মাছের আবাস¯’ল
মাছের আবাস¯’ল হ”েছ জলাশয়। বাংলাদেশ প্রকৃতিগতভাবেই জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ। আমাদের দেশের
জলাশয়কে নি¤েœাক্তভাবে ছক আকারে দেখানো যায়।
সমগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জলায়তনকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(১) অভ্যন্তরীণ জলাশয় এবং
(২) সামুদ্রিক জলাশয় বা সমুদ্র।
নি¤েœ এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
(১) অভ্যন্তরীণ জলাশয়: সমূদ্র ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে যে সকল জলাশয় আছে সেগুলোকেই অভ্যন্তরীণ জলাশয় বলা হয়।
একে আবার দু’ভাবে ভাগ করা হয়েছে- (ক) মুক্ত জলাশয় এবং (খ) বদ্ধ জলাশয়। উš§ুক্ত বা মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে
পড়েছে নদী-নালা, মোহনা, বিল, কাপ্তাই হ্রদ, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং প্লাবনভ‚মি। আর বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে
পড়েছে পুকুর, দীঘি, বাঁওড়, উপক‚লীয় অঞ্চলের চিংড়ি খামার ও মৌসুমি জলাশয়। বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ
জলাশয়ের আয়তন ৪৬,৯৯,৪২৭ হেক্টর (প্রায় ৪৭ লক্ষ হেক্টর)।
(ক) মুক্ত/উন্মুক্ত জলাশয় : বাংলাদেশের মোট মুক্ত জলায়তন ৩৯,১৬,৮২৮ হেক্টর। বিভিন্ন ধরনের মুক্ত জলাশয়ের সংক্ষিপ্ত
বর্ণনা নি¤েœ প্রদান করা হলো:-
(১) নদ-নদী ও মোহনা : নদ-নদী ও মোহনা হলো অনেক মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এবং আবাস¯’ল। নদ-নদী ও
মোহনা অঞ্চল থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১.৭৮ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত বা আহরিত হয়েছে। আহরিত মাছের
মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মিশ্রন থাকে তবে এতে ইলিশের পরিমানই সর্বাধিক। বাংলাদেশে নদ-নদী ও খাঁড়ি অঞ্চলের মোট
আয়তন ৮,৫৩,৮৬৩ হেক্টর। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র হলো এদেশের বড় বড় নদী। রুই-জাতীয় মাছ এসব নদ-
নদীতে প্রাকৃতিক প্রজননের মাধ্যমে পোনা ছাড়া। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে ইলিশ মাছ এসব নদ-নদীর উজানে ডিম পাড়ার
জন্য অভিপ্রায়ন করে থাকে।
(ওও) সুন্দরবন : বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলা জুড়ে সমুদ্র উপক‚লবর্তী নোনা
পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হলো সুন্দরবন। ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বনটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ¯’ান হিসেবে
ঘোষনা করে। বনটি বাংলাদেশ এবং ভারতে বিস্তার লাভ করেছে তবে বেশিরভাগ অংশই বাংলাদেশের। বনটির ভিতর
দিয়ে বয়ে যাওয়া অসংখ্য নদীনালা, খাঁড়ি, খাল/বিল মিলিয়ে তৈরি করেছে এক জলাকীর্ণ অঞ্চল যার আয়তন ১,৭৭,৭০০
হেক্টর বা এর কিছু বেশি। সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ যেমন- লাক্ষা, ভেটকি, পারশে, দাতিনা, তপসে, মেনো, কই,
শিং, মাগুর, টাকি, শোল, ট্যাংরা, পুঁটি, খলসে, চ্যালা, খরশুলা/খল্লা, দাঁড়কিনা, কাইক্কা, ভাঙন, ইলিশ ইত্যাদি ছাড়াও
চিংড়ি ও কাঁকড়া পাওয়া যায়। বনভ‚মিটি স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
(ওওও) বিল : বিল প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট জলাশয়। অন্যভাবেও বলা যায়- বিল হলো প্লাবনভ‚মির গভীরতম অংশ যশোর,
কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, পাবনা, রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা ও ঢাকা জেলায় বিল রয়েছে। এ ধরনের জলাশয়ের মোট আয়তন
১,১৪,১৬১ হেক্টর। চলনবিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল। বিলে বসবাসকারী মাছের মধ্যে রুই জাতীয় মাছ, আঁইর,
বোয়াল এবং অন্যান্য ছোট প্রজাতির মাছ উল্লেখযোগ্য। বর্ষাকালে নদীতে বন্যা হয়, তখন নদী আর বিল মিশে একাকার
হয়ে যায়। এসময় নদী থেকে অনেক মাছ বিলে বিচরণ করে, বিলের ইকোসিস্টেমের পর্যাপ্ত খাদ্য খেয়ে দ্রæত বড় হয় এবং
বা”চা দেয়। বন্যার পানি নেমে গেলে অনেক মাছ বিলে আটকা পড়ে এবং সেখানেই বড় হতে থাকে। এভাবেই বিল হয়ে
ওঠে মাছের আবাস¯’ল।
(ওঠ) কাপ্তাই হ্রদ : এটি কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট অর্থাৎ মানব সৃষ্ট হ্রদ এবং বাংলাদেশের বৃহৎ হ্রদ। ১৯৫৬ সালে পার্বত্য
চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীতে কাপ্তাই শহরের নিকট “কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হলে রাঙামাটি
জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ডুবে যায় এবং এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। মিঠা পানির বিভিন্ন মাছ যেমন-রুই, কাতলা, মৃগেল,
কালিবাউস, গণিয়া, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, আঁইর, বোয়াল, চিতল, ফলি, পাংগাস, স্বরপুঁটি, শিং, মাগুর, টেংরা, শোল,
গজার, টাকি, পাবদা, বাইম, পুঁটি, চাপিলা, তেলাপিয়া, কাচ্কি ইত্যাদি মাছের উল্লেখযোগ্য ভান্ডার হলো এ হ্রদ। হ্রদটির
আয়তন ৬৮,০০০ হেক্টর।
(ঠ) প্লাবন ভ‚মি : বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়। প্লাবন ভ‚মিতে ৩-৬ মাস
পানি আটকা থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছ এসব প্লাবনভ‚মিতে বিচরণ করে, বংশ বিস্তার করে এবং মাছের সার্বিক
উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভ‚মিকা রাখে। প্রতি বছর প্রায় ২৭,০২,৩০৪ হেক্টর জমি বন্যা ও বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়।
(খ) বদ্ধ জলাশয় : বাংলাদেশে মোট বদ্ধ জলায়তন ৭,৮২,৫৯৯ হেক্টর। বিভিন্ন ধরনের বদ্ধ জলাশয় সম্পর্কে নি¤েœ
আলোচনা করা হলো :
(ও) পুকুর : পুকুর হলো ¯ি’র পানির ক্ষুদ্র জলাশয় যার চতুর্দিকে উঁচু পাড় থাকে। প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দেশে পুকুর
খনন করা হতো বিশেষত: দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটানো এবং গোসল করার জন্য। বর্তমানে দেশে ছোট, বড় মাঝারি,
মৌসুমি সব ধরনের পুকুরেই মাছ চাষ করা হয়। আমাদের দেশে ১৩ লক্ষাধিক পুকুর-দীঘি রয়েছে যার যার মোট আয়তন
৩,৭১,৩০৯ হেক্টর।
(ওও) বাঁওড় : নদীর বাঁকে ট আকৃতির জলাশয় যা নদীর মূল ¯্রােত থেকে বি”িছন্ন হয়েছে তাকেই বাঁওড় বলা হয়। দেশের
অধিকাংশ বাঁওড়ই বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া এবং ফরিদপুরে অব¯ি’ত। অধিকাংশ বাঁওড়েই রুই জাতীয় মাছের পোনা ছেড়ে
চাষ করা হয়। বাঁওড়ের মোট জলাশয়তন ৫,৪৮৮ হেক্টর।
(ওওও) উপক‚লীয় চিংড়ি খামার : সমুদ্রের নিকটবর্তী যে সব অঞ্চলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সেখানে এ খামারগুলো
অব¯ি’ত। উপক‚লবর্তী এলাকাসমূহের জমিতে জোয়ারের পানি আটকিয়ে রেখে সেখানে চিংড়ি চাষ করা হয়। এসব জলাশয়
চিংড়ি ঘের নামে পারিচিত। এসব ঘেরে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হয়। জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি মোহনা
দিয়ে জমির কিছুদূর পর্যন্ত প্রবেশ করে। এসব জলাশয়কে খাঁড়ি বলে। খাঁড়ি অঞ্চলের মাছগুলো হলো ভেটকি, ইলিশ,
চিংড়ি ইত্যাদি। উপক‚লীয় চিংড়ি খামারের মোট আয়তন ২,৭৫,২৭৪ হেক্টরের কিছুবেশী।
(ওঠ) মৌসুমি জলাশয় : এ ধরনের জলাশয়ে শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে অল্প দিনের জন্য পানি থাকে। ধানক্ষেত, পাগার ইত্যাদি
মৌসুমি জলাশয়ের শ্রেণীভ‚ক্ত। মৌসুমি জলাশয়ের মোট আয়তন ১,৩০,৪৮৮ হেক্টর। এ ধরনের জলাশয় সাধারণত ছোট
মাছ পাওয়া যায়।
(২) সামুদ্রিক জলাশয়: বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে বিশাল সামুদ্রিক এলাকা যেখানে ৭১০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে
বিস্তীর্ণ উপক‚ল এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত রয়েছে একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল। সমুদ্রের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাস করে
বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি ইত্যাদি। সামুদ্রিক এলাকার মাছ চাষ করা হয় না। শুধুমাত্র সমুদ্র থেকে মাছ এবং
অন্যান্য অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রাণী আহরণ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সামুদ্রিক জলাশয় থেকে
৬,২৬,৫২৮ মেট্রিক টন মৎস্য আহরিত হয়েছে। পৃথিবীর ভ‚খন্ডগত সম্পদ কমার সাথে সাথে মানুষ এখন সমুদ্র মুখী হ”েছ।
পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রই এখন সমুদ্রের ওপর তার অধিকারের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ
যথাক্রমে জার্মানির হামবূর্গ এ অব¯ি’ত ) ITLOS (International Tribunal for the Law of the Sea)--এর মাধ্যমে ২০১২ সালে
মিয়ানমারের সাথে এবং নেদারল্যান্ডের হেগের “¯’ায়ী সালিসি আদালত (The Permanent Court of Arbitration at the
Hague)
এর মাধ্যমে ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করে যথাক্রমে ১,১১,৬৩১ এবং
১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার নতুন সমুদ্র এলাকায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ফলে এই বিশাল সমুদ্র এলাকার সকল প্রকার
প্রাণিজ (মাছসহ অন্যান্য প্রাণি) এবং অ-প্রাণিজ (তেল, গ্যাস ইত্যাদি) সম্পদ উত্তোলন, আহরণ এবং ব্যবহারের অধিকার
পায় বাংলাদেশ। এখানে একটি বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারনা থাকা দরকার। তা হলো-বিরোধ নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ
খাতা-কলমে তটরেখা (Baseline) থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল বিস্তৃত একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা দাবী করলেও বাস্তবে
১৩০ নটিক্যাল মাইলের উপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। এখন বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে পুরোপুরি ২০০
নটিক্যাল মাইলের ওপর বাংলাদেশের অধিকার সংরক্ষিত হলো। শুধু তাই নয়, এ রায়ের ফলে ২০০ নটিক্যাল মাইলের
বাইরেও মহীসোপানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরী করে শ্রেণী শিক্ষকের নিকট জমা
দিন।
সারসংক্ষেপ
মাছের আবাস¯’ল হল পানি। বাংলাদেশ হল পানির দেশ। আর তাই এদেশের মানুষের কাছে মাছ সহজপ্রাপ্য। ছোট
বড় নদ-নদী, হাওড়-বাঁওড়, পুকুর-ডোবায় ভর্তি আমাদের দেশ। দক্ষিণে রয়েছে বিশাল এক সামুদ্রিক অঞ্চল যার নাম
বঙ্গোঁপসাগর। এসব জলাশয়ে বিভিন্ন আকারের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রাকৃতিক ভাবেই পাওয়া যায়। সাদা সোন খ্যাত
চিংড়ি মাছ চাষ করা হয়। উপকুলীয় অঞ্চলের ঘের গুলোতে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.২
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। কোনটি মুক্ত জলাশয়?
(ক) পুকুর (খ) দীঘি
(গ) ডোবা (ঘ) কাপ্তাই হ্রদ
২। নিচের কোনটি বদ্ধ জলাশয়?
(ক) নদী (খ) হ্রদ
(গ) বাঁওড় (ঘ) বিল
৩। কোন কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা রয়েছে?
(ক) ভারত ও নেপাল (খ) ভারতও মিয়ানমার
(গ) মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড (ঘ) ভারত ও পাকিস্তান
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র