মাছ ও চিংড়ি জলজ প্রাণি। প্রাণি মাত্রই বিভিন্ন রোগের শিকার হয়, মাছ ও চিংড়ি এর ব্যতিক্রম নয়। জলজ পরিবেশের
যাবতীয় গুণাগুনের অনুক‚ল মাত্রা এবং সুষম পুষ্টির যোগান মাছ ও চিংড়ির সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন বজায় রাখার পূর্বশর্ত।
জলাশয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রোগ জীবাণু, কীটপতঙ্গ বাস করে এবং এরা সেখানে বাসকারী মাছ ও চিংড়ির সাথে এক
ধরনের দূর্বল ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। কোনো কারণে জলজ পরিবেশের অবনতি বা দূষণ ঘটলে এর একটি ক্ষতিকর
প্রভাব মাছ ও চিংড়ির ওপর পড়ে এবং এদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপর্যস্ত হয়ে যায়। যার ফলে মাছ ও চিংড়ি
দূর্বল হয়ে যায় এবং ঠিক এসময়ই ওৎপেতে থাকা রোগ-জীবাণু এদেরকে আক্রমণ করে এবং এরা রোগক্রান্ত হয়ে পড়ে।
সহজ কথায় রোগ বলতে যে কোনো প্রাণির দেহ ও মনের অস্বাভাবিক অবস্থাকে বুঝায় যা বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ,
চিহ্ন বা আচরনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। মাছ বা চিংড়ির রোগ বলতে প্রতিক‚ল পারিবেশিক অবস্থায় মাছ বা
চিংড়ির ওপর সৃষ্ট ধকল বা চাপের কারণে দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে যাওয়া এবং রোগ
জীবাণু দ্বারা আক্রমণের শিকার হওয়াকে বুঝায় যা বিশেষ কিছু লক্ষণ, চিহ্ন বা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সুতরাং
দেখা যাচ্ছে মাছ বা চিংড়ির রোগ সৃষ্টিকারী প্রধান উপাদান বা নিয়ামক ৩টি। যথা
(১) পরিবেশগত ধকল বা চাপ
(২) পোষক মাছ/চিংড়ির সংবেদনশীলতা
(৩) কার্যকর রোগজীবাণু/পরজীবী
উল্লেখিত কার্যকারণ ছাড়াও মাছ ও চিংড়ির রোগ সংগঠনের জন্য নি¤েœাক্ত নিয়ামগুলোকেও দায়ী করা যায়
(১) বংশানুক্রম
(২) পুষ্টিমান
(৩) অন্যান্য উৎপাদন উপকরণ
(৪) ক্রটিপূর্ণ পরিবহণ এবং হ্যান্ডেলিং
(৫) উল্লিখিত সবগুলো কারণের আন্ত:ক্রিয়া।
এখানে মাছ ও চিংড়ির রোগসৃষ্টিকারী উপাদান বা কারণগুলোকে আরো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো-
(১) পরিবেশগত ধকল বা চাপ : চাপ সৃষ্টিকারী এবং অস্বাস্থ্যকর জলজ পরিবেশের জন্য দায়ী কারণগুলো নি¤œরূপ-
(ক) পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণের অবনতি
পানির অধিক তাপমাত্রা এবং শীতল অভিঘাত
পানির ঘোলাত্ব
পানির কটু গন্ধ বা গন্ধযুক্ত পানি
হাইপোক্সিয়া/অ্যানোক্সিয়া/হাইপারোক্সিয়া
এসিডোসিস/ অ্যালকালোসিস
বিষাক্ত গ্যাস যেমন- অ্যামোনিয়া (ঘঐ৩), নাইট্রাইট (ঘঙ২), হাইড্রোজেন সালফাইড (ঐঝ২) এর উপস্থিতি।
মাত্রাতিরিক্ত জৈব তলানি
এগ্রোকেমিক্যাল দূষণ (কৃষিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার)
কল-কারখানার বর্জ্যজনিত দূষণ
পয়: নর্দমাবাহিত ময়লার কারণে দূষণ
পানিতে ভারী ধাতুর ঘনত্বজনিত দূষণ
(খ) পানির জৈবিক গুণাগুণের অবনিত
জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদের যারা একই পরিবেশে মাছ ও চিংড়ির সংগে অবস্থান করে তাদের আধিক্যজনিত কারণে জলাশয়ের
স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়। যেমনপাঠ-৪.১
জলাশয়ে সাপ, ব্যাঙ, উদবিড়াল ইত্যাদি রাক্ষুসে প্রাণির উপদ্রব
বিভিন্ন মৎস্যভ‚ক পাখি যেমন- বক, মাছরাঙা, পানকৌড়ির উপদ্রব
বিভিন্ন পরজীবীর মাধ্যমিক পোষক যেমন- শামুক, ঝিনুক ইত্যাদির আধিক্য
জলজ আগাছার আধিক্য
নীলাভ সবুজ শৈবাল এর আনাধিক্যজনিত বøুম
(২) রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ :
(ক) এককোষী ও বহুকোষী পরজীবী (খ) ভাইরাস (গ) ব্যাকটেরিয়া (ঘ) ছত্রাক
(৩) পুষ্টিজনিত কারণ :
(ক) প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব (খ) সুষম সম্পূরক খাদ্যের অভাব (গ) পুষ্টির আধিক্য
(৪) উৎপাদন উপকরণ এবং ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কারণ :
(ক) ত্রæটিপূর্ণভাবে বড় মাছ বা পোনা পরিবহণ ও হ্যান্ডেলিং
(খ) ত্রæটিপূর্ণভাবে পুকুর/জলাশয় প্রস্তুতকরণ
(গ) আঘাতপ্রাপ্ত মাছ/মাছের পোনা মজুদকরণ
(ঘ) অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদকরণ
(ঙ) অন্য জলাশয়ে ব্যবহৃত জাল বা উপকরণ শোধন না করে ব্যবহার
রোগ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর আন্ত:ক্রিয়া :
মাছ/চিংড়ির রোগ সংগঠনে আন্ত:ক্রিয়াশীল তিনটি উপাদান প্রধান ভ‚মিকা রাখে। উপাদান তিনটি হলো- (ক) পরিবেশের
ধকল/চাপ (খ) পোষকের সংবেদনশীলতা এবং (গ) কার্যকর রোগজীবাণু। এদের আন্ত:ক্রিয়া নিচের রেখাচিত্রের সাহায্যে
ব্যাখ্যা করা যায়।
কোন জীবের পরিবেশ হলো তার অবস্থানের পারিপার্শ্বিক অবস্থা। মাছ/চিংড়ি হলো জলজ প্রাণি। কাজেই, মাছ/চিংড়ির
পরিবেশ হলো পানি এবং এর ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক অবস্থা। জলজ পরিবেশে মাছ/চিংড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের
রোগজীবাণুও বসবাস করে। একই জলজ পরিবেশে বসবাসকারী মাছ/চিংড়ি এবং রোগজীবাণুর মধ্যে একটি দূর্বল
ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বিরাজমান। এ অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত জলাশয়ে মাছ/চিংড়ির জন্য
প্রয়োজনীয় পরিবেশ বজায় থাকে। অর্থাৎ পানির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক অবস্থা মাছ/চিংড়ির বসবাসের জন্য অনুক‚ল
থাকে। যখন জলাশয়ে মাছ/চিংড়ির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ বিঘিœত হয় বা অনুপস্থিত থাকে, তখন পরিবেশগত একটা
ধকল/চাপের সৃষ্টি হয়। এরকম ধকলপূর্ণ অস্বাভাবিক পরিবেশ রোগজীবাণুর বসবাসের জন্য অনুক‚ল হলেও মাছ/চিংড়ির
জন্য তা মোটেও সুখকর হয় না। এরূপ অবস্থায় মাছ/চিংড়ির শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় বিঘœ ঘটে,শরীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা
বিপর্যস্ত হয় এবং এরা অধিকতর সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এই সুযোগে সুযোগ-সন্ধানী রোগজীবাণু মাছ/চিংড়িকে আক্রমণ
করার প্রয়াস পায়। পারিবেশিক ধকলে পিষ্ঠ মাছ/চিংড়ি এসব রোগজীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে না এবং
রোগাক্রান্ত হয়। একটি উদাহরনের সাহায্যে ব্যাপারটিকে সহজে বুঝানো যায়। যখন কোন জলজ পরিবেশে জৈব পদার্থের
পচনক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, তখন মাছ/চিংড়ির জন্য অনুক‚ল পরিবেশ বিঘিœত হয়; কিন্তু রোগজীবাণুর জন্য অনুক‚ল পারিবেশ সৃষ্টি
পরিবেশ
রোগ
রোগ জীবানু পোষক
হয়। এরূপ অস্বাভাবিক পরিবেশিক পরিস্থিতিতে মাছ/চিংড়ির জীবন যখন বিপর্যন্ত ঠিক তখনই তারা রোগজীবাণুর
আক্রমণের শিকার হয। ফলে মাছ/চিংড়ির রোগ দেয়া দেয়।
রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া : প্রাথমিকভাবে পোষক (মাছ/চিংড়ি) তার বাহ্যিক প্রতিবন্ধক (যেমন-ত্বক, আঁইশ, খোলস, মিউকাস
মেমব্রেন দ্বারা সংক্রামক রোগজীবাণুকে দেহে প্রবেশে বাধা দেয়। তবে যখন কোন রোগজীবাণু/পরজীবী তার অনুক‚ল
পরিবেশে পোষকের দেহের ভিতরে প্রবিষ্ট হয় বা বহিঃরাঙ্গে আবদ্ধ হয়, তখন রোগ সংক্রামণ নি¤েœাক্ত তিনটি ধাপে হতে
পারে-
পোষকের দৈহিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সংক্রমণ প্রতিহত করে
এবং রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে পোষক সুস্থ্য থাকে।
পোষকের দৈহিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা রোগের সংক্রামণ প্রতিহত
করে, কিন্তু রোগজীবাণুকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারে না।
এক্ষেত্রে পোষাক রোগজীবাণুর বাহকে পরিণত হয়, কিন্তু রোগের
লক্ষণের প্রকাশ ঘটে না। এটি হলো সুপ্তাবস্থা। এরূপ অবস্থায়
পোষকের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা দূর্বল হলেই রোগের প্রকোপ
ঘটে।
রোগজীবাণু পোষকের দেহে প্রবিষ্ট হয় এবং পোষকের রোগ
প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলে। ফলে মাছ রোগাক্রান্ত হয়।
সারসংক্ষেপ
প্রাণি মাত্রই বিভিন্ন রোগের শিকার হয়। রোগ হল শরীর ও মনের অস্বাভাবিক অবস্থা। পরিবেশগত ধকল, পোষকের
সংবেদনশীলতা এবং রোাগজীবাণু ছাড়াও বিভিন্ন কার্যকারণ রোগ সংগঠনের জন্য দায়ী। প্রতিটি প্রানেরই নিজস্ব রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপর্যস্ত হলেই রোগ দেখা দেয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.১
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। মাছ ও চিংড়ির রোগ সৃষ্টিকারী প্রধান উপাদান কয়টি?
(ক) ১টি (খ) ২টি
(গ) ৩টি (ঘ) ৪টি
২। রোগজীবাণু দেহে প্রবেশে বাধা সৃষ্টিকারী বাহ্যিক প্রতিবন্ধক নয় কোনটি?
(ক) ত্বক/খোলস (খ) আঁইশ
(গ) পাখনা (ঘ) মিউকাস
৩। পানির অক্সিজেন শুন্য অবস্থা কোনটি?
(ক) অহড়ীরধ (খ) ঐুঢ়ড়ীরধ
(গ) ঐুঢ়বৎড়ীরধ (ঘ) অপরফড়ংরং
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র