ভারতবর্ষে মুসলিম বিজয়ের পূর্বে বৌদ্ধ ও হিন্দু শাসনামলকে ভারতীয় ইতিহাসে ‘প্রাচীন যুগ’ বলা হয়। ঐতিহাসিকরা মনে
করেন, ভারতবর্ষে মুসলিম অভিযান ও আরবদের সিন্ধু বিজয় থেকে ভারতে ‘মধ্যযুগের’ সূচনা কাল শুরু এবং মুঘল
শাসনের শেষ পর্যন্ত এ যুগের বিস্তৃতি। ভারতের মধ্যযুগের ইতিহাসে সুলতানি শাসন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১২০৬ থেকে
১২৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কুতুবউদ্দিন, ইলতুৎমিশ, বলবন এবং তাঁদের বংশধরেরা শাসন করেন। গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ
কুতুবউদ্দিন আইবেককে দাসত্ব থেকে মুক্তির ছাড়পত্র, রাজদÐ এবং সুলতান উপাধি প্রদান করেন। প্রথম জীবনে
কুতুবউদ্দিন, ইলতুৎমিশ এবং বলবন এই তিনজনই ছিলেন ক্রীতদাস। এক সময় এঁদের সবাইকে একই বংশের লোক বলে
মনে করা হতো এবং তাঁদের বংশকে বলা হতো ‘দাস বংশ’। কারণ সিংহাসনে বসার আগে তাঁরা সবাই দাসত্ব থেকে মুক্তি
পান। কিন্তু আসলে এঁরা তিনজনই ছিলেন আলাদা আলাদা বংশের লোক। তাঁদের বংশধরগণ শাসকের সন্তান-সন্ততি
হিসেবেই সিংহাসনে বসেন। তাঁরা না ছিলেন একই বংশের, না কেউ সিংহাসনে বসার সময় দাস ছিলেন। সুতরাং তাঁদের
বংশকে ‘দাস বংশ’ বলা সমীচীন নয়। তাঁদের শাসনামল ছিল দিল্লি সালতানাতের প্রাথমিক যুগ। আর তাঁরা সবাই ছিলেন
জাতিতে তুর্কি। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ তাই তাঁদের শাসনামলকে “প্রাথমিক যুগে দিল্লির তুর্কি সালতানাত” (ঞযব ঊধৎষু
ঞঁৎশরংয ঝঁষঃধহধঃব ড়ভ উবষযর) বলে অভিহিত করেছেন। এই যুগে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে দিল্লির তুর্কি
সালতানাত সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এই যুগ ছিল সংহতির যুগ। এই যুগেই দিল্লি সালতানাতের শাসন-কাঠামো
গড়ে ওঠে।
মূখ্য শব্দ আইবেক, সুলতান, দাস বংশ , কুতুব মিনার, চৌগান ও লাখ-বক্স
ভ‚মিকা
১২০৬ থেকে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মধ্যযুগীয় ভারতে পাঁচটি রাজবংশ শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করে। এই
পাঁচটি রাজবংশের অন্যতম হলো দিল্লির তথাকথিত দাস বংশ (ঝড়-পধষষবফ ঝষধাব উুহধংঃু)। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে
(১১৯২ খ্রি.) জয়লাভকারী মুইজউদ্দিন মুহম্মদ বিন সাম ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। মুহাম্মদ ঘোরি নামে সমধিক
পরিচিত মুহম্মদ বিন সামের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র, তৎকালীন ঘুর রাজ্যের শাসনকর্তা
এবং উত্তরাধিকারী গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ তরাইনের যুদ্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি এবং মুহাম্মদ ঘোরির আস্থাভাজন
কুতুবউদ্দিন আইবেককে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে সনদ ও ‘সুলতান’ উপাধি প্রদান করেন। এভাবে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান
কুতুবউদ্দিন আইবেকের নেতৃত্বে ভারতে স্বাধীন সুলতানদের শাসনের সূচনা হয়। কুতুবউদ্দিন আইবেক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত
রাজবংশ ইসলামের ইতিহাসে তথাকথিত ‘দাস বংশ’ নামে সমধিক পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে এই বংশ ১২০৬
খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করে। উল্লিখিত সময়ে (৮৪ বছর) সর্বমোট ১১ জন সুলতান শাসনকার্য
পরিচালনা করেন। এই বংশের প্রথম সুলতান ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবেক এবং সর্বশেষ সুলতান ছিলেন শামসুদ্দিন
কাইমুরস (১২৮৯-১২৯০ খ্রি.)।
সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক (১২০৬-১২১০ খ্রি.):
প্রাথমিক জীবন
দিল্লি সালতানাতের প্রথম সুলতান ভারতীয় উপমহাদেশের তুর্কি সা¤্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবেক তুর্কিস্থানের
বাসিন্দা ছিলেন। তুর্কি ভাষায় ‘আইবেক’ শব্দের অর্থ ‘চন্দ্রদেবতা’। আবার কেউ কেউ মনে করেন, তুর্কিস্তানের আইবেক
পরিবারে জন্ম গ্রহণ করার কারণে কুতুবউদ্দিনকে ‘আইবেক’ বলা হতো। ঐতিহাসিক বর্ণনানুযায়ী, কুতুবউদ্দিনের জীবন
শুরু হয়েছিল ক্রীতদাস হিসেবে। শৈশবে জনৈক ক্রীতদাস ব্যবসায়ী কুতুবউদ্দিনকে পারস্যের নিশাপুরের তৎকালীন কাজি
ফখরুদ্দিন আব্দুল আজিজ কুফীর নিকট বিক্রয় করেন। কাজি তাঁর নিজ পুত্রদের সাথে কুতুবউদ্দিনকে উপযুক্ত শিক্ষায়
শিক্ষিত করে তুলেন। অল্প দিনের মধ্যেই কুতুবউদ্দিন ধর্মশাস্ত্র এবং সামরিক বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। কিন্তু
অচিরেই কুতুবউদ্দিনের পুণরায় ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। কাজি ফখরুদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্রগণ কুতুবউদ্দিনকে এক দাস
ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করে দেয়। এ ব্যবসায়ী তাঁকে অন্য অনেকের সাথে গজনীতে নিয়ে আসেন। গজনীর শাসক মুহাম্মদ
ঘোরি কুতুবউদ্দিনকে ক্রয় করেন। বাহ্যিকভাবে অসুন্দর হলেও বিপুল প্রতিভার অধিকারী কুতুবউদ্দিন আইবেক স্বীয় মেধা,
মনন, পরিশ্রম এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা বলে অল্প দিনের মধ্যে মালিক মুহাম্মদ ঘোরির অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তিত্বে পরিণত
হন। সুলতান মুহাম্মদ ঘোরি কুতুবউদ্দিনের আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে পুরষ্কার স্বরূপ তাঁকে রাজকীয় অশ্বশালার প্রধান বা
‘আমির-ই-আকুর’ পদে নিয়োগ করেন। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে কুতুবউদ্দিন আইবেক সুলতান
ঘোরির পক্ষে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মুহাম্মদ ঘোরির প্রতিনিধি হিসেবে কুতুবউদ্দিন আইবেক
ভারতে কুতুবউদ্দিন আইবেকের শাসনামলকে মোট দুই ভাগে ভাগে করা যায়। প্রথম ভাগ হলো ১১৯২-১২০৬ খ্রিস্টাব্দ
পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ভাগ ১২০৬-১২১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। প্রথম ভাগে তিনি মুহাম্মদ ঘোরির প্রতিনিধি হিসেবে এবং দ্বিতীয়
ভাগে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শাসন করেন। মুহাম্মদ ঘোরি তরাইনের দ্বিতীয়
যুদ্ধের (১১৯২) পর ভারত ত্যাগ করার প্রাক্কালে বিজিত অঞ্চলে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে
অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেকের ওপর সমর্পণ করেন। কুতুবউদ্দিন ১১৯২
খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই হানসী, মীরাট, কোল, দিল্লি ও রণথম্বোর বিজয় সম্পন্ন করে লাহোর থেকে রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তর
করেন। কনৌজের রাজা জয়চন্দ্র ১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিনের হাতে পরাজিত হয়। কুতুবউদ্দিন গুজরাটের শাসক দ্বিতীয়
ভীমদেবকে ১১৯৭ খ্রিস্টাব্দে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করেন। ফলে গুজরাট দিল্লি সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১১৯৮ খ্রিস্টাব্দে
কুতুবউদ্দিন কনৌজ, বদাউন এবং চাঁদোয়ার অধিকার করতে সক্ষম হন। তিনি কালিঞ্জর ও মাহোবা ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে জয়
করেন। ফলশ্রæতিতে অল্প সময়ের মধ্যে উত্তর ভারতের এক বিশাল অঞ্চলে তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্বাধীন সুলতান হিসেবে কুতুবউদ্দিন আইবেক
ঘোর বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুলতান এবং ভারত বিজেতা মুহাম্মদ ঘোরি ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে ঝিলাম জেলার সন্নিকটে এক
গুপ্তঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। মুহাম্মদ ঘোরির সুযোগ্য ও বিশ্বস্ত অনুচরদের মধ্যে কিরমান ও সাদকুয়ানের
শাসনকর্তা তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ, উচ ও মুলতানের শাসনকর্তা নাসিরউদ্দিন কুবাচা এবং কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন
অন্যতম। মুহাম্মদ ঘোরি মৃত্যুর পূর্বে কুতুবউদ্দিন আইবেককে বিজিত ভারত রাজ্যের উত্তরাধিকারী হিসেরে মনোনীত করে
তাঁকে ‘মালিক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। মুহাম্মদ ঘোরির ঘুর রাজ্যের উত্তরাধিকারী সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ ১২০৬
খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবেককে দাসত্ব থেকে মুক্তির সনদ প্রদান করেন এবং ‘সুলতান’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১২০৬
খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুন লাহোরে কুতুবউদ্দিন আইবেকের অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। লাহোর জামে মসজিদে তাঁর নামে
খুৎবা পাঠ করা হয় এবং তাঁর নামেই মুদ্্রা প্রচলন করা হয়। মুহাম্মদ ঘোরি কর্তৃক বিজিত ভারতীয় অঞ্চলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা,
সার্বিক নিরাপত্তা বিধান এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কুতুবউদ্দিন আইবেক তাঁর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় প্রদান করে
ঘোরির অনুচরবর্গের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। প্রথমে তিনি উচ ও মুলতানের শাসনকর্তা নাসিরউদ্দিন কুবাচার
সাথে তাঁর ভগ্নীর বিবাহ দেন। স্বীয় কন্যাকে বিবাহ দেন বদাউনের শাসনকর্তা ইলতুৎমিশের সাথে। আর নিজেই বিবাহ
করেন কিরমানের শাসনকর্তা তাজউদ্দিন ইয়ালদুজের কন্যাকে। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক ক্ষমতা গ্রহণ করে সর্বপ্রথম
সা¤্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দিকে দৃষ্টি দেন। আইবেকের শ্বশুর তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ পারস্য ও মধ্য এশিয়া বিজয়ী
খাওয়ারিজম শাহ কর্তৃক গজনী থেকে বিতাড়িত হয়ে ১২০৮ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব দখল করেন। আইবেক তাজউদ্দিনকে প্রথমে
পাঞ্জাব থেকে এবং পরে গজনী থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মাত্র ৪০ দিন পর তাজউদ্দিন
পুনরায় গজনী দখল করে আইবেককে বিতাড়িত করেন। চান্দেলা রাজপুতগণ কালিঞ্জরে, গহরওয়ালাগণ ফরুখাবাদ ও
বদাউনের কিছু অংশে এবং গোয়ালিয়রের প্রতিহারগণ পুনরায় বিদ্রোহী হয়ে উঠলে কুতুবউদ্দিন আইবেক তাদের সেই
চেষ্টাকে অতি সহজেই নস্যাৎ করতে সক্ষম হন। ইতোমধ্যে বাংলায় আলী মর্দান খলজী কর্তৃক মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার
খলজী নিহত হওয়ার পর খলজী মালিকদের মধ্যে শাসন ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অর্ন্তদ্ব›দ্ব দেখা দেয়।
পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলদ্ধি করে কুতুবউদ্দিন আলী মর্দানকে লখনৌতি রাজ্য হিসেবে পরিচিত বাংলার শাসন ক্ষমতা প্রদান
করেন। মাত্র চার বছর শাসনকার্য পরিচালনার পর ১২১০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে লাহোরে চৌগান বা পোলো খেলার
সময় হঠ্যাৎ অশ্বপৃষ্ঠ থেকে পড়ে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং শেষ
পর্যন্ত সেই আঘাতেই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সমাধি বর্তমানে লাহোরে
অবস্থিত।
কুতুবউদ্দিন আইবেকের চরিত্র ও কৃতিত্ব
দিল্লির দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন উন্নত
চরিত্রের অধিকারী, স্বাধীনচেতা এবং প্রজাকল্যাণকর শাসক। আইবেক রাজ্যে
সুষ্ঠু শাসন-ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সচেষ্ট ছিলেন। চারিত্রিক উৎকর্ষতার জন্য
তিনি সমসাময়িককালে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি ছিলেন তেজস্বী,
প্রতিভাবান এবং উদার চিত্তের অধিকারী। ঐতিহাসিক এ বি এম হবিবুল্লাহ
বলেন, “অসাধারণ কর্মশক্তি এবং উঁচুদরের প্রতিভাবান সামরিক নেতা
হিসেবে কুতুবউদ্দিন তুর্কিদের অসম সাহসিকতার সাথে পারসিক মার্জিত রুচি
ও উদারতার সমন্বয় সাধন করেন।” ঐতিহাসিক হাসান নিজামী কুতুবউদ্দিন
আইবেকের উন্নত চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দানশীলতার দিক থেকে কুতুবউদ্দিনকে হাতেম তাই-এর সাথে তুলনা
করা হয়। তিনি প্রত্যেক দিন লক্ষ লক্ষ মুদ্রা দান করতেন বলে কোন কোন ঐতিহাসিক তাঁকে ‘লাখ বক্স’ উপাধি প্রদান
করেন। তিনি ছিলেন পরমত ও পরধর্ম সহিষ্ণ এবং ইসলামের একনিষ্ঠ সেবক। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন
কুতুব মিনার
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। হাসান নিজামী প্রীত হয়ে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থটি (তাজুল মাসির) সুলতানের নামে
উৎসর্গ করেন। তাঁর রাজদরবারে জ্ঞানী-গুনী ও পন্ডিত ব্যক্তিদের যথেষ্ট সমাদর ছিল।
স্থাপত্য শিল্পের উদার পৃষ্ঠপোষক সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লিতে ‘কুয়াত-উল-ইসলাম’ এবং আজমীরে ‘আড়াই
দিন-কা-ঝোপড়া’ মসজিদ নির্মাণ করেন। রাজ্য বিজয়ের স্মারক এবং ইসলামের মহিমা বিশ্বজনীনভাবে উপস্থাপনের
অভিপ্রায়ে সুলতান কুতুবউদ্দিন ধর্মবেত্তা কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামানুসারে ‘কুতুব মিনার’ নির্মাণ আরম্ভ করেন।
তবে তিনি এর নির্মাণ শেষ করে যেতে পারেন নি। তাঁর জামাতা সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের (১২১১-১২৩৬ খ্রি.)
শাসনামলে মিনারটির নির্মাণ কার্য সমাপ্ত হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সামান্য একজন
দাস হিসেবে জীবনের প্রথম পর্ব শুরু করলেও নিজস্ব মেধা, মনন, বুদ্ধিবৃত্তি, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও প্রবল আত্মবিশ্বাসের
উপর নির্ভর করে কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লি সালতানাতের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। সম্ভাব্য প্রতিদ্ব›দ্বীদের বশে আনার
অভিপ্রায়ে তিনি তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের দ্বারা দূরদর্শিতার পরিচয় প্রদান করেন। কুতুবউদ্দিন আইবেক
সা¤্রাজ্যের সংহতি বিধান এবং প্রগতিশীল শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে সময় উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে তিনি একজন আদর্শ শাসকের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.১
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ফখরউদ্দিন কাজি ছিলেন−
ক. নিশাপুরের খ. ঘোরের গ. গজনীর ঘ. লাহোরের
২। মুহম্মদ ঘোরি কুতুবউদ্দিনকে ক্রয় করেন−
ক. লাহোরে খ. ঘোরেগ গ. গজনীতে ঘ. নিশাপুরে
৩। মুহম্মদ ঘোরি সুলতান হন−
ক. ১১৯২ সালে খ. ১২০৩ সালে গ. ১২০৬ সালে ঘ. ১২১০ সালে
৪। স্বাধীন দিল্লি সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়−
ক. ১২০০ সালে খ. ১২০২ সালে গ. ১২০৪ সালে ঘ. ১২০৬ সালে
সৃজনশীল প্রশ্ন:
নাফিসা পরিবারের সাথে দিল্লিতে বেড়াতে গেল। দিল্লির কুতুবমিনার দেখে সে তার পিতার কাছে এ সম্পর্কে জানতে চায়।
পিতা বললেন “এ মিনার তৈরি করেছেন লাখবকস নামে খ্যাত একজন সুলতান। তার মাধ্যমে দিল্লিতে স্থায়ী মুসলমান
শাসন শুরু হয়। অসাধারন কর্মশক্তি ও সামরিক যোগ্যতা ছাড়াও প্রজাকল্যাণ ও স্থাপত্য শিল্পে অবদানের জন্য তিনি
স্মরণীয় হয়ে আছেন।
১. দিল্লি সালতানাতের প্রথম সুলতান কে? ১
২. লাখবক্স বলা হয় কাকে এবং কেন? ২
৩. উদ্দীপকের আলোকে রাজ্যশাসন ব্যবস্থার উল্লেখপূর্বক স্বাধীন সুলতান হিসেবে মূল্যায়ন করুন। ৩
৪. একজন তেজস্বী, প্রতিভাবান ও প্রজাকল্যাণকর শাসক হিসেবে কুতুবউদ্দিন আইবেকের অবস্থানের স্বপক্ষে যুক্তি দিন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র