হাদিস বলতে কী বুঝেন ? ১ হাদিস কত প্রকার ও কি কি ? ২

রাসূল, বাণী, সালাত, মহানবী, প্রবৃত্তি, ইজতিহাদ, মিল্লাত।
৬.১ আদর্শ জীবন গঠনে হাদিসের শিক্ষা
হাদিস মুসলিম মিল্লাতের এক অমূল্য সম্পদ। ইসলামি শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস। হাদিসকে বাদ দিয়ে
ইসলামি জীবন ব্যবস্থা কল্পনা করা যায় না। ইসলামের দৃষ্টিতে রাসূলের আদেশ-নিষেধ, তাঁর যাবতীয় কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা
এককথায় তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণী ও কর্মময় জীবন ইসলামি শরী‘আতের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হযরত মুহাম্মাদ (স) প্রেরণের
উদ্দেশেই ছিল, তাঁকে মানুষ সকল কাজে ও ব্যাপারে অনুসরণ করে চলবে, তাঁর বাস্তব জীবনধারাকে অনুসরণ করবে।
আল-কুরআনে বলা হয়েছে-
“আমি রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্যে যে, আল্লাহর অনুমিক্রমে তাঁকে অনুসরণ করা হবে।” (সূরা নিসা-৪ : ৬৪)
রাসূলের আনুগত্য ও অনুসরণ করে চলার জন্য আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন
“হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর।” (সূরা আনফাল-৮ : ২০)
রাসূলের অনুগত্য করা বলতে রাসূলের আদেশ নিষেধ ও অনুসৃত রীতি-নীতি মেনে চলা। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ আলকুরআনে আছে। রাসূলের আদেশ নিষেধ ও তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণী- তাঁর হাদিসে বিদ্যমান রয়েছে।
আমরা জানি, আল-কুরআনে জীবন বিধানের মুলনীতি সংক্ষেপে বলা হয়েছে। আর মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) সেই
হুকুম-আহকামের ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি দেখিয়েছেন যা হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আল্লাহ
তা‘আলা নামায আদায় করা ফরয করে দিয়েছেন, কিন্তু এর পদ্ধতি আল-কুরআনে উল্লেখ নেই।
হযরত জীবরাঈল (আ) মহানবী (স) এর কাছে এসে নামযের ওয়াক্ত ও পদ্ধতি জানিয়ে দিয়েছেন। মহানবী (স) সাহাবা
কিরাম (রা) কে শিখিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন- “তোমরা সালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখ।”
রাসূলের (স) রেখে যাওয়া মহান হাদিস বাদ দিলে ইসলামি শরীআতের ওপর আমল করা সম্ভব হবে না। মহান আল্লাহ
মানুষের ওপর রাসূলের অনুসরণ আবশ্যক করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“রাসূল তোমাদের যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো আর যা নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক।” (সূরা হাশর- ৫৯ : ৭)
রাসূল (স) এর নিঃসৃত বাণী যা আহাদীসুল আহকাম হিসেবে পরিচিত -এরূপ হাদিসের সংখ্যা হচ্ছে ৩০০০। এই
তিনহাজার বিধান হাদিসগ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ আছে। এই বিপুল সংখ্যক বিধান সম্বলিত হাদিস-ই প্রমাণ করে যে হাদিসের গুরুত্ব কতটুকু ?
রাসূল (স) নিজের খেয়ার খুশী মতো কোন কথা বলেন না। তিনি যা বলেন তা তাঁর ওপর ওহী নাযিল হওয়ার পরই
বলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেনِ
“তিনি মনগড়া কথা বলেন না, এ তো ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।” (সূরা নাজম-৫৩ : ৩)
রাসূলের হাদীসও পরোক্ষভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী। আল-কুরআন যেমন সরাসরি ওহী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে;
আল-হাদিস সরাসরি ওহী না হলেও পরোক্ষ ওহী। সুতরাং আল-কুরআনকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, আল-হাদিসকে
তেমনি অস্বীকার করা যায় না। আল-কুরআনের বিধানাবলির ওপর আমল যেমন ফরয, আল-হাদিসের বিধানাবলীর ওপর
আমল করাও জরুরি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মহানবী (স) কে আইন প্রণেতা, ব্যাখ্যাদাতা ও রূপকার হিসেবে প্রেরণ করেছেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) যথাযথভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। ইসলাম
জানতে-বুঝতে ও ইসলামি জীবন ব্যবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে রাসূলের হাদিস বা আদর্শের কোন বিকল্প নাই। মহানবী
হযরত মুহাম্মাদ (স) সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। অন্ধকার সমাজে ন্যায়বিচার ও
ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে সমাজ থেকে দুঃখ-দুর্দশা বিদায় করে দিয়েছেন। সমাজকে সকল প্রকার কলুষমুক্ত রাখার জন্য আইন
বিধান- দিয়েছেন যা মহান হাদিস হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সমাজকে অন্যায়, অবিচার, ও নির্যাতন থেকে মুক্ত রাখার
জন্য রাসূল (স) এর হাদিস জীবনে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন একান্ত অপহার্য। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স) কুরআন মাজিদের
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আয়াতের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেছেন। হাদিস গ্রন্থসমূহের তাফসীর অধ্যায়সমূহই তার প্রমাণ। যে সব
আয়াতের সঠিক অর্থ সাহবায়ে কিরাম (রা) বুঝতে পারতে না তা নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়তেন। রাসূল (স) সে সব
আয়াতের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে সাহাবীদের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দূর করেছেন। যেমন আল্লহ তা‘আলা বলেন
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে কোন প্রকার জুলমের সাথে মিশ্রিত করে নাই”
এ আয়াত যখন নাযিল হলো তখন এটা সাহাবীদের মাঝে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়ায়। তারা এ আয়াতের সঠিক
তাৎপর্য জানার জন্য রাসূল (স) এর নিকট জিজ্ঞেস করেন:
“হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের মাঝে এমন কে আছে যে, তার ঈমানকে জুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি ? (সহীহ বুখারী)
তাঁদের এ প্রশ্ন শুনে রাসূল (স) বুঝতে পারলেন যে, সাহাবী কিরামের নিকট এই আয়াতটি অত্যন্ত দুর্বোধ্য মনে হয়েছে।
তখন তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা যেরূপ ধারণা করেছে, আয়াতের অর্থ তা নয়। এখানে যুলুম অর্থ শিরক।
তোমরা কি শোন নাই, লোকমান তার পুত্রকে বলেছেন- “হে প্রিয় পুত্র ! আল্লাহর সাথে শিরক করিও না, নিশ্চয় শিরক এক
বিরাট যুলুম” (সূরা লোকমান-৩১ : ১৩)
রাসূল (স) এর নিকট আয়াতের প্রকৃত ব্যাখ্যা জানতে পেরে সাহাবীগণ প্রশান্তি লাভ করলেন। এ কারণে আল-কুরআনের
তাত্তি¡ক ব্যাখ্যা জানার জন্য বিশ্ব মুসলিম রাসূলের হাদিসের মুখাপেক্ষী। রাসূলের (স) ব্যাখ্যা ব্যাতীত আল-কুরআনের
সঠিক তাৎপর্য জানার জন্য নির্ভরযোগ্য কোন উপায় সূত্র নেই।
ইসলামী জীবনাদর্শের প্রতি বিশ্বাসীদের জন্য হালাল-হারাম নির্ধারণের দায়িত্ব রাসূলের ওপর অর্পিত হয়েছে। রাসূল (স)
এই কাজ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আঞ্জাম দিয়েছেন। আল-কুরআনে বলা হয়েছে- “তিনি তাদের জন্য পবিত্র জিনিস
সমূহ হালাল করেন, তাদের জন্য অপবিত্র ও নিকৃষ্ট জিনিস হারাম করেন।” (সূরা আরাফ-৭ : ১৫৭)
সারসংক্ষেপ
রাসূলের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ, উপদেশ এবং তাঁর ঘোষিত হালাল হারামের বিধান মেনে চলা সকল মুসলিমের
কর্তব্য। তাঁর এই সকল কাজের বিস্তারিত রেকর্ড হাদিসের মাঝে লিপিবদ্ধ আছে।
প্রতিটি মুসলিমের জীবনে হাদিস অধ্যয়ন, অনুশীলন এবং বাস্তবায়ন অপরিহার্য। হাদিস ব্যতীত ইসলামি শরী‘আতের
ওপর চলা ও অবিচল থাকা সম্ভব নয়। তাছাড়া আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করাও সম্ভব নয়। তাই আদর্শ জীবন-যাপন করতে হলে রাসূলের হাদিস অনুসরণ অপরিহার্য।
বহু নির্বাচনি প্রশ্ন
১. আল-হাদিস ইসলামি শরীআতের
(ক) প্রথম উৎস (খ) দ্বিতীয় উৎস
(গ) সাধারণ উৎস (ঘ) তৃতীয় উৎস
২. “রাসূল (স) এর অনুসরন কর”-এটি কার নির্দেশ ?
(ক) আল্লাহর (খ) জিবরাঈল (আ.) -এর
(গ) সাহাবীদের (রা.) (ঘ) সকল উত্তরই সঠিক
৩. বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে রাসূলের হাদিস সংখ্যা কত ?
(ক) ২০০০ (খ) ৫০০০
(গ) ৩০০০ (ঘ) ৪০০০
৪. “প্রবৃত্তির তাড়নায় তিনি কিছু বলেন না” -এটি কার বাণী ?
(ক) আল্লাহর (খ) মহানবী (স) -এর
(গ) ইমাম আবু হানিফা (রহ) -এর (ঘ) হযরত আবু বকর (রা.) -এর
৫. রাসূল (স) এর হাদিস হলো
(ক) প্রত্যক্ষ ওহী (খ) পরোক্ষ ওহী
(গ) ওহী নয় (ঘ) সকল উত্তরই সঠিক
ইমাম সাহেব জুমার খুতবায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন আমরা মুসলমান। রাসূলের (স.) জীবন চরিতই আমাদের জন্য
সর্বোত্তম আদর্শ। রসূল মুহাম্মদ (স.) ছিলেন বিশ্বমানবতার নিকট সবচেয়ে সমাদৃত। ‘আমাদের উচিত রসূলের জীবনাদর্শ
অনুসরণ করা।
৬। উদ্দীপকে কার আদর্শ অনুসরণ করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ?
(ক) হযরত মুহাম্মাদ (স) (খ) হযরত আদম (আ)
(গ) হযরত মুসা (আ) (ঘ) হযরত ঈসা (আ)
৭। মহানবীর জীবনাদর্শ গ্রহণ করার ফলে -
র. আল্লাহ তা‘আলার অনুসরণ করা হবে রর. কুরআনের অনুসরণ করা হবে
ররর. ভালো কাজ করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা সম্ভব হবে।
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর
(গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্ন
উদ্দীপক,
মতিন সাহেব নিজকে একজন আধুনিক মুসলমান হিসেবে দাবি করেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় না করলেও
জুমুআর সালাত, ঈদের সালাত ও শবে বরাতের সালাত আদায় করেন। তিনি আল-কুরআনকে আল্লাহর তা‘আলার পবিত্র
বাণী হিসেবে বিশ্বাস করেন। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করেন। যে কোন বিষয়ে তিনি কুরআন থেকে দলিল পেশ করার
চেষ্টা করেন। হাদিস সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান কম। মহানবীর (স.) জীবন চরিতও তিনি অধ্যয়ন করেন নি। অপর দিকে তাঁর
বন্ধু মামুন সাহেব একজন ধার্মিক ব্যক্তি। তিনি কুরআন ও হাদিসের অনুসরণ করে চলেন। রাসূল (স) এর প্রতিটি কথা,
কাজ ও সমর্থনকে তিনি গুরুত্ব দিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। রাসূলের (স) হাদিসের পরিপন্থী কোন
কাজ তিনি করেন না। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, রাসূল (স) এর হাদিসকে উপেক্ষা করে ইসলামি শরীআতের
ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা কোন মতেই সম্ভব নয়। তাই একদিন তিনি তার বন্ধু আবদুল মতিন সাহেবকে বোঝানোর চেষ্টা করেন
যে, আল্লাহর বিধান মানতে হলে রাসূল (স) এর অনুসরণ করতে হবে। আর হাদিস ব্যতীত রাসূল (স) এর অনুসরণ সম্ভব
নয়। তিনি আরো বলেন যে, ‘আদর্শ জীবন গঠনে হাদিসের অনুসরণ অপরিহার্য কোন মতেই হাদিসকে বাদ দেওয়া যাবে
না।’
ক. হাদিস বলতে কী বুঝেন ? ১
খ. হাদিস কত প্রকার ও কি কি ? ২
গ. কুরআন-হাদিসের আলোকে মতিন সাহেব কি সঠিকভাবে কর্ম পালন করেছেন ?
আপনার মতামত ব্যক্ত করুন। ৩
ঘ. মামুন সাহেবের বিশ্বাস অনুযায়ী হাদিসের গুরুত্ব আলোচনা করুন। ৪

উত্তরমালা: ১। খ ২। ক ৩। গ ৪। ক ৫। খ ৬। ক ৭। ঘ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]