মূখ্য শব্দ আগরতলা মামলা, গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ
বাঙালি জাতির জীবনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূরীকরণে তথা
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী
হলেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এর ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে না দিয়ে বিভিন্ন কূটকৌশল
অনুসরণ করেন। ফলে বাঙালি জাতি স্বায়ত্বশাসন থেকে ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতার দিকে ঝুকে পড়ে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের দীর্ঘদিনের লাঞ্চনা-বঞ্চনা, নির্যাতন নিপীড়ণের থেকে মুক্তির মহামাধ্যম হিসেবে গ্রহণ
করে। কেবল তাই নয়, তাদের আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক, দাবি আদায়ের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
ডাকে সাড়া দিয়ে একটি স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধের ময়দানে হাজির হয়। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ৯ মাস
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেখা দেয় সেই বহু আকাক্সিক্ষত মহামুক্তি। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় একটি স্বাধীন
দেশ, বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের চেতনার ইতিহাস রচনার বীজ বপন হয় সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।
যেখানে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছিল রক্তের বিনিময়ে হলেও তারা তাদের দাবি আদায় থেকে পিছপা হবে না। বাঙালি
জাতি তাদের আন্দোলন সংগ্রামের মূলমন্ত্র খুঁজে পায় ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফার ভিত্তিতে। আবার ছাত্ররাও
সুনির্দিষ্ট এগারো দফার ভিত্তিতে আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকে। আইয়ূব খান সরকার আগরতলা মামলার মাধ্যমে পূর্ব
পাকিস্তানকে নেতৃত্ব শূণ্য করার অপচেষ্টা চালালে তা বাঙালিদেরকে বারূদের মত বিস্ফোরিত করে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন
করতে চরমভাবে উত্তেজিত করে। বাঙালিরা বুঝতে পেরেছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার যেকোন মূল্যেই
হোক দমন করতে চাচ্ছে এবং তা বাস্তবায়িত হলে বাঙালিদেরকে আরো কিছুদিন শাসনের নামে শোষণ করা যাবে। ফলে
বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামির মুক্তির দাবিতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে আইয়ূব খান সরকারের পতন
ঘটায় এবং বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামী মুক্তি পায়। এভাবে বাঙালির অনুপ্রেরণা এবং সাহস দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনকে ঘিরে তারা নতুন দিনের সোনালী সূর্যের আশায় দিন গুনতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানে জনগণ এতই
জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী দল পাকিস্তান পিপল্স পার্টিকে তারা নির্বাচনে সম্পূর্ণ
প্রত্যাখ্যান করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এর বিশাল বিজয় এবং পাকিস্তান পিপল্স
পার্টির ভরাডুবিতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ভীষণভাবে শঙ্কিত হয়। এজন্য ক্ষমতা হস্তান্তর নানা প্রতারনার আশ্রয় নেয়। বাঙালি
জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেন্দ্রিয় সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ
আন্দোলনের ডাক দেন।
৭ মার্চের ভাষণ
১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হলেও তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে গড়িমসি করায় অসহযোগ
আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ২ ও ৩ মার্চে সারা দেশে হরতাল পালিত হয় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক
বিশাল জনসভায় ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। যা ছিল বাঙালি জাতির জন্য দিকনির্দেশনা মূলক একটি ভাষণ।
এই ভাষণে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করার
আহবান জানান। তিনি অকুণ্ঠচিত্তে ঘোষণা করেন- .
....ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো।
তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রæর মোকাবেলা করতে হবে।
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
এই ভাষণ বাঙালি জাতির মনে চরমভাবে আশার সঞ্চারিত করে। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ৮ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের
অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, যানবাহন, শিল্প কারখানা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা
বেগতিক দেখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার কথা বলে
কালক্ষেপণ করার বন্দোবস্ত করেন। যাতে করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রয়োজনীয় রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্র পূর্ব পাকিস্তানে
আনা যায়। তবে অন্তরে যাই থাক প্রকাশ্যে ইয়াহিয়া এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতাদের সাথে
আলোচনায় বসেন ১৬ মার্চ ।
২৫ মার্চের গণহত্যা
আলোচনা কালেই ২৩ মার্চ ‘পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে’ পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়ানো
হয়। রাগে-ক্ষোভে ২৫ মার্চ কোন ঘোষণা না দিয়েই ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। তার নির্দেশেই বাঙালির আন্দোলন
চিরতরে দমন করতে ঐদিন রাতেই ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এই কাপুরুষোচিত অতর্কিত
হামলাকে তারা নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এই অপারেশনের দায়িত্বে এবং পরিকল্পনায় ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের
নবনিযুক্ত গভর্ণর টিক্কা খান এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। ২৫ মার্চ মধ্যরাতেই ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার
খবরাখবর পেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই সংবাদ দ্রæত পৌঁছে যায়
নেতৃবৃন্দের কাছে। এরপর ২৭ মার্চ তারিখে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালিন মেজর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি শেখ
মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন।
মুজিবনগর সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ
২৬ মার্চ থেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে থাকে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ। কিন্তু ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ পরিচালনা
করতে আরেকটু সময় লেগে যায় অর্থাৎ ১৫ দিন পর ১০ এপ্রিল তারিখে অস্থায়ী মুজিব নগর সরকার গঠন করা হয়। এতে
শেখ মুজিবুর রহমানকে নবগঠিত সরকারের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়া হয় । তবে অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়
সৈয়দ নজরুল ইসলামকে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান তাজউদ্দিন আহমেদ। এই সরকারের সর্বমোট সদস্য ছিল ৬
জন।
ক্রমিক নং নাম পদবী
১. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি
২. সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি
৩. তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী
৪. খন্দকার মোশতাক আহমদ পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী
৫. ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী
৬. এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী
উপদেষ্টা পরিষদ গঠন:
রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হলে দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় অন্যান্য
দলের নেতাকর্মীরা নবগঠিত এই সরকারের প্রতি সমর্থন জানায়। বিশেষ করে ন্যাপ নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান
ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মণি সিংহ এবং কংগ্রেস নেতা মনোরঞ্জন ধর
প্রমুখ। তাদের সাথে আওয়ামী লীগের আরো পাঁচজন নেতার সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। তারা
মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
বাহিনী গঠন:
অস্থায়ী সরকার মুক্তিযুদ্ধকে আরো গতিশীল এবং সুশৃঙ্খল উপায়ে পরিচালনা করার জন্য এ দেশের বিভিন্ন বাহিনীতে
চাকুরিরত সেনাদের সমন্বয়ে ‘নিয়মিত বাহিনী’ এবং সাধারণ জনতার সমন্বয়ে ‘অনিয়মিত বাহিনী বা গণবাহিনী’ নামক
প্রধান দুটি বাহিনী গঠন করা হয়। তবে সার্বিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের এসব বাহিনী ‘মুক্তি বাহিনী’ নামেই সমধিক পরিচিত
ছিল। কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানীকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করা হয়। নিয়মিত বাহিনীর অধীনে আরো কিছু উপ বাহিনী
গঠিত হয়। যথাক. সেনা ব্যাটেলিয়নঃ এই বাহিনীটি গঠিত হয় তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তার রাইফেল্স বা ইপিআর এর বাঙালি সদস্যদের
সমন্বয়ে। এই বাহিনীকে পরে তিনটি আলাদা ব্রিগেডে বা ফোর্সে বিভক্ত করা হয়। ব্রিগেড প্রধানগণ হলেন১. এস ফোর্স- মেজর শফিউল্লাহ
২. জেড ফোর্স- মেজর জিয়াউর রহমান
৩. কে ফোর্স- মেজর খালেদ মোশাররফ
খ. সেক্টর ট্রুপসঃ এই বাহিনী গঠিত হয় ইপিআর, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যদের নিয়ে। সারাদেশকে মোট
১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে এই বাহিনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অসীম অবদান রাখা আরেকটি দল ছিল অনিয়মিত বাহিনী। দেশের আপামর জনতা কৃষক দিনমজুর থেকে শুরু
করে সর্বস্তরের মানুষ এই বাহিনীর অংশ ছিল বলে এরা গণবাহিনী নামে সমধিক পরিচিতি পায়। এদেরকে সামরিক
প্রশিক্ষণ দেবার পর যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠানো হত। তারা বেশিরভাগ গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করত। আবার নিয়মিত বাহিনীকে
খবরাখবর, খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থাসহ নানাবিদ কাজে সহযোগিতা করত এই বাহিনী। উল্লেখ্য যে, নিয়মিত এবং
অনিয়মিত বাহিনী ছাড়াও যুদ্ধের সময় আরো কিছু বাহিনী বিভিন্ন অঞ্চলে গঠিত হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্স বা বি. এল. এফ এটিকে বলা হয় রাজনৈতিক সশস্ত্র বাহিনী। কেননা ছাত্র নেতা শেখ ফজলুল
হক মণি, সিরাজুল ইসলাম খান প্রমুখের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা, কর্মী এবং আরো কিছু শিক্ষিত যুবকদের নিয়ে এই
বাহিনী গঠিত হয়েছিল। এরা পরবর্তীতে ‘মুজিব বাহিনী’ নামেও সমধিক পরিচিতি লাভ করে।
টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনীঃ এটির প্রধান ছিলেন কাদের সিদ্দিকী। পরে যাকে ‘বঙ্গবীর’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই
বাহিনী গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করত।
ময়মনসিংহের ভালুকার আফসার বাহিনীঃ এই বাহিনীটিও গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বৃহত্তর
ময়মনসিংহ এলাকায় পর্যদুস্ত করে রেখেছিল।
সেক্টরে বিভক্তকরণ:
যুদ্ধ ব্যাপকভাবে পরিচালনা করার জন্য সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানকে সর্বমোট ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। নি¤েœ সেক্টর
সমূহের অধীনস্ত এলাকা এবং সময়কালসহ কমান্ডারদের একটি তালিকা দেওয়া হলো-
সেক্টর
নং
কমান্ডার দায়িত্ব পালনের সময়কাল অধীনস্থ এলাকাসমূহ
১. ক. মেজর জিয়াউর রহমান এপ্রিল - জুন সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম
খ. মেজর মোহাম্মদ রফিক জুন- ডিসেম্বর (ফেনী নদী পর্যন্ত)
২. ক. মেজর খালেদ মোশররফ এপ্রিল- সেপ্টেম্বর ঢাকা, ফরিদপুরের কিছু অংশ, নোয়াখালী,
খ. মেজর এ টি এম হায়দার সেপ্টেম্বর- ডিসেম্বর কুমিল্লার আখাউড়া হতে ভৈরব রেললাইন
৩. ক. মেজর এ কে এম শফিউল্লাহ এপ্রিল- সেপ্টেম্বর আখাউড়া, ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব
খ. মেজর নুরুজ্জামান সেপ্টেম্বর- ডিসেম্বর দিকের কুমিল্লা জেলা, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ
৪. মেজর সি আর দত্ত এপ্রিল- ডিসেম্বর বর্তমান সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, সিলেটডাউকি রোড পর্যন্ত
৫. মেজর মীর শওকত আলী এপ্রিল- ডিসেম্বর সিলেট জেলার পশ্চিমাঞ্চল, ডাউকি রোড
থেকে ময়মনসিংহ জেলা পর্যন্ত
৬. উইং কমান্ডার এম বাশার এপ্রিল- ডিসেম্বর বর্তমান রংপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা
৭. ক. মেজর নাজমুল হক এপ্রিল-আগস্ট বর্তমান দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা,
সেক্টর
নং
কমান্ডার দায়িত্ব পালনের সময়কাল অধীনস্থ এলাকাসমূহ
খ. মেজর কাজী নুরুজ্জামান আগস্ট- ডিসেম্বর বগুরা জেলা
৮. ক. মেজর আবু উসমান চৌধুরী এপ্রিল-আগস্ট বর্তমান কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরের
খ. মেজর এম মঞ্জুর আগস্ট- ডিসেম্বর অধিকাংশ এবং খুলনার উত্তরাঞ্চল
৯. ক. মেজর এম এ জলিল এপ্রিল-ডিসে¤¦রের কয়দিন বর্তমান খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল,
খ. মেজর জয়নাল আবেদিন ডিসেম্বরের শেষ কয়দিন বরিশাল এবং পটুয়াখালী জেলা
১০. সংশ্লিষ্ট এলাকার কমান্ডারের অধীনে
পরিচালিত
#NAME?
চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর এলাকা
১১. ক. মেজর আবু তাহের এপ্রিল-নভেম্বর বর্তমান ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইল জেলা
খ. এম হামিদুল্লাহ নভেম্বর-ডিসেম্বর
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী গঠন এবং চূড়ান্ত বিজয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ হিসেবে ভারতের ভূমিকা অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য ছিল। ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ-ভারত
যৌথ বাহিনী গঠিত হলে যুদ্ধের মোড় দ্রæত পরিবর্তন হতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী ৩ ডিসেম্বর ভারত আক্রমণ করার
ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কাড়ার অপচেষ্টা চালায়। এদেশীয় মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীকে যৌথ কমান্ডের
অধীনে আনা হয়। ৬ ডিসেম্বর তারিখে ভারত বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
যৌথ বাহিনীর সরাসরি আক্রমণে বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে যশোর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিকট থেকে মুক্ত
করা হয়। এরপর একে একে সাতক্ষীরা, টঙ্গী, জামালপুর, সিলেট জেলা মুক্ত হতে থাকে। ময়নামতি সেনানিবাস অধিকারে
এনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী শহর ঢাকা অবরোধের চেষ্টা চালানো হয়। ভারতের স্বীকৃতির পরই অস্থায়ী সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বেতার কেন্দ্র থেকে দেশের অভ্যন্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা
বজায় রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করেন। ৯ ডিসেম্বরের মধ্যেই মাগুরা, ঝিনাইদাহ এবং নড়াইল যৌথ বাহিনীর
অধিকারে আসে। ঢাকা আক্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি স্বরূপ ১০ ডিসেম্বর সকল প্রকার বিমান হামলা বন্ধ রেখে বিদেশি
নাগরিকদেরকে ঢাকা ত্যাগ করার নির্দেশনা জারি করা হয়। ঢাকায় আক্রমণ চালানোর মুল পরিকল্পনা করা হয় ভৈরব দখল
করার পর এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এখান থেকেই ঢাকায় আক্রমণ চালানো হবে। ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া ,
ময়মনসিংহ এবং টাঙ্গাইল জেলা হানাদার মুক্ত হয়।
বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশীয় মিত্র আল
বদর, আল শামস প্রভৃতি বাহিনীর সহযোগিতায় আরেক দফা গণহত্যা
চালায় । যেখানে বাঙালিদের মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা চালানো হয় এবং
হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর
তারিখে তারা ব্যাপকভাবে শিক্ষিত শ্রেণি তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বনামধন্য
অধ্যাপকদের হত্যা করে। কিন্তু ঐদিনই বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী
ঢাকার খুব নিকটে পৌঁছে গেলে হানাদার বাহিনী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর অধিনায়ক লেফট্যান্যান্ট জেনারেল
নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ রেসকোর্স ময়দানে তথা
বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ বাহিনীর নিকট নিঃশর্ত আত্মসমর্থন করে। ফলে লাখো শহীদের রক্ত, হাজারো মা
বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিশ্বের বুকে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
শিক্ষার্থীর কাজ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি,ঘটনা ও ফলাফল লিখুন।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পনের দৃশ্য
সারসংক্ষেপ :
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার
বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালালে অদম্য বাঙালি জাতি গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের
স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৫ মার্চ গণহত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে যুদ্ধের সূচনা করেছিল ১৯৭১
সালের ১৬ ডিসেম্বর ২৭৬ দিন পর ৯৩ হাজার সৈন্যসহ রেসকোর্স ময়দানে তাদের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে এর
পরিসমাপ্তি ঘটে। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের
জন্ম দেয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৯
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। মুক্তিযুদ্ধের স্থিতিকাল কতদিন ছিল?
ক. ৯০দিন খ. ২৭৬ দিন গ. ২৬৫ দিন ঘ. ২৩৫ দিন
২। মুক্তিযুদ্ধে কয়টি সেক্টর ছিল?
ক. ৮ খ. ১৯ গ. ১১ ঘ. ১৫
৩। কবে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়?
ক. ১৯৭১ সালের ২০এপ্রিল খ. ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল
গ. ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ঘ. ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল
সৃজনশীল প্রশ্ন:
‘ক’ সদ্য স্বাধীন একটি মুসলিম দেশ। দেশটির মধ্যে দুটি প্রধান জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলমান। একটি পর্যায়ে
শাসকগোষ্ঠী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হল। নির্বাচনে বাঙালি
জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত এবং সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ
করা সত্তে¡ও শাসকশ্রেণী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। এই যুদ্ধে শাসক শ্রেণী
চরমভাবে পরাজিত হয় এবং বাংলাদেশ নামক নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ক. মুক্তিযুদ্ধ কী ? ১
খ. মুক্তিযুদ্ধে মোট কতটি সেক্টর ছিল লিখুন? ২
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি লিখুন। ৩
ঘ উদ্দীপকের আলোকে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব বর্ণনা করুন। ৪
উত্তরমালা:
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.১ : ১. ক ২. গ ৩. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.২ : ১. ক ২. ক ৩. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.৩ : ১. খ ২. গ ৩. ঘ ৪. ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.৪ : ১. গ ২. ঘ ৩. ক ৪. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.৫ : ১. ক ২. খ ৩. ক ৪. খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.৬ : ১. ক ২. ক ৩. ক ৪. গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.৭ : ১. গ ২. ক ৩. ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.৮ : ১. ঘ ২. গ ৩. গ ৪. ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৯.৯ : ১. গ ২. গ ৩. ঘ
ওপেন স্কুল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র
ইউনিট ৯ পৃষ্ঠা ২৯০
মানবন্টন
এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (দ্বিতীয় পত্র)
নম্বর বন্টন সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের সাধারণ কাঠামো
পূর্ণমান-১০০
সৃজনশীল (কাঠামোবদ্ধ) প্রশ্ন- ৬০ নম্বর ৬দ্ধ১০ = ৬০
সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য ৬০ নম্বর এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য ৪০ নম্বর।
প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের নম্বর ১০ এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের নম্বর ১।
এতে প্রতিটি প্রশ্নের শুরুতে একটি দৃশ্যকল্প বা উদ্দীপক (ঝঃবস) থাকবে যা হতে পারে একটি সাধারণ সূচনা বক্তব্য, চার্ট,
সমীকরণ, চিত্র, ম্যাপ ইত্যাদি। দৃশ্যকল্প বা উদ্দীপকের শেষে ৪টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের এ ৪টি অংশে মোট ১০
নম্বর (১+২+৩+৪=১০) থাকবে । প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের ধরন হবে নি¤œরূপ:
প্রশ্নের ধরন নম্বর
ক. জ্ঞান স্তর- ১
খ. অনুধাবন স্তর- ২
গ. প্রয়োগ দক্ষতা স্তর ৩
ঘ. উচ্চতর চিন্তন দক্ষতা স্তর ৪
মোট=১০
(খ) বহুনির্বাচনী প্রশ্ন- ৪০ নম্বর
মোট ৪০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্ন ১ নম্বর। ৪০দ্ধ১ = ৪০
সর্বমোট = ১০০
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র