মৃত্যুদান, হাশর, হিসাব-নিকাশ।
২৮. তোমরা কিভাবে আল্লাহর সাথে কুফরি করছ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন জীবিত তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন।
আবার তোমাদের মৃত্যুদান করবেন ও পুনরায় জীবিত করবেন। পরিণামে তাঁর নিকটেই তোমাদেরকে ফিরানো হবে।
শব্দার্থ
كيف -কিভাবে, কিরূপে। تكفرون-েতামরা কুফরি কর, আল্লাহকে অস্বীকার কর। باالله-আল্লাহর সাথে। و-এবং, অথচ।
تمঢ়ك-েতামরা ছিলে। تا اموا-মৃত। ثم-অতঃপর। يكمৎيح-জীবন দান করলেন। يكمৎيح ثم-অতঃপর তোমাদের জীবন
দান করলেন। ثم-পুনরায়, আবার। ترجعون اليه ثم-আবার তোমাদেরকে তার নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অন্য কাউকে তাঁর সাথে শরীক না করার জন্য সুস্পষ্ট যুক্তি পেশকরে কাফির ও
মুশরিকদের লক্ষ্য করে বলেছেন, তোমরা কিসের ভিত্তিতে, কোন যুক্তিতে আল্লাহর অনুগ্রহসমূহের কথা ভুলে তাঁর
বিরোধিতা করছ এবং অন্যকে উপাস্য ও মাবুদ স্বীকার করছ? অথচ তিনিই যে তোমাদের একমাত্র মাবুদ এবং আনুগত্যের
অধিকারী। যেমন- তোমরা কিছুই ছিলে না, দেহে প্রাণ সঞ্চার করার পূর্বে তোমাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। তোমরা ছিলে
সম্পূর্ণ নির্জীব। তিনিই তোমাদের প্রাণ দান করে সঞ্জীবিত করেছেন। পিতার ঔরসে ও মায়ের গর্ভের মাধ্যমে তোমাদের
ইসলাম শিক্ষা দ্বিতীয় পত্র
ইউনিট তিন পৃষ্ঠা-১০৯
পৃথিবীতে আনয়ন করা হয়েছ ভ‚মিষ্ঠ হবার পর কিছুকাল পৃথিবীতে অবস্থান করলে। তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন।
মৃত্যুর পর আবার হিসাব-নিকাশের জন্য আবার তাঁর কাছেই তোমরা সমবেত হবে। তোমাদের জীবনের উপরিউক্ত
অবস্থাগুলোর কোন একটাও কি তোমাদের নিজস্ব ক্ষমতায় কিংবা তোমাদের দেব-দেবীদের সহায়তায় ঘটেছে? যদি তা না
হয়ে থাকে, তবে তোমরা অকৃতজ্ঞের ন্যায় কেন এবং কি করে তাঁর বিরোধিতা করছ, সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেকবান প্রত্যেকটি
হৃদয় অবশ্যই এর বিরোধিতা করবে।
২৮ নং আয়াতের বিশ্লেষণ হতে আমরা যে মূল শিক্ষা পাচ্ছি তা হচ্ছেÑ
(ক) আল্লাহ মানুষকে অফুরন্ত করুণা ও অনুগ্রহ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
(খ) মানুষ প্রথমাবস্থায় ছিল নি®প্রাণ।
(গ) আল্লাহ তাতে প্রাণ সঞ্চার করেছেন।
(ঘ) আল্লাহ মানুষকে মৃত্যু ঘটিয়ে অনন্ত জীবনের দিকে নিয়ে যাবেন।
(ঙ) বিচারের জন্য পুনর্জীবিত করবেন।
(চ) তারপর সকলকেই তাঁর কাছে উপস্থিত হতে হবে এবং কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে।
(ছ) অতএব কখনই আল্লাহর অবাধ্য ও বিরুদ্ধাচরণ করা মানুষের পক্ষে উচিত নয়।
২৯. তিনিই সেই সত্তা (আল্লাহ) যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে
মনোযোগ দান করেন এবং তাকে সপ্ত আকাশে বিন্যস্ত করেন এবং তিনিই সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবগত।
শব্দার্থ
هو-েস, তিনি। الذى-েয, যিনি। خلق-সৃষ্টি করেছেন। لكم-েতামাদের জন্য। لكم خلق الذى هو-তিনিই সেই সত্তা যিনি
তোমাদের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। ما-যা। فى-মধ্যে। الارض-পৃথিবী। الارض مافى-যা পৃথিবীতে আছে। الارض فى ما
جميعا-পৃথিবীতে যা আছে তার সবকিছু। ثم -তারপর, আবার। اسنوى-লক্ষ করলেন, মনোযোগ দিলেন। الى-দিকে,
প্রতি। سموت-আকাশ। السماء الى-আকাশের দিকে। سوهن -তাদের বিন্যস্ত করলেন। سبع-সাত। سموت-আকাশসমূহ।
سموت سبع-সাত আকাশ। هو-তিনি। ب-সম্পর্কে, সাথে। لচ-প্রত্যেক। شئ-বস্তু, জিনিস। ليم৮ -সর্বজ্ঞ, বিশেষভাবে
জ্ঞাত, সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
এ আয়াতে মানুষের প্রতি আল্লাহর অসীম দান ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, হে কাফিরগণ! তোমাদের
জন্য আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন। আকাশ-বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, সাগর-মহাসাগর, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি একমাত্র তোমাদের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন।কোনটি তোমাদের খাদ্য, কোনটি তোমাদের
পানীয়, আবার কোনটি তোমাদের চোখের আরামদায়ক। অতএব দাতার দানসমূহ স্বীকারপূর্বক তাঁর প্রত্যেকটি আদেশনিষেধ মেনে চলাই প্রত্যেকটি বিবেকবান মানুষের কর্তব্য। এ জন্যই আল্লাহ তাঁর সাধারণ ও বিশিষ্ট নিআমতসমূহ স্মরণ
করে দিয়েছেন।
‘সাতটি আকাশ' বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। প্রত্যেক যুগেই মানুষ আকাশ বা পৃথিবী বহির্ভূত
জগৎ সম্পর্কে নিজেদের পর্যবেক্ষণ বা ধারণা-কল্পনার ভিত্তিতে বিভিন্ন মতবাদ পেশ করেছে এবং পরবর্তী যুগে আবার তা
পরিবর্তিতও হয়ে গেছে। সুতরাং কোন মতবাদের ওপর ভিত্তি করে কুরআনের এ কথার ব্যাখ্যা করা সঙ্গত হবে না। তবে
সাতটি আকাশ বিন্যস্ত করার অর্থ এই যে, পৃথিবী ব্যতীত আরও যে বিরাট জগৎ রয়েছে, তাকে আল্লাহ তা‘আলা সাতটি
সুদৃঢ় স্তরে বিন্যস্ত করে রেখেছেন।
‘তিনি সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবগত'- এ বাক্যাংশ দ্বারা দুটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত¡ উদঘাটিত হয়েছে। প্রথমত এই যে, তোমরা সেই
আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার সাহস কর যিনি তোমাদের সকল কাজকর্ম ও গতিবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল
এবং যার দৃষ্টি থেকে তোমাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ এমনকি মনের কল্পনাও অদৃশ্য নয়। আর দ্বিতীয় এই যে, আল্লাহ
তা‘আলা সমস্ত নিগূঢ় তত্ত¡ ও তথ্য সম্পর্কে সম্যক অবগত। তিনিই মূলত সকল জ্ঞানের উৎস। সুতরাং তাঁর দিক থেকে
বিমুখ হয়ে মূর্খতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই লাভ হবে না। বরং এটা চরম ক্ষতিকর।
তাফসীরে আশরাফীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “প্রথমে মহান আল্লাহ জমিনের মৌল পদার্থ সৃষ্টি করেছেন এবং তা পৃথিবীর
বর্তমান আকৃতিতে আসার পূর্বেই আকাশের মৌল পদার্থ সৃষ্টি করেন- যা প্রাথমিক অবস্থায় ধোঁয়ার আকারে ছিল। অতঃপর
পৃথিবীকে বর্তমান আকার দান করে তাতে গাছ, পালা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি সৃষ্টি করেন। অতএব এ ব্যাখ্যার পর আর
কোন মতানৈক্য থাকে না।
তিনি সকল বিষয়ে সার্বিক জ্ঞান রাখেন। কেননা তিনিই সকলের স্রষ্টা, সকল জিনিসের নিয়ন্ত্রক, ব্যবস্থাপক। কাজেই
মানুষের উচিত তাঁরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁরই ইবাদাত ও আনুগত্য করে জীবনকে সার্থক করে তোলা।
এ আয়াতের পর্যালোচনায় আমরা যে সব শিক্ষা পাই তা হলোÑ
১. মহান স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলামীন একক সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তিনিই সকলের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক।
২. মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং প্রতিনিধি।
৩. মানুষের জন্যই পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে।
৪. কাজেই মানুষ কোন সৃষ্ট বস্তুর কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করবে না বা তার মাথা কোন সৃষ্টি বস্তুর কাছে নত করবে না।
৫. মহাশক্তিধর আল্লাহ তা‘আলা মহাবিশ্বের আকাশমÐলের স্রষ্টা এবং তিনিই তা সুবিন্যস্ত করেছেন। এতে অপর কারো
হাত নেই।
সারসংক্ষেপ
তিনি সকল সৃষ্টিলোক সম্পর্কে অবহিত। তাঁর জ্ঞানের ও কর্তৃত্বের বাইরে কিছুই নেই।
কাজেই মহান স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে অস্বীকার করা বা অমান্য করা কারো উচিত নয়। তাঁরই
ইবাদাত করা এবং তাঁরই বিধানমত জীবন পরিচালনা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
১। ‘আমওয়াত’ শব্দের অর্থ কী ?
(ক) মৃত (খ) জীবিত
(গ)অর্ধ মৃত (ঘ) অসুস্থ
২. ‘ইয়ুহয়িকুম’ শব্দের অর্থ কী ?
(ক) মৃত ঘোষণা করলেন (খ) জীবন দান করলেন
(গ) সোজা করলেন (ঘ) বাঁকা করলেন
২. ‘তুরজাউন’ শব্দের অর্থ কী ?
(ক) পুষিয়ে দেওয়া হবে (খ) দিয়ে দেওয়া হবে
(গ) ফিরিয়ে নেয়া হবে (ঘ) অর্পণ করা হবে
৪. ‘জামিয়া’ শব্দের অর্থ কী ?
(ক) সবকিছু (খ) অল্প
(গ) অর্ধেক (ঘ) বেশির ভাগ
৪. আল্লাহ আকাশকে কয়টি স্তরে বিভক্ত করেছেন ?
(ক) ৫টি স্তরে (খ) ৭টি স্তরে
(গ) ৯ টি স্তরে (ঘ) ১১ টি স্তরে
সৃজনশীল প্রশ্ন
উদ্দীপক,
জিসান ও রিয়াজ দুই বন্ধু। কলেজ ছুটির সময় তারা উভয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যায়। চাঁদনি রাতে তারা সমুদ্রের তীরে
বসে সমুদ্রের ঢেউ, দূরের গাছ-পালার সৌন্দর্য ও ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছিল। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে জিসান বলল,
এসবই মহান আল্লাহর দান। রিয়াজ বলল, এসব হল প্রকৃতির দান।
ক. কুফর কী ? ১
খ. ‘আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন‘- ব্যাখ্যা করুন। ২
গ. আল্লাহ কীভাবে প্রাণহীন মানুষকে প্রাণদান করেছেন ? ৩
ঘ. জিসানের উক্তি ‘এসবই মহান আল্লাহর দান’ - উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করুন। ৪
উত্তরমালা: ১। ক ২। খ ৩। গ ৪। ক ৫। ৭টি
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র