সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

মুখ্য শব্দ সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ, কংগ্রেস, স্যার সলিমুল্লাহ ও বঙ্গভঙ্গ
মুসলিম লীগ গঠনের পটভূমি
বিংশ শতাব্দির শুরুতে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ গঠনের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক জ্ঞানের
শুভোদয় ঘটে। যা হিন্দুদের মধ্যে আরো আগে সম্পন্ন হয়েছিল। ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। মুসলমানদের মধ্যে দল গঠনের মনোভাব জাগ্রত হয়
১৮৮৫ সালে অ্যালেন অক্টোভিয়ান হিউম কর্তৃক ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারের সঙ্গে ক্ষমতার
অংশীদারিত্ব এবং ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে অনুপ্রাণিত করতে পাশ্চাত্য
ভাবধারাপুষ্ঠ একদল শিক্ষিত যুবক জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তৎকালীন মুসলমানদের অন্যতম নেতা স্যার
সৈয়দ আহমদ খান মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগদান থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন এই বলে যে, হিন্দুরা কখনো
মুসলিম সম্প্রদায়ের উপকারে আসবে না। এজন্য তিনি আলীগড়ে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে আন্দোলন বেগবান করার
প্রয়াস নেন। যা ‘আলীগড় আন্দোলন’ নামে পরিচিত। তিনি ও তৎকালীন অন্যান্য মুসলমানরা বুঝতে সক্ষম হন যে,
মুসলমানদের অবশ্যই ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ বিরোধী মনোভাব থেকে সহযোগিতা নীতি
মুসলমানদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম এবং অধিক কার্যকর একটি মাধ্যম। এর জন্য সবার আগে মুসলমানদের মধ্যে
ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রয়োজন।
শিক্ষা ও মুসলমানদের মধ্যে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটাতে মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি (১৮৬৩), সেন্ট্রাল মোহামেডান
অ্যাসোসিয়েশন (১৯৭৭), ইউনাইটেড ইন্ডিয়ান পেট্রিয়াটিক অ্যসোসিয়েশন (১৮৮৮) প্রভৃতি সংগঠন আত্মপ্রকাশ
করেছিল। উল্লেখ্য যে, মুসলমানদের দ্বারা সংগঠিত ও পরিচালিত সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের শিক্ষা উন্নয়নে
বছরে অন্তত একবার ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে মিলিত হতো। ১৯০৬ সালে ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হয় সর্বভারতীয়
মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন। বঙ্গভঙ্গের গোঁড়া সমর্থক ঢাকার নওয়াব খাজা সলিমুল্লাহ কংগ্রেস সমর্থকদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী
বিক্ষোভ মোকাবেলা করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রয়োজনিয়তা অনুভব করেন। হিন্দুরা যেমন বঙ্গভঙ্গ
হলে তাদের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে অন্যান্যদের তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ করছে তেমনি ভারতীয় মুসলমানদের বিশেষ করে
বাংলার মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি আরো বুঝতে পেরেছিলেন যে, হিন্দুরা কখনই
মুসলমানদের উপকারে আসবে না। মুসলমানদেরকেই তাদের নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর
সম্মেলনের অধিবেশনে সভাপতি ছিলেন ভিকার-উল-মূলক। এই অধিবেশনেই নওয়াব সলিমুল্লাহ মুসলমানদের একটি
পৃথক দল গঠনের প্রস্তাব করেন এবং তাতে সমর্থন করেন হাকিম আজমল খান। ফলে ঐ অধিবেশনেই আগা খানকে
সভাপতি, সলিমুল্লাহকে সহ-সভাপতি, নবাব মহসিন উল মূলক এবং নবাব ভিকার উল মূলক কে যুগ্ম-সম্পাদক করে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ গঠিত হয়।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
নবাব সলিমুল্লাহ এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী দলটির তিনটি উদ্দেশ্য ছিল। যথা:
ক) ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের আনুগত্য বাড়ানো এবং সরকারের প্রতি মুসলমানদের কোন রূপ ভুল
ধারণা হয়ে থাকলে তা যথাসম্ভব দূর করা।
খ) ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানো ও তাদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং তাদের অভাব অভিযোগ ও
আশা আকাক্সক্ষা সরকারের নিকট পেশ করা।
গ) মুসলিম লীগের উপর্যুক্ত লক্ষ্যের কোন রূপ ক্ষতি সাধন না করে ভারতের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা।
উল্লেখ্য যে, বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হবার পর পূর্ববঙ্গ ও আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম লীগের আলাদা দুটি শাখা স্থাপিত হয়।
১৯০৮ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসামে কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদন করতে চৌধুরী কাজেম উদ্দীন সিদ্দিকীকে সভাপতি ও
সলিমুল্লাহকে সম্পাদক করে অস্থায়ী কমিটি গঠিত হয়। অন্যদিকে ১৯০৯ সালের ২১ জানুয়ারি প্রিন্স জাহান্দার মির্জাকে
সভাপতি ও সৈয়দ শামসুল হুদাকে সম্পাদক করে মুসলিম লীগের পশ্চিমবঙ্গ শাখা কমিটি গঠিত হয়।
হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া:
ব্রিটিশ আমলে ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের টানাপোড়েন সবচেয়ে জোরালোভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল বঙ্গভঙ্গকে
কেন্দ্র করে। বঙ্গভঙ্গে যেমন হিন্দু নেতারা বিরোধিতা করেছে তেমনি তারা
বিদ্রæপের হাসি হেসেছেন মুসলিম লীগ গঠনের সংবাদে। তাদের আশংকা ছিল
যে, যদি মুসলমানরা কোন দল গঠন করতে পারে তাহলে ব্রিটিশ সরকারের
কাছে তাঁরা আলাদাভাবে মূল্যায়িত হতে পারে। হিন্দুদের দ্বারা সম্পাদিত
পত্রিকাগুলো পরবর্তী দিন বিদ্রæপাত্মক সংবাদ প্রকাশ করে। যেমন- সুরেন্দ্রনাথ
ব্যানার্জী কর্তৃক সম্পাদিত ‘বেঙ্গলী’ পত্রিকায় মুসলিম লীগকে “সলিমুল্লাহ
লীগ” বলে ঘোষণা করে এবং এটিকে ব্রিটিশ সরকারের ভাতাভোগী ও
তাবেদারদের সমিতি বলে আখ্যায়িত করে। এমনকি এটি বেশীদিন তাদের
কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যও প্রদর্শন করা হয়।
ফলাফল ও পরবর্তীতে প্রভাব
মুসলিম লীগ গঠন মুসলমানদেরকে রাজনৈতিক দিক থেকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছিল। কেননা এতদিন মুসলমানরা
পালহীন নৌকার মতো দিক বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছিল এবং সেই সাথে সকলের অন্যায় অত্যাচার মাথা পেতে নিতে হচ্ছিল।
কিন্তু এখন তারা ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য প্লাটফর্ম খুঁজে পেল। তারা রাজনৈতিক দিক থেকে বলীয়ান হবার পাশাপাশি শিক্ষা,
অর্থনীতিসহ নানাবিধ কর্মকাÐে তাদের দায় দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করলো। তারা মুসলিম লীগকে তাদের আশা
আকাক্সক্ষার প্রতীক হিসেবে গণ্য করতে লাগলো। আবার মুসলিম লীগও মুসলমানদের একমাত্র মূখপত্র হিসেবে সকল কর্ম-
কাÐ পরিচালিত করতো। যেমন: মুসলিম লীগের প্রচেষ্টার কারণেই হিন্দুদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী সর্বাত্মক আন্দোলন সত্তে¡ও
বঙ্গভঙ্গ রদ করতে ব্রিটিশ সরকারের ছয় বছর সময় লেগেছিল। তবে মুসলিগ গঠন ছিল ভারতীয় মুসলিম ও হিন্দুদের
ঐক্যবদ্ধ করার বিষয়ে সবচেয়ে বড়ো বাঁধার প্রাচীর। যেহেতু হিন্দুদের কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত ছিল আর এখন মুসলিম লীগ
প্রতিষ্ঠা হলো ফলে সাম্প্রদায়িকতা আরো ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর রূপ লাভ করলো। মুসলিম লীগের বড়ো সাফল্য ছিল
মুসলমানদের জন্য আলাদা নির্বাচনের ব্যবস্থাকরণ। ১৯০৯ সালে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের জন্য মর্লি-মিন্টো
সংস্কার আইন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাশ হয়। মুসলিম লীগের আরেকটি সাফল্য হলো মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র
কায়েম করা অর্থাৎ পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এই আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তিভূমি ধরা হয় ১৯৪০ সালের মুসলিম লীগের
লাহোর অধিবেশনে উত্থাপিত ‘একাধিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ নামক প্রস্তাবটি। পরবর্তীতে এই প্রস্তাবটি মুসলমানদের গণদাবিতে
রূপান্তরিত হয় মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে। যার সফল পরিণতি ঘটে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের মাধ্যমে।
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ
সারসংক্ষেপ :
সর্বভারতীয় মুসলিমলীগ ছিল ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের একমাত্র সংগঠন। ব্রিটিশ শাসনের শুরু হতেই ভারতের
মুসলিম সম্প্রদায় সর্বদিক হতে অবহেলিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলেও
এটি অবহেলিত ও বঞ্চিত মুসলমানদের দাবি আদায় করতে ব্যর্থ হয়। ফলে মুসলমানরা কতগুলো সাধারণ উদেশ্যকে
সামনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে এবং ১৯০৬ সালে নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকার শাহবাগে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১০
১. মুসলিম লীগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক) ১৯০৬ খ) ১৮৮৫ গ) ১৯৪৮ ঘ) ১৮০৬
২. কংগ্রেস কতসালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক) ১৭৮৫ খ) ১৮৮৫ ঘ) ১৯০৫ ঘ) ১৯০৬
৩. কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা কে?
ক) লর্ড কার্জন খ) এ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম গ) এ্যালান হিউম ঘ) প্যাটেল
৪. সর্বভারতীয় মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কয়টি?
ক) ৫টি খ) ৭টি গ) ৩টি ঘ) ৮টি
নেপাল দক্ষিণ এশিয়ার এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অধিকার আদায়ের জন্য ‘ক দল’ নামক
একটি রাজনৈতিক দল থাকলেও, মুসলমানদের অধিকার আদায়ের জন্য তেমন কোন দল নেই। সে-কারণে মুসলিম
নেতৃবৃন্দ এম এল নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সে অনুযায়ী কতগুলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে
সামনে রেখে বিংশ শতাব্দির প্রথম দশকে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
(ক) মুসলিম লীগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? ১
খ) মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় কারা মুখ্য ভূমিকা পারন করেন? ২
গ) মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি উল্লেখ কর। ৩
ঘ) মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও ভারতীয় মুসলিম রাজনীতিতে এর প্রভাব মূল্যায়ন কর ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]