ক্স ফকির সন্ন্যাসীদের ব্রিটিশ বিরোধী ভূমিকা তিতুমীরের নেতৃত্বে ব্যাপক কৃষক বিদ্রোহের ঘফরায়েজি মতবাদ হাজী শরিয়ত উল্লাহর সংস্কার

মূখ্য শব্দ ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, তিতুমীর, নীল বিদ্রোহ ও ফরায়েজি আন্দোলন
ভূমিকা: বাংলার অভাবী কৃষকের জীবনে প্রাচুর্য ছিল না কখনও। তারা কায়ক্লেশে জীবন ধারণ করতে পারত
কোনভাবে। কিন্তু সে অবস্থাও নষ্ঠ হয় ১৭ শতক থেকে। ১৭ ও ১৮ শতকে ইংরেজ বণিক শ্রেণির আগ্রাসন
কেড়ে নিতে থাকে বাংলার কৃষকের মুখের হাসি, তাদের আনন্দ উৎসব। ইংরেজরা শুরুতে ধ্বংস করেছিল গ্রাম
বাংলার কুটির শিল্প, তারপর তাদের নজর পড়ে এদেশের উর্বর জমির উপর। অতিরিক্ত অর্থের লোভে ভ‚মি রাজস্ব আদায়ে
একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে। যে পরীক্ষার নিষ্ঠুর বলি হয় বাংলার কৃষক, সাধারণ মানুষ। ফলে তীব্র
শোষণে অসহায় কৃষক সাধারণ মানুষের বিদ্রোহ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এ বিদ্রোহ ক্রমাগত চলতে থাকে
আঠারো শতকের শেষাবধি থেকে ঊনিশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত। এর সঙ্গে সঙ্গে সূত্রপাত ঘটে বাংলার মুসলমান সমাজে
ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের। যা পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ নেয়।
ফকির-সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহ
ফকির-সন্ন্যাসীরা ছিল বাংলার সাধারণ অধিবাসী। এরা ছিল হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায় ভুক্ত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এক
একটি দল, যারা সাধনায় সিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যে সারা বছর দেশের একস্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াতো। ধর্মীয়
সম্প্রদায় হিসেবে উভয় গোষ্ঠি পরিচিত ছিল। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিদ্রোহী
হতে এবং অস্ত্র ধারণ করতে হয়। বাংলার ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহ। আঠারো শতকের শেষার্ধে
এই বিদ্রোহের শুরু। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই
বিদ্রোহ চলতে থাকে। বাংলার নবাব মীর কাশিম ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে
ফকির-সন্ন্যাসীদের সাহায্য চেয়েছিলেন। তখন তার ডাকে সাড়া দিয়ে
ফকির-সন্ন্যাসীরা যুদ্ধ করেছিল। পরে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাশিম
পালিয়ে গেলেও ফকির-সন্ন্যাসীরা তাদের ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম চালিয়ে
যেতে থাকেন। তবে নবাবকে সাহায্য করার কারণে ইংরেজরা তাদের
গতিবিধির প্রতি কড়া নজর রাখে। বাংলার ফকির-সন্ন্যাসীরা তাদের রীতি
অনুযায়ী ভিক্ষাবৃত্তি বা মুষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। ধর্মীয়
উৎসব, তীর্থস্থান দর্শন উপলক্ষে সারা বছর তাদের এক স্থান থেকে আরেক
স্থানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। অন্যদিকে তারা নিজেদের সাথে নিরাপত্তার
জন্য নানা ধরনের হালকা অস্ত্র রাখতেন। প্রথম দিকে বাংলায় ব্রিটিশ শাসন
প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত তারা ছিলেন অনেকটাই স্বাধীন এবং মুক্ত। কিন্তু ইংরেজ
সরকার তাদের অবাধ চলাফেরায় বাধার সৃষ্টি করলে তা এক পর্যায়ে সংঘাতে রূপ নেয়। ১৭৬০ সালের দিকে পশ্চিমবঙ্গের
বর্ধমান জেলায় সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ শুরু করে। ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে মজনু শাহ সারা উত্তর বাংলায়
ইংরেজ বিরোধী তৎপরতা শুরু করেন। ১৭৭৭ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, ঢাকা,
ময়মনসিংহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভ‚ম, মালদহসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল। এ অঞ্চলে
ইংরেজদের সঙ্গে বিদ্রোহী ফকির-সন্ন্যাসীদের বহু সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। বিদ্রোহীরা অনেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা
মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর
করে এবং কোম্পানির বহু কুঠি লুঠ করে। অন্যদিকে ফকির মজনু শাহর যুদ্ধ কৌশল ছিল গেরিলা পদ্ধতি, অর্থাৎ অতর্কিতে
আক্রমণ করে নিরাপদে সরে যাওয়া। ইংরেজদের পক্ষে তাকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা কখনই সম্ভব হয়নি। তিনি ১৭৮৭
খ্রিস্টাব্দে মৃত্যবরণ করলে বিদ্রোহের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন মুসা শাহ, সোবানশাহ, চেরাগ আলী শাহ, করিম শাহ, মাদার বক্স প্রমুখ ফকির।
তিতুমীরের সংগ্রাম
মীর নিসার আলী তথা তিতুমীর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উত্তর ভারত ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ওয়াহাবি
আন্দোলনের (তাহরিক-ই-মুহম্মদীয়া) জোয়ার চলছিল। পশ্চিম বঙ্গের বারাসাত অঞ্চলে
তিতুমীরের নেতৃত্বে এই আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করেছিল। ১৯ শতকে
ভারতবর্ষে মুসলমান সমাজের ধর্মীয়, সামাজিক কুসংস্কার দূর করে মুসলিম সম্প্রদায়কে
ধর্মীয় অনুশাসন পালনের সঠিক পথ নির্দেশ করাই এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
বাংলার ওয়াহাবিরাও তিতুমীরের নেতৃত্বে একই উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়েছিল।
তিতুমীরের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘তাহরিক-ই-মুহম্মদীয়া’ আন্দোলন বা ওয়াহাবি
আন্দোলন ছিল উত্তর ভারতের সৈয়দ আহমদ শহীদের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। তিতুমীর
হজকরার জন্য মক্কা গিয়েছিলেন। তিনি ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে এসে ধর্মীয় সংস্কার
কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তাঁর এই ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনে বহু মুসলমান,
বিশেষ করে চব্বিশ পরগনা এবং নদীয়া জেলার বহু কৃষক, তাঁতী স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে সাড়া
দেয়। ফলে জমিদাররা মুসলমান প্রজাদের উপর নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং তাদের প্রতি নানা নির্যাতনমূলক
আচরণ শুরু করে। প্রথম দিকে তিতুমীর এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে সুবিচার চেয়ে ব্যর্থ হন।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তিতুমীর ও ও তাঁর অনুসারীরা সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ অবলম্বন করেন। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে
নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমীর তাঁর প্রধান ঘাটি স্থাপন করেন। নির্মাণ করেন ইতিহাস খ্যাত তাঁর ‘বাঁশের কেল্লা’। গোলাম
মাসুমের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন সুদক্ষ শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী। ইংরেজ জমিদার, নীলকরদের দ্বারা নির্যাতিত কৃষকরা
দলে দলে তিতুমীরের বাহিনীতে যোগ দিলে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন একটি ব্যাপক কৃষক আন্দোলনে রূপ নেয়। কৃষকদের
সংঘবদ্ধতা এবং তিতুমীরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে উঠে শাসক-শোষক, জমিদার শ্রেণি। জমিদারদের প্ররোচনায় ইংরেজ
সরকার তিতুমীর এবং তার অনুসারীদের দমনের জন্য বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজেন্ডারের নেতৃত্বে একদল সৈন্য
পাঠায়। কিন্তু তারা তিতুমীরের বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। ১৫ জন ইংরেজ সৈন্য নিহত ও বহু আহত হয়। এক পর্যায়ে
কৃষ্ণনগরের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঠানো ইংরেজ বাহিনীও তিতুমীরের বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এতে প্রচÐ ক্ষুব্ধ হন
বড় লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক। তিনি ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে তিতুমীরের বিরুদ্ধে বিশাল সেনা বাহিনী প্রেরণ করে। মেজর
স্কটের নেতৃত্বে এই বাহিনী তিতুমীরের নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে। ইংরেজদের কামান বন্দুকের সামনে
বীরের মতো লড়াই করে পরাজিত হয় তিতুমীরের বাহিনী। তিনি যুদ্ধে শহীদ হন। গোলার আঘাতে বাঁশের কেল্লা উড়ে
যায়। এ ভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে একটি সুসংগঠিত কৃষক আন্দোলনের। এই যুদ্ধে তিতুমীরের ৫০ জন অনুসারী নিহত হন।
গোলাম মাসুমসহ ২৫০ জনকে বন্দি করা হয়। পরে এক প্রহসনমূলক বিচারে গোলাম মাসুমকে ফাঁসি এবং অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদÐ প্রদান করা হয়।
নীল বিদ্রোহ
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিশেষ করে ১৮ শতকে নীল ব্যবসা খুবই লাভজনক হয়ে উঠেছিল। বস্ত্রশিল্পের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে
কাপড় রং করার জন্য ব্রিটেনে নীলের চাহিদা খুব বেড়ে গিয়েছিল। ইংরেজরা বাংলার কৃষককে নীল চাষে বাধ্য করে। নীল
চাষের জন্য নীলকররা কৃষকদের সবথেকে উৎকৃষ্ট জমিটাই বেছে নিতো। কৃষকদের নীলচাষের জন্য অগ্রীম অর্থ গ্রহণে
(দাদন) বাধ্য করা হতো। আর একবার এই দাদন গ্রহণ করলে সুদ-আসলে যতই কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করুক না কেন,
বংশ পরম্পরায় কোনো দিনই ঋণ শোধ হতো না। নীল চাষে কৃষকরা রাজি না হলে তাদের উপর চরম অত্যাচার চালানো
হতো। বাংলাদেশে নীলের ব্যবসা ছিল একচেটিয়া ইংরেজ বণিকদের। ফরিদপুর, ঢাকা, পাবনা, যশোর, রাজশাহী, নদিয়া,
মুর্শিদাবাদে ব্যাপক নীল চাষ হতো। ফলে এই সব অঞ্চলের মানুষ ধীরে ধীরে এক দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেছে নেয়। তাছাড়া
হাজী শরিয়ত উল্লাহ
প্রথম দিকে ইংরেজরা চাষিদের বিনামূল্যে নীল বীজ সরবরাহ করা। পরের দিকে তা বন্ধ করে দিলে নীল চাষ কৃষকদের
জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তারা চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায়। এ অবস্থায় নীলকররা বাংলার গ্রামাঞ্চলে শুধু
ব্যবসায়ী রূপে নয় দোর্দÐ প্রতাপশালী এক অভিনব অত্যাচারী জমিদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরা এতটাই নিষ্ঠুর আর
বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে অবাধ্য নীল চাষিকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। ফলে নীল চাষিদের বিদ্রোহ হয়ে ওঠে সময়ের
দাবি, চরম অত্যাচার আর শোষণে বিপর্যস্ত দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নীল চাষিরা ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রচÐ বিদ্রোহে ফেটে
পড়ে। গ্রামে গ্রামে কৃষকরা সংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। এই সব বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয় নীল চাষিরাই।
বাংলার এ অঞ্চলে যশোরের নীল বিদ্রোহের নেতা ছিলেন নবীন মাধব ও বেনী মাধব নামে দুই ভাই। হুগলীতে নেতৃত্ব দেন
বৈদ্যনাথ ও বিশ্বনাথ সর্দার। নদীয়ায় ছিলেন মেঘনা সর্দার এবং নদীয়ার চৌগাছায় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস
ও দিগম্বর বিশ্বাস নামে দুই ভাই। স্থানীয় পর্যায়ের এই নেতৃত্বে বাংলায় কৃষক বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে। কৃষকরা নীল
চাষ না করার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়। এমনকি তারা ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটের উপদেশও অগ্রাহ্য করে। এদিকে শিক্ষিত
মধ্যবিত্ত শ্রেণি নীল চাষিদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল মনোভাব প্রকাশ করতে থাকে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নীলকরদের
অত্যাচারের কাহিনী ছাপা হতে থাকে। দীনবন্ধু মিত্রের লেখা ‘নীলদর্পণ’ নাটকের কাহিনী চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধিকার
আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রথম বারের মতো বাংলার সংগ্রামী বিদ্রোহী কৃষকদের জয় হয়। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার
‘ইন্ডিগো কমিশন’ বা নীল কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের সুপারিশের উপর ভিত্তি করে কৃত নানা সংস্কারের প্রেক্ষিতে
নীল বিদ্রোহের অবসান হয়। পরবর্তিকালে নীলের বিকল্প কৃত্রিম নীল আবিষ্কৃত হওয়ায় ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে এদেশে নীলচাষ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ফরায়েজি আন্দোলন
ফরায়েজি শব্দটি আরবি ‘ফরজ’ (অবশ্য কর্তব্য) শব্দ থেকে এসেছে। যাঁরা ফরজ পালন
করে তারাই ফরায়েজি। আর বাংলায় যাঁরা হাজী শরিয়ত উল্লাহর অনুসারী ছিলেন, ইতিহাসে
শুধু তাদেরকেই ফরায়েজি বলা হয়ে থাকে। শরিয়ত উল্লাহ যে ফরজের উপর বিশেষ গুরুত্ব
আরোপ করেছেন, তা ছিল পবিত্র কুরআনে বর্ণিত পাঁচটি অবশ্যপালনীয় (ফরজ)
মৌলনীতি। এই মৌলনীতিগুলো হচ্ছেÑ ঈমান বা আল্লাহর একত্ব ও রিসালাতে বিশ্বাস,
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত। ইসলাম অননুমোদিত সব বিশ্বাস, আচার-আচরণ ও অনুষ্ঠান
ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে যা অবশ্য করণীয়, তা পালন করার জন্য হাজী শরিয়ত উল্লাহ
মুসলমান সমাজকে আহŸান জানিয়েছিলেন। তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলা তথা
ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন মেনে নিতে পরেননি। শরিয়ত উল্লাহ ইংরেজ রাজত্বকে ঘৃণার
চোখে দেখতেন। তিনি ভারতবর্ষকে ‘দারুল হারব’ অর্থাৎ বিধর্মীর রাজ্য বলে ঘোষণা
করেন। তিনি বিধর্মী বিজাতীয় শাসিত দেশে জুমা এবং দুই ঈদের নামাজ বর্জনের জন্য
মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বাংলার শোষিত, নির্যাতিত দরিদ্র রায়ত, কৃষক, তাঁতী, তেলি সম্প্রদায় স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে এই আন্দোলনে যোগদান করে।
শরিয়ত উল্লাহর উপর দরিদ্র জনগোষ্ঠির আস্থা, বিশ্বাস এবং তাঁর নেতৃত্বগুণ নি¤œশ্রেণির জনগণের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য গড়ে
তোলে। মুসলমানদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে জমিদাররা বাধা প্রদান করতে থাকে এবং নানা ধরনের কর আরোপ
করে। তিনি প্রজাদের অবৈধ কর দেয়া থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেন এবং জমিদারদের সব অত্যাচারের বিরুদ্ধে
প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুতি নেন। দেশ জুড়ে অভাব দেখা দিলে তিনি নুন-ভাতের দাবিও উত্থাপন করেন। জমিদার
শ্রেণি নানা অজুহাতে ফরায়েজি প্রজাদের উপর অত্যাচার শুরু করলে শরিয়ত উল্লাহ প্রজাদের রক্ষার জন্য লাঠিয়াল বাহিনী
গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তার উপর পুলিশি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ
করেন। হাজী শরিয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পরে ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তাঁর যোগ্যপুত্র মুহম্মদ মুহসিন উদ্দীন
আহমদ ওরফে দুদু মিয়া। তিনি ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার মতো পন্ডিত না হলেও তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা
ছিল অসাধারণ। পিতার মৃত্যুর পর তিনি শান্তিপ্রিয় নীতি বাদ দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন। ফরায়েজিদের
প্রতিরোধ সংগ্রামকে দৃঢ় এবং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তিনি নিজে লাঠি চালনা শিক্ষা লাভ করেন। পিতার আমলের
লাঠিয়াল জালালউদ্দিন মোল্লাকে সেনাপতি নিয়োগ করে এক সুদক্ষ লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল
জমিদারদের অবৈধ কর আরোপ এবং নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। এখানে উল্লেখ্য
ফরিদপুর, পাবনা, রাজশাহী, যশোর, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া প্রভৃতি অঞ্চলগুলো নীল চাষের জন্য ছিল উৎকৃষ্ট। সুতরাং এই
অঞ্চলগুলোতে নীলকরদের অত্যাচারের মাত্রাও ছিল দুঃসহ ফলে কৃষকরাও হয়ে উঠেছিল বিদ্রোহী। দুদু মিয়া তাঁর নেতৃত্বে
গ্রামাঞ্চলে স্বাধীন সরকার গঠন করেছিলেন।
সারসংক্ষেপ :
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের মানুষ প্রথম সোচ্চার হয়েছিল নানাবিধ সামাজিক সংস্কার ও প্রতিরোধ আন্দোলনের
মধ্য দিয়ে। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, নওয়াব আবদুল লতিফ, রাজা রামমোহন
রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, স্যার সৈয়দ আমির আলী প্রমুখ। প্রাথমিক পর্বে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া থেকে শুরু
করে বিভিন্ন সামাজিক-ধর্মীয় প্রথা ও কুসংস্কার বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁরা। এরপর অধিকার আদায়ের নিমিত্তে
আন্দোলন শুরু করেছিল বিভিন্ন গোষ্ঠী। এমনি অনেক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছিল ভারত ছাড় আন্দোলন, যার চূড়ান্ত পরিণতি স্বাধীন দেশ হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম।
১। ফকির সন্যাসী বিদ্রোহ কতদিন চলেছিল? (সময়কাল অনযায়ী)
ক) ১৭৬০ থেকে ১৭৭১ খ) ১৭৬০ থেকে ১৮০০ গ) ১৭৭৭ থেকে ১৮০০ ঘ) ১৭৮৭ থেকে ১৮০০ খ্রি:
২। ফকিরদের বিদ্রোহী দলের নেতা কে ছিলেনÑ
ক) বলাকি শাহ খ) চেরাগ আলী শাহ গ) মজনুশাহ ঘ) মাদার বকস
৩। তিতুমীর পরিচালিত আন্দোলনের নাম কী?
ক) তাহরিক-ই-মুহাম্মদিয়া খ) ফরায়েজি গ) খিলাফত ঘ) ওয়াহাবি
৪। তিতুমীরের দুর্গ কিসের তৈরি ছিল? (অনুধানব)
ক) ইটের খ) মাটির গ) বাঁশের ঘ) টিনের
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম শিকদার ২০১৬ সালে রক্ত ঝরা মার্চের এক শিক্ষার্থী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন
মুক্তিযোদ্ধারা কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে। তারা ইতিহাসের একজন বীর যোদ্ধার আত্মত্যাগ থেকে
প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা লাভ করেছে সেই যোদ্ধা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন নিজস্ব চিন্তায় তৈরি কেল্লা তৈরি করে।
আর ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বাঙালি শহীদ হিসেবে আজও অমর হয়ে আছেন।
ক. কোন গ্রামে তিতুমীর তাঁর প্রধান ঘাটি স্থাপন করেন? ১
খ. তিতুমীর পরিচালিত আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল ব্যাখ্যা করুন। ২
গ. ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে উদ্দীপকের সাথে মিল রেখে পাঠ্য বইয়ের সবচাইতে বিখ্যাত যোদ্ধাকে তুলে ধরুন। ৩
ঘ. সকল স্বাধীনতা সংগ্রামে তার আত্মত্যাগ হবে অনুপ্রেরণার উৎস- এর সপক্ষে যুক্তি দিন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]