।
ঢাকার কারিগরদের তৈরী আতরদানি, পান রাখার পাত্র ও সুরমাদানির সু² কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অনেক
বিদেশীও। ভাষা-হিসেবে বেশিরভাগ মুসলমানদের মধ্যে তখন ছিল আরবি ও ফারসির প্রচলন। সামাজিক যোগাযোগের
একটি বড় সুযোগ ছিল নানা রকম মিলাদের আসরে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ঢাকা শহর জুড়ে তখন মিলাদের চর্চা
ছিল। প্রায় প্রতিটি পরিবারে ছেলেমেয়েদের সুর করে দোয়া দরুদ পাঠ ও শিক্ষায় উৎসাহিত করা হতো। নবাবি বাংলায়
নানা ধরণের উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ সংঘটিত হয়। বাংলার নবাবগণ শুধু রাজনীতিই নয়, অর্থনৈতিক কর্মকাÐ, সামাজিক
সংগঠন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছেন। অন্যদিকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান-সংগঠন-অনুষ্ঠান
প্রভৃতিতে আর্থিক সহায়তা ও অনুদান দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি নানা সমাজসেবামূলক কাজেও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
লক্ষ করা গেছে। এ ধরণের নানা উদ্যোগের ফলে নবাবি বাংলার মানুষ আর্থিকভাবেও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছিল।
নবাবি বাংলার শাসন কাঠামোতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি সে সময়ের সমাজ সংস্কৃতিকে নানা দিক থেকে প্রভাবিত
করেছিল। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান তখন বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করা হত।
উদাহরণ হিসেবে দুই ঈদের কথা বলা যেতে পারে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় শ্রেণি, বর্ণ, গোত্র ও অবস্থাসম্পন্ন
মানুষ নির্বিশেষে একত্রিত হতেন। এসময় তাঁরা পরস্পর কুশল বিনিময় করতেন। অনেক স্থানে নবাবের আনুক‚ল্যে
স্থানীয় শাসকরা দুস্থদের জন্য বিশেষ ভোজের আয়োজন করতেন। অনেক ক্ষেত্রে এমন সব অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষাকৃত
আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা পর্যন্ত করতেন বলে জানা যায়। তবে এই সময়ের নানা আয়োজনের
ক্ষেত্রে রাজধানীর আশেপাশের মানুষের প্রাধান্য ছিল। গ্রামের মানুষের জীবন ছিল সাদামাটা। বেশিরভাগ উৎসবের বর্ণিল
আয়োজনে তাদের অতি সাদামাঠা জীবনকে সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি।

সারসংক্ষেপ:
মুর্শিদ কুলি খানের ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে বাংলার বিপন্নতার আয়োজন শেষ দিকে এগিয়ে যায়। পরবর্তীকালে
ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে সংঘটিত হয় পলাশী যুদ্ধ। বয়সে নবীন সিরাজ উদ্দৌলাকে তখন লড়তে হয়েছিল এক
সংঘবদ্ধ ও সচেতন বিশ্বাসঘাতকদের সঙ্গে। অপেক্ষাকৃত উন্নত হাতিয়ার নিয়ে যুদ্ধ করতে আসা ইংরেজ বাহিনী প্রথমে
পরাজিত হয়। তবে বিশ্বাসঘাতকরা শেষ পর্যন্ত নবাবের জয়লাভের সে সুযোগ নষ্ট করে দেয়। এর আগে পর্যন্ত শিল্প,
সংস্কৃতি,সাহিত্য, অর্থনীতি এবং সামাজিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির মুখ দেখেছিল নবাবি বাংলা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৮
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। নবাবি বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব কোনটি?
ক) মিলাদ খ) জিকির গ) জলসা ঘ) ওয়াজ
২। করতলব খান মসজিদ নির্মাণের সময় কি করা হয়েছিল?
ক) জনসবাবেশ খ) বক্তৃতা গ) জসলে জুলুস ঘ) উৎসব
সৃজনশীল প্রশ্ন:
মাহবুবের ছোট ভাই মাসুম নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের স্কুলের ইতিহাস শিক্ষক নবাবি বাংলার শাসন নিয়ে আলোচনা
করছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। তাঁর আলোচনার পুরোটা জুড়ে
ছিল নানা রকম যুদ্ধ আর বিশ্বাসঘাতকতার কথা। মাসুম অবাক হয়ে লক্ষ করে এতক্ষণের আলোচনায় নবাবি বাংলার
সাধারণ মানুষ সম্পর্কিত কোনো কিছুই জানতে পারেনি সে। বাসায় ফেরার পর সে তার বড় ভাই মাহবুবের কাছে জানতে
চায় এই সময়ে সাধারণ মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের নানা বিষয় নিয়ে। উদ্দেীপকটির আলোকে উত্তর দিন।
১. বাংলার নবাবের কোন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে? ১
২. নবাবি বাংলায় সাধারণের জীবন কেমন ছিল? ২
৩. উদ্দীপকের আলোকে নবাবি বাংলার উৎসবগুলো সম্পর্কে লিখুন? ৩
৪. নবাবি বাংলায় সামাজিক শ্রেণির বিকাশের চিত্র তুলে ধরুণ। ৪
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৭.১ ঃ ১। খ ২। ক ৩। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৭.২ ঃ ১। ক ২। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৭.৩ ঃ ১। ক ২। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৭.৪ ঃ ১। ঘ ২। গ ৩। খ ৪। গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৭.৫ ঃ ১। খ ২। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৭.৬ ঃ ১। গ ২। খ ৩। গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৭.৭ ঃ ১। ক ২। খ ৩। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৭.৮ ঃ ১। ক ২। গ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]