কিয়াস-এর পরিচয় কিয়াস-এর প্রয়োজনীয়তা কিয়াস-এর উৎপত্তির কারণ বর্ণনা দিতে পারবে

কিয়াস, আসল, ইল্লাত, হারাম, নেশা, বিচার-বুদ্ধি, ফয়সালা, সূরা।
২.১ কিয়াসের পরিচয়
কিয়াস আরবি শব্দ। অর্থ হলো - পরিমাপ করা, অনুমান করা, তুলনা করা ইত্যাদি। অর্থাৎ- শাব্দিকভাবে
কিয়াস হলো কোন বস্তুকে অন্য বস্তুর সাথে তুলনা করা।
কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে শরীআতের যেসব হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়, শাখা-প্রশাখার মধ্যে ঐ হুকুমের কারণ পাওয়া
গেলে শাখায় মূলের অনুরূপ হুকুম প্রদান করাকে শরী‘আতের ভাষায় কিয়াস বলা হয়।
ইমাম আবু হানিফা (র) বলেন, “কিয়াস হল আইনের বিস্তৃতি। মূল আইন যখন সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট না হয়, তখন মূল
আইন থেকে ইল্লাতের মাধ্যমে নতুন বিধি আহরণ করতে হয়। আর তখন যে আইনের সম্প্রসারণ হয় তাই কিয়াস।”
মূলত মূল আইনকে শাখায় তুলনা করেই নতুন আইনের জন্ম হয়। আর এটিই হল কিয়াস।
উদাহরণ : কুরআন মাজীদের মাধ্যমে ইসলামি শরীআতে মদ্যপানকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ হলো ‘নেশা'।
অনুরূপভাবে কিয়াসের মাধ্যমে গাঁজা, আফিম, হিরোইন ইত্যাদি নেশা জাতীয় জিনিসকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে।
২.২ কিয়াসের উৎপত্তি
ইসলামি আইন শাস্ত্রের চতুর্থ ভিত্তি হলো কিয়াস। কোন সমস্যার সমাধানে যখন কুরআন, হাদিস ও ইজমা কোন নির্দেশনা
না পাওয়া যায় তখন ইসলামি পÐিতগণ কিয়াসের আশ্রয় নিয়ে উদ্ভূত সমস্যাটি সমাধান করেন।
প্রমাণ :
দৃষ্টান্তস্বরূপ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) যখন তাঁর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুআয ইবন জাবাল (রা)-কে ইয়ামানের
শাসনকর্তা মনোনীত করে পাঠান, তখন তিনি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে কোন নতুন সমস্যার উদ্ভব
হলে তিনি (মুআয) কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? তিনি বলেন, তিনি কুরআনের অনুসরণ করবেন। তিনি তাঁকে প্রশ্ন করলেন,
“যদি কুরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশ না থাকে?” তখন মুআয (রা) উত্তর দিলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (স)-এর সুন্নাহর (হাদিসের)
অনুসরণ করবেন। আর রাসূল (স)-এর সুন্নাহর দ্বারা ফায়সালা করতে না পারলে তিনি তাঁর নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ
করবেন। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর জবাবে অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন। এবং তাঁর জন্য দুআ করেন।
অন্য একটি হাদিসে আছে, হযরত মুহাম্মদ (স) আবু মূসা আল-আশআরী রা. কে বললেন, “আল্লাহর কিতাব (কুরআন)
অনুযায়ী বিচার কর। তোমার যা প্রয়োজন, তা যদি এতে না থাকে তবে তেমাদের নবী (স)- এর সুন্নাহ হতে খোঁজ কর।
সেখানেও যদি না পাও তখন নিজের মতামত ব্যক্ত কর।”
২.৩ কিয়াসের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব
ইসলাম একটি যুক্তিভিত্তিক গতিশীল জীবনব্যবস্থা। জীবন জিজ্ঞাসার সাথে সম্পর্কিত সকল সমস্যার সমাধান ইসলাম
প্রদান করছে। হযরত মুহাম্মদ (স) জানতেন সময়ের বিবর্তনে মানব সমাজে নানারকম সমস্যার উদ্ভব ঘটবে। সে সব
সমস্যা হতে তাঁর উম্মতকে বাঁচানোর জন্য তিনি সমাধানের পথ হিসেবে ইজমা ও কিয়াসের পথ খুলে রেখেছেন।
রাসূল (স)-এর ইন্তিকালের পর আসমানী বার্তা প্রেরণ বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া মুসলিম সাম্রাজ্যের পরিসীমা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি
পেতে থাকে। নব বিজিত মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে নতুন সংস্কৃতি ও সভ্যতার পরিচয় ঘটে। ফলশ্রæতিতে নতুন নতুন নানা
সমস্যার উদ্ভব হয়। সাহাবাগণ কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে নতুন সমস্যার সমাধান দিতে থাকেন।
প্রথম হিজরি শতাব্দীর শেষ দিকে ফিক্হ শাস্ত্রের বিকাশ ঘটে। ফকিহগণ কুরআন ও হাদিসের নিরিখে চিন্তা ও গবেষণার
সমন¦য় ঘটাতেন। সম্ভবত ইমাম শাফিঈ প্রথম ব্যক্তি যিনি উসূলে ফিকহের সংকলন চেষ্টা করেন এবং ইসলাম ধর্মীয় ও
বিচার ব্যবস্থায় কিতাব, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন- “কিয়াসের ব্যবহার
সে সময় করা যাবে যখন কিতাব, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা কোন সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।”
সুতরাং কুরআন, হাদিস, ইজমা দ্বারা সমাধান বের করতে না পারলে কিয়াসের আশ্রয় নিতে হবে।
২.৪ কিয়াসের-এর নীতমালা
মহানবীর (স) ইন্তিকালের পর সাহাবীগণ কুরআন-সুন্নাহর সাথে সাথে কিয়াসের অনুসরণে নতুন নতুন সমস্যার সমাধান
করতেন। পরবর্তীকালে ইসলামের মাযহাব চতুষ্টয়ের ইমামগণও কিয়াস প্রয়োগ করতেন। কিয়াস এমন সব সমস্যার
সমাধান করে যা কুরআন-হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ নেই। ইমামগণ নি¤œলিখিত নীতিমালার ওপর লক্ষ রেখে কিয়াস গ্রহণ করতেন-
(ক) কিয়াস কুরআন-হাদিস ও ইজমার পরিপন্থী হবে না।
(খ) কুরআন-হাদিস ও ইজমা দ্বারা প্রবর্তিত কোন আইনের মূলনীতি বিরোধী কোন আইন তৈরি করা কিয়াসের আওতা বহির্ভূত।
(গ) কিয়াসের মূলনীতি মানুষের জ্ঞানের পরিসীমার মধ্যে থাকতে হবে।
(ঘ) যে সকল সমস্যার সমাধান কুরআন, হাদিস ও ইজমা দ্বারা করা হয়েছে, সে সকল বিষয়ে কিয়াস প্রযোজ্য নয়।
সারসংক্ষেপ
মানবসমাজ গতিশীল। যতই দিন যেতে থাকে মুসলিম সমাজে নতুন নতুন প্রশ্নের উদ্ভব ঘটে। বহু উদ্ভূত নতুন সমস্যার
সমাধানের জন্য ইজতিহাদ-গবেষণার প্রয়োজন হয়। কিয়াস ইসলামি আইন-বিজ্ঞানের এক গতিশীল ধারা। কিয়াস
আইনকে কালোত্তীর্ণ এবং সার্বজনীনতা দান করেছে। ইসলামি আইন-বিজ্ঞান যে সর্বকালের মুক্তিসনদ তা এ থেকেই বুঝা যায়।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
১. কিয়াসের আভিধানিক অর্থ কী ?
(ক) ঐকমত্য (খ) পরিমাপ করা
(গ) ইচ্ছা করা (ঘ) সংকল্প করা
২. কোন আইন দ্বারা গাঁজা, আফিম ও হিরোইন নিষিদ্ধ হয়েছে ?
(ক) হাদিস (খ) কুলরআন
(গ) কিয়াস (ঘ) ইজমা
৩. কুরআন, হাদিস ও ইজমা দ্বারা সমাধান করা যায় না এমন বিষয়ে কিসের ভিত্তিতে ফয়সালা করতে হবে ?
(ক) ইজমা সুকূতী দ্বারা (খ) কিয়াস দ্বারা
(গ) ইজমা আযীমত দ্বারা (ঘ) ইজমা রুখসাত দ্বারা
৪. কিয়াসের পথ কে খুলে দিয়েছেন ?
(ক) হযরত আদম (আ.) (খ) হযরত মুহাম্মাদ রাসূল (স)
(গ) হযরত আবূ বকর (রা.) (ঘ) হযরত উসমান (রা.)
৫. রাসূলের যুগে কোন কিয়াস সংঘঠিত হয়েছিল কি ?
(ক) প্রথম দিকে হয়েছিল (খ) শেষদিকে হয়েছিল
(গ) হয়েছিল (ঘ) হিজরতের পরে হয়েছিল
৬. কোন বিষয়ে কিয়াস করা যাবে ?
(ক) যে সমস্যার সমাধান কুরআন-হাদিস ও ইজমায় স্পষ্ট উল্লেখ নেই
(খ) যে সমস্যার সমাধান কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ নেই
(গ) যে সমস্যার সমাধান হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ নেই
(ঘ) যে সমস্যার সমাধান কুরআনে আছে কিন্তু হাদিসে নেই
উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৮ ও ৯নং প্রশ্নের উত্তর দিনমাওলানা নাজিম একটি মসজিদের ইমাম। তিনি প্রতিদিন এশার নামাযের পর মুসল্লীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে
থাকেন। একজন যুবক দাড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, বাজারে প্রচলিত কোন কোমল পানীয়ের মধ্যে যদি নেশা জাতীয়
উপাদান পাওয়া যায় তাহলে তা পান করা কী বৈধ হবে ? ইমাম সাহেব জবাবে বললেন- যদি নেশা জাতীয় কোন
কিছু পাওয়া যায় তাহলে তা বৈধ নয়।
৮। ইমাম সাহেবের জবাব ইসলামের কোন উৎসের ইংগিত বহন করে ?
(ক) কুরআন (খ) হাদীস
(গ) ইজমা (ঘ) কিয়াস
৯। উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যার সমাধান প্রমাণ করের.ইসলাম একটি গতিশীল জীবনব্যবস্থা রর. ইসলামে চিন্তা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে
ররর.ইসলামের গবেষণার সুযোগ নেই।
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
আল-কুরআনে জুমু‘আর দিন আযানের পর বেচাকেনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন Ñ
“হে মুমিনগণ! জুমু‘আর দিনে যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও
এবং কেনাবেচা বন্ধ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা তা বুঝ।”(সূরা জুমু‘আ-৬২ : ৯) কাজেই
ইজারা, ধার কর্জসহ যত কাজ মানুষকে সালাত থেকে বিরত রাখবে, সব কাজই আযানের পরে নিষেধ। অন্যান্য
সকল প্রকার লেনদেনও একই কারণে বেচাকেনার সাথে নিষেধ বলে গণ্য হবে।
ক. কিয়াস কী ? ১
খ. কিয়াসের উৎপত্তি কখন হয়েছে ? ২
গ. বেচাকেনা ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার লেনদেন নিষেধ হওয়ার পিছনে কী কারণ আছে ? ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে কিয়াসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করুন ৪
উদ্দীপক-২
জামিল ও জাহিদ দুই বন্ধু। জামিল সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, কিন্তু জাহিদ মাদরাসা শিক্ষিত। জামিল মনে করেন
বর্তমানে ও ভবিষ্যতে নিত্য-নতুনভাবে উদ্ভাবিত সামাজিক সমস্যার সমাধান ইসলামি বিধানাবলির আলোকে
দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু জাহিদ সুন্দর যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে বলেন ‘ইসলাম সর্বাধুনিক ও গতিশীল একটি ধর্ম।’
তাই একমাত্র ইসলামেই সব সমস্যার যৌক্তিক সমাধান রয়েছে। জাহিদের যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য শুনে অবশেষে জামিল
তা মেনে নিতে বাধ্য হলেন।
ক. কিয়াসের প্রথম নীতিটি কী ? ১
খ. ‘তাদের কাজকর্ম সম্পন্ন হয় তাদের মধ্যকার পাস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে’- ব্যাখ্যা করুন। ২
গ. কিয়াস সম্পর্কে ইমামগণ কী মতামত দিয়েছেন ? ৩
ঘ. ‘ইসলাম সর্বাধুনিক ও গতিশীল একটি ধর্ম-’ কিয়াসের আলোকে বিশ্লেষণ করুন। ৪
উত্তরমালা: ১। খ ২। গ ৩। গ ৪। খ ৫। খ ৬। গ ৭। ক ৮। ঘ ৯। ক

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]