ফিক্হ শাস্ত্র সংকলনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর ফিক্হ শাস্ত্র সংকলনের সময়কাল বল

ইলমে ফিক্হ, সীরাতুল মুস্তাকীম, ফিরকা, খুলাফায়ে রাশেদীন, শাহাদাতবরণ, বাতিল
পন্থী, খারিজী, শরী‘আত, ইজতিহাদ, তাকলিদ, হানাফি, শাফি, মালিকি, হাম্বলি।
৪.১ ফিক্হ শাস্ত্র সংকলনের পরিপ্রেক্ষিত
ইলমে ফিক্হ বিশাল ও বিস্তৃত এক বিজ্ঞান। মানবজীবনের দৈনন্দিন কর্মকাÐ শরীআতের নিক্তিতে পরিমাপ
করে সঠিক পথের নির্দেশনা দেয় ফিক্হ শাস্ত্র। ইসলামি বিধানের অনিবার্য প্রয়োজনে ফিক্হ্ শাস্ত্র সংকলন শুরু
হয়।
খুলাফায়ে রাশিদীন এবং পর্যায়ক্রমে সাহাবীদের ইন্তিকালের ফলে ইসলামি বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শরীআতের হুকুম
আহকাম পালন ও চর্চার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া হযরত আলী (রা)-এর শাহাদাত; হযরত আমীরে
মুয়াবিয়া (রা) কর্তৃক উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠা, তাঁর পুত্র ইয়াযিদ-এর সময়ে রাসূল (স)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা)-
এর হৃদয় বিদারক শাহাদাতবরণ, এসব কারণে ইসলামে নানা ফেরকা ও মতবাদের সৃষ্টি হয়। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে
“খারিজী” ও ‘শীআ' নামে মতাবলম্বী দুটি পৃথক উপদল গড়ে উঠে। খারেজীরা শুধু কুরআন মাজীদ ও প্রধানত প্রথম দুই
খলীফার শাসনামলের প্রমাণিত হাদিসমূহকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। শীআরাও চরমপন্থী উপদল, তারা নতুন নতুন
ধ্যান-ধারণা অবলম্বন করতে থাকে।
উমাইয়া শাসনামলের মাঝামাঝি সময়ে হকপন্থী উলামা-ই কিরাম দু'ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েন। একটি ধারার পরিচিত নাম
‘আহলুল হাদিস', যাঁরা হাদিসের যাহেরী অর্থ অনুসারে আমল করা জরুরি মনে করেন। কিয়াসের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান
প্রক্রিয়া তারা অপছন্দ করতেন। দ্বিতীয় ধারার তৎকালীন পরিচিত নাম ছিল ‘আহলুর রায়'। যাঁরা কুরআন মাজীদ ও
হাদিসের আলোকে বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তি তর্কের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতায় ছিলেন বিশ্বাসী। তাঁরা কুরআন ও হাদিসের
সুস্পষ্ট ও মৌলিক বিধানের কারণ-উপকারণ ও যুক্তিধারা নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার
মাধ্যমে ইসলামি অনুশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
ইসলামের ব্যাপক প্রসার ও বিভিন্ন সভ্যতা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার কারণে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হতে থাকে। আর
প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এ সকল সমস্যার ইসলামি সমাধান সম্বলিত সুস্পষ্ট ও বিধিবদ্ধ আইন-কানুন তথা ফিক্হ ও
উসূলে ফিক্হ প্রণয়নের। আবু হানিফা (র) প্রথমে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। উমাইয়া যুগের পতনের পর পর তিনি
তাঁর সঙ্গী-সাথীদের সমন¦য়ে একটি পর্ষদ গঠন করেন। এরই মাধ্যমে তিনি ফিক্হ সংকলন ও সম্পাদনার গুরুদায়িত্ব পালনে
আত্মনিয়োগ করেন। এভাবে তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিরাট অবদান রেখে যান।
৪.২ ফিক্হ সংকলনের সময়কাল
হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথম থেকেই ইসলামি জগতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নব জোয়ার শুরু হয়। এ সময়
ব্যাপকভাবে হাদিস সংগ্রহ, সংকলন এবং ফিক্হ-এর মাসআলা সম্পাদনা ও ফাতাওয়া সংকলন শুরু হয়। তবে
হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর তৃতীয় দশক হতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ফিক্হ সংকলন ও সম্পাদনা শুরু হয়। সে সময় হতে আজ
পর্যন্ত সময়কালকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
ইসলাম শিক্ষা দ্বিতীয় পত্র
ইউনিট ছয় পৃষ্ঠা-২২৩
১. গবেষণা ও সংকলনের যুগ; ২. পূর্ণতা ও তাকলিদের যুগ; ৩. তাকলিদের যুগ। এ তিনটি যুগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হল-
* প্রথম যুগ : গবেষণা ও সংকলন
এ যুগে ইমাম আবু হানিফা (র) নিয়মতান্ত্রিকভাবে সর্বপ্রথম ইসলামি ফিক্হ সংকলন ও সম্পাদনা শুরু করেন। তিনি তাঁর
জীবনকালে ইসলামি ফিক্হ-এর ওপর মূল্যবান গ্রন্থ রচনায় অবদান রাখেন।
তাঁর এ পথ ধরে এ যুগে আরো অসংখ্য মুজতাহিদ ফিক্হ সম্পাদনা ও সে বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। এ যুগেই চার
মাযহাবের আলোকে ফিক্হ গ্রন্থ সংকলিত ও সম্পাদিত হয়। এ যুগেই ফিক্হ শাস্ত্রের নীতি নির্ধারণী ‘উসূলুল ফিক্হ' নামক
আরেকটি শাস্ত্রের উদ্ভব হয়। এ সময় মুসলিম উম্মাহ তাঁদের সম্পাদিত ফিক্হ'র অনুসরণ করতে থাকেন। হিজরি দ্বিতীয়
শতাব্দীর তৃতীয় দশক হতে তৃতীয় শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত এ যুগ অব্যাহত থাকে। এ যুগকে বলা হয়, ইজাতিহাদ তথা
গবেষণার যুগ।
* দ্বিতীয় যুগ: পূর্ণতা ও তাকলিদ
ফিক্হ সংকলনের দ্বিতীয় যুগকে তাকলিদের যুগ বলা হয়। হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর শুরু হতে সপ্তম শতাব্দীতে আব্বাসীয়
রাজবংশের পতন পর্যন্ত এ যুগ অব্যাহত ছিল। এ যুগে তাকলিদ ব্যাপকতা লাভ করে। প্রথম যুগের ইমামগণের উদ্ভাবিত
নিয়ম নীতির সমর্থনে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়। এ সময়ে মানবজীবনের নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিলে তার ধর্মীয় সমাধান
অনুসন্ধান করা হয়। প্রথম যুগের নির্ধারিত মূলনীতিসমূহের আলোকে মাসআলা উদ্ভাবনই ছিল এ যুগের ব্যাপক কাজ। এ
যুগের লোকেরা বিশেষত চার ইমামের অনুসরণ করতে থাকেন। এ যুগের বিশেষ দিক হল০ এ পর্বে নতুন কোন ইমামের উদ্ভব হয়নি।
০ এ যুগে পূর্ববর্তী ইমামদের পূর্ণ অনুসরণ করা হতে থাকে।
০ এ যুগে পূর্ববর্তী ইমামদের প্রদত্ত ফাতওয়াসমূহের ব্যাখ্যা এবং তার সমর্থনে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন।
০ যুক্তিভিত্তিক গ্রন্থ রচনা হতে থাকে।
* তৃতীয় যুগ : তাকলিদ
হিজরি ৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝি আব্বাসীয় শাসনের সমাপ্তির পর আজ পর্যন্ত তৃতীয় ও সর্বশেষ যুগ যা এখনো চলমান। এ
যুগে আলিম ও সাধারণ মানুষ তাকলিদ করতে থাকে। পূর্ববর্তী মুজতাহিদদের ফাতাওয়ার পূর্ণ অনুসরণ করা হচ্ছে। এ জন্য
এ যুগকে বলা হয় একান্ত তাকলিদের যুগ। তবে এ যুগে অনেক ফাতওয়ার কিতাব রচিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।
ফিক্হ্-এর ইমাম
যে সকল মুজতাহিদ ও ফিক্হবিদের অক্লান্ত সাধনার ফলে ফিক্হ শাস্ত্রাকারে সংকলিত হয় তাঁদের মধ্যে প্রধান হচ্ছেনচারজন
(১) ইমাম আবু হানিফা (র) (ইরাক : মৃত্যু ১৫০ হি.)
(২) ইমাম মালিক (র) (মদিনা : মৃত্যু ১৭৯ হি.)
(৩) ইমাম শাফিঈ (র) (মক্কা: মৃত্যু ২০৪ হি.)
(৪) ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (র) (ইরাক : ২৪১ হি.)
ইমাম আবু হানিফার (র) দু'জন শিষ্য- ইমাম আবু ইউসুফ (র) ও ইমাম মুহাম্মদ (র) ফিক্হ শাস্ত্রবিদ হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন।
সারসংক্ষেপ
ইসলামের ব্যাপক প্রসার ও বিভিন্ন সভ্যতা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার কারণে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হতে থাকে। আর
প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এ সকল সমস্যার ইসলামি সমাধান সম্বলিত সুস্পষ্ট ও বিধিবদ্ধ আইন-কানুন তথা ফিক্হ ও
উসূলে ফিক্হ প্রণয়নের। আবু হানিফা (র) প্রথমে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। উমাইয়া যুগের পতনের পর পর
তিনি তাঁর সঙ্গী-সাথীদের সমন¦য়ে একটি পর্ষদ গঠন করেন। এরই মাধ্যমে তিনি ফিক্হ সংকলন ও সম্পাদনার গুরু
দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করেন। এভাবে তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিরাট অবদান রেখে যান।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
১। ইলমে ফিক্হ্র পরিধি কতটুকু ?
(ক) বিশাল ও বিস্তৃত (খ) সংকীর্ণ
(গ) ক্ষুদ্র (ঘ) মধ্যম
২। ফিক্হ্ শাস্ত্র কোন পথের নির্দেশ দেয় ?
(ক) সঠিকপথের (খ) সংকীর্ণ পথের
(গ) বক্র পথের ( ঘ) কঠিন পথের
৩। খারেজী ও শিয়া দুটো উপদলই হলো -
(ক) উদারপন্থী (খ) মধ্যমপন্থী
(গ) বামপন্থী ( ঘ) চরমপন্থী
৪। প্রকৃত মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে কোন দুটি উপদল গড়ে উঠেছিল ?
(ক) খারেজী (খ) শিআ
(গ) খারিজী ও শিআ (ঘ) রাফিযী
৫। উমাইয়া শাসনামলে হকপন্থী আলিমগণ কয়টি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল ?
(ক) ২ টি ধারায় (খ) ৩ টি ধারায়
(গ) ৪ টি ধারায় (ঘ) ৫ টি ধারায়
৬। সর্বপ্রথম কে ফিক্হ শাস্ত্র সংকলনের গুরুত্ব অনুভব করেন ?
(ক) ইমাম বুখারী (র.) (খ) ইমাম মুসলিম (র)
(গ) ইমাম আবূ হানিফা (র.) (ঘ) ইমাম শাফিঈ (র)
৭। ‘আহলুল হাদিস’ কারা ?
(ক) যারা হাদিসের যাহেরী অর্থ অনুসারে আমল করা জরুরি মনে করেন।
(খ) যারা কুরআনের অর্থ অনুসারে আমল করা জরুরি মনে করেন।
(গ) যারা কুরআন ও হাদিসের অর্থ অনুসারে আমল করা জরুরি মনে করেন ।
(ঘ) যারা ফিক্হ অনুযায়ী আমল করা জরুরি মনে করেন।
৮। ফিক্হ্ এর সময়কালকে প্রধানত কয়ভাগে ভাগ করা হয় ?
(ক) ২ ভাগে (খ) ৩ ভাগে
(গ) ৪ ভাগে (ঘ) ৫ ভাগে
৯। ফিক্হ্ এর সময়কালকে প্রধানত যে কয়ভাগে ভাগ করা হয়,তা হলো -
র. গবেষণা ও সংকলনের যুগ রর.পূর্ণতা ও তাকলিদের যুগ
ররর. তাকলিদের যুগ
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্ন
উদ্দীপক,
শ্রেণিকক্ষে ইসলামি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক ইসলামের এমন একটি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে
আলোচনা করছিলেন, যা জানা না থাকলে বাস্তব জীবনে ইসলামি শরী‘আতের বিধি-বিধান সঠিকভাবে পালন করা
যায় না। এমনকি ফরয, ওয়াজিব, হালাল-হারাম, সুন্নত, নফল ইত্যাদির গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায় না।
ক. ‘আহলুল হাদিস’ কী ? ১
খ. ফিকহের একটি মজলিস ষাট বছর ইবাদতের চেয়েও উত্তম কেন ? ২
গ. ফিক্হ সংকলনের সময়কাল কয়ভাগে বিভক্ত ? ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে ফিক্হ শাস্ত্রের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করুন। ৪
উত্তরমালা: ১। ক ২। ক ৩। ঘ ৪। গ ৫। ক ৬। গ ৭। ক ৮। ক ৯। ঘ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]