দিউয়ানি সম্পর্কে রবার্ট ক্লাইভ কিভাবে কোম্পানির পক্ষে দিউয়ানি লাভ ক্লাইভের দিউয়ানি লাভের ফলাফল কি ছিল তা ব্যাখ্যা

মূখ্য শব্দ দিউয়ানি, রবার্ট ক্লাইভ ও কোর্ট অব ডিরেক্টর্স
ভ‚মিকা: পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় বাংলায় এক অর্থে নবাবি শাসনের পতন ঘটিয়েছিল।
বিশ^াসঘাতক মীরজাফর ইংরেজদের আজ্ঞাবহ হয়েই শাসনকাজ চালাতে শুরু করেন। তখন ইংরেজদের
গতিরোধ করার মতো শক্তি ও সাহস এদেশে আর কারো ছিল না। তখন থেকেই বাংলার শাসন ব্যবস্থায় ইংরেজরা সরাসরি
হস্তক্ষেপ শুরু করে। তারা রাজনৈতিক প্রায় প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিজের মত করে নিতে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে মুঘল
শাসনতন্ত্রে প্রদেশ শাসনের জন্য দু’টি সমপর্যায়ের পদ ছিল। এর একটি পদ ছিল সুবাদারি অন্যটি ছিল দিউয়ানি। সুবাদার
ও দিউয়ান উভয় ব্যক্তিই সরাসরি দিল্লির সম্রাটের কাছে ব্যক্তিগতভাবে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন। তাঁরা একে
অপরকে প্রশাসনিক সহযোগিতা করতেন। তবে তারা কেউ একে অন্যের অধীনও ছিলেন না। তখনকার দিকে সুবাদারের
দায়িত্ব ছিল বিচার, প্রতিরক্ষা ও সাধারণ প্রশাসন পরিচালনা। পাশাপাশি দিউয়ানের দায়িত্ব বর্তায় রাজস্ব তথা খাজনা
আদায়ের। কোনওভাবে বাংলার প্রাদেশিক শাসনকর্তা স্বেচ্ছাচারী ও স্বাধীনতাকামী হয়ে উঠতে পারেন। এই ভেবেই ক্ষমতা
বিভাজনের এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জনও ছিল এই ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য।
১৭১৭ সালে সুবেদারের দায়িত্ব প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত মুর্শিদ কুলি খান বাংলার দিউয়ান ছিলেন। তবে মুঘল সা¤্রাজ্যের
দুর্বলতার সুযোগে প্রায় স্বাধীনভাবে বাংলা শাসনকারী এই নবাব এবং তাঁর উত্তরসূরীরা একইসঙ্গে সুবাদার ও দিউয়ানের
দায়িত্ব পালন করতেন। শুধু তাই নয়, মারাঠা উৎপাতের কারণে আলীবর্দী খান কেন্দ্রকে রাজস্ব পাঠানো প্রায় বন্ধ করে
দিয়েছিলেন। পরে সিরাজউদ্দৌলা ও মীরজাফরের আমলে কেন্দ্রকে রাজস্ব দেয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পলাশীর যুদ্ধের
পর কোম্পানি হয়ে ওঠে পুরো দেশের হর্তাকর্তা। তারপর কেন্দ্রিয় রাজনীতি তথা সমগ্র উপমহাদেশের রাজনীতি বদলে
যায়। তখন সবকিছু এমনভাবে পরিবর্তিত হয় যা থেকে উত্তোরণের পথ ছিল না। ফলে সুবে বাংলা আবার আগের মতো
দিল্লিতে রাজস্ব পাঠানো বন্ধ করে দেয়। বলতে গেলে সম্রাট শাহ আলম বাংলা থেকে রাজস্ব প্রাপ্তির আশা ছেড়েই
দিয়েছিলেন। এমনি পরিস্থিতিতে সম্রাট কয়েকবার কোম্পানিকে বাৎসরিক কিছু উপঢৌকনের বদলে বাংলা, বিহার,
উড়িষ্যার দিউয়ানি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তখন তার সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল কোম্পানি। পরে
বক্সার যুদ্ধের পর কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে। তাদের হঠকারিতায় বাংলার রাজনৈতিক
পরিবেশ খারাপ হয়। ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ কোম্পানির দুর্নীতি দমন ও স্বার্থ বৃদ্ধির জন্য ক্লাইভকে লর্ড উপাধি দিয়ে দ্বিতীয়
বারের মত বাংলায় প্রেরণ করে (১৭৬৫-১৭৬৭ খ্রি:)। বাংলায় এসে ক্লাইভ মীর কাশিমের মিত্রশক্তি অযোধ্যার নবাব
সুজাউদ্দৌলা ও দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের প্রতি নজর দেন। বক্সার যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ তাদের নিকট থেকে
৫০ লক্ষ টাকা এবং কারা ও এলাহাবাদ জেলা দু’টির দখল নেয়া হয়। এরপর তিনি অযোধ্যার নবাবের সাথে মিত্রতা
স্থাপনের পাশাপাশি দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাথেও সন্ধি স্থাপন করেছিলেন। বছরে ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদানের
বিনিময়ে সম্রাটের কাছ থেকে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দিউয়ানির দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর ১৭৬৫ সালে ১২ আগস্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিউয়ানির সনদ অর্জন করেছিল।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দিউয়ানি লাভের ফলাফল ও গুরুত্ব
বাংলার প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দিউয়ানি লাভ ছিল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এর ফলে নতুন গতিপথ লাভ করে বাংলার ইতিহাস। এক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান হয়েছিল তা হচ্ছেÑ
রাজনৈতিক বিজয়: বাংলায় কোম্পানির দিউয়ানি লাভ ছিল কোম্পানির জন্য একটি বিরাট রাজনৈতিক বিজয়। এর ফলে
সম্রাট ও নবাব একেবারে ক্ষমতাহীন হয়ে ইংরেজদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়। রাজস্ব আদায়ের অধিকার এবং সেনাদল
রাখার মতো অর্থবল ছিল না নবাবের। নবাবকে নামমাত্র সিংহাসনে বসিয়ে রেখে কোম্পানিই সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করে।
বাংলায় কার্যত: ব্রিটিশ শাসনের গোড়াপত্তন ঘটে।
অর্থনৈতিক সুবিধা: বাংলায় দিউয়ানি লাভ ছিল কোম্পানির জন্য একটি বিরাট অর্থনৈতিক বিজয়। এর ফলে কোম্পানি
নিজের দেউলিয়া অবস্থা হতে রক্ষা পায়। দিউয়ানি লাভের সুযোগ সুবিধা কোর্ট অব ডিরেক্টর্সকে জানতে গিয়ে লর্ড ক্লাইভ
উল্লেখ করেন যে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা থেকে যে রাজস্ব পাওয়া যাবে তা দিয়ে, সম্রাট ও নবাবের নির্ধারিত ভাতা ও
অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক ব্যয় বাদ দিলেও কোম্পানির হাতে প্রকৃত আয় থাকবে ১২ কোটি টাকারও অধিক।
কোম্পানির পুঁজি বৃদ্ধি: লর্ড ক্লাইভ এক পত্রে কোর্ট অব ডিরেক্টর্সকে জানিয়েছিলেন যে, ঐ উদ্বৃত্ত রাজস্ব কোম্পানির গোটা
বাণিজ্য বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট। ফলে দিউয়ানি লাভের আগে এ দেশে বাণিজ্য করার জন্য ইউরোপ হতে কোম্পানি যে
বিপুল পুঁজি নিয়ে আসতো দিউয়ানি লাভের পর তার আর প্রয়োজন থাকে না এবং ব্যবসার সমস্ত পুঁজি প্রদেশের রাজস্ব
হতেই সংগ্রহ করা হয়।
অবাধ বাণিজ্য: বাংলায় দিউয়ানি লাভের ফলে কোম্পানির কর্মচারীরা শুল্কহীন অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ পায়। এতে
কোম্পানির কর্মচারীদের অর্থের লোভ দিন দিন বাড়তে থাকে। অসদুপায়ে রাজস্ব আদায় করলেও কোম্পানির কর্তারা কোন
পদক্ষেপ নিতেন না। এভাবে অর্থনৈতিক শোষণের ফলে এদেশের মানুষের মেরুদÐ ভেঙ্গে যায়।
সম্পদ পাচার (উৎধরহ ড়ভ ডবধষঃয): কোম্পানির দিউয়ানি লাভের পর বাংলা থেকে ব্যাপকভাবে অর্থ ও সম্পদ ইংল্যান্ডে
পাচার হতে থাকে। তাই ১৭৬৫ সালে বাংলার দিউয়ানি লাভ প্রকৃত অর্থে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। এর
ফলে বাংলা ধীরে ধীরে অর্থশূন্য হয়ে পড়ে। একটা পর্যায়ে এসে এদেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসে।
সারসংক্ষেপ :
বক্সারের যুদ্ধে মীর কাসিমের পরাজয়ের পর বাংলা তথা উপমহাদেশে ইংরেজদের দিউয়ানি লাভ ইংরেজ প্রভুত্ব স্থাপনের
ইতিহাসে একটি গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মীরকাশিমের নবাবি লাভের আগেই ক্লাইভ ইংলন্ডে ফিরে যান। কিন্তু
ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এদেশে কোম্পানির দুর্নীতি দমনের ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার জন্য আবার তাঁকে লর্ড উপাধিতে ভ‚ষিত
করে দ্বিতীয় বার এদেশে প্রেরণ করে। তিনি মুঘল স¤্রাট শাহ আলমের নিকট থেকে বছরে ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদানের
বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব লাভ করেন। এর বাংলা তথা ভারতবর্ষে ইংরেজ উপনিবেশের পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.২
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। কত সালে কোম্পানি বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দিউয়ানি লাভ করে?
ক) ১৭৬৪ খ) ১৭৬৫ গ) ১৭৬৬ ঘ) ১৭৬৭
২। প্রতি বছর কত টাকার বিনিময়ে কোম্পানি দিউয়ানি লাভ করে?
ক) ২৪ লক্ষ খ) ২৫ লক্ষ গ) ২৬ লক্ষ ঘ) ২৭ লক্ষ
৩। কোন নবাবের সময় থেকে দিল্লিতে রাজস্ব পাঠানো প্রায় বন্ধ হয়ে যায়?
ক) আলীবর্দি খান খ) সিরাজদ্দৌলা গ) মীর জাফর ঘ) মীর কাশিম
৪। মুঘল শাসনতান্ত্রিক প্রথা ভঙ্গ করে কে প্রথম সুবাদারির পদটিও নিজে দখল করেন?
ক) আলীবর্দি খান খ) সিরাজউদ্দৌলা গ) মীর জাফর ঘ) মুর্শিদকুলী খাঁন
৫। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দিউয়ানি লাভের ফলেÑ
র. বাংলায় আইনত: ও কার্যত: ব্রিটিশ শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়
রর. ব্যবসার সমস্ত পুঁজি প্রদেশের রাজস্ব থেকেই সংগ্রহ করা হয়
ররর. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্ন
মামুন একজন প্রাদেশিক সুবাদার। মুঘল শাসনতন্ত্রে প্রদেশ প্রশাসনে দুটি সমপর্যায়ের পদ ছিল। একটি সুবাদার অন্যটি
দিউয়ান। সুবাদার ও দিউয়ান উভয়ই সরাসরি সম্রাটের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকতেন। তারা একে অন্যকে
সাহায্য করতে পারতেন; কিন্তু একে অন্যের অধীনও ছিলেন না। সুবাদারের দায়িত্ব ছিল বিচার প্রতিরক্ষা ও সাধারণ
প্রশাসন পরিচালনা, অন্যদিকে দিউয়ানের দায়িত্ব ছিল রাজস্ব প্রশাসন। দিউয়ানের অর্থই হলোÑ রাজস্ব আদায়ের কর্তৃত্ব
লাভ করা। কোন প্রাদেশিক শাসনকর্তা যেন সেচ্ছাচারী ও স্বাধীন হতে না পারে সেই উদ্দেশ্যেই ক্ষমতা বিভাজনের এই
ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু মামুন মুঘল শাসনতান্ত্রিক এই প্রথা ভঙ্গ করে দিউয়ানের পদটিও নিজে দখল করেন।
ক. ক্লাইভকে কখন লর্ড উপাধী প্রদান করা হয়? ১
খ. “হয় খ্রিস্টাধর্ম গ্রহণ কর অথবা মৃত্যুবরণ কর”Ñ ব্যাখ্যা করুন। ২
গ. উদ্দীপকের মামুনের সাথে পাঠ্য পুস্তকের যে সুবাদারের সাদৃশ্য পাওয়া যায়, তার শাসন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. ইংরেজদের দিউয়ানি লাভের ফলাফল বিশ্লেষণ করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]