অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ সম্পর্কে ধারণা বাংলার প্রতি পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতি সম্পর্কে বিবরণ দিতে পারবেন

মূখ্য শব্দ পূর্ব বাংলা, বৈষম্য, অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি
[
সুলতানি ও নবাবি আমল থেকেই বাংলার একটি বিশেষ ঐতিহ্য ছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, বিভিন্ন
সময়ে বাঙলায় আগত বিদেশী পর্যটকরা বাংলাকে ‘সম্পদে পরিপূর্ণ নরক’ বলে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ এক
সময় বাংলা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত থাকলেও এখানকার প্রত্যেকটি জনপদ ছিল সম্পদে পরিপূর্ণ। ব্রিটিশ
শাসনামলে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ নামে নতুন প্রদেশ গঠিত হয়। যার রাজধানী করা হয়
ঢাকাকে। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব অনুসারে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পূর্ব বাংলা কখনোই লাহোর প্রস্তাবভিত্তিক
পৃথক রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়নি। ফলে পূর্ব বাংলাকে প্রায় সুদীর্ঘ ২৪ বছর ধরে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের জন্য আন্দোলন ও
সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই দু‘দশকেরও অধিক সময় ধরে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষকে তাদের
রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। কেবল তাই নয়, তাদের প্রতি
নানাধরণের বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক নীতি অনুসরণ করছে। পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর এই বৈষম্য ও
নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলায় প্রথমে প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু হয়। আর এই প্রতিবাদী আন্দোলন থেকেই শুরু
হয় স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন যার সফল পরিণতি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
পূর্ব বাংলা ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের বৈষম্যমূলক নীতিগ্রহণ
করেছিল। অনেকেই পূর্ব বাংলার জনগনের প্রতি পাকিস্তানের এই আচরণকে ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ’ বলে অভিহিত
করেছেন। অভ্যন্তরীণ ঊপনিবেশবাদে নি¤েœাক্ত কতগুলো বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয।
১. অভ্যন্তরীণ ঊপনিবেশবাদে বিদেশী শক্তি জোরপূর্বক একটি ভূখন্ড বা সম্প্রদায়কে নানাদিক থেকে শোষণ ও নির্যাতনের
নীতি গ্রহণ করে।
২. অভ্যন্তরীণ ঊপনিবেশবাদে প্রভূত্বকারী শক্তি জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে।
৩. তারা ক্ষমতা ব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে প্রথম রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দখল করে।
৪. ঊপনিবেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বদলে তাদের কাঁচামাল, সম্পদ পাচার করে নিজ দেশের বা অঞ্চলের
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটায়।
৫. উপনিবেশিক শক্তি দেশীয় মূল্যবোধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিসহ স্বকীয়তা ধ্বংস করে নিজেদের শিক্ষা, ভাষা,
সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়।
পাকিস্তান সৃষ্টির কয়েক মাসের মধ্যে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বদলে পাকিস্তানি ঊপনিবেশবাদ বাঙালির উপর চেপে
বসে। একমাত্র ইসলাম ধর্ম ছাড়া পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলার মধ্যে আর কোন বিষয়ে মিল ছিল না। প্রায় দেড় হাজার
মাইলের ব্যবধান ছাড়াও নৃতাত্তি¡ক, ভূ-রাজনৈতিক, ভাষা ও সংস্কৃতি, সমাজ ও অর্থনীতিসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর
বৈসাদৃশ্য ছিল। এ সকল বৈসাদৃশ্যের কারণে একাত্তরে অনিবার্য হয়ে দেখা দেয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। পূর্ব বাংলার প্রতি
পাকিস্তানের বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো নি¤œরুপপাঠ-৯.৩
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র
ইউনিট ৯ পৃষ্ঠা ২৬২
রাজনৈতিক বৈষম্য
১. পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব
অনুসারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা থাকলেও ১৯৪৭ সালে উল্লিখিত অঞ্চলসমূহ
নিয়ে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়।
২. পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র পূর্ব বাংলার স্বায়ত্বশাসন ও বাঙালির স্বার্থের প্রতি
চরম অবহেলা করতে থাকে। পূর্ব বাংলার ৫৬% লোকের ভাষা বাংলা হওয়া সত্তে¡ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা
করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জনসংখ্যা অনুসারে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থেকে বাঙালিদের বঞ্চিত করা হয়।
৩. সংবিধান নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু ১৯৪৭ সালে নতুন রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা নিজ নিজ রাষ্ট্রে
সংবিধান প্রণয়নের কথা থাকলেও পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৫৬ সালে। প্রায় নয় বছর সময় লেগেছিল
একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে। এই সংবিধানের মাধ্যমে পূর্ব বাংলাকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামকরণ করা হয়। এই
সংবিধানে সমস্ত ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানদের পশ্চিম পাকিস্তানিদের উপর
নির্ভরশীল রাখা হয়।
৪. পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবহেলা করতে থাকে। ১৯৫৪ সালে নির্বাচিত
হয়েও তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।
৫. বাঙালি নেতৃবৃন্দের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র দারুণ অবহেলা ও নির্যাতন করতে থাকে। পাকিস্তান আমলে
সিংহভাগ বাঙালি নেতা জেলখানায় বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। মৌলিক গণতন্ত্রের নামে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে
তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
প্রশাসনিক বৈষম্য
রাজনৈতিক ক্ষেত্রের মতো প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বাঙালিদের যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত
করা হয়েছে। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস ও সামরিক বাহিনীতে পাঞ্জাবিসহ অন্যান্য পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে
একটি ‘এলিট শ্রেণি’ গড়ে তোলা হয়। মন্ত্রীদের পরই ক্ষমতাধর ছিলেন এই এলিট শ্রেণী। ১৯৬৫-৭০ সাল পর্যন্ত এক
জরিপে দেখা যায় যে, পাকিস্তানের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৬৯ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৪৫ জনই পাঞ্জাবি, বাঙালি ছিলেন মাত্র
তিনজন। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে বাঙালি অফিসারদের নিয়োগ করা হত না।
এভাবেই পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত।
প্রতিরক্ষা বৈষম্য
পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। পাকিস্তান আমলের
বেশির ভাগ সময়জুড়ে ক্ষমতায় ছিল সামরিক বাহিনী। বাঙালিদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে সরিয়ে রাখার নীতি বাঙালি
জাতি ও সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সামরিক সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করে। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব
পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালি সদস্যরা পাকিস্তানি আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রতিরোধযুদ্ধে জনগণের সাথে
অংশগ্রহণ করে। নি¤েœ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষ্যম্যগুলো তুলে ধরা হল১. ১৯৫৫ সালের এক হিসাব থেকে দেখা যায় যে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মোট সংখ্যা ছিল
২২১১ জন। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ৮২ জন যা শতকরা হিসাবে ৩.৭% মাত্র।
২. পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পাঞ্জাবি আধিপত্য নিশ্চিত করার জন্যে প্রাদেশিক কোটা নির্ধারণ করা হয়। এতে ৬০%
পাঞ্জাবি, ৩৫% পাঠান এবং অবশিষ্ট ৫% পশ্চিম পাকিস্তানের বাকি এলাকা এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিয়োগ করার
বিধান চালু করা হয়।
৩. পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নিয়োগ বৈষম্য দেখলে যে কেউই আঁতকে উঠবেন। সেনা, নৌ, ও বিমান বাহিনীর
সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যনীতি পরিলক্ষিত হয়। সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি। অফিসার
পদে বাঙালিদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। কেবল অফিসার নয় সাধারণ সৈনিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বাঙালি
সৈনিকদের সুযোগ ছিল সীমিত। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫,০০,০০০ সদস্যের মধ্যে বাঙালি ছিলেন
২০,০০০ জন মাত্র যা মোট সংখ্যার ৪% মাত্র।
পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়। সে কারণে পূর্ব পাকিস্তান কখনোই
অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ং সম্পূর্ণ হতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমুদয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হত বলে পূর্ব
পাকিস্তানের সকল আয় চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। স্টেট ব্যাংকসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ছিল পশ্চিম
পাকিস্তানে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে অর্থ পাচার হতো সহজেই। পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক এরূপ
শোষণমূলক নীতি অনুসরণের ফলে ১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য
শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকচক্র বাঙালিদের অশিক্ষিত রেখে তাদের শাসনকে
পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। তাদের ভয় ছিল বাঙালিরা শিক্ষিত হলে চাকরিসহ প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে এবং দেশ শাসনে
অংশীদারিত্ব দাবী করবে। এজন্য পূর্ব পাকিস্তানের নিরক্ষরতা দূরীকরণের লক্ষে তেমন কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
তাছাড়া শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করা হয়েছে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে এরূপ
বৈষম্যমূলক নীতির ফলে পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষা প্রসারের গতি ছিল অত্যন্ত শ্লথ। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত
বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় হয়েছে ২০% আর পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হয়েছে ৮০%। একইভাবে
পাকিস্তানের ১৬টি গবেষণা কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টিই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে আর মাত্র তিনটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। আর
মেধাবৃত্তির ক্ষেত্রে মোট ৩৫ টি বৃত্তির মধ্যে ৩০টি পশ্চিম পাকিস্তানের জন্যে আর ৫টি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্যে।
সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য
পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সামাজিক বৈষম্যও প্রকট আকার ধারণ করেছিল। কৌশলে পাকিস্তানের দু‘অংশের মধ্যে
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের পার্থক্যও কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হত। যখন পশ্চিম পাকিস্তানে চালের মন ১৮ টাকা তখন পূর্ব পাকিস্তানে চালের মন ছিল ৫০ টাকা।
সাংস্কৃতিক বৈষম্য
সাংস্কৃতিক বৈষম্য ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রধান কারণ। দু‘অঞ্চলের ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। পূর্ব
বাংলার অধিবাসীরা ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ এবং তাদের ভাষা বাংলা। অপরদিকে
পাকিস্তানের বাকি ৪৪ শতাংশ লোকের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল বিভিন্ন ধরণের। এই ৪৪ শতাংশ লোকের মধ্যে মাত্র
৭.২ শতাংশ লোকের ভাষা ছিল উর্দু। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি পর থেকে শাসকগোষ্ঠী ৭.২ শতাংশ লোকের ভাষাকে
রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তে লিপ্ত হলে বাঙালিরা তা প্রতিহত করতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ডাক দেয়। শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা
আন্দোলন। এই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলোনের অনুপ্রেরণায় এক সময় স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন শুরু হয় এবং
বাঙালিরা বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখন্ড লাভ করে।
রবীন্দ্র সাহিত্যসহ বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক সাহিত্য বাঙালির প্রাণ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ সকল সাহিত্য নিষিদ্ধ
ঘোষণা করে। ফলে বাঙালির মনে এক ধরণের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কেবল তাই নয় বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা
বর্ষবরণকেও পাকিস্তানিরা বন্ধ করে দেয়। ১৯৬৭ সালে ১লা বৈশাখ পালনকে আইয়ুব খান হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাব বলে
আখ্যা দেন। আইয়ুব খানের এরূপ ঘোষণা ছিল বাঙালি জাতির হাজার বছরের সংস্কৃতির মূলে কুঠারাঘাত। এমনিভাবে
পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের
নানাধরণের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের
নির্বাচন, আইযুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ছয় দফাভিত্তিক আন্দোলন, আগরতলা মামলা বিরোধী আন্দোলন , ঊনসত্তরের
গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং সর্বশেষে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম
সংগঠিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনে বাঙালিরা সফলতা লাভ করে।
সারসংক্ষেপ :
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় পূর্ব বাংলা কেবল দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়েছিল। তবে
একমাত্র ধর্মীয় মিল ছাড়া পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে আর কোন মিল ছিল না। ধর্মের ভিত্তিতে একক রাষ্ট্র
হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও, শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার সাথে ঔপনিবেশিক আচরণ
শুরু করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙালিদের উপর
নানাধরণের অত্যাচার, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয়, যার প্রতিবাদে বাঙালিরা তীব্র প্রতিক্রীয়া ব্যক্ত করে
এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেন। শুরু হয় স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৩
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হয় কত সালে?
ক. ১৯৫৬ খ. ১৯৪৭ গ. ১৯৪৬ ঘ. ১৯৪০
২। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ বাঙালি?
ক. ৫৫% খ. ৫৬% গ. ৭.২% ঘ. ৪৪%
৩। ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ কে চালু করেন?
ক. আইয়ুব খান খ. জেনারেল ইয়াহিয়া খান গ. জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘ. রাও ফরমান আলী
৪। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যার কত শতাংশ বাঙালি?
ক. ৪% খ. ৫% গ. ২০% ঘ. ১৫%
‘ক’ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। দেশটির শাসকশ্রেণী ‘উ’ ভাষী কিন্তু দেশের সিংহভাগ মানুষ ‘ব’ ভাষী যারা দেশটির
পূর্বাংশে বসবাস করে। শাসকশ্রেণী তাদের নিজস্ব ভাষা ‘উ’ কে রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেবল ভাষার ক্ষেত্রেই
বৈষম্য নয়, তারা দেশটির পূর্বাংশের মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং চাকুরির
অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ‘ক’ এর পূর্বাংশের মানুষের প্রতি শাসকশ্রেণী নানাধরণের বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে এবং
তাদের প্রতি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশিক আচরণ শুরু করে।
ক. পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ হয় কত সালে? ১
খ. পূর্ব বাংলা সম্পর্কে ধারণা দিন? ২
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক নীতিগুলো সম্পর্কে বিবরণ দিন। ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ সম্পর্কে ধারণা দিন এবং এর বৈশিষ্টসমূহ লিখুন । ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]