মাযহাব, হানাফি, মালিকি, শাফিঈ, হাম্বলি।
মাযহাব-এর পরিচয়
ْذَه ب َ م ) মাযহাব
ْ
) আরবি শব্দ। আভিধনিক অর্থ হচ্ছে- পথ, মত, দল। ইসলামি আইন-কানুন, মু'আমালাত ও
ইবাদাত সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়সমূহ ব্যতীত সেগুলোর শাখা-প্রশাখায় ইসলামি আইন বিশারদগণের বিভিন্ন মতবাদকে
মাযহাব বলে। অর্থাৎ কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা এবং হাদিসমূহের মধ্যে কোনটি অধিক প্রামাণ্য আর কোনটি কম
নির্ভরযোগ্য এসব বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে মুসলিম সমাজে যে সকল ধর্মীয় আইন সংক্রান্ত মতবাদ সৃষ্টি
হয়েছে তাকে মাযহাব বলে।
মুসলিম সমাজে অনেকগুলো মাযহাব বা মতবাদের উদ্ভব হয়। এসবের মধ্যে চারটি মাযহাব অন্যতম। এ চারটি মাযহাব
সহীহ হওয়ার ব্যাপারে আলিমগণ একমত পোষণ করেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আলিমগণ এ চারটি
মাযহাবের যে কোন একটির অনুসরণ বা তাকলিদ করাকে অবশ্য করণীয় বলে ফাতওয়া প্রদান করেন।
বিশ্বমুসলিম কর্তৃক সমাদৃত চারটি মাযহাব হচ্ছে-
(ক) হানাফি মাযহাব : ইমাম আবু হানিফা (র)-এর মতানুসারীকে হানাফি বলা হয়।
(খ) মালিকি মাযহাব : ইমাম মালিক (র)-এর মতানুসারীকে মালিকি বলা হয়।
(গ) শাফি'ঈ মাযহাব : ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতানুসারীকে শাফিঈ বলা হয়।
(ঘ) হাম্বলী মাযহাব : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র)-এর মতানুসারীকে হাম্বলি বলা হয়।
৫.২ মাযহাবের পার্থক্যের কারণ
ইসলামি শরীআতের ফিক্হি মাযহাবের পার্থক্যের অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে যার কয়েকটি নি¤œরূপপ্রথমত: মহানবী (স)-এর হাদিস বিভিন্ন সাহাবী বর্ণনা করেন। অনেক বর্ণনাকারী তা অপরের নিকট বর্ণনা করেছেন। এ
বর্ণনার ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। সুতরাং একই হাদিস বহু ক্ষেত্রে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ফলে বর্ণনার
ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে কিছুটা পার্থক্য দেখা দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত: হাদিসের ব্যাখ্যার ব্যাপারেও মতপার্থক্য হয়েছে।
তৃতীয়ত: কখনও বর্ণনার সূত্রেও কোন দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। যেমন বর্ণনাকারীদের মধ্যে কোন এক বা একাধিক
ব্যক্তির বর্ণনা নির্ভরযোগ্য না হওয়া। সুতরাং এক ইমামের বিবেচনায় যে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য, তা হয়ত অন্য ইমাম গ্রহণ
করতে রাযি হননি। তিনি হয়ত অন্য হাদিসটি গ্রহণ করেছেন।
চতুর্থত: বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত একই মর্মের হাদিসে একটি মর্মকে একজন ইমাম অধিকতর নির্ভরযোগ্য মনে করেছেন। অপর
ইমাম অন্য মর্মকে নির্ভরযোগ্য মনে করে গ্রহণ করেছেন।
পঞ্চমত : আল-কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যায় মতানৈক্য। এটিও মাযহাবের পার্থক্যের অন্যতম কারণ হতে পারে। একজন
তাফসীরকার একটি আয়াতের এক ধরনের ব্যাখ্যা করেছেন। আর একজন অন্যরূপ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। অবশ্য এসব
শরীআতের কোন মৌলিক নির্দেশের (ফরযের) ব্যাপারে ফকিহদের মধ্যে পার্থক্য হয়নি; বরং মতপার্থক্য হয়েছে শাখাপ্রশাখায়।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়: ফজরের সালাত পড়া ফরয। এ ব্যাপারে সকল ইমাম একমত। মতানৈক্য রয়েছে আদায়ের
সময়ের ব্যাপারে। একজন ইমাম ফজরের সালাত আলো-আঁধারে পড়া ভালো মনে করেন। অন্যজন ফরসা বা আরো
আলো হবার পর পড়া ভালো মনে করেন। এ ব্যাপারে দুই ইমাম দুই হাদিস দ্বারা নিজেদের মতামত প্রমাণ করেছেন।
অনুরূপভাবে ইমামের পেছনে কিরাত পাঠ করতে হবে, না চুপ করে থাকতে হবে, এ ব্যাপারেও দুটি মত রয়েছে।
প্রত্যেকেরই যুক্তির ভিত্তিতে হাদিস রয়েছে। এমন সব প্রাসংগিক বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।
ষষ্ঠত: যে সকল সমস্যার সমাধান কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় না এক্ষেত্রে ইজমা ও কিয়াসের সাহায্যে হুকুম প্রদানের
ক্ষেত্রে এ মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। ফয়সালা যেমন দুইজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ মৌলিক আইনের ব্যাখ্যায় একমত
হওয়া সত্তে¡ও এর ধারা-উপধারায় ভিন্ন ভিন্ন রায় প্রকাশ করে থাকেন। আর মুজতাহিদদের ভিন্ন মত পোষণ করা কোন
দূষণীয় নয়। মহানবী (স) বলেছেন, “যারা এ জাতীয় গবেষণায় আত্মনিয়োগ করবে, তারা নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছলে দুটি
পুরস্কার পাবে, আর ভুল হলেও শ্রমের মর্যাদাস্বরূপ একটি পুরস্কার পাবে।”
সপ্তমত: বিতর্কমূলক প্রশ্নে আইনজ্ঞের পরামর্শ ও বিচারকের মীমাংসা। যেমন, ইসলামি আইনের ব্যাপারে ফকিহদের
ফাতওয়াও সেইরূপ। বিভিন্ন বিচারক ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করতে পারেন। যেসব ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহতে ফয়সালা
পাওয়া যায় না, সেসব ব্যাপারে ফকিহদের ইজতিহাদ ও রায়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। আর ঐ সব ইজতিহাদ ও রায়ের
ব্যাপারে সব সময়ে মতৈক্যের আশা করা যায় না।
সারসংক্ষেপ
ইসলামি আইন-কানুন ও মূলনীতির গবেষণাকারী মুজতাহিদগণের মূল ও প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে কুরআন ও হাদিস।
এক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা এবং হাদিসের বর্ণনা ও নির্ভরযোগ্যতায় ইমামদের মতপার্থক্যের কারণ থেকেই
বিভিন্ন মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে। তবে উক্ত পার্থক্যসমূহ শরীআতের মৌলিক বিষয়ে হয়নি, হয়েছে শাখা-প্রশাখায়।
অতএব সকল মাযহাবই সত্যাশ্রয়ী এবং অনুকরণীয়-অনুসরণীয়। যে কোন একটি মাযহাব অনুসরণ করলেই ইসলামের
অনুসরণ করা হবে এবং মুক্তি পাওয়া যাবে।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
১. মাযহাব শব্দের আভিধানিক অর্থ কী ?
(ক) মত (খ) পথ
(গ) দল (ঘ) সবকটি ঠিক
২.ইমাম আযম কে ?
(ক) ইমাম আবূ হানিফা (র.) (খ) ইমাম নাসায়ি (র.)
(গ) ইমাম শাফিঈ (র.) (ঘ) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র.)
৩। ইমামগণের মাযহাবের পার্থক্যসমূহ হচ্ছে-
(ক) শরীয়তের মৌলিক বিষয়ে (খ) শাখা-প্রশাখায়
(গ) কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যায় তারতম্য (ঘ) ব্যক্তিগত রেষারেষির জন্য
উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৪ ও ৫নং প্রশ্নের উত্তর দিন।
জিয়াউর রহমান আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি কোন মাযহাবেরই অনুসরণ করতে চান না। কিন্তু একদা ইমাম
সাহেবের একটি বক্তব্য শুনে তিনি মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দী করেন।
৪। ইমাম আবু হানিফার মাযহাবের নাম কী ?
(ক) হানাফি মাযহাব (খ) শাফিঈ মাযাহাব
(গ) মালিকি মাযহাব (ঘ) হাম্বলি মাযহাব
৫। মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দী করায় জিয়াউর রহমান জানতে পরবের. ইমামদের মাঝে মতানৈক্যের কারণ রর. কুরআন হাদিসের বিধি-বিধান
ররর.বিভিন্ন মাসআলার সমাধান
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র (খ) র ও রর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্ন
উদ্দীপক,
ফাতেমা ও আমেনা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তারা ফিক্হ শাস্ত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে বিষয় শিক্ষক হাবিব স্যারের কাছে
জানতে চাইলেন। শিক্ষক ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন যে, ফিক্হ শাস্ত্র ব্যতীত সাধারণ মানুষের পক্ষে কুরআন ও
হাদিসের বিধান অনুযায়ী শরীআত পালন সম্ভব নয়। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল
জানা সম্ভব নয়। তাই ফিক্হ এর জ্ঞান প্রয়োজন। এ জন্যে মুজতাহিদ ফকিহ ও ইমামগণ কুরআন-হাদিসের ওপর
ইজতিহাদ ও গবেষণা করে মাযহাব উদ্ভাবন করেছেন।
ক. মাযহাব কী ? ১
খ. মাযহাব কয়টি ও কি কি ? ২
গ. মাযহাবের অনুসরণ করতে হবে কেন ? ৩
ঘ. মাযহাবের মধ্যে পার্থক্যের কারণগুলো বিশ্লেষণ করুন। ৪
উত্তরমালা: ১. ঘ ২. ক ৩. গ ৪. ক ৫. ঘ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র