ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্মসূচির গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বর্ণনা কর

মূখ্য শব্দ মুক্তির মহাসনদ ছয় দফা, শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বায়ত্বশাসন
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা বাঙালি জাতির রাজনৈতিক
ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পূর্ব বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও
সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে ছয় দফা আন্দোলনের ভূমিকা অপরিসীম। একথা মানতেই হবে যে, এই
আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী না হলেও এর প্রভাব ছিল দীর্ঘস্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী। এটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের মানুষের
আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক এবং মুক্তির মহাসনদ।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
ছয় দফা আন্দোলন আকস্মিকভাবে গড়ে ওঠা কোন আন্দোলন নয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে পুর্ব বাংলার
মানুষের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র অন্যায়ভাবে যে সীমাহীন অত্যাচার, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেছিল
তার প্রেক্ষিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। নি¤েœ ছয় দফা আন্দোলনের পটভূমি
তুলে ধরা হলরাজনৈতিক পটভূমি
ছয় দফা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রচিত হয় মূলত ১৯৪৭ সালেই, যখন লাহোর প্রস্তাব এর ভিত্তিতে দেশ বিভাজন করা হয়।
কেননা দেশ বিভাজিত হলেও প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয় যে, প্রত্যেকটি প্রদেশকে স্বায়ত্ত¡শাসন দেওয়া হবে। কিন্তু দেশ বিভাগের
পর আঠারো বছর অতিক্রান্ত হলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ বিষয়ে আশাব্যঞ্জক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং তারা
নিষ্পেষণের হাত সদা প্রসারিত রেখে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য। যেমন ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী
হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠিত হয়। কিন্তু মাত্র ৫৬ দিনের ব্যবধানে তারা ১৯৩৫ সালের ভারত
শাসন আইনের ৯২(ক) ধারা অনুযায়ী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে বাতিল ঘোষণা করে। এছাড়াও দীর্ঘ
প্রতিক্ষিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংবিধান ১৯৫৬ সালে কার্যকর হলেও মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান
সামরিক শাসন জারি করে তা আবার বাতিল করে দেন এবং ১৯৫৯ সালে অগণতান্ত্রিক ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ চালু করে
জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন। উল্লিখিত অবস্থার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্বশাসন দাবি করে।
সামাজিক প্রেক্ষাপট
দুই পাকিস্তানের ব্যবধান শুধু ভৌগোলিক ক্ষেত্রেই নয় বরং দৈনন্দিন জীবনাচরণ, পোশাক পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাসেও রয়েছে
ব্যাপক পার্থক্য। পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তান ছিল জীবনযাত্রার মানে অনেক এগিয়ে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী এই
সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি যা ছয় দফা দাবির জন্য মঞ্চ তৈরি করে।
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
ছয় দফা ঘোষণার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য ভূমিকা পালন করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে পূর্ব
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণের অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন-১৯৬২ সালের সংবিধানে বৈষম্য দূর করার কথা বলা
হলেও বাস্তব প্রয়োগের অভাবে তা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাকিস্তানের কেন্দ্রিয় সরকারের মোট রাজস্বের ৬০ ভাগ
অর্জিত হতো পূর্ব পাকিস্তান থেকে। অথচ উন্নয়ন বাজেটে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ থাকতো মোট বাজেটের মাত্র ২৫
ভাগ। এই বিশাল বৈষম্য ছয় দফা দাবি ঘোষণার অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট রচনা করে ছিল।
সামরিক প্রেক্ষাপট
সামরিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান নিজেদেরকে খুবই অনিরাপদবোধ করে ১৯৬৫ সালে সংঘঠিত পাক-ভারত যুদ্ধের সময়।
কারণ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত এলাকায় যতটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় তার ১০
ভাগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি পূর্ব পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত এলাকায়। ভারত চাইলে যে কোন সময় পূর্ব পাকিস্তানে
আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারতো। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়।
প্রশাসনিক পটভূমি
রাজনৈতিক ক্ষেত্রের মতো প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বাঙালিদের যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত
করা হয়েছে। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস ও সামরিক বাহিনীতে পাঞ্জাবিসহ অন্যান্য পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে
একটি ‘এলিট শ্রেণী’ গড়ে তোলা হয়। এক্ষেত্রে বাঙালিরা ছিল বঞ্চিত। ১৯৬৫-৭০ সাল পর্যন্ত এক জরিপে দেখা যায় যে,
পাকিস্তানের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৬৯ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৪৫ জনই পাঞ্জাবি, বাঙালি ছিলেন মাত্র তিনজন। এ ধরনের
বাস্তব অবস্থাও ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচির ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল।
ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা
পাক-ভারত যুদ্ধ সমাপ্ত হলে ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রæয়ারি লাহোরে নিখিল পাকিস্তান জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে
পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীকার আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মোট ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ
করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনসহ রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক দাবি সম্বলিত ‘ছয় দফা কর্মসূচি’ সম্মেলনে পেশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে অনুষ্ঠান স্থলের
বাইরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেন। যা ঐতিহাসিক ছয় দফা নামে পরিচিত। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এতে
পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করে এবং জনমত তৈরির জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে প্রচারপত্র ছড়িয়ে দেয়। ‘বাঙালির দাবি ছয় দফা,
বাঁচার দাবি ছয় দফা’ প্রভৃতি ¯েøাগানে মূখরিত হয় পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি তারিখে তৎকালীন
আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটি ‘আমাদের বাঁচার দাবি ছয় দফা’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে এবং ১৯ মার্চে কাউন্সিল
অধিবেশনে ‘ছয় দফা কর্মসূচি’ অনুমোদন লাভ করে।
ঐতিহাসিক ছয় দফার ধারাসমূহ
প্রথম দফাঃ পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও শাসনতন্ত্র
লাহোর প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের জন্য নতুন শাসনতন্ত্র তৈরি করে সত্যিকারের একটি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে
হবে। সরকার হবে সংসদীয় পদ্ধতির। সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার থাকবে। আর প্রদেশগুলো পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্বশাসন লাভ করবে।
দ্বিতীয় দফাঃ কেন্দ্রিয় সরকারের ক্ষমতা
পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রিয় সরকারের হাতে। আর বাদ বাকী ক্ষমতা থাকবে
প্রাদেশিক সরকারের হাতে।
তৃতীয় দফাঃ মুদ্রা ও অর্থবিষয়ক
এ বিষয়ক বিকল্পসহ দুটি প্রস্তাব করা হয়। যথাঃক) সহজ ও অবাধ বিনিময়যোগ্য দুটি পৃথক মুদ্রা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য প্রচলন করতে হবে। এজন্য দুই প্রদেশে
দুইটি পৃথক স্টেট ব্যাংক থাকবে এবং মুদ্রা ও ব্যাংক পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে। অথবা,
খ) একটি কেন্দ্রিয় ফেডারেল ব্যাংকের অধীনে দুই প্রদেশে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং দুই প্রদেশের জন্য
অভিন্ন মুদ্রা প্রচলন করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সংবিধানে এমন বিধান থাকতে হবে যাতে এক প্রদেশের মুদ্রা অন্য প্রদেশে পাচার না হয়।
চতুর্থ দফাঃ রাজস্ব ও শুল্কনীতি বিষয়ক
প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে সকল প্রকার কর ধার্য ও কর আদায়ের ক্ষমতা। তবে প্রদেশে আদায়কৃত রাজস্বের
একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে যা রিজার্ভ ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এভাবে ফেডারেল সরকারের তহবিল সমৃদ্ধ হবে।
পঞ্চম দফাঃ বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্য
বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করার ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে। দুই প্রদেশের
অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে। প্রয়োজনে দুই প্রদেশ থেকে সমান হারে অথবা সংবিধানে উল্লেখিত
নির্ধারিত হারে কেন্দ্রের ফেডারেল সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রদান করতে হবে। এছাড়াও বিনা শুল্কে ঊভয় প্রদেশের
আমদানী ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং বিদেশের সাথে এ সংক্রান্ত সকল প্রকার চুক্তি সম্পাদন, বিদেশে ট্রেড
মিশন স্থাপন এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করার ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের নিকট সাংবিধানিকভাবে অর্পণ করতে হবে।
ষষ্ঠ দফাঃ প্রতিরক্ষা বিষয়ক
প্রদেশের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিলিশিয়া বা প্যারামিলিটারি নামে প্রাদেশিক সেনাবাহিনী গঠন ও পরিচালনা
করার ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে প্রদেশকে দিতে হবে।
ছয় দফার প্রতিক্রিয়া
ঐতিহাসিক ছয় দফার ধারাগুলো ছিল পূর্ব-পাকিস্তানের দীর্ঘ দিনের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক এবং শোষণ ও নির্যাতন
থেকে মুক্তির মহাসনদ। তাই পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ এটির প্রতি স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ছয় দফা ঘোষণা করায় শেখ
মুজিবুর রহমান দারুণভাবে জনগণের আশা আকাক্সক্ষার মূর্তপ্রতীকে পরিণত হন। আবার অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের
ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণার কারণে ছয় দফা আন্দোলন ক্রমশ ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর রূপ ধারণ করতে থাকে। অন্যদিকে
তৎকালীন সরকার ও পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ ছয় দফার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। তারা এটিকে পাকিস্তানের
জাতীয় ঐক্যের বিরোধী এবং ‘রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা’ বলে প্রচার করতে থাকে। তারা ছয় দফাকে নানাভাবে অপব্যাখ্যা করে
জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখে। পশ্চিম পাকিস্তানে এটি তেমন একটা আলোড়ন ফেলতে না
পারলেও পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টিতে সক্ষম হয় । একারণে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার দমননীতি আরম্ভ করে।
পূর্ববঙ্গের তৎকালীন গভর্ণর মোনায়েম খানের নির্দেশে শেখ মুজিবর রহমানসহ বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ফলে
পূর্ব পাকিস্তানে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সকল বন্দীদের নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে
সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেওয়া হয়। ঐ দিন সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা না মেনে জনগণ স্বেচ্ছায় মিছিল বের করে।
অবৈধভাবে মিছিল করায় পুলিশ জনসাধারণকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলিবর্ষণ করে। ফলে কিশোর মনুমিয়াসহ ঢাকা ও
নারায়ণগঞ্জে সর্বমোট ১১ জন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়। ১৯৬৭ সালে আন্দোলন আরো জোরদার হয় আইয়ুব
খান বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল একত্রিত হবার মধ্যদিয়ে। এভাবে ‘ছয় দফা আন্দোলন’ পূর্ব পাকিস্তান তথা
বাংলাদেশের জনগণের নিকট ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
‘ছয় দফা আন্দোলনের’ গুরুত্ব ও তাৎপর্য
১। ছয় দফাকে শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মুক্তির মহাসনদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন
এবং এটিকে নিজেদের অধিকার আদায়ের মাধ্যম হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
২। ছয় দফা কর্মসূচি ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সুসংবদ্ধ ও
শক্তিশালী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।
৩। ছয় দফার প্রথম দফাতেই বলা হয়েছে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের কথা। অর্থাৎ প্রত্যেকটি প্রদেশকে তার আত্মনিয়ন্ত্রণের
অধিকার দিতে হবে। কেননা ঔপনিবেশিক শাসনামলের মতো তারা পূর্ব পাকিস্তানকে একটি অর্থ ও ধনসম্পদ উৎপাদনের
কারখানা হিসেবে গণ্য করতো। তারা উৎপাদিত ফসল, আদায়কৃত রাজস্ব, উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রভৃতি এই অঞ্চল
থেকে নিয়ে যেত কিন্তু সরকারিভাবে এই অঞ্চলের অবকাঠামো, শিক্ষাসহ নানাক্ষেত্রে তারা চরম অনিহার বহি:প্রকাশ
ঘটিয়েছে। তাই প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের অধিকার ছিল এদেশের আপামর জনতার দীর্ঘ দিনের দাবি।
৪। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জানতো যে, ছয় দফা শুধুই স্বায়ত্বশাসনের দাবি নয়। ছয় দফা বাস্তবায়িত হলে তাদের আয়ের
বড়ো উৎস হাত ছাড়া হয়ে যাবে। ফলে তারা ছয় দফাকে জাতীয় ঐক্যের বিরোধী বলে চিহ্নিত করে শেখ মুজিবুর
রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দেয়। কিন্তু বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হীন ষড়যন্ত্র বুঝতে পারে
এবং তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় যার সূত্রপাত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। বাঙালিরা বুঝতে
পারে যে, দাবি আদায়ের একমাত্র মাধ্যম হলো আন্দোলন । তাই তারা ছয় দফা আন্দোলনকে ব্যাপক সমর্থন দান করে।
৫। ছয় দফা আন্দোলেনে উজ্জীবিত জনগণ ‘৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হয়। এই গণঅভ্যূত্থানের
ফলাফল ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় আওয়ামী
লীগ বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করে। কারণ জনগণ বুঝতে পেরেছিল যে, সমসাময়িক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে
একমাত্র আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য রাজনীতি করে। তারা সর্বদা জনগণের ভালো মন্দ দেখভাল করে। এই আস্থার
জায়গা তৈরি হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন।
৬। ছয় দফা আন্দোলন জনগণকে জাতীয় চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ দেখায়। যা গণঅভ্যূত্থানে অংশগ্রহণ করতে
উৎসাহ করে এমনকি পর্যায়ক্রমে তা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সাহস, অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনা জোগায়।
এভাবে এমন এক গণজোয়ারের সৃষ্টি হয় যা মোকাবেলা করা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। অভ্যূদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
সারসংক্ষেপ :
ঐতিহাসিক ছয় দফা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ছয় দফা দাবি ছিল পাকিস্তানের
কেন্দ্রিয় সরকার কর্তৃক দীর্ঘকাল ধরে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। ১৯৬৬ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে
পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় এবং জনগণ ব্যাপকভাবে এটিকে সমর্থন জানায়। তারা ঐতিহাসিক ছয় দফাকে
মুক্তির মহাসনদ বলে আখ্যায়িত করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এটিকে রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা বলে অপপ্রচার চালায়।
মূলত, ঐতিহাসিক ছয় দফাই বাঙালি জাতিকে মুক্তির অনুপ্রেরণা দেয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৪
১। ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্মসূচি কে ঘোষণা করেন?
ক. শেখ মুজিবুর রহমান খ. এ কে ফজলুল হক গ. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ঘ. মাওলানা ভাসানী
২। ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় কত সালে?
ক. ১৯৬৬ খ. ১৯৬৫ গ. ১৯৫৮ ঘ. ১৯৫৬
৩। ঐতিহাসিক ছয়দফায় কয়টি মুদ্রার কথা হয়েছে?
ক. ১টি খ. ২টি গ. ৩টি ঘ. কোনটিই নয়
৪। পাকিস্তান সরকার ছয় দফাকে কি বলে আখ্যায়িত করে-
ক. মুক্তির সনদ খ. রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা গ. পাকিস্তান ভাঙ্গার দলিল ঘ. খ ও গ উভয়
‘প’ দক্ষিণ এশিয়ার একটি মুসলিম দেশ যেটি দ্বি-জাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির পূর্বাংশের
জাতীয়তাবাদী নেতা জনাব এম রহমান। ‘প’ এর শাসকগোষ্ঠী পূর্বাংশের বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন ধরে তাদের ন্যায্য
অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছে। এই প্রেক্ষিতে জনাব এম রহমান বাঙালির স্বাধিকার ও স্বায়ত্বশাসনের জন্যে ৬টি দাবি
সম্বলিত একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ‘প’ এর বাঙালি জনগোষ্ঠী এটাকে তাদের প্রাণের দাবি বলে গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে ‘প’ এর শাসকগোষ্ঠী এটাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে আখ্যায়িত করেন।
ক. ঐতিহাসিক ছয়দফা কী ? ১
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেন ছয় দফা ঘোষণা করলেন? ২
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্মসূচির দফাগুলো লিখুন। ৩
ঘ উদ্দীপকের আলোকে ছয় দফা কর্মসূচির গুরুত্ব এবং এর প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]