সুলতান রাজিয়ার সিংহাসন লাভের প্রেক্ষাপট সুলতান রাজিয়া কর্তৃক বিদ্রোহ দমন সুলতান রাজিয়ার চরিত্র ও কৃতিত্ব

মূখ্য শব্দ তাজিক আফগান, আমির-ই-আখুর, কারামিতা, আমির-ই-হাজিব ও কাইথল
[
সুলতান রাজিয়ার সিংহাসন লাভের প্রেক্ষাপট
১২২৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার বিদ্রোহী শাসক সুলতান গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজির বিদ্রোহ দমন করে সুলতান
শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের জ্যেষ্ঠপুত্র যুবরাজ নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। কিন্তু
দুর্ভাগ্যবশত ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেন। দূরদর্শী সুলতান ইলতুৎমিশ তাঁর সুযোগ্য
কন্যা, বুদ্ধিমতী ও অনন্য প্রতিভার অধিকারী রাজিয়াকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে
সুলতান ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তাঁর মনোনয়ন অস্বীকার করে কতিপয় অভিজাত সুলতান পুত্র রুকনউদ্দিন ফিরোজকে
সিংহাসনে আরোহণে সহায়তা প্রদান করেন। কিন্তু রুকনউদ্দিন ফিরোজ ছিলেন অদক্ষ। রুকনউদ্দিনের দুঃশাসনে সাম্রাজ্যের
চতুর্দিকে চরম অরাজক পরিস্থিতি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় রানীমাতা শাহ তুরকান শাসন ক্ষমতা হস্তগত
করেন। তথাপিও রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির প্রেক্ষাপটে দিল্লির অভিজাত শ্রেণি, আমির
উমারাহগণ রুকনউদ্দিন ফিরোজ এবং রানীমাতা শাহ তুরকানকে দিল্লির উপকণ্ঠে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত করে
কারাগারে বন্দি করেন। এই ঘটনার পর আমির উমারাহগণ রাজিয়াকে দিল্লির সিংহাসনে আমন্ত্রণ জানান।
বিদ্রোহ দমন:
সিংহাসনে আরোহণ করে সুলতান রাজিয়া একটি সুশৃঙ্খল শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনে আত্মনিয়োগ করেন। সুদূর বাংলা প্রদেশ
এবং উচের শাসকগণও সুলতান রাজিয়ার আনুগত্য স্বীকার করেন। ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ বলেন, “ল²ণাবতী
হতে দেবল এবং ডামরিলা পর্যন্ত দেশের সকল মালিক ও আমিরগণ তাঁর আনুগত্য ও প্রভুত্ব স্বীকার করে নেন।” রাজিয়ার
পূর্ববর্তী শাসকদের সময় প্রশাসনের সকল পদে তুর্কি আমির-উমারাহদের প্রাধান্য ছিল। কিন্তু প্রশাসন থেকে ক্রমান্বয়ে তুর্কি
প্রভাব হ্রাস করার অভিপ্রায়ে সুলতান রাজিয়া তাজিক আফগানদের অন্তর্ভুক্ত হাবসী অনুচর জামালউদ্দিন ইয়াকুতকে ১২৩৮
খ্রিস্টাব্দে ‘আমির-ই-আখুর’ পদে নিয়োগ প্রদান করেন। তুর্কি আমিরগণ এই নিয়োগে অসন্তুষ্ট হয়ে সুলতান রাজিয়ার
বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী জুনাইদিও তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। কারামিতা ও
মুলাহিদ স¤প্রদায় নূরউদ্দিন নামক জনৈক তুর্কির নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে সুলতান রাজিয়া এই বিদ্রোহ কঠোর হস্তে
দমন করেন। আমির-ই-হাজিব আইতিগিনের নেতৃত্বে তুর্কি আমিরগণও ক্রমাগত বিরোধিতা করতে থাকে। ১২৪০
খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে রাজিয়া পাঞ্জাবের বিদ্রোহী শাসনকর্তা কবির খানকে দমন করেন। ভাতিন্দার শাসনকর্তা ইখতিয়ার
উদ্দিন আলতুনিয়া সুলতান রাজিয়ার বিরুদ্ধে প্রবল বিদ্রোহের সূত্রপাত করেন। সুলতান রাজিয়া এক বিশাল সেনাবাহিনী
নিয়ে আলতুনিয়ায় বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। উভয়পক্ষের মধ্যে এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে জামাল উদ্দিন ইয়াকুত
নিহত হন এবং সুলতান রাজিয়া আলতুনিয়ার হাতে বন্দী হন। অন্যদিকে সুলতান রাজিয়ার বন্দিত্ব ও অনুপস্থিতির
সুযোগে দিল্লির আভিজাত আমিরগণ সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের তৃতীয় পুত্র মুইজউদ্দিন বাহরামকে সুলতান হিসেবে
ঘোষণা করেন। সুলতান রাজিয়া ক‚টকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আলতুনিয়াকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন এবং বন্দিদশা থেকে
সহজে মুক্তি লাভ করেন। এরপর সিংহাসন পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে আলতুনিয়া ও রাজিয়া উভয়ে বাহরামের বিরুদ্ধে এক
বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন। কিন্তু দিল্লির সন্নিকটে মুইজউদ্দিন বাহরামের বাহিনীর হাতে এই সম্মিলিত বাহিনী
পরাজিত হয়। ১২৪০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে কাইথল নামক স্থানে জনৈক হিন্দু আততায়ীর হাতে সুলতান রাজিয়া ও
তাঁর স্বামী ইখতিয়ারউদ্দিন আলতুনিয়া নিহত হন।
সুলতান রাজিয়ার চরিত্র ও কৃতিত্ব:
সুলতান রাজিয়া ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, বুদ্ধিমতী এবং সুদক্ষ যোদ্ধা। তিনি ছিলেন দিল্লি সালতানাতে আরোহণকারী প্রথম
এবং একমাত্র নারী শাসক। তিনি সুলতানের পোশাক পরিধান করে প্রকাশ্য রাজদরবারে আবির্ভূত হতেন। যুদ্ধের মাঠে
সেনাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। যুদ্ধবিদ্যা ও অশ্বারোহণেও সুলতান রাজিয়া ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সাময়িকভাবে হলেও
তিনি দিল্লির আমির-উমারাহদের উপর স্বীয় প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। সুলতান রাজিয়া নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন
করেন এবং মুদ্রায় নিজেকে ‘উমদাদ-উল-নিসওয়ান’ বলে অভিহিত করেন। সুলতান রাজিয়া ছিলেন সাহিত্যিক, পÐিত ও
বিদ্যান ব্যক্তির একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। ঐতিহাসিক আবুল কাশিম ফিরিস্তার বর্ণনানুযায়ী সুলতান রাজিয়া বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও
চমৎকার ভঙ্গিসহকারে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করতে পারতেন। ঐতিহাসিক মিনহাজ-উস্-সিরাজ বলেন, তিনি ছিলেন
একজন শ্রেষ্ঠ সুলতানÑবুদ্ধিমতী, ন্যায়বতী মহানুভব, বিদ্যোৎসাহী, সুবিচারক, প্রজাগণের রক্ষাকারী সামরিক প্রতিভাসম্পন্ন
এবং রাজাদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার গুণাবলি ও যোগ্যতার অধিকারী। তাঁর চরিত্রে বিভিন্ন গুণাবলির অপূর্ব সমাবেশ
ঘটেছিল। প্রশাসনে তুর্কিদের প্রাধান্য ক্ষুন্ন করার মানসে সুলতান রাজিয়া বিভিন্ন উচ্চ পদে তাজিক আফগানদের নিয়োগ
করেন। তিনি কারামিতা ও মুলাহিদ স¤প্রদায়ের বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করেন। পাঞ্জাবের শাসকনকর্তা কবির খানকেও
সুলতান রাজিয়া দমন করতে সক্ষম হন।।
সারসংক্ষেপ :
দিল্লি সালতানাতের ইতিহাসে যে সকল শাসক সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে এবং পরে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন
হয়েছেন সুলতান রাজিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। পিতা ইলতুৎমিশ কর্তৃক সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত হওয়া
সত্তে¡ও প্রভাবশালী আমির উমারাহদের দৌরাত্ম্যের কারণে তিনি সিংহাসনে উপবেশনে করতে পারেননি। পরবর্তীতে
সিংহাসনে আরোহণের পর সুলতান রাজিয়া বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করে রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু তিনি
ভাতিন্দার শাসক ইখতিয়ার উদ্দিন আলতুনিয়ার নিকট পরাজিত ও বন্দি হন। পরবর্তীতে উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হয়ে মুঈজ উদ্দিন বাহরামের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। শেষ পর্যন্ত রাজিয়া এবং তাঁর স্বামী আলতুনিয়া আততায়ীর হাতে নিহত হন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। সুলতান রাজিয়া ছিলেন-
ক. কুতুবউদ্দিনে কন্যা খ. ইলতুৎমিশের কন্যা গ. রুকনউদ্দিনে কন্যা ঘ. বাহরামের কন্যা
২। সুলতান রাজিয়ার স্বামীর নাম-
ক. ইখতিয়ার উদ্দিন খ. আলতুনিয়া গ. ইখতিয়ার উদ্দিন মাহমুদ ঘ. ইখতিয়ার উদ্দিন বাহরাম
৩। রাজিয়ার শাসনামলে পাঞ্জাবের শাসনকর্তা ছিলেন-
ক. আমির খান খ. কবির খান গ. আমিন খান ঘ. মামুন খান
“মধ্যযুগে নারীর ভ‚মিকা” শীর্ষক আলোচনা সভায সকল বক্তা দিল্লি সালতানাতের একজন সুলতান সম্পর্কে আলোচনা
করেন। মধ্যযুগে তিনিই একমাত্র নারী যিনি পিতার মনোনয়নক্রমে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি অন্যান্য পুরুষ
শাসকের ন্যায় দক্ষতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
১. আলতুনিয়া কে ছিলেন? ১
২. ‘উমদাদ-উল-নিসওয়ান’ কার উপাধি ছিল? ২
৩. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের বিদ্রোহ দমনে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরুন। ৩
৪. সুলতান রাজিয়া মধ্যযুগীয় ভারতীয় উপমহাদেশে একজন বিরল প্রতিভার নারী শাসক হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]