যাকাতের নিসাব কী যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহের যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলি যাকাত ও সাদাকা গ্রহণকারীদের পরিচয়

ফরয, বাধ্যতামূলক, মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়িক পণ্য-দ্রব্য, সঞ্চয়।
৪.১ যাকাতের নিসাব
সারা বছর যার কাছে নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা
রৌপ্য থাকে অথবা এর সমপরিমাণ টাকা থাকে এরূপ প্রত্যেক মুসলমানদের ওপর যাকাত ফরয। ধনীর
সম্পদের ওপরে বছরে শতকরা আড়াই ভাগ যাকাতের হার নির্ধারিত হয়েছে। মজুদকৃত অর্থ নিসাব পরিমাণ না হলে
যাকাত দিতে হয় না। কেবল নগদ টাকার ওপরই যাকাত ফরয নয়, মুসলমানদের অনেক সম্পদের ওপরই যাকাত ফরয।
খেতের ফসল, গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা এবং সোনা, রুপা প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু ও ব্যবসায়িক পণ্যদ্রব্যেরও
যাকাত দিতে হয়। যে সমস্ত জিনিসের যাকাত দিতে হবে, সে সমস্ত জিনিসের মূল্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি থাকতে
হবে। কারও সঞ্চয়ের পরিমাণ রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা ও সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ হলে অথবা
অনুরূপ অর্থ থাকলে যাকাত দিতে হয়। সকল প্রকার পণ্যের বেলায় রূপার মান হিসেবে মূল্য নির্ধারণ করে নিসাব বা
পরিমাণ হিসাব ঠিক করা হয়।
৪.২ যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাত
যাকাত ধনবান মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরয। ইসলামে যাকাত রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎস। যাকাত আদায় ও বণ্টনের
জন্য রাষ্ট্রীয় বিভাগ ছিল। কোন লোক ব্যক্তিগতভাবে এটি আদায় ও ব্যয় করলে এর পুরোপুরি হক আদায় হয় না।
কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক এটি আদায় ও খরচ করতে হবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে :
“যাকাত কেবল মিসকীন ও অভাবগ্রস্তদের জন্য এবং যাকাত সংগ্রহে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের এবং যাদের অন্তরকে
(আল্লাহর দিকে) আকৃষ্ট করা প্রয়োজন তাদের জন্য এবং বন্দিদের মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য আল্লাহর পথে- এবং
মুসাফিরের জন্য এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তাওবা ৯ : ৬০)
কুরআনে উল্লিখিত এ আটটি খাতেই যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে। যথাÑ
ক্স ফকির অর্থাৎ যারা একেবারে নিঃস্ব নয়; কিন্তু যাদের মালের পরিমাণ নিসাবের কম, তাদের এ শ্রেণীতে গণ্য করা হয়।
ক্স মিসকীন বা বিত্তহীন লোক যার কিছুই নেই। মিসকীন শব্দের অর্থ অচল বা অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি, অন্ধ ও বিকলাঙ্গ
ব্যক্তিরা এ পর্যায়ভুক্ত।
ক্স যাকাত সংগ্রহকারী কর্মচারীবৃন্দ। এ সকল কর্মচারীর জন্য যাকাত তহবিল থেকে ব্যয় করা যাবে ।
ক্স সত্যের সন্ধানী ব্যক্তিগণ। যে সমস্ত ব্যক্তি ইসলামের প্রতি অনুরাগী, কিন্তু অর্থের অভাবে সেই সত্যতা প্রকাশ
করতে সক্ষম নয়, তাদের যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য প্রদান করা যায়। ইসলাম গ্রহণ করার ফলে যারা নিজস্ব
বিষয়-সম্পত্তি হারিয়েছে তাদেরও যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে।
ক্স বন্দিদের মুক্তিদানের ব্যাপারে তাদের মালিকদের যাকাত তহবিল থেকে অর্থ প্রদান করা যায়।
ক্স ঋণ পরিশোধে অসমর্থ লোক। সমাজে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গকে ঋণমুক্ত করার জন্য এক-অষ্টমাংশ ব্যয় করা যেতে
পারে। কিন্তু এ অর্থ এমনভাবে প্রদান করতে হবে যাতে অলসতার প্রশ্রয় দেওয়া না হয়।
ক্স বিপদগ্রস্ত ও গন্তব্যস্থলে পৌঁছবার জন্য সাহায্যের মুখাপেক্ষী প্রথিক। প্রবাসে অবস্থানকালে অর্থের অভাবের কারণে
মুসাফিরগণ বিপন্ন হয়ে পড়লে তাদের যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য করা যায়।
ক্স ইসলামের রক্ষা ব্যবস্থা। অর্থাৎ ফি-সাবিলিল্লাহি বা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা যেতে পারে। জিহাদে যোগদানকারীকেও যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।
৪.৩ যাকাত ফরয হওয়ার শর্ত
নি¤œলিখিত শর্তে একজন মুসলমানের প্রতি যাকাত ফরয। যেমনÑ
ক্স যাকাতদাতাকে মুসলমান হতে হবে;
ক্স যাকাত প্রদানকারীকে বুদ্ধিমান হতে হবে;
ক্স যাকাত প্রদানকারীকে স্বাধীন হতে হবে, পরাধীন ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরয নয়;
ক্স যাকাত প্রদানকারীকে বালেগ হতে হবে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরয নয়;
ক্স নিসাবের মালিক হতে হবে। নিসাবের কম হলে যাকাত ফরয নয়;
ক্স ঋণমুক্ত হতে হবে। ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তির ওপর যাকাত দেওয়া ফরয নয়;
ক্স নিসাবের মালিক থাকা অবস্থায় সম্পদ পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হতে হবে; পাগল, অমুসলমানের ওপর যাকাত ফরয নয়।
৪.৪ সাদাকা
ইসলামে দান দুই প্রকার- বাধ্যতামূলক ও স্বেচ্ছামূলক। বাধ্যতামূলক দান হচ্ছে যাকাত। স্বেচ্ছামূলক দানকে বলা হয়
সাদাকা। সাদাকার জন্য কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যে কোন মুসলিম যে কোন সময়ে এ ধরনের দান করতে পারে।
সাদাকা বাধ্যাতমূলক না হলেও এটি খুবই প্রশংসনীয় কাজ। কুরআনে সাদাকার সম্পর্কে উচ্ছ¦সিত প্রশংসা করা হয়েছে।
সাদাকার কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। মানুষ তার সামর্থ্যানুযায়ী যত ইচ্ছা সাদাকা দিতে পারে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আল্লাহর
জন্য ইচ্ছামত দান করা ভালো। নি¤œলিখিত ব্যক্তিকে সাদাকা গ্রহণকারী হিসেবে অনুমোদন করা হয় :
১. নিকট আত্মীয়-স্বজন; ২. ইয়াতীম; ৩. অভাবগ্রস্ত; ৪. প্রবাসী (মুসাফির); ৫. ভিক্ষুক; ৬. বন্দির মুক্তিপণ ক্রয়ের
জন্য; ৭. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে জীবিকা উপার্জনে অক্ষম এমন গরিব লোক।
সারসংক্ষেপ
নিসাব অর্থ পরিমাণ। সাহিবে নিসাব মানে যাকাত প্রদানের নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ যার আছে। একজন মুসলমানকে
বাৎসরিক জীবন নির্বাহের পর দেনা-পাওনা বাদে যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাকে যাকাত দিতে হবে।
যাকাতের সম্পদ কুরআন নির্দিষ্ট ৮টি খাতে প্রদান করতে হবে। যাকাত বাধ্যতামূলক আর্থিক ইবাদত। সাদাকা হলো সেচ্ছা দান। সাদাকার ফযিলত ও সাওয়াব অনেক।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
১। নিসাব অর্থ কী ?
(ক) নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ (খ) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা
(গ) নির্দিষ্ট পরিমাণ গরু (ঘ) নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ
২। সোনার নিসাব কত ?
(ক) সাড়ে ছয় তোলা (খ) সাড়ে সাত তোলা
(গ) সাড়ে আট তোলা (ঘ) সাড়ে নয় তোলা
৩।. রূপার নিসাব কত ?
(ক) সাড়ে ছয় তোলা (খ) সাড়ে সাত তোলা
(গ) সাড়ে বায়ান্ন তোলা (ঘ) সাড়ে নয় তোলা
৪। কি পরিমাণ সম্পদ যাকাত আদায় করতে হবে ?
(ক) শতকরা আড়াই ভাগ (খ) শতকরা তিন ভাগ
(গ) শতকরা পাঁচ ভাগ (ঘ) শতকরা সাত ভাগ
৫। যে সকল সম্পদের ওপর যাকাত ফরয হয় তাহলো
র. খেতের ফসল রর. গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ররর. সোনা-রূপা
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
৬। মিসকিন শব্দের অর্থ কী ?
(ক) বিত্তহীন লোক, যার কিছুই নেই (খ) বিত্তহীন লোক, যার কিছু আছে
(গ) যার বাড়ি নেই (ঘ) যার গাড়ি নেই
৭। ফকির কাকে বলে ?
(ক) যার একটি গাড়ি আছে (খ) যার একটি দোকান আছে
(গ) যে একেবারে নিঃস্ব নয়, যার কিছু আছে (ঘ) যার অন্তত একটি বাড়ি আছে
৮। যাকাত ফরয হওয়ার শর্ত হলোর. নিসাব পরিমাণ মাল থাকা রর. মুসলমান হওয়া ররর. সম্পদ এক বছর থাকা
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
৯। সাদাকা শব্দের অর্থ কী ?
(ক) অস্বেচ্ছামূলক দান (খ) জোরপূর্বক দান
(গ) স্বেচ্ছামূলক দান (ঘ) দানে বাধ্য করা
সৃজনশীল প্রশ্ন
উদ্দীপক-১
সিরাজ সাহেব এলাকার একজন বিখ্যাত জমিদার। প্রতি বছর তিনি জমি থেকে হাজার হাজার মন ধান ও পাট
পান। অন্যান্য শাক-সব্জী তো আছেই। বাড়ির পাশেই রয়েছে বিরাট আকৃতির গাভীর খামার। গাভী থেকে
প্রতিদিন শত শত মন দুধ উৎপাদিত হয়। গরু-মহিষের খামার তো রয়েছে। রাখালরা সারাদিন এগুলো চড়িয়ে
বেড়ায়। পাইকারদাররা প্রতিদিন তাঁর খামার থেকে গোশতের জন্য গরু-মহিষ ক্রয় করে নিয়ে যায়। এ ভাবে
সিরাজ সাহেব প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হলেও যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে উদাসীন।
ক. নিসাব কী ? ১
খ. যাকাত ফরয হওয়ার শর্তগুলো কি কি ? ২
গ. যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাতসমূহ উল্লেখ করুন। ৩
ঘ. কোন কোন সম্পদের ওপর যাকাত দিতে হয় ? যাকাত ও সাদাকার মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করুন। ৪
উত্তরমালা: ১। ক ২। খ ৩। গ ৪। ক ৫। গ ৬। ক ৭। গ ৮। গ ৯। গ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]