মূখ্য শব্দ ‘ইকতা’, জালোর, গোয়ালিয়র, উজ্জয়িনী ও বদাউন
সুলতান ইলতুৎমিশের চরিত্র
শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ আরাম শাহকে পরাজিত করে ত্রয়োদশ শতাব্দির দ্বিতীয় দশকে দিল্লি সালতানাতের
মামলুক বা দাস (তুর্কি) বংশের তৃতীয় শাসক হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন এবং ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
সুলতানের দায়িত্ব পালন করেন। সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভা এবং দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলীর
অধিকারী। সমসাময়িককালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আউলিয়া বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, শেখ জালাল উদ্দিন তাব্রিজী এবং খাজা
কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল। দানশীলতার কারণে দাস (তুর্কি) বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান
কুতুবউদ্দিন আইবেক ‘লাখ বক্শ’ উপাধি প্রাপ্ত হন। কিন্তু যুগের মাপকাঠিতে দেখা যায় সুলতান ইলতুৎমিশ আইবেকের
চেয়েও অধিকতর দানশীল ছিলেন। ঐতিহাসিক মিনহাজ উস-সিরাজ, সুলতান সামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের প্রশংসায় বলেন“ইলতুৎমিশের ন্যায় এত ধার্মিক, দয়ালু, বিদ্যানুরাগী, ও দরবেশগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সুলতান দিল্লির সিংহাসনে আর
কখনও আরোহণ করেননি।” সমসাময়িক কালের ঐতিহাসিকগণ সুলতান ইলতুৎমিশকে “আল্লাহর বান্দাগণের
সাহায্যকারী” এবং “আল্লাহর রাজ্যের রক্ষক” প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
সুলতান ইলতুৎমিশের কৃতিত্ব
সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেকের মৃত্যুর পর দুর্বল ও অকর্মণ্য আরাম শাহ দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। আরাম
শাহের দুর্বল শাসন ব্যবস্থা ও অযোগ্যতার কারণে রাজ্যের মধ্যে ব্যাপক বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আরাম শাহের
শাসন ব্যবস্থায় অসন্তুষ্ট দিল্লির অভিজাত আমির উমরাহদের আমন্ত্রণে কুতুবউদ্দিন আইবেকের জামাতা এবং বদাউনের
শাসনকর্তা ইলতুৎমিশ দিল্লির উপকন্ঠে জুধ নামক স্থানে এক বিশাল বাহিনী সহকারে আরাম শাহকে পরাজিত ও নিহত
করে দিল্লির সিংহাসনে উপবেশন করেন। সিংহাসনে আরোহণ করে সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ মুঈজ্জী ও কুতুবী
আমিরগণের বিদ্রোহের সম্মুখীন হন। তিনি তাদেরকে পরাজিত করে দিল্লি ও পার্শ্ববতী অযোধ্যা, বেনারস, বদাউন,
সিউয়ালিক প্রভৃতি অঞ্চলের উপর স্বীয় আধিপত্য সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। গজনীর শাসনকর্তা তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ
পাঞ্জাব থেকে থানেশ্বর পর্যন্ত দখল করে সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সুলতান
ইলতুৎমিশ ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহ দমন করেন।
উচ ও মুলতানের শাসক নাসিরউদ্দিন কুবাচা লাহোর দখল করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১২১৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান
ইলতুৎমিশ তাঁকে পরাজিত করে লাহোর দখল করেন। ১২১১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার শাসনকর্ম গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি
সুলতান’ উপাধি ধারণ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দিল্লির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান
ইলতুৎমিশের বশ্যতা স্বীকার করলেও গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি পুনরায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। যুবরাজ নাসিরউদ্দিন
মাহমুদ বিদ্রোহী গিয়াসউদ্দিনকে পরাজিত ও নিহত করে পিতা সুলতান ইলতুৎমিশ কর্তৃক বাংলার শাসক নিযুক্ত হন।
১২৩০ খ্রিস্টাব্দে নাগাদ বাংলা দিল্লির কেন্দ্রিয় সরকারের আওতাধীন হয়ে পড়ে। সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ অভ্যন্তরীণ
এবং বহি:স্থ বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করে রণথম্ভোর মান্দাওয়ার, জালোর, গোয়ালিয়র, উজ্জয়িনী, বদাউন, বেনারস,
কনৌজ, দোয়াব ও অযোধ্যা দিল্লি সালতানাতের অধিভুক্ত করে উপমহাদেশে একটি সুদৃঢ় এবং প্রজাকল্যাণকর শাসন
ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। দুর্ধর্ষ মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান কর্তৃক বিতাড়িত খাওয়ারিজমের শাহ জালালউদ্দিন সুলতান
ইলতুৎমিশের নিকট রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেও তিনি কৌশলে আশ্রয়দানে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। মধ্যযুগীয় একজন
সুলতানি শাসকের এই কূটনৈতিক মেধার কারণেই এ সময় ভারতীয় উপমহাদেশ মোঙ্গল আক্রমণের বিভীষিকা থেকে রক্ষা
পেয়েছিল।
রাজ্যে বিদ্রোহ দমন এবং শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের পর সুলতান ইলতুৎমিশ সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থার প্রতি মনোনিবেশ করেন।
ভারতবর্ষে প্রকৃত তুর্কি শাসন ব্যবস্থার গোড়াপত্তনকারী সুলতান ইলতুৎমিশ। বলা হয় সুলতান ইলতুৎমিশ যে শাসন
ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন তার উপর ভিত্তি করে খলজিদের আমলে এক সামরিক সাম্রাজ্যবাদের সৌধ গড়ে উঠে। সুষ্ঠু
শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে সুলতান ইলতুৎমিশ দিল্লিতে সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন দপ্তর স্থাপন করেন।
রাজস্বব্যবস্থা ও অর্থ পরিদপ্তর পুনর্গঠনের জন্য তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সমগ্র রাজ্যকে কতগুলো ‘ইকতা’
বা প্রদেশে বিভক্ত করে ইকতাদারদেরকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব অর্পণ করেন। সুলতান
ইলতুৎমিশ ছিলেন ন্যায়বিচারের মূর্ত প্রতীক। প্রজাসাধারণ যাতে সহজে ন্যায় বিচারের জন্য সুলতানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে
পারে এই লক্ষ্যে তিনি রাজদরবারে একটি শিকল বাঁধা ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখতেন। সুলতান ইলতুৎমিশ এক ধরনের রৌপ্য মুদ্রা
প্রবর্তন করেন যা ‘তংকা’ নামে পরিচিত। সুলতান ইলতুৎমিশ জ্ঞানী-গুণী, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, পÐিত ব্যক্তি, কবি এবং
ধার্মিক ব্যক্তিদের পৃষ্ঠাপোষকতা প্রদান করতেন। কুতুবউদ্দিন আইবেক ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে কুতুব মিনার নির্মাণ শুরু করলেও
তা সমাপ্ত করেন সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ। এছাড়াও তিনি শ্বশুর কুতুবউদ্দিন আইবেক কর্তৃক নির্মিত দিল্লির ‘কুয়াত
উল-ইসলাম মসজিদ’ এবং আজমীরের ‘আড়াইদিন-কা-ঝোপড়া’ মসজিদ এর সংস্কার সাধন করেন। ইলতুৎমিশ ভারতীয়
উপমহাদেশে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় কবেন। তিনি ৪০ জন তুর্কি ক্রীতদাসের সমন্বয়ে ‘বন্দেগান-ই-
চেহেলগান’ নামক চল্লিশ চক্রের শাসকগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক দাস বংশের প্রতিষ্ঠা করলেও
নানা বিদ্রোহ ও প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করে একে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন সুলতান শাসমুদ্দিন ইলতুৎমিশ।
তাই ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ যথার্থই বলেছেন যে, ইলতুৎমিশ ছিলেন নিঃসন্দেহে দাস বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।
সারসংক্ষেপ :
সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ ছিলেন অনুপম চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী। মুঈজি-কুতুবী আমিরদের ষড়যন্ত্র,
তাজউদ্দিন ইয়ালদুজের বিদ্রোহ এবং গিয়াসউদ্দিনের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রতিহত করে এবং মোঙ্গল আক্রমণের সম্ভাব্যতা
থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে কৌশলে রক্ষা করে তিনি দিল্লি সালতানাতকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন।
সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের মার্জিত কূটনীতি, সাহিত্যের প্রতি উন্নত রুচিবোধ, দানশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রভৃতি
ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যথার্থই তাঁকে দাস বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। ইলতুৎমিশ ছিলেন−
ক. ইলবারী তুর্কি খ. ইলবারী তুর্কি গ. পাটান তুর্কি ঘ. দাস গোষ্ঠীর
২। ইলতুৎমিশ বাগদাদের খলিফার নিকট থেকে সুলতান-উল-আজম খেতাব পান−
ক. ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে খ. ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে গ. ১২২১ খ্রিস্টাব্দে ঘ. ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে
২। ইলতুৎমিশের আমলের আমিরগণকে বলা হতো−
ক. মুইজ্জী আমির খ. শামসী আমির গ. কুত্বী আমির ঘ. হিন্দুস্তানী আমির
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র