মাছ পরিবহন সম্পর্কে বর্ণনা কর মাছ বাজারজাতকরণ সম্পর্কে বর্ণনা কর

মাছ পরিবহন
মাছ চাষের জন্য পোনা পরিবহনে দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাছ চাষে সফলতা আনার জন্য সুস্থ ও সবল
পোনা অতীব প্রয়োজন। তাই মাছ চাষের ক্ষেত্রে পোনা পরিবহনের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া অত্যাবশ্যক। রেণু পোনা মূলত:
আঁতুড় পুকুর, লালন পুকুর ও মজুদ পুকুরের জন্য পরিবহণ করা হয়ে থাকে। পোনা পরিবহনকালে অক্সিজেন ঘাটতি,
শারীরিক ক্ষত, অ্যামোনিয়া, তাপমাত্রা ইত্যাদির উপর পোনার মৃত্যুর হার অনেকাংশ নির্ভর করে। তাই পোনা পরিবহনের
সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পোনা মারা না যায় বা কম মারা যায় এবং আঘাত না পায়। পোনা পরিবহনের সময় যথেষ্ট
সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং পোনা পরিবহনের পূর্বে পোনাকে কন্ডিশনিং বা টেকসই করে নিতে হয়।
পোনা টেকসই বা কন্ডিশনিং পদ্ধতি
পোনা পরিবহণের সময় যাতে মারা না যায় সেজন্য পোনাকে অবশ্যই টেকসই বা পরিবহনের উপযুক্ত করে নিতে হয়। যদি
কাছাকাছি কোনো স্থানে পোনা পরিবহন করতে হয় তাহলে জালের মধ্যে পোনা রেখে চারদিকে পানির প্রবাহ দিতে হয়।
এতে করে পোনা অল্প জায়গায় থাকতে অভ্যস্ত হবে আর পানির প্রবাহে অক্সিজেনের সরবরাহ হওয়ার সাথে সাথে পোনা
ভয় পায় এবং তাড়াতাড়ি করে মলমূত্র ত্যাগ করে ও বমি করে পেট খালি করে ফেলবে। ফলে পরিবহনের সময় পোনা
মলমূত্র ত্যাগ করে পানি দূষিত করতে পারে না। আর পরিবহনের সময় যদি দীর্ঘ হয় তাহলে পোনাকে অধিকতর টেকসই
করার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে পোনাকে হাপায় রেখে অথবা চৌবাচ্চায় অল্প পানির প্রবাহে রেখে একদিন উপবাসে রাখতে
হবে। পোনাগুলো তখন হাপাতে ছোটাছুটি করতে থাকে এবং তখন তাদের পেট প্রায় সম্পূর্ণ খালি হয়ে যায়। ফলশ্রæতিতে
পরিবহনের সময় বমি বা মল ত্যাগ করে না এবং পরিবহনের পাত্র দূষিত হয় না। বাংলাদেশে পোনা পরিবহনের দুটি
পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। একটি সনাতন পদ্ধতি এবং অপরটি আধুনিক পদ্ধতি।
সনাতন পদ্ধতি
অতি প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দেশে পোনা পরিবহনের জন্য মাটির পাত্র ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে অবশ্য
ধাতব পাত্র যেমন কেরোসিনের টিন, কাসা বা অ্যালমুনিয়ামের পাতিল ব্যবহৃত হচ্ছে। ধাতব পাত্রের পানি তাড়াতাড়ি গরম
হয়ে যায় ফলে পোনা মারা যেতে পারে। এ অবস্থায় ভেজা কাপড় বা চট পানিতে ভিজিয়ে পাত্রের গায়ে জড়িয়ে রাখলে
পাত্র সহজে গরম হয় না। সাধারনত: ২০-২৪ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পাতিল দ্বারা ৩-৫ সে.মি. আকারের ৩০০-
৬০০ টি পোনা তিন থেকে চার ঘন্টার পথ পরিবহণ করা যায়। মাটির পাতিলে বাষ্পীভবন খুব ভালো হয় বিধায় পানি ঠান্ডা
থাকে। মাটির পাতিল বা হাড়ি দ্বারা পোনা পরিবহনকালে যেসব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত সেগুলো হলো- পোনা
পরিবহনকালে পাতিল বা হাড়িতে বেশ জোরে এবং বেশি বেশি ঝাঁকনি দেয়া উচিত নয় কেননা এতে অনেক পোনা
পাতিলের গায়ে ধাক্কা খেয়ে জখম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নলক‚পের বা টেপের পানি দ্বারা পাতিল বা হাড়ির পানি বদলানো
উচিত নয় কেননা এধরনের পানিতে ক্লোরিন থাকে যাতে পোনা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সতর্কতার সাথে পানি
বদলাতে হবে এবং পোনা পরিবহনের সময় পানি বদলানোর জন্য মগ, গামছা এবং বালতি ইত্যাদি সাথে রাখা উচিত।
সনাতন পদ্ধতিতে পোনা পরিবহনের সময় প্রধানত ঃ দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমনক. পোনা পরিবহনের সময় যেন অক্সিজেনের অভাব না হয়। খ. পরিবহনের সময় পোনা যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।
পোনা পরিবহনের আধুনিক পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে পোনা পরিবহনের জন্য অক্সিজেন পূর্ণ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতি অধিক নিরাপদ ও
ঝামেলামুক্ত। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে পোনা পরিবহন বেশ সহজ। রেণু অথবা ধাণী পোনা পরিবহনের জন্য অক্সিজেনপূর্ণ
পলিথিন ব্যাগই উত্তম। ব্যাগের ৩/ ১ অংশ পানি এবং ৩/ ২ অংশ অক্সিজেন দিয়ে পূর্ণ করতে হয়। ভর্তিকৃত অক্সিজেনের ৬০
ভাগ হবে গ্রহণ যোগ্য অক্সিজেন। প্রথমে ব্যাগে পানি ভর্তি করে পরে সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন পূর্ণ করা হয়। চটের
ব্যাগের পরিবর্তে কার্ডবোর্ড, কার্টুনও ব্যবহার করা যায়। পরিবহনের দূরত্ব, পরিবহন পাত্রের আকার বা পানি ধারণ ক্ষমতা
ও পোনার আকারের ওপর ভিত্তি করে পোনার পরিমান নির্ণয় করতে হয়। একটি ৮-১০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন
পরিবহন পাত্রে ১২-১৮ ঘন্টা পর্যন্ত নিচের সারণি অনুযায়ী রেণু পোনা পরিবহন করা সম্ভব।
সারণি: পোনার সাইজের পার্থক্যভেদে পরিবহণযোগ্য পোনার সংখ্যা আকার সংখ্যা
০.৬ সে. মি. ২৫০০ টি
১.২৫ সে. মি. ১৪০০ টি
২.৫ সে. মি. ৫০০ টি
৩.৪ সে. মি. ৩০০ টি
৫.০ সে. মি. ২৫০ টি
৭.৫ সে. মি ১০০ টি
আধুনিক পদ্ধতিতে পোনা পরিবহনকালেও বেশ কতগুলো
সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যেমনক. পোনা পরিবহনের জন্য পোনা সাধারণত প্রতিটি প্যাকেটের
জন্য দুটি করে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।
খ. সমান আকারের দুটি পলিথিন ব্যাগ একটির ভিতর
আরেকটি ঢুকিয়ে ব্যাগে পরিণত করতে হবে।
গ. পোনা পরিবহনের সময় দূরত্বের উপর নির্ভর করে ব্যাগে
পোনা পূর্ণ করতে হয়। দূরত্ব কম হলে পোনার সংখ্যা
বেশি হবে আর দূরত্ব বেশি হলে পোনার সংখ্যা কম হবে।
ঘ. যাতায়াতের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পোনার বাক্স
ছায়া ও নিরাপদ স্থানে থাকে।
ঙ. কোনোভাবেই যেন ব্যাগ কেটে বা ছিঁড়ে না যায় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মাছ বাজারজাতকরণ
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মাছ বাজারজাতকরণের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো :
১. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি : মাছ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হয়। কারণ মাছ ক্রয়-বিক্রয়,
প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, ব্যবসা প্রভৃতি কাজের জন্যে অনেক লোক নিয়োজিত থাকে। মাছ উৎপাদন বাড়ার সাথে
সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. মৎস্য পণ্যের সুষম যোগান : বাংলাদেশে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে মাছ উৎপাদন হয় না। এই জন্যে বিভিন্ন
এলাকার ভোগকারীগণ যাতে সব ধরনের মাছ ভোগ করতে পারে এবং সুষম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে এজন্যে
মৎস্য পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাত করতে হবে যাতে সঠিকভাবে সবাই যোগান পায়।
৩. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : বাংলাদেশে থেকে মাছ রপ্তানী করে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। সুষ্ঠু বাজার
ব্যবস্থার মাধ্যমে পণ্যের স্থানানুসারে শ্রেণিবিভাগ ও নমুনাকরণ করা হলে বিদেশে আমাদের মাছের বাজার বিস্তৃত হবে
এবং অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বাংলাদেশের মাছ বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা প্রধানতঃ ২ প্রকার। যথা-
 অভ্যন্তরীণ মাছ বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা।
 অভ্যন্তরীণ মাছ বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা : বাংলাদেশের মাছের চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান
থাকার কারণে অভ্যন্তরীণ বাাজরে মাছ বিপণন খুবই সহজ। বাজারে বিভিন্ন স্তরের ক্রেতা থাকলে ছোট-বড় দামি ও
কম দামি মাছ সহজে বিক্রি হয়ে যায়। মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ আহরণ-পরবর্তী পরিচর্যার চেয়ে অধিক মুনাফা অর্জনে
বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিএফডিসি (বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন সংস্থা) আহরিত মাছ দেশের ভিতর ও বিদেশে উভয় বাাজারের জন্য বিপণন করে। নিচে মাছ বিপনন পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো :
১. আড়ৎদার : চালানীরা মাছ এনে জমা রাখে আড়তদারদের কাছে। আড়তদারগণ শুধু পাইকারী মূলে মাছ বিক্রি করে।
২. পাইকারি বিক্রেতা : আড়তদাররা নিলামের মাধ্যমে পাইকারি বিক্রেতার কাছে মাছ বিক্রয় করে। এরপর খুচরা বিক্রেতাগণ পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় করে।
৩. চালানী : চালানীরা পাইকারীদের কাছ থেকে মাছ ক্রয় করে বাক্স ভর্তি করে পরিবহনের মাধ্যমে শহরে আনে। মাছ বহনের জন্যে বর্তমানে বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত পরিবহন ব্যবহার করা হচ্ছে।
৪. খুচরা বিক্রেতা : খুচরা বিক্রেতারা স্টলে বা বাজারে বসে ভোক্তাদের কাছে মাছ বিক্রি করে এবং বড় বড় শহরে
ভ্যান ও মাথায় করে মাছ বিক্রি করে বেড়ায়।
 আন্তর্জাতিক মাছ বাজার ব্যবস্থা : বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত মাছ বিদেশে রপ্তানী করা হয়। এ সকল মৎস্যজাতপণ্য
অধিকাংশই সমুদ্রপথে রপ্তানি হয়। মোট রপ্তানিকৃত মৎস্যজাত পণ্যের ৯০% চিংড়ি ও বাকি ১০% অন্যান্য মাছ।
হিমায়িত মৎস্য পণ্যের প্রধান বাজার হলো আমেরিকা, ইউরোপীয় দেশসমূহ, জাপান এবং জার্মানি। বাংলাদেশ থেকে
যে সকল মাছ ও মৎস্যজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে তার মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিদর্শনের দায়িত্ব মৎস্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের। এছাড়া কিছু কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ এ সকল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করে।
সারসংক্ষেপ
মাছ চাষের জন্য পোনা পরিবহনের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পোনা পরিবহনকালে অক্সিজেন ঘাটতি, শারীরিক
ক্ষত, অ্যামোনিয়া, তাপমাত্রা ইত্যাদির ওপর পোনার মৃত্যুর হার অনেকাংশে নির্ভর করে। পোনা পরিবহনের সময়
দূরত্বের ওপর নির্ভর করে ব্যাগে পোনা পূর্ণ করতে হয়। দূরত্ব কম হলে পোনার সংখ্যা কম হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.২
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। পোনা পরিবহনের সময় কয়টি বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত?
(ক) ৩ টি (খ) ২ টি
(গ) ৪ টি (ঘ) ৫ টি
২। পোনা পরিবহনের জন্য কত অংশ অক্সিজেন দ্বারা পূর্ন করতে হবে?
(ক) ১ / ৩
(খ) ১ / ৪
(গ) ২ /৩
(ঘ) ১ / ২

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]