ওহী, ওহীয়ে মাতলু, ওহীয়ে গাইরে মাতলু, ওহীয়ে জলী, ওহীয়ে কালবী, ওহীয়ে মালাকী,
কালামে-ইলাহী।
৫.১.ওহী
হযরত আদম (আ) থেকে আরম্ভ করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (স) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলই ওহীর মাধ্যমে
হিদায়াত লাভ করে মানব জাতিকে সত্য পথের সন্ধান দিয়েছেন। মহানবী (স) ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না।
কুরআনে বলা হয়েছে“আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। এতো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (সূরা নাজম-৫৩:৩)
মূলত ওহী থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান অধিক নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য।
৫.২ ‘ওহী'র অর্থ
ওহী'র শাব্দিক অর্থ ইঙ্গিত করা, লেখা, সংবাদ দেওয়া, ইলহাম হওয়া ইত্যাদি।
শরীআতের পরিভাষায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীগণকে কথার মাধ্যমে বা ফেরেশতা পাঠিয়ে কিংবা স্বপ্নযোগে অথবা
ইলহামের সাহায্যে কোন বিষয় জানিয়ে দেওয়াকে ওহী বলা হয়।”
৫.৩ ওহীর প্রকারভেদ
ওহী প্রধানত দু'প্রকার১. ওহীয়ে মাত্লু (পঠিতব্য ওহী) : যে ওহীর ভাব, শব্দ ও ভাষা, অর্থ, বিন্যাস সবকিছুই মহান আল্লাহ প্রত্যক্ষ ওহীর
মাধ্যমে নাযিল করেছেন এবং যা সংরক্ষণ ব্যবস্থাও করেছেন। এ প্রকারের ওহীকে ওহীয়ে মাত্লু (পঠিতব্য ওহী) ও
‘ওহীয়ে জলী' (প্রত্যক্ষ ওহী) বলা হয়। এটাই পবিত্র কুরআন মাজীদ।
২. ওহীয়ে গাইরে মাতলু (অপঠিতব্য ওহী) : যে ওহীর ভাব আল্লাহর পক্ষ থেকে; কিন্তু এর ভাষা ও শব্দ স্বয়ং রাসূল (স)-
এর তাকে ওহীয়ে গাইরে মাত্লু (অপঠিতব্য ওহী) ও ওহীয়ে খফী (প্রচ্ছন্ন ওহী) বলা হয়। এ প্রকারের ওহী হচ্ছে
রাসূলুল্লাহ (স)-এর হাদীস। এ উভয় ওহী একই উৎস থেকে উৎসারিত।
৫.৪ ওহী নাযিলের অবস্থা
নবীদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনভাবে ওহী এসেছে। যথা- ১. ওহীয়ে কালবী, ২. ওহীয়ে কালামে ইলাহী এবং ৩.
ওহীয়ে মালাকী।
১. ওহীয়ে ক্বালবী : কারো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি নবীর হৃদয়ে কোন কথা বা বিষয় ওহী হিসেবে
পাঠাতেন। এ প্রকার ওহীকে ওহীয়ে ক্বালবী বলা হয়। নবীদের স্বপ্ন এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
২. ওহীয় কালামে ইলাহী : ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়াই স্বয়ং আল্লাহ নবীর কাছে যে ওহী প্রেরণ করেন, তাকে ওহীয়ে
কালামে-ইলাহী' বলা হয়। এ পদ্ধতিতে আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা হয় ও তাঁর সান্নিধ্য লাভ হয়। যেমন মি'রাজের
সময় রাসূলুল্লাহ (স)-এর সাথে আল্লাহর বাক্যালাপ এবং হযরত মূসা (আ)-এর সাথে কথোপকথন হয়েছিল।
৩. ওহীয়ে মালাকী : আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পবিত্র বাণী কোন ফেরেশতার মাধ্যমে নবীর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। পবিত্র
কুরআন মাজীদ এ পদ্ধতিতে নাযিল হয়েছিল।
৫.৫ মহানবী (স)-এর প্রতি ওহী নাযিলের পদ্ধতি
পবিত্র কুরআন-হাদিসের বর্ণনা থেকে মহানবী (স)-এর প্রতি ওহী নাযিলের যে পদ্ধতিসমূহ জানা যায় তা হল১. সত্য স্বপ্ন : হযরত আয়িশা (রা) বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়- নুবুওয়াত লাভের প্রাথমিক পর্যায়ে মহানবী (স)-এর
উপর ওহী নাযিলের শুভ সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়
“আল্লাহ তাঁর রাসূল (স)-এর স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন।” (সূরা ফাত্হ- ৪৮ : ২৭)
হযরত ইবরাহীম (আ) পুত্র ইসমাঈল (আ)-কে কুরবানী করার জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হন। সুতরাং নবীদের স্বপ্ন ওহীর
অন্তর্ভুক্ত।
২. অন্তর্লোকে ফুঁকে দেওয়া : এ পদ্ধতিতে জিবরাঈল (আ) মহানবী (স)-কে দেখা না দিয়ে তাঁর হৃদয়পটে কোন কথা
ফুঁকে দিতেন কিংবা আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নবীর অন্তর্লোকে কোন কথা উদ্রেক করতেন।
৩. ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যম : ওহী নাযিলের পূর্ব মুহ‚র্তে মহানবী (স)-এর কানে ঘণ্টাধ্বনির মত আওয়াজ অবিরাম বাজতে
থাকতো। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেশতাও কথা বলতে থাকতেন। এ পদ্ধতিকে সালসালাতুল জারাস বলা হয়েছে।
এটা ছিল কঠিনতম পদ্ধতি। প্রচÐ শীতেও এ সময় মহানবীর (স) শরীর থেকে তীব্র বেগে ঘাম ঝরে পড়তো।
৪. ফেরেশতার মানবাকৃতিতে আগমন : কখনো ফেরেশতা মানবাকৃতি ধারণ করে মহানবী (স)-এর নিকট এসে ওহী
পৌঁছে দিতেন। এ পদ্ধতি ছিল সহজতর। হাদিসে জিবরাঈল নামে অভিহিত হাদীসখানা এ পদ্ধতির ওহীর উদাহরণ।
৫. ফেরেশতা নিজের আকৃতিতে আগমন : হযরত জিবরাঈল (আ)-কে মহান আল্লাহ যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক
সেই আকৃতিতে রাসূল (স)-এর নিকট ওহী নিয়ে আসতেন। মহানবী (স) ৩ বার হযরত জিবরাঈল (আ)-কে স্বরূপে
দেখেছিলেন।
৬. পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি : মহান আল্লাহ মহানবী (স)-এর সাথে কোন মাধ্যম ছাড়াই পর্দার অন্তরাল থেকে
সরাসরি কথা বলতেন। মি'রাজের সময় আল্লাহর সাথে এভাবেই কথা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এ পদ্ধতিতে ফরয
হয়।
৭. তন্দ্রাবস্থায় সরাসরি ওহী : মহানবী (স) তন্দ্রাবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি ওহী পেতেন। এ পদ্ধতিতে মহানবী
(স) সাতবার ওহী পেয়েছেন বলে হাদিস থেকে জানা যায়।
৮. অন্তরাল ছাড়া ওহী : এ পদ্ধতিতে আল্লাহ তা‘আলা কোন অন্তরাল ছাড়াই সরাসরি রাসূল (স)-এর সাথে কথা
বলেছেন।
৯. ইসরাফীল (আ)-এর মাধ্যমে ওহী : কোন কোন সময় মহানবী (স)-এর কাছে হযরত ইসরাফীল (আ)-এর মাধ্যমেও
ওহী নাযিল হতো।
-
সারসংক্ষেপ
আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নবী-রাসূলগণের কাছে যে ওহী নাযিল হয় তাকেই ওহী বলা হয়। ওহী নাযিলের মাধ্যম,
অবস্থা ও পদ্ধতির বিভিন্নতার কারণে ওহীকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। ওহীর জ্ঞানই নির্ভুল জ্ঞান- ইসলামের অকাট্য
দলীল। আল-কুরআন আল্লাহ তা‘আলার প্রত্যক্ষ ওহী। হাদিস রাসূল (স) -এর বাণী- এটা পরোক্ষ ওহী।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
১.ওহী শব্দের অর্থ কী ?
(ক) বিশ্বাস করা (খ) ইঙ্গিত করা
(গ) অস্বীকার করা (ঘ) গোপন করা
২.ওহী প্রধানত কত প্রকার ?
(ক) ২ প্রকার (খ) ৩ প্রকার
(গ) ৪ প্রকার (ঘ) ৫ প্রকার
৩.কয়ভাবে ওহী অবতীর্ণ হত ?
(ক) ৩ ভাবে (খ) ৪ ভাবে
(গ) ৫ ভাবে (ঘ) ৯ ভাবে
৪. ওহী নাযিলের কষ্টকর পদ্ধতি কোনটি ?
(ক) সত্য স্বপ্ন (খ) ঘন্টাধ্বনির মাধ্যমে
(গ) ফেরেশতদের মানববাকৃতি (ঘ) ফেরেশতদের নিজের আকৃতি
৫. মহানবী (স) জিবরাইল (আ.) কে কতবার আসল আকৃতিতে দেখেছেন ?
(ক) ৩ বার (খ) ৪ বার
(গ) ৫ বার (ঘ) ৯ বার
৬. নবীদের কাছে যেভাবে ওহী এসেছে -
র.ওহীয়ে কালবী রর. ওহীয়ে কালামে ইলাহী ররর. ওহীয়ে মালাকী
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
৭. সর্বপ্রথম ওহী নাযিল হয়েছে -
র.সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে রর. ঘন্টাধ্বনির মাধ্যমে ররর. ইসরাফীল (আ.)-এর মাধ্যমে
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্ন
একদিন নানা তার নাতি-নাতনীদের নিয়ে এমন একটি গ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, যা বিশ্বপ্রতিপালকের
পক্ষ হতে নাযিল হয়েছে। তা ছিল সম্পূর্ণ ত্রæটিমুক্ত। এটি পাঠ করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। এ গ্রন্থের
অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। এটি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অবতীর্ণ হয়েছে।
ক. ওহী কী ? ১
খ. ওহী কত প্রকার ও কি কি ? ২
গ. উদ্দীপকে কোন গ্রন্থটির প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে ? ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. ওহী নাযিলের অবস্থাগুলো আপনার পাঠ্য বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করুন। ৪
উত্তরমালা: ১। খ ২। ক ৩। ঘ ৪। খ ৫। ক ৬। ঘ ৭। ক
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র