আদিকাল থেকেই পোল্ট্রি মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে জড়িত, যদিও আগে পারিবারিকভাবে অল্প সংখ্যক হাঁস-মুরগিই
পালন করো হতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রাণীজ আমিষের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। পোল্ট্রি
একমাত্র সহজলভ্য প্রাণীজ আমিষের উৎস। শুধু তাই নয় অল্প সময়ে পোল্ট্রি পালন করে সহজেই আয় করা যায়। আজ
থেকে ২০-২৫ বছর পূর্বে বাংলাদেশে তেমন কোন বাণিজ্যিক খামার ছিল না বললেই চলে। পূর্বে সরকারী উদ্যেগে
হাতেগোনা কয়েকটি খামার থাকলেও আজ তার চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমানে পোল্ট্রি পালন বলতে পারিবারিকভাবে ২-
৪টি হাঁস-মুরগি পালনের ধারণা বদলে গেছে। হাঁস-মুরগি ছাড়াও এর সাথে যুক্ত হয়েছে পোল্ট্রির অন্যান্য প্রজাতি, যেমনরাজহাঁস, টার্কি, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদি। যেখানে দেশি মুরগি থেকে বার্ষিক গড়ে ৪০-৫০টি ডিম ও মাত্র ১ কেজি মাংস
পাওয়া যেত, সেখানে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের মুরগি থেকে বার্ষিক গড়ে ২৫০-৩০০টি ডিম এবং ৪-৫
সপ্তাহে ১.৫-২.০ কেজি মাংস পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য দেশের স্বল্প আয়ের লোক, শিক্ষিত বেকার যুবক ও অর্ধশিক্ষিত
জনগোষ্ঠী পোল্ট্রি পালনের দিকে ঝুঁকছে। পোল্ট্রি খামার থেকে স্বল্প সময়ে বিনিয়োগ করে ভালো লাভ পাওয়া যাচ্ছে।
পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে উন্নতমানের খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।
এই ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে পোল্ট্রি খামারের পরিকল্পনা ও আয়-ব্যায়ের হিসাব এবং ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামার
স্থাপনের ওপর তাত্তি¡ক এবং পোল্ট্রি খামার সরেজমিনে পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়নের ওপর ব্যবহারিকসহ বিস্তারিত
আলোচনা করা হয়েছে।
খামার পরিকল্পনা বলতে খামার তৈরির পূর্বে কিছু বিষয়ে ধারণা থাকা অর্থাৎ কি করা হবে, কিভাবে করা হবে,
এতে কারা জড়িত থাকবে এবং এর ফলাফল কি হবে, মোট কথা কিভাবে খামারকে লাভজনক করা যায় তার
নিয়ে আগে থেকেই চিন্তা করা। যে কোন কাজের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার উপর। পোল্ট্রি খামার
পরিকল্পনায় যেসব বিষয় গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন তা নি¤œরুপ:
১. স্থান নির্বাচন
২. মূলধন
৩. পোল্ট্রির বাসস্থান নির্মাণ
৪. উন্নত জাত নির্বাচন
৫. পোল্ট্রির খাদ্য, ভ্যাকসিন ও ঔষধ
৬. বাজারজাতকরণ
৭. পোল্ট্রি পালনের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ
১০০টি ব্রয়লারের খামারের আয়-ব্যয়ের হিসাব (২৮ দিনব্যাপী পালন)
০১. ব্যয়ের খাত
স্থায়ী খরচ: টাকা
ক. ইট, সিমেন্ট, বালি, টিন দ্বারা স্থায়ীভাবে ১০০ বর্গফুট ঘর তৈরিবাবদ খরচ ২০,০০০/-
খ. খাদ্য ও পানির পাত্র বাবদ খরচ ২০০/-
মোট খরচ= ২০,২০০/-
আবর্তক খরচ:
ক. ১০০টি বাচ্চার মূল্য প্রতিটি ৪০/- হিসাবে ১০০৪০/- ৪,০০০/-
খ. প্রতিটি ২.০ কেজি হারে ২৮ দিনের খাদ্যবাবদ, মোট খাদ্যের পরিমাণ = ২.০ কেজি
১০০টি = ২০০.০ কেজি, প্রতি কেজি খাদ্যের মূল্য ৪০/- হিসেবে মোট খাদ্য খরচ = ২০০
কেজি ৪০/-
৮,০০০/-
গ. টিকা, ঔষধ ও ভিটামিন বাবদ ৩০০/-
ঘ. বিদ্যুৎ খরচ ৫০০/-
ঙ. অন্যান্য খরচ ১,০০০/-
ব্যয় ১৩,৮০০/
মোট খরচ ১৩,৮০০/-
অবচয় খরচ- ঘর নির্মাণ খরচের ১০%
যন্ত্রপাতি খরচের ২%
২,০০০/-
৪/-
বার্ষিক সর্বমোট খরচ ১৫,৮০৪/-
২.আয়ের খাত
ক প্রতিটি মুরগির গড়ে ওজন ১,৫০০ গ্রাম, মোট মুরগির ওজন ১,৫০০ গ্রাম ১০০টি =
১৫০,০০০ গ্রাম বা ১৫০ কেজি, প্রতি কেজি মুরগির মূল্য ১৪০/- হিসাবে মোট মূল্য ১৫০
কেজি ১৪০/- হিসাবে মূল্য ২১,০০০/-
প্রকল্প মোট আয় ২১,০০০/-
প্রকল্পে মোট ব্যয় ১৫,৮০৪/-
নীট লাভ ৫,১৯৬/-
১০০টি লেয়ারের খামারের আয়-ব্যয়ের হিসাব (৭২ সপ্তাহব্যাপী পালন)
০১. ব্যয়ের খাত
স্থায়ী খরচ: টাকা
ক. ইট, সিমেন্ট, বালি, টিন দ্বারা স্থায়ীভাবে ৩০০ বর্গফুট ঘর তৈরিবাবদ খরচ ৬০,০০০/-
খ. খাদ্য ও পানি পাত্র, ডিম রাখার ঝুড়ি বাবদ খরচ ২,০০০/-
মোট খরচ = ৬২,০০০/-
আবর্তক খরচ:
ক. ১০০টি বাচ্চার মূল্য প্রতিটি ৪০/- হিসাবে ১০০৪০/- ৪,০০০/-
খ. প্রতিটি ৪৮ কেজি হারে ৭২ সপ্তাহ খাদ্য বাবদ, মোট খাদ্যের পরিমাণ= ৪৮ কেজি
১০০টি = ৪৮০.০ কেজি, প্রতি কেজি খাদ্যের মূল্য ৩৫/- হিসাবে মোট খাদ্য খরচ = ৪৮০
কেজি ৩৫/-
১৬,৮০০/-
গ. টিকা, ঔষধ ও ভিটামিনবাবদ ১,০০০/-
ঘ. বিদ্যুৎ খরচ ৬,০০০/-
ঙ. শ্রমিক খরচ (শ্রমিক ১ জন, মাসিক বেতন ৭,০০০/- হিসাবে ৭২ সপ্তাহ অর্থাৎ ১ বছর ৫
মাসের বেতন) ১৭ ৭,০০০/-
১১৯,০০০/-
ব্যয় ১৪৬,৮০০/-
মোট খরচ ১৪৬,৮০০/-
অবচয় খরচ- ঘর নির্মাণ খরচের ১০%
যন্ত্রপাতি খরচের ২%
৬,০০০/-
৪০/-
বার্ষিক সর্বমোট খরচ ১৫২,৮৪০/-
০২. আয়ের খাত
ক. ৯৫টি মুরগি গড়ে ২৫০টি ডিম দিলে ডিমের সংখ্যা = (২৫০ ৯৫) = ২৩,৭৫০টি (প্রতি
ডিম ৭ টাকা মূল্য হিসাবে) = (২৩,৭৫০ ৭) টাকা (৫% মৃত্যু ধরে)
১৬৬,২৫০/-
খ. ডিমপাড়া শেষে মুরগি বিক্রিবাবদ আয়: ২৫০ টাকা প্রতিটি হিসাবে ৯৫টি মুরগির মূল্য =
(২৫০ ৯৫)
২৩,৭৫০/-
গ. মুরগির বিষ্ঠা থেকে আয় ৫,০০০/-
ঘ. চটের বস্তা থেকে আয় ১০০/-
কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ইউনিট ৭
পোল্ট্রি খামারের পরিকল্পনা পৃষ্ঠা-১১৩
প্রকল্প মোট আয় ১৯৫,১০০/-
প্রকল্পে মোট ব্যয় ১৫২,৮৪০/-
নীট লাভ ৪২,২৬০/-
বিঃ দ্রঃ এভাবে মুরগির সংখ্যা বাড়লে আয়ও বাড়বে। খাদ্য মূল্য কমানো গেলে আয়ের পরিমাণ বাড়বে। আর অল্প
পরিসরের খামারের ক্ষেত্রে কোন শ্রমিক নিয়োগ না করে একজন খামারি নিজেই নিজের খামারের কাজ করলে
শ্রমিকবাবদ কোন খরচই লাগবে না ও খামারে লাভের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।
সারসংক্ষেপ
পোল্ট্রি পালন আদিকালে খামার হিসাবে না থাকলেও পারিবারিক ভাবে এর লাল-পালন হবে। তবে এর সংখ্যা খুবই
নগন্য। সময়ের সাথে প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পুরনের লক্ষ্যে পোল্ট্রি খামার এখন একটি শিল্প হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এর
জন্য কিছু উপকরন আবশ্যক। আমাদের লাভ-লোকসান ব্যায়ের সাথে সরাসরি জড়িত। খামারের ব্যয় কমলে আয়
বাড়বে। ব্রয়লায় খামার থেকে ৩৫ দিনে আয় হলেও লেয়ার খামার থেকে আয় পেতে বেশী সময় লাগে। খামারে মুরগির
সংখ্যা যত বেশি হবে আয় তত বেশি হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.১
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। পোল্ট্রি খামার তৈরির জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান কোনটি?
(ক) পোল্ট্রির সংখ্যা (খ) পোল্ট্রির বাসস্থান নির্মান
(গ) পোল্ট্রির আকার (ঘ) পোল্ট্রির লিটার
২। কত বছর পূর্বে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক খামারের সূচনা ঘটে?
(ক) ৩০-৪০ বছর (খ) ১৫-২০ বছর
(গ) ৩৫-৪০ বছর (ঘ) ৪০-৫০ বছর
৩। সহজলভ্য প্রাণীজ আমিষের উৎস কোনটি?
(ক) সয়াবিন (খ) গরুর মাংস
(গ) ডিম (ঘ) খাসির মাংস
৪। যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে বার্ষিক কত হারে অপচয় খরচ হিসাব করা হয়?
(ক) ২% হারে (খ) ১০% হারে
(গ) ৪% হারে (ঘ) ৫% হারে
৫। বয়লার মুরগি বিক্রিয় আদর্শ বয়স কত ধরা হয়?
(ক) ২৮ দিন (খ) ৫০ দিন
(গ) ৩৫ দিন (ঘ) ৬০ দিন
৬। নিচের কোন জিনিসটি লেয়ার খামারে আবশ্যক কিন্তু ব্রয়লার খামারের ক্ষেত্রে নয়?
(ক) খাদ্যের পাত্র (খ) বিদ্যুৎ
(গ) পানির পাত্র (ঘ) ডিম রাখার ঝুড়ি
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র