ইসলামের যেমন একটি বাহ্যিক দিক রয়েছে, তেমনি এর একটি অন্তর্নিহিত দিকও রয়েছে। ইসলামের বাহ্যিক দিককে বলা
হয় শরী‘আত এবং অভ্যন্তরীণ দিক হচ্ছে তাসাউফ বা সূফিবাদ। তাসাউফ চর্চার উদ্দেশ্য হলো অন্তরকে সকল প্রকার পাপপংকিলতা হতে মুক্ত করে এক আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপযোগী করে তোলা। ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জগতের মায়া-মোহ ত্যাগ
করে আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতির সন্ধানই হলো তাসাউফ। আল্লাহ তা‘আলার নিগূঢ় রহস্য তালাশ, আত্মার পবিত্রতা এবং
মানবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন সাধনের ওপর ভিত্তি করেই সূফিবাদের উৎপত্তি। সূফিগণ সাদা-সিধা অনাড়ম্বর জীবনযাপন করেন এবং সর্বদা আল্লাহর ধ্যান ও ইবাদতে মগ্ন থাকেন। আল্লাহর প্রেমের অনুসন্ধান তথা পরম সত্তাকে জানার
প্রয়াসই তাসাউফ শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।
ইবাদত, আশরাফুল মাখলুকাত, জিন, তাসাউফ, সূফি, সূফিবাদ, আহলে সূফ্ফা।
মানবজীবনের দুটি দিক রয়েছে : একটি বাহ্যিক বা প্রকাশ্য দিক এবং অপরটি আত্মিক বা অপ্রকাশ্য দিক।
ইসলাম মানুষের বাহ্যিক জীবনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধান দিয়েছে। এর নাম শরী‘আত। অপরদিকে
মানুষের আত্মিক বা অদৃশ্য দিক নিয়ন্ত্রণের জন্যও নীতি-আদর্শ রয়েছে-এর নাম তাসাউফ।
মানুষের কেবল বাহ্যিক দিক পরিচালিত হবে ইসলামী জীবন বিধানের আলোকে, আর অন্তর পরিচালিত হবে নিজের ইচ্ছা
মাফিক- তা কখনো হতে পারে না। মানুষের অন্তর নিয়ন্ত্রণ, পরিচালন ও পরিশোধনের জন্য ইসলামে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা রয়েছে। এর প্রচলিত নাম হচ্ছে তাসাউফ।
ক্স তাসাউফ শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ : তাসাউফ () শব্দটি () সুফুন শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘সুফ’ শ্েব্দর
অর্থ পশম বা ডড়ড়ষ। সাদাসিধে জীবন যাপনের জন্য সূফিগণ পশমী পোশাক পরিধান করতেন। এ থেকেই
‘সূফি’ ও তাসাউফ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। এ মতটিই বেশি গ্রহণযোগ্য।
মোল্লা জামি বলেন, তাসাউফ শব্দটি সাফা (صفاء (‘’ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ‘সাফা’ শব্দের অর্থ পবিত্রতা।
সামআনীর মতে, তাসাউফ শব্দটি ‘বনু সাফা’ শব্দ থেকে এসেছে। আত্মার পবিত্রতার জন্য তারাই বেশি অগ্রণী ছিলেন।
কারো মতে তাসউফ শব্দটি ولا الصف) আসসাফফুল আউয়াল) থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ হলো ‘প্রথম সারি’।
আবার কারো কারো মতে তাসাউফ শব্দটি আহলুস সুফ্ফা (الصفة اھلথেে (ক উৎপত্তি লাভ করেছে। আহলুস সুফ্ফা
হলো রাসূল (স) এর একদল বিশিষ্ট সাহাবী, যারা আত্মার শুদ্ধি-জ্ঞান অর্জনের জন্য মসজিদে জীবন কাটিয়েছিলেন।
পশ্চিমা পন্ডিতদের মতে- সূফি শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘সাফি’ থেকে এসেছে। সাফিয়া শব্দের অর্থ জ্ঞান। সূফিরা আধ্যাত্মিক
জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন বলে তাদেরকে ‘সূফি’ বলা হয়। আর তাদের শাস্ত্রকে ‘তাসাউফ’ বলা হয়।
তাসাউফের পারিভাষিক পরিচয় :
বিভিন্ন সূফি-সাধক ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ তাসাউফ বা সূফিবাদের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমনইমাম গাযালি (র) বলেন, ‘তাসাউফ এমন এক বিদ্যা যা মানুষকে পাশবিকতা থেকে উন্নীত করে মনুষ্যত্বের চূড়ান্ত পর্যায়ে
পৌঁছিয়ে দেয়।
বিশ্ববিখ্যাত সূফি যুননুন মিসরি (র) বলেন- “আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর সব কিছু বর্জন করাই হলো তাসাউফ।”
জুনায়েদ বাগদাদি (র) বলেন- “তাসাউফ হলো জীবন মৃত্যুসহ সকল বিষয়ে আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া।”
বায়েজিদ বোস্তামি (র) বলেন- “আল্লাহর ইবাদতে পরিপূর্ণভাবে নিয়োজিত হওয়া এবং নৈকট্য লাভের উদ্দেশে পৃথিবীর
সকল দুঃখ-কষ্ট সানন্দে গ্রহণ করার নাম তাসাউফ।
মোটকথা তাসাউফ বা সূফিবাদ হলো অন্তরের বিভিন্ন পাশবিক প্রবৃত্তি তথা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা,
পরশ্রিকাতরতা প্রভৃতি থেকে মুক্ত হয়ে এক আল্লাহর পরিচয়, তাঁর প্রেম ও নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করা । আর এ চেষ্টা
করার সাধনাকেই তাসাউফ বা সূফিবাদ বলা হয়।
যে সব ব্যক্তি নিরন্তর চেষ্টা সাধনার মধ্য দিয়ে ইসলামের গভীর জ্ঞান লাভ করার চেষ্টা করেন, নিজের পাপের অনুশোচনা
করে আত্মাকে পবিত্র করেন এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন তাকে সূফি বলা
যায়।
গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
আত্মাকে পবিত্রকরণের মাধ্যম ঃ
আত্মাকে পূত-পবিত্র ও কলুষমুক্ত রাখার মাধ্যমে জীবনে সফলতা লাভ করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
ব্যক্তি আত্মাকে পূত-পবিত্র রাখল, সে সাফল্য লাভ করল। আর যে ব্যক্তি আত্মাকে কলুষিত করল সে ধ্বংস হয়ে
গেল।” (সূরা আশ-শামস৯১:৯-১০)
আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেন
“সেই ব্যক্তিই সফল, যে পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি অর্জন করে এবং তার প্রভুর স্মরণ করে ও সালাত আদায় করে।” (সূরা
আল-আলা- ৮৭:১৪-১৫)
লোভ লালসা কামনা-বাসনা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি মানুষকে কলুষিত করে। এতে আত্মা অপবিত্র হয়ে পড়ে। সৎ চিন্তা, সৎ
কর্ম, আল্লাহর যিকর ইত্যাদি মানুষের আত্মাকে পবিত্র রাখে। সুতরাং আত্মার শুদ্ধতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে রাসূল
(স) বলেনدَسَ
“সাবধান ! নিশ্চয় মানুষের দেহের মধ্যে একখন্ড গোশত আছে, যখন তা সুস্থ থাকে, তখন সমস্ত দেহই সুস্থ থাকে। আর
যখন তা দূষিত হয়ে পড়ে তখন সমস্ত দেহই অসুস্থ হয়ে পড়ে। জেনে রেখো, তা হচ্ছে অন্তকরণ।” (বুখারী ও মুসলিম)
কাজেই সবসময় আত্মাকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে হবে। আর তা অর্জন করা যায় তাসাউফের মাধ্যমে।
মানবিক গুণাবলি অর্জনের মাধ্যম
মানবিক সৎ গুণাবলি অর্জন এবং পাশবিকতা দমন করা যায় তাসাউফ অর্জনের মাধ্যমে। কাজেই মানবিক গুণাবলি ও
অন্তরের পবিত্রতা আনয়নের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে।
কল্যাণ লাভের মাধ্যম
শান্তিময় জীবন নিশ্চিত করার জন্য তাসাউফের চর্চা ও বাস্তব জীবনে এর অনুশীলন করা প্রয়োজন। তাসাউফের সাধনার
মাধ্যমে কল্যাণ লাভের আশা করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন- “সে কল্যাণ লাভ করেছে, যে নিজেকে পবিত্র করেছে। আর
ধ্বংস হয়েছে সে, যে নিজের আত্মাকে অপবিত্র করেছে।” (আশ্-শাম্স-৯১:৯-১০)
সকল প্রকার মন্দ এক হয়ে অন্তরে মরিচা পড়ে। অন্তরে যাতে কোন ধরনের মরিচা পড়তে না পারে- সেই ব্যাপারে মহান
আল্লাহ বলেন-
“কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের হৃদয়ে জং ধরিয়েছে।” (সূরা মুতাফফিফীন- ৮৩:১৪)
সারসংক্ষেপ
তাসাউফ পূত-পবিত্র ও পরিশুদ্ধতা। তাসাউফ চর্চার মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ ও পূত-পবিত্র হয়। মানবিক গুণাবলি অর্জন
করা সহজ হয়। এর মাধ্যমে মানুষের যোগ্যতা এবং সে গুণাবলি অর্জন করার কৌশল অর্জিত হয় অর্থাৎ যে বিজ্ঞান বা
যে শাস্ত্র চর্চা করলে মানুষ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় লাভের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধির জ্ঞান অর্জন করতে
পারে তাকে তাসাউফ বলে। যে বিজ্ঞান বা শাস্ত্র চর্চা করলে মানুষ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর তা‘আলার পরিচয়ের পাশাপাশি
আত্মশুদ্ধির বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান লাভ করতে পারে, তাকে তাসাউফ বলে। তাসাউফ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনকারী এবং তার
অনুসারিকে সূফি বলে।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
১. তাসাউফ শব্দটি কোন শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে ?
(ক) সাফা (খ) সাওফ
(গ) শাফি (ঘ) সূফি
২. আহলুস সুফ্ফা কারা ?
(ক) মসজিদে নববীতে ছিল যাদের বসবাস (খ) মক্কাতে যাদের বসবাস
(গ) যারা নিজেদের ঘরে বসবাস করেন (ঘ) যারা শহরে বসবাস করেন
৩. কীভাবে আত্মশুদ্ধি লাভ করা যায় ?
(ক) কবিতা চর্চার মাধ্যমে (গ) মসজিদে যাতায়াত করে
(গ) তাসাউফ চর্চার মাধ্যমে (ঘ) ওয়ায মাহ্ফিলের মাধ্যমে
৪। “যে ব্যক্তি আত্মাকে পূত পবিত্র রাখল সে সাফল্য লাভ করল” এটি কার কথা ?
(ক) আল্লাহর (খ) রাসূল (স)
(গ) হযরত উমর (রা)-এর (ঘ) হযরত আলী (রা)-এর
জলিল সাহেব একজন পরহেজগার ব্যক্তি। তিনি নামাযের পর অনেক সময় পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল করেন।
৫। জলিল সাহেবের কর্ম কীসের প্রতি ইঙ্গিত করে ?
র. তাসাউফ রর. মারেফাত ররর. আত্মশুদ্ধি
নিচের কোনটি সঠিক ?
(ক) র ও রর (খ) রর ও রর
(গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্ন
উদ্দিপক,
আদিলুর রহমান সাহেব নিয়মিত সালাত আদায় করেন। কিন্তু তার অন্তরে এখনো হিংসা ও ক্রোধ আছে। মানুষের সাথে
শত্রæতা পোষণ করেন। তাই তিনি একদিন এক আলিমের নিকট গিয়ে তার অন্তরে এই খারাপ দিকগুলো তুলে ধরেন।
তখন আলিম সাহেব তাকে সর্বদা অন্তরে আল্লাহর স্মরণ করার এবং তাসাউফ (আত্মশুদ্ধির) চর্চার পমরামর্শ দেন।
ক. তাসাউফ কী ? ১
খ.কীভাবে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায় ? ২
গ.তাসাউফের জ্ঞান অর্জন কেন প্রয়োজন ? ৩
ঘ. উদ্দিপকের আলোকে তাসাউফের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরুন। ৪
উত্তরমালা: ১। ক ২। ক ৩। গ ৪। ক ৫। ঘ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র