সূরা আল-বাকারা- নামকরণ সূরা আল-বাকারার পরিচয় ও আলোচ্য বিষয়

আল-কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘ সূরা হচ্ছে সূরা আল-বাকারা। এ সূরাটি মহানবী (স)-এর হিজরতের পর মদীনায় অবতীর্ণ
হয়। এ সূরার আয়াত সংখ্যা ২৮৬ এবং এতে ৪০টি রুকু রয়েছে। সূরা আল-বাকারায় ইসলামের অধিকাংশ মূলনীতি বর্ণনা
করা হয়েছে। এ সূরার মধ্যে সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ-তালাক, হালাল-হারাম, ব্যবসায়-বাণিজ্য, জিহাদ
ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। হযরত আদম আ. ও হাওয়ার আ. সৃষ্টি কাহিনী, তাঁদের
জান্নাতে অবস্থান, ফেরেশতা কর্তৃক তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, শয়তানের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ ও জান্নাত থেকে
পৃথিবীতে অবতরণ ও তাঁদের তাওবা কবুল করার কথা ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। মুনাফিকদের পরিচয়,
বৈশিষ্ট্য এবং ইয়াহুদিদের প্রতি আল্লাহর বিভিন্ন অনুগ্রহ এবং তাদের নাফরমানীর কথাও বর্ণিত হয়েছে। মুসলমানদের
কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে মাসজিদুল হারাম নির্বাচনের ঘটনাও এ সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে। সবশেষে দুনিয়া ও
আখিরাতে পরম কল্যাণ, সাফল্য অর্জনের নিমিত্তে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের একটি হৃদয়গ্রাহী দু‘আও শিক্ষা দিয়েছেন এ সূরায়।সূরা, বনী ইসরাঈল, গো-বৎস, অলৌকিক, কুরবানি, ইয়াহুদী।
১.১. কুরআনের সূরার নামকরণের ভিত্তি
আল-কুরআন মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয়। এটা আল্লাহ তা‘আলার বাণী। আল্লাহর মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দাহ
ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর উপর তা নাযিল হয়েছে। কুরআনের সূরার নামকরণ এবং নাযিলের কারণ হিসেবে
বিশেষ কোন উপলক্ষ থাকলেও তা সেই বিশেষ উপলক্ষ বা কারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর তাৎপর্য ব্যাপক।
মানব রচিত সাহিত্যকর্মের নামকরণ হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র, বিষয়বস্তু বা অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের ভিত্তিতে, কিন্তু কুরআনের সূরার
নামকরণ করা হয় এক সূরাকে অন্য সূরা থেকে পার্থক্য করার জন্য। এটা একটি বিশেষ প্রতীকী নাম। কেননা কুরআনের
প্রত্যেকটি সূরায়ই এত বেশি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় চরিত্র, বিষয়বস্তু কিংবা অন্তর্নিহিত ভাবধারার
দৃষ্টিতে কোন সূরার সর্বব্যাপক শিরোনাম নির্ধারণ করা যায় না। এজন্যই আল্লাহর নির্দেশে শিরোনামের পরিবর্তে প্রতিটি
সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
১.২ সূরা আল-বাকারা নামকরণ
আল-বাকারাহ (البقرة (শব্দের অর্থ গরু বা গাভী। এ সূরার অষ্টম রুকুর ৬৭ নম্বর আয়াত হতে ৭১ নং আয়াত পর্যন্ত
প্রত্যেকটি আয়াতে বাকারা শব্দটির উল্লেখ থাকার কারণে গোটা সূরার নামকরণ করা হয়েছে- ‘আল-বাকারা।
অন্য বর্ণনায় আছে, এ সূরার মধ্যে বনী ইসরাঈল জাতির গো-বৎস পূজার তীব্র প্রতিবাদ এবং হযরত মূসা (আ) কর্তৃক গরু
কুরবানি প্রথা প্রবর্তনের প্রসঙ্গ রয়েছে। তাই এ সূরার নাম রাখা হয়েছে ‘সূরা আল-বাকারাহ'।
গো-বৎস পূজার ঘটনা
হযরত মূসা (আ) তাওরাত কিতাব প্রাপ্তির জন্য ৪০ দিন ত‚র পাহাড়ে অবস্থানকালে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায় সামেরীর
প্ররোচনায় গো-বৎস পূজার মাধ্যমে শিরকে লিপ্ত হয়। হযরত মূসার বড় ভাই হযরত হারুন (আ)-এর নিষেধ অগ্রাহ্য করে
তারা গান-বাজনায় মেতে ওঠে। মিসরীয় পৌত্তলিকদের মত আল্লাহর পরিবর্তে একটি গরুর বাছুরকে নিজেদের প্রভু ও
উপাস্য হিসেবে পূজা করতে থাকে। তুর পাহাড়
গাভী কুরবানির প্রসঙ্গ
বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির ধন-সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য তার ভাতিজা তাকে হত্যা করে শত্রæ
গোত্রের কাছে লাশ ফেলে রাখে। নিহত ব্যক্তির হত্যাকারীর পরিচয় বের করার জন্য লোকেরা হযরত মূসা (আ) কে চাপ
দিতে থাকে। হযরত মূসা (আ) আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে বনী ইসরাঈল জাতির গরুর বাছুর পূজার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ একটি
গরু কুরবানির আদেশ দেন। কিন্তু কুচক্রী ইয়াহুদিরা এ আদেশের প্রতি কটাক্ষ করে গরু সম্পর্কে নানা প্রশ্ন তোলে।
অবশেষে একান্ত অনিচ্ছা সত্তে¡ও আল্লাহর শাস্তির ভয়ে গরু কুরবানি করতে বাধ্য হয়। বিপুল অর্থের বিনিময়ে হযরত মূসা
(আ) বর্ণিত রঙের গরু ক্রয় করে এবং তা জবাই করে। জবাইকৃত গরুর অংশ বিশেষ দ্বারা হযরত মূসা (আ)-এর কথামত
মৃত ব্যক্তির দেহে আঘাত করায় অলৌকিকভাবে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে ঘাতকের পরিচয় জানিয়ে দিয়ে পুনরায় মৃত্যুবরণ
করে। এই গরু জবাইয়ের ঘটনা এ সূরায় বর্ণিত হয়েছে।
নামকরণের তাৎপর্য
আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির মধ্যে মানব জাতি হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। মানব জাতি হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধি বা খলিফা। মহান
আল্লাহ ব্যতীত তার মাথা আর কারো কাছে নত হবে না। নত হবে না কোন জীব-জন্তু বা সৃষ্ট জীবের কাছে। আল্লাহ
ছাড়া কোন কল্পিত বস্তুর পূজা মানুষের জন্য সমীচীন নয়। এ সূরায় গরু পূজা ও কুরবানির সেই ঘটনার প্রেক্ষিত আলোচিত
হয়েছে। তাই এ সূরার এ রকম নামকরণ সার্থক হয়েছে। অবশ্য বিষয়বস্তুর দিক থেকে আলোচনা করলে এ সূরাকে অন্য
আরো বহু নামে অভিহিত করা যেত। কুরআনের সূরাগুলোর নাম যেহেতু শিরোনাম নয়, কাজেই নামের মধ্যে আলোচ্য বিষয়বস্তু সীমাবদ্ধ নয়।
নাযিল হওয়ার সময়কাল
এ সূরার অধিকাংশ আয়াত হিজরতের পর মদীনায় নাযিল হয়েছে। এজন্য এ সূরাকে মাদানি সূরা বলা হয়। এ সূরা
কুরআনের দীর্ঘতম সূরা। এতে ৪০টি রুকু ও ২৮৬টি আয়াত রয়েছে।
এ সূরার ফযিলত
হাদিসের কিতাবসমূহে এ সূরার ফযিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বায়হাকীর শু‘আবুল ঈমান নামক হাদিস
গ্রন্থে ইমাম বায়হাকী (র) হযরত সালামা (রা)-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এতে বলা হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি সূরা
আল-বাকারা পড়বে জান্নাতে তাঁর মাথায় তাজ পরানো হবে।” ইবনে হিব্বান হযরত সাহল ইবনে সাদের একটি হাদিস
বর্ণনা করেছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রত্যেক বস্তুরই একটি উচ্চতা আছে। আল-কুরআনের উচ্চতা হল
সূরাতুলবাকারা। যে ব্যক্তি নিজ ঘরে সূরা আল-বাকারা তিলাওয়াত করবে, তিন দিন তার ঘরে শয়তান প্রবেশ করতে
পারবে না। ইমাম আহমাদ (র) হযরত বুরায়দার একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। সে হাদিসে উল্লেখ আছে যে, “তোমরা
সূরা আল-বাকারা শিক্ষা করো। কেননা এটি শিক্ষা করা বরকত, আর শিক্ষা না করা আফসোসের কারণ।”
সারসংক্ষেপ
সূরা আল-বাকারা কুরআনের বৃহত্তম সূরা। এটা মদিনায় হিজরতের পর নাযিল হয়। এ সূরায় ইসলামের অনেক বিধিবিধান-ঘটনা কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এ সূরায় বর্ণিত শিক্ষা-গ্রহণ করে আমরা আমাদের জীবন সাজাতে পারি।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
১। কুরআন মাজিদের সর্ব বৃহৎ সূরা কোনটি ?
(ক) সূরা আল-বাকারা (খ) সূরা ইয়াসীন
(গ) সূরা আস-নিসা (ঘ) সূরা আলে ইমরান
২। বাকারা শব্দের অর্থ কী ?
(ক) ছাগল (খ) বলদ
(গ) গাভী (ঘ) ভেড়া
৩। কোন সূরায় গরু কুরবানির বিষয় আলোচনা করা হয়েছে ?
(ক) সূরা ইয়াসীনে (খ) সূরা আল-বাকারায়
(গ) সূরা আত্-তীনে (ঘ) সূরা আন-নিসায়
৪। সূরা আল-বাকারার ফযিলত হলো -
র. সূরা আল-বাকারা পাঠকারীদের মাথায় জান্নাতে তাজ পরানো হবে
রর. সূরা আল-বাকারা পাঠকারীদের ঘরে শয়তান প্রবেশ করবে না
ররর. সূরা আল-বাকারা পাঠ না করা আফসোসের কারণ
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র (খ) র ও ররর (গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৫ ও ৬নং প্রশ্নের উত্তর দিনরাকিব সাহেব একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি খুব ভোরে অফিসে যান এবং রাতে বাসায় ফিরেন। কুরআন পড়ার প্রতি
তাঁর বেশ আগ্রহ রয়েছে। তিনি জানতে পারেন যে, সূরা আল-বাকারার অনেক মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু কর্মব্যস্ততা
থাকার কারণে তার পক্ষে প্রতিদিন সূরাটি পড়া সম্ভব হয় না। তবে উপকার লাভের আশায় যথাযসম্ভব বেশী পড়ার চেষ্টা
করেন।
৫। রাকিব সাহেবের পক্ষে পুরো সূরাটি এক সাথে পাঠ করার পেছনে কোন বৈশিষ্ঠ্যটি লক্ষণীয় ?
(ক) এটি সর্ববৃহৎ সূরা (খ) এতে সিজদার আয়াত আছে
(গ) এটি একটি ছন্দবদ্ধ সূরা (গ) এটি পড়তে কষ্ঠ হয়
৬। সূরাটি পাঠের মাধ্যমে রাকিব সাহেব জানতে পারবে ইসলামেরর. সুদ সম্পর্কে রর. বালা মসিবত থেকে নিরাপত্তা লাভ ররর. শান্তিময় জীবন-জাপন বিষয়ে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর
(গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্ন
যে কোন বস্তুর পরিচয় লাভের জন্য তার একটি নাম বা পরিচয় থাকতে হয়। যথার্থ নামকরণের মধ্য দিয়েই সমস্ত বিষয়ের
সম্পর্কে পরিচয় লাভ করা যায়। পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরার আলাদা একটি ছোট্ট ও অর্থপূর্ণ নাম রয়েছে। নাম শোনার
সাথে সাথে অভিজ্ঞ আলিমগণ সংশ্লিষ্ট সূরার সম্পর্কে একটি ধারণা লাভ করতে পারেন। তাই নামকরণের বিষয়টি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
ক. বাকারা শব্দের অর্থ কী ? ১
খ. সূরা আল-বাকারা নামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করুন। ২
গ. সূরা আল-বাকারা পাঠের ফযিলত কী ? ৩
ঘ. গো-বৎস পূজার ঘটনাটি সূরা আল-বাকারার আলোকে বিশ্লেষণ করুন। ৪
উত্তরমালা: ১। ক ২। গ ৩। খ ৪। ঘ ৫। ক ৬। ঘ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]