ব্রিটিশ ভারতের রাজনীতিতে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে

মুখ্য শব্দ খলিফা, তুর্কি খিলাফত, অসহযোগ, মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস

খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম স্বত:স্ফূর্ত ব্রিটিশ বিরোধী
আন্দোলন। এটি এমন এক সময় সংঘটিত হয়েছিল যখন সারা বিশ্বে সদ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে।
ভারতবাসী আশা করেছিল মহাযুদ্ধের পর ভারতীয় উপমহাদেশে উদার শাসন নীতি প্রচলিত হবে। কিন্তু কিছু অনাকাক্সিক্ষত
ঘটনা ঘটার কারণে এখানে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন গড়ে ওঠে যেখানে হিন্দু মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহণ
করে যা ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে রূপলাভ করে। যদিও আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি।

খিলাফত আন্দোলন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজিত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক ছিল অন্যতম। তুরস্কের প্রতি মিত্রশক্তি ( ইংল্যাÐ, আমেরিকা, রাশিয়া,
ফ্রান্স) চরম অবমাননাকর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল খিলাফত বাতিল ঘোষণা করা। তুর্কি
সুলতানরা নিজেদের মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে দাবি করতেন। কিন্তু উসমানীয় সালতানাতের অবসান ঘটিয়ে তুরস্কে
প্রজাতন্ত্র চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হলে খিলাফতের অবসান ঘটে। ফলে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর মতই ভারতীয়
উপমহাদেশের মুসলিমরা তুরস্কের খলিফার সা¤্রাজ্যের অবসান মেনে নিতে পারেনি। মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা
শওকত আলী আবুল কালাম আজাদ প্রমূখের নেতৃত্বে তুরস্ক বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার নিন্দা করেন
এবং সরকার বিরোধী এক শক্তিশালী আন্দোলনের ঘোষণা করেন। খিলাফতকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ খিলাফতকে টিকিয়ে
রাখার নিমিত্তে আন্দোলন পরিচালিত হওয়ায় এটিকে ‘খিলাফত আন্দোলন’ বলা হয়। উল্লেখ্য যে, ডঃ আনসারীর নেতৃত্বে
‘খিলাফত কমিটি’ গঠিত হয় ১৯১৯ সালের ১৭ অক্টোবর । আর ঐ তারিখটি ‘খিলাফত দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৯১৯ সালের ১৪ নভেম্বরে এ. কে. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে খিলাফত বৈঠকের প্রথম অধিবেশন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে তুরস্কের অখÐতা ও খলিফার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার দাবি করা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় যে, এ বিষয়ে ব্রিটিশ
সরকারের প্রতিশ্রæতি না পেলে মুসলমানগণ সরকারের সাথে অসহযোগ নীতি অনুসরণ করে চলবে। অবশ্য বেশ কয়েকজন
কংগ্রেসি নেতাও খিলাফত বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেছিল। মহাত্মা গান্ধীও খিলাফত বৈঠকের একটি সভায় সভাপতিত্ব করেন
এবং তিনি সভাপতির ভাষণে খিলাফত বিষয়ে কংগ্রেস সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একই বছর ডিসেম্বর মাসে
মাওলানা শওকত আলীর সভাপতিত্বে খিলাফতের দ্বিতীয় বৈঠক লক্ষে¥ৗতে অনুষ্ঠিত হয় । এ বৈঠকে তুরস্ক ও খলিফার
ব্যাপারে ভারতীয় মুসলমানদের মনোভাব জানানোর জন্য বড় লাট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রতিনিধিদল পাঠানোর
সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ধারাবহিকতায় ড. আনসারীর নেতৃত্বে হিন্দু ও মুসলিমদের একটি প্রতিনিধিদল ১৯২০ সালের
জানুয়ারি মাসে বড়লাটের সাথে সাক্ষাৎ করে মুসলমানদের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন। কিন্তু সরকার তাদের নিরাশ করেন
এই বলে যে, জার্মানির অনুকূলে অস্ত্র ধারণ করার শাস্তি তুরস্ককে পেতেই হবে।
১৯২০ সালের ফেব্রæয়ারিতে আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আহূত খিলাফত সম্মেলন অসহযোগ আন্দোলনের উপর
একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং একটি প্রতিনিধিদলকে লন্ডনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। এরই
ধারাবাহিকতায় মাওলানা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জের সাথে সাক্ষাৎ
করতে যান, কিন্তু তারা ব্যর্থ হন। ১৯২০ সালের মে মাসে তুরস্কের সঙ্গে মিত্রপক্ষের সেভার্সের চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার সংবাদ
প্রচারিত হয়। এ সন্ধির শর্তগুলো এদেশের মুসলমানদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি করে। জুন মাসে খিলাফত
কমিটি অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই কর্মসূচির মধ্যে ছিল:
যথা: ১) সরকারি খেতাব ও অবৈতনিক পদ বর্জন করা,
২) সরকারের বেসামরিক পদগুলো থেকে ইস্তফা দেয়া,
৩) পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করা
৪) খাজনা বন্ধ করা প্রভৃতি
উপরোক্ত কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় রংপুর, রাজশাহী, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলায় গ্রামবাসী খাজনা দিতে
অস্বীকার করে। এছাড়াও ব্রিটিশ পণ্য, অফিস আদালত বয়কট করা হয়। ১৯২০ সালের পহেলা আগস্ট বিশালাকারে
সারাদেশে হরতালসহ খিলাফত দাবি পালিত হয়। ব্রিটিশ সরকার খিলাফত ও রাওলাট আইন সম্পর্কে অনমনীয় মনোভাব
অক্ষুন্ন রাখায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলন ও কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলন একীভূত হয়।
ফলে এদুটি আন্দোলন মিলে গণ-আন্দোলনে রূপান্তরিত হয় এবং মহাত্মা গান্ধী কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, খিলাফত কমিটি,
জমিয়ত-ই-উলামা-ই-হিন্দ প্রভৃতি দলের নেতৃত্ব এককভাবে গ্রহণ ও পরিচালনা করেন। আন্দোলন এতই গতিশীল ছিল
যে, সারা দেশে ১৯২০ সালেই ২০০ এর অধিক ধর্মঘট সফলভাবে পালিত হয়। গান্ধীজী ও আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের অক্লান্ত
পরিশ্রমে আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষ যোগদান করতে থাকে। খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের গ্রন্থ রচয়িতা অধ্যাপক
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহর ভাষায়, এ তিনজন (আলী ভ্রাতৃদ্বয় ও গান্ধী) তখন পরিণত হয়েছিল মুকুটহীন ভারত স¤্রাটে। ১৯২১
সালে আন্দোলন তীব্ররূপ ধারণ করে। কোন কোন জায়গায় অহিংস আন্দোলন সহিংসতায় রূপান্তরিত হয়। ফলে সরকার
দমননীতি পুরোপুরি ভাবে প্রয়োগ করতে থাকে। ১৯২১ সালেই মাওলানা মোহম্মদ আলী, মাওলানা আজাদ, চিত্তরঞ্জন দাশ,
মতিলাল নেহেরু প্রমূখকে সহ প্রায় ২০ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার ঐ বছরই
খিলাফত আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং সেই সাথে দমননীতিকে আরো সম্প্রসারিত করে। ফলে ধীরে ধীরে
আন্দোলন ম্রিয়মান হতে থাকে।
খিলাফত আন্দোলনের ফলাফল ও গুরুত্ব
খিলাফত আন্দোলন তার চাহিদা অনুযায়ী পরিণতি লাভ করতে পারেনি। এর বড়ো কারণ হলো- এই দাবিটি সময়োপযোগী
ছিল না। কেননা এটি শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মাথা ব্যাথার কারণ ছিল না । এটি ছিল সারা বিশ্বের
মুসলমানদের সমস্যা। কিন্তু আরবদেশ গুলো থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আবার যোগ্য নেতৃত্বের অভাবও
আন্দোলনকে সফল পরিণতি দেয়নি। কারণ আলী ভাতৃদ্বয় বার বার গ্রেফতার হওয়ায় আন্দোলন পালহীন নৌকার মত
দিকবিদিক চলেছিল। তবে ব্যর্থতার জন্য উত্তর প্রদেশের চৌরিচৌরা থানায় অগ্নি সংযোগের ঘটনা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে
গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকে দায়ী করা হয়।
অসহযোগ আন্দোলন
ইতিহাসে কোন দেশ কখনই অন্য কোন দেশ বা ব্যক্তির অধীনে থাকতে পছন্দ করেনি। তেমনি ভারতীয় উপমহাদেশের
জনগণ বারবার স্বাধীকার বা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন মুখর হয়েছে। ১ম মহাযুদ্ধের পর একদল ভারতীয় যুবক জার্মানির
সহযোগিতায় স্বাধীকার অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। এই অজুহাতে ব্রিটিশ সরকার নির্যাতন ও দমনমূলক রাওলাট আইন
পাশ করতে উদ্যত হলে অনেক হিন্দু নেতা বিশেষ করে মহাত্মা গান্ধী এটির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং তৎকালীন
গভর্ণর জেনারেল চেম্সফোর্ডকে আইন পাশে তার সম্মতি না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু জেনারেল চেমসফোর্ড
গান্ধীর অনুরোধ উপেক্ষা করে রাওলাট আইনে সম্মতি দান করেন এবং তা বলবৎ করেন। ফলে গান্ধী সারা দেশে সত্যাগ্রহ
ও গণআন্দোলনের ডাক দেন। গান্ধী তাঁর আন্দোলনে শান্ত, নিরস্ত্র ও অহিংস নীতি গ্রহণ করেন। তথাপিও কোন কোন
স্থানে অহিংস আন্দোলন সহিংসতায় রূপলাভ করে। যেমন: পাঞ্জাবের অমৃতসর, গুজরানওয়ালা এবং দিল্লিতে আন্দোলন
সহিংস হয়ে উঠলে তা দমনের জন্য সরকারও কঠোর নীতি গ্রহণ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে অমৃতসরের শাসনভার
বেসামরিক থেকে সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এর প্রতিবাদে জনগণ অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ
নামক একটি উদ্যানে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল সমবেত হয়। এই উদ্যানের প্রবেশের একটি মাত্র পথ এবং বহি:র্গমনের
জন্য চারটি পথ ছিল। আর চারপাশে অট্টালিকা বেষ্ঠিত ছিল । সহিংসতার আশংকায় জেনারেল ডায়ার এর নির্দেশে পূর্ব
ঘোষণা ছাড়াই প্রায় ১০ মিনিট ধরে নিরস্ত্র জনগণের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়। সরকারি হিসাব মতে এই হত্যাকাÐে ৩৭৯
জন নিহত এবং ১২০০ জন আহত হয়। কিন্তু অনেকের মতে মৃতের সংখ্যা হাজারের উপরে । মূলত ভারতের সর্বত্র আতঙ্ক
সৃষ্টি করতেই এই হত্যাকাÐ চালানো হয়। তবে একথা ঠিক যে, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাÐে সারাদেশে তুমুল বিতর্কের
ঝড় ওঠে এবং ইংরেজদের প্রতি দারুণ ঘৃণা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়।। সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় মন্তব্য করেন যে,
জালিয়ানওয়ালাবাগ সমগ্র ভারতে এক মহাযুদ্ধের আগুন প্রজ্জলিত করে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এরূপ নৃসংশতার
প্রতিবাদে ব্রিটিশ ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য যে, এই হত্যাকাÐের তদন্ত করার জন্য জাতীয় কংগ্রেস একটি তদন্ত
কমিটি গঠন করে। যার সদস্য ছিলেন- মতিলাল নেহেরু, এ. কে. ফজলুল হক, এম আর জয়াকার, চিত্তরঞ্জন দাশ, আব্বাস
তৈয়াবজী, মহাত্মা গান্ধী প্রমূখ। উক্ত কমিটি জেনারেল ডায়ারকে দায়ী করে এবং তীব্র ভাষায় তার নিন্দা করে। কিন্তু তার
পরও ভারত সরকার জেনারেল ডায়ারের কার্যকলাপকে সমর্থন দান করে। যাইহোক ভারতবাসী কিন্তু তাদের আন্দোলন থেকে পিছপা হয়নি।
উল্লেখ্য যে, ‘তুরস্ক বাঁচাও, বাঁচাও খিলাফত’ এই আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল আগেই।
কিন্তু ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে গান্ধী কংগ্রেসের একটি বিশেষ সভায় অসহযোগ আন্দোলনের রূপকল্প ঘোষণা
করেন। রূপকল্পের মধ্যে ছিল- সরকারি খেতাব ও সম্মানসূচক উপাধি বর্জন, ব্রিটিশ সরকার পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বর্জন, রাজ বিচারালয় বর্জন, বিদেশী পণ্য বর্জন ও দেশি পণ্যের বিস্তার ঘটানো ইত্যাদি। এই অসহযোগ আন্দোলনকে
ব্যাপকতর রূপদান করতে সারা দেশ থেকে ১ কোটি স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে একটি বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলা হয়। এছাড়াও
দেশীয় বস্ত্র প্রসারের নানাবিধ ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিদেশী বিদ্যালয়ের পরিবর্তে এদেশীয় পাঠশালা ও বিদ্যালয়ের প্রতি
বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে উত্তর প্রদেশ, বাংলা বিহার, উড়িষ্যাসহ নানা প্রদেশে প্রায়
৮০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সরকারি গোয়েন্দা ব্যামফোর্ডের রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, ব্রিটিশদের পরিচালিত
কলেজে ১৯১৯-২০ সালে যেখানে শিক্ষার্থী ছিল ৫২,৪৮৬ সেখানে ১৯২১-২২ সালে শিক্ষার্থী কমে দাড়ায় ৪৫,৯৩৩ জনে।
এরকম এই অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব সরকারি অফিস আদালতসহ নানা জায়গায় প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।
সরকারের রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গান্ধী সারা দেশে
আন্দোলনের বীজবপন করেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি মুসলমানদের থেকে জোরালো সমর্থন আদায়ের জন্য ‘খিলাফত
আন্দোলনে’ নৈতিক সমর্থন দেন এমনকি বিভিন্ন জনসভায় মুসলমানদের পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রæতি দেন। ফলে আলী
ভ্রাতৃদ্বয়ও গান্ধীর আন্দোলনে তাদের সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একারণে ভারতের দুটি জাতি প্রথমবারের মত কোন
একটি বিষয়ে আন্দোলনে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করে।
গান্ধী তার আন্দোলনের সূচনাতেই এটিকে অহিংস বলে প্রচার করেন। কিন্তু এটি ক্রমেই সহিংসতায় রূপান্তরিত হচ্ছিল।
ফলে সরকারও কঠোর হস্তে তা দমন করার সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। দেশে যেকোন প্রকার সভা সমিতি, হরতাল,
ধর্মঘট প্রভৃতি নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়। এছাড়াও সরকার গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করেন। এতে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ
ও অভিজাতদের গ্রেফতার করা হয়। যেমন-লালা লাজপৎ রায়, মতিলাল নেহেরু, চিত্তবঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহেরু,
মোহাম্মদ আলী, মাওলানা আজাদ, সুভাষচন্দ্র বসুসহ প্রায় ২০ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়। এই দমন নীতির ফলে
সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। একটি দূর্ঘটনা ঘটে উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানে
১৯২২ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি। একটি শোভাযাত্রায় পুলিশ গুলিবর্ষণ করা শুরু করে। কিন্তু পুলিশের দূর্ভাগ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই
তাদের রসদ ফুরিয়ে গেলে তারা নিরুপায় হয়ে থানায় আশ্রয় নেয় এবং উত্তেজিত জনতা থানায় অগ্নি-সংযোগ করে। ২২
জন পুলিশ সদস্য জীবন বাঁচানোর তাগিদে বাইরে আসলে তাদের সকলকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এই ঘটনায় গান্ধী
চরমভাবে মর্মাহত হন এবং তিনি বারদৌলি প্রস্তাব অনুসারে অসহযোগ আন্দোলনের অবসান ঘোষণা করেন। অবশ্য
অনেকে গান্ধীর এই ঘোষণা মেনে নিতে পারেননি। তারা এটাকে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল বলে মনে করেন।
ব্যর্থতার কারণ
অনেকে অবশ্য এই আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য গান্ধীর একক নেতৃত্বকে দায়ি করেছেন। আবার অনেকে এই অসহযোগ
আন্দোলনকে মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলনের সাথে একিভূত করাকে বেশি দায়ি করছেন। তবে একথা ঠিক যে, গান্ধী
এটিকে অহিংস ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তারপরও কতিপয় স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। যদি ঐ অপ্রীতিকর ঘটনা না
ঘটতো তাহলে হয়তোবা এই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি অন্য ভাবে ইতিহাসে লিখা হতো।
অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব
অসহযোগ আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কোন প্রভাব তেমন একটা না থাকলেও এটির সুদূর প্রসারী কিছু প্রভাব অবশ্যই ছিল।
সভা সমাবেশ, বয়কট ও হরতালসহ নানা কর্মকাÐে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা
বৃদ্ধি পেয়েছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই আন্দোলনে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের ক্ষেত্রে একটি বড়ো সাফল্য অর্জিত
হয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে হিন্দুদের জাতীয় কংগ্রেস গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। এমনকি মুসলিম লীগও তাদের
জনপ্রিয়তা বাড়াতে সক্ষম হয়। তবে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়াই গান্ধী আন্দোলনের অবসান ঘোষণা করলে
কংগ্রেসের অন্যতম শক্তিশালী নেতা চিত্তরঞ্জন দাশ ও মতিলাল নেহেরু খুবই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি তারা কংগ্রেস
থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ‘স্বরাজ দল’ একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ফলে এতে করে কংগ্রেস
ক্ষমতা কিছুটা হলেও হ্রাস পায়। কেননা ১৯২৩ সালের নির্বাচনে স্বরাজ দল কেন্দ্রিয় আইন সভার ১০১ টি আসনের মধ্যে
৪৫ টি আসনেই জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।
খিলাফত আন্দোলন কী? জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাÐ তুর্কি খিলাফতের বিলুপ্তির কারণ কী?
সারসংক্ষেপ :
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলনে
হিন্দু-মুসলমানরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই মঞ্চে সমাবেত হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন সফল
হতে পারেনি। আন্দোলনটি প্রকৃতপক্ষে সফল না হলেও এ আন্দোলনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত হয়
তা পরবর্তীকালে বহু আন্দোলনের গতিপথ নির্দেশ করে। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় মুসলমান তথা মুসলিম লীগের নেতৃত্বে
পরিচালিত হয় খিলাফত আন্দোলন আর হিন্দু সম্প্রদায় তথা কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় অসহযোগ আন্দোলন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১২
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কতসালে শেষ হয়?
ক. ১৯১৪ খ. ১৮১৪ গ. ১৯১৯ গ. ১৯১৮
২. কত সালে ‘খিলাফত কমিটি’ গঠিত হয়?
ক. ১৯১৯ সালের ১৭ অক্টোবর খ. ১৯২৯ সালের ২৭ নভেম্বর
গ. ১৯১৯ সালের ১৭ মার্চ গ. ১৯১৯ সালের ১৭ আগ¯ট
৩. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাÐে কতজন নিহত হয়?
ক. ৩৭৯ খ. ৪৭৯ গ. ৬৭৯ গ. ৩৮৯

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]