ডিম থেকে সন্তোষজনক হারে স্বাস্থ্যবান ও উৎপাদনশীল বাচ্চা পাওয়ার জন্য সঠিকভাবে ডিম নির্বাচন করতে
হবে। নিচের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ডিম নির্বাচন করলে সর্বাধিক বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে।
১. নিষিক্ত ডিম: ফোটানোর জন্য ব্যবহৃত ডিম নিষিক্ত হতে হবে। আর এজন্য মুরগিকে মোরগের সংস্পর্শে থাকতে
হবে ও প্রজনননে অংশ নিতে হবে।
২. ডিমের আকার: ফোটানোর জন্য ডিমের আকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিমের আকার স্বাভাবিক হতে হবে।
প্রজাতিভেদে ডিমের আদর্শ ওজন কেমন হয় তার ধারণা থাকতে হবে। সাধারণত মাঝারি আকারের ডিম
ফোটানোর জন্য ভালো। মুরগি, হাঁস ও জাপানি কোয়েলের ডিমের আদর্শ ওজন যথাক্রমে ৫০-৫৮ গ্রাম, ৬০-৭০
গ্রাম ও ৮-১০ গ্রাম হওয়া বাঞ্ছনীয়। আদর্শ মানের চেয়ে অতিরিক্ত বড় বা ছোট ডিম ব্যবহার করলে ফোটার হার
কম হবে। আবার বেশি লম্বা ও বড় আকারের ডিমে ২টি কুসুম থাকতে পারে বলে এসব ডিম থেকে কখনই বাচ্চা
ফুটবে না।
৩. ডিমের আকৃতি: মুরগির ডিম ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। অস্বাভাবিক বা বিকৃত, যেমন- লম্বাটে, গোলাকার, আঁকাবাকা
ডিম ফোটানোর জন্য নির্বাচন যোগ্য নয়।
৪. ডিমের খোসার পরিচ্ছন্নতা: অবশ্যই পরিষ্কার ডিম নির্বাচন করতে হবে। অপরিষ্কার ডিম জীবাণুর উৎস। অপরিষ্কার
ডিম থেকে একদিকে যেমন ডিম ফোটানোর সময় অন্য ডিমে জীবাণুছড়ায় তেমনি যন্ত্রপাতিও নোংরা হয়। এতে
ডিম ফোটার হারও কমে যায়। তবে অল্প ময়লা লেগে থাকলে তা পরিষ্কার ও শুষ্ক কাপড় বা শিরিষ কাগজ দিয়ে
মুছে ফোটানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ফোটানো ডিম কখনও পানি দিয়ে ধোয়া যাবেনা।
৫. ডিমের খোসার রং ও গুরুত্ব: ডিমের খোসার রং পোল্ট্রির প্রজাতি ও জাতভেদে ভিন্ন হতে পারে। যে প্রজাতি বা
জাতের ডিম যে রঙের সে রঙের ডিমই ব্যবহার করতে হবে। খোসা পাতলা ও অসমৃণ হলে ডিম ভেঙ্গে যাওয়ার
সম্ভবনা বেড়ে যায়। মুরগির ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের খোসার আদর্শ পুরত্ব ০.৩৩ মি.মি. হলে ভালো হয়।
৬. ফাটা বা ভাঙ্গা ডিম: ফাটা বা ভাঙ্গা ডিম নির্বাচন করা যাবে না। আগেই বলা হয়েছে ডিমে অসংখ্য সূ² ছিদ্র থাকে
যা বাইরে থেকে এমনিতে বোঝা যায় না। এক্ষেত্রে একটি ডিমকে অন্য আরেকটি ডিম দিয়ে আলতোভাবে আঘাত
করলে সৃষ্ট শব্দ যদি নিস্তেজ হয় তাহলে বুঝতে হবে ডিম ফাটা।
৭. ডিমের বয়স: ডিমের বয়স বলতে সাধারণভাবে ডিম পাড়ার দিন থেকে ফোটানোর জন্য বসানোর সময় পর্যন্ত
সময়টাকেই বুঝায়। বাচ্চা ফোটানোর ডিমের জন্য বয়স গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিমের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চা
ফোটার হারও কমতে থাকে। শীতকালে সর্বোচ্চ ৭-১০ দিন এবং গরমকালে ৩-৪ দিনের বেশি বয়সের ডিম
ফোটানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
৮. ডিমের ভিতরের বৈশিষ্ট্য: বাইরে থেকে স্বাভাবিকভাবে ডিমের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায় না। আলোতে পরীক্ষা করলে তা
বুঝা যায়।
৯. ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমের পরিমাণের অনুপাত হবে ২ঃ১। ডিমের মধ্যে কোনো রক্তের ছিটা, ঘোলাটে বায়ু
ইত্যাদি থাকলে তা বাদ দিতে হবে।
১০. ভাসমান বায়ু থলি: ফোটানোর ডিম সঠিকভাবে হ্যান্ডলিং করতে হবে। ফোটানোর ডিম ঝাঁকানো যাবে না। অতিরিক্ত
ঝাঁকালে ভাসমান বায়ু থলি তৈরি হয় যা ডিম ফোটানোর উপযোগী নয়।
১১. দূরবর্তী জায়গা থেকে ডিম সংগ্রহ করলে তা কিছু সময় ছায়ায় রেখে পরে ফোটানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে।
ডিম ফোটানোর পদ্ধতি
ডিম থেকে বাচ্চা ফোটনোর জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণত
ডিম ফোটানোর পদ্ধতি দুই ভাগে বিভক্ত। যেমন১. প্রাকৃতিক পদ্ধতি
২. কৃত্রিম পদ্ধতি
কৃত্রিম পদ্ধতিকে পুনরায় ভাগ করা যায়।
ক) তুষ পদ্ধতি
খ) ইনকিউবেটর পদ্ধতি- ইনকিউবেটর পদ্ধতি আবার
দু’ধরনের। যেমন-
১. কোরোসিন ইনকিউবেটর পদ্ধতি
২. বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর পদ্ধত
নিচে ডিম ফোটানোর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
১) প্রাকৃতিক পদ্ধতি: প্রাকৃতিক পদ্ধতি হচ্ছে সর্বাধিক প্রচলিত প্রাচীন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির সঙ্গে কম-বেশি সবাই
পরিচিত। গ্রামাঞ্চলে অল্প পরিসরে যারা হাঁস-মুরগি পালন করেন তারা এই পদ্ধতিতে ডিম ফুটিয়ে থাকেন। দেশি
মুরগি ১০-১২টি ডিম দেওয়ার পর উমে বা তায়ে বসার প্রবণতা দেখা যায়। এই অবস্থায় মুরগিকে কুঁচে মুরগি
বলে। তখন মুরগিকে একটি নীরব স্থানে বাক্সে অথবা ঝুড়িতে কিছু বিছানাপত্র, যেমন- খড়, শুকনো পাতা বা তুষ
রেখে তার উপর ১০-১২টি ডিম দিয়ে বসানো হয়। এ সময় মুরগির কাছাকাছি পাত্রে খাবার ও পানি রাখতে হয়
যাতে চাইলেই মুরগি খেতে পারে। ডিমে বাতাস চলাচল ও মুরগির স্বাস্থ্যের জন্য দিনে একবার ডিম থেকে উঠিয়ে
দিতে হয়। এই সময় মুরগি খাবার ও পানি গ্রহণ করবে। খেয়াল রাখতে হবে মুরগি যাতে আধা ঘন্টার বেশি
বাইরে না থাকে। এতে ডিমের সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকবে না। মুরগি তার নিজের ঠোঁট দিয়ে ডিমগুলো
ঘুরিয়ে দেয়। এতে ডিমের সবদিকে তাপমাত্রা ঠিক থাকে। মুরগির বসার জায়গায় কোন প্যারাসাইট অর্থাৎ উকুন
বা অন্য কোন রক্তচোষক আছে কি-না সেদিকে নজর রাখতে হবে। ডিম বসানোর পর কোন ডিম যদি ভেঙ্গে যায়,
তাহলে সেটি দ্রæত সরিয়ে নিতে হবে যাতে অন্য ডিম নোংরা না হয়। ডিমে তা দেওয়ার সময় মুরগিকে
কোনোভাবেই বিরক্ত করা যাবে না। মুরগির ঘরে যথেষ্ঠ আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বৃষ্টির
দিনে যাতে পানি না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে মুরগির ডিম থেকে ২১ দিন পর এবং হাঁসের ডিম
থেকে ২৮ দিন পর বাচ্চা পাওয়া যাবে। ডিম বসানোর উপযুক্ত সময় হলো রাত। রাতে ডিম বসালে ২১ দিন পর
রাতে সকল বাচ্চা ফুটবে এবং বাচ্চারা সারা রাত বিশ্রাম পাবে। পরদিন সকালে বাচ্চা বাইরে বেরুরে শক্তি
পাবে।
২) কৃত্রিম পদ্ধতি: প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মুরগি যেভাবে ডিম ফোটায় সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে
যা দিয়ে ডিম ফোটানো হয়, এটিকে কৃত্রিম পদ্ধতি বলে। পূর্বে বলা হয়েছে কৃত্রিম পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে- ১) তুষ
পদ্ধতি ২) ইনকিউবেটর পদ্ধতি।
নিচের এগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনার করা হলো।
তুষ পদ্ধতি: গ্রামাঞ্চলে সাধারণত প্রাকৃতিক পদ্ধতি দেখা যায়। তবে আজকাল তুষ পদ্ধতি বাংলাদেশের অনেক
জায়গায় বাচ্চা ফোটানোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই অথচ অনেক ডিম ফোটানো
দরকার সেসব অঞ্চলে তুষ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে হাঁস ও মুরগির ডিম ফোটানো হয়। তবে আজকাল তুষ
পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম ফোটানো একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই পদ্ধতিতে দৈহিক পরিশ্রম
হলেও খরচ খুব সামান্য। তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো- বাঁশের চাঁটাই দিয়ে তৈরি
নলাকৃত ঝুড়ি, হারিকেন, কাপড়, বায়ুচলাচল শূন্য ও তাপ নিরোধক কক্ষ, বাচ্চা ফোটানোর বিছানা এবং থার্মোমিটার।
ইনকিউবেটর পদ্ধতি: ডিম ফোটানোর আধুনিক পদ্ধতির নাম হচ্ছে ইনকিউবেটর পদ্ধতি। এটি প্রধানত দু’ধরনের
যথা- ক) কেরোসিন ইনকিউবেটর- নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এই ইনকিউবেটরের মুল জ¦ালানি হচ্ছে কোরোসিন।
খ) বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর- বিদ্যুতের সাহায্যে এই ইনকিউবেটর চালিত হয় বলে এর নাম বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর।
ক) কেরোসিন ইনকিউবেটর: বিদ্যুতবিহীন এলাকাগুলোতে তুষ ইনকিউবেটরের পাশাপাশি কেরোসিন ইনকিউবেটর
ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মূল জ¦ালিান যেহেতু কেরোসিন তুষ ইনকিউবেটরের তুলনায় কেরোসিন ইনকিউবেটরে
খরচ একটু বেশি হয়। কেরোসিন ইনকিউবেটরে ৫০-৫০০টি ডিম ফোটানো যায়। তবে ডিম ফোটানোর সকল
পদ্ধতির মূলনীতি একই। কেরোসিন ইনকিউবেটরের দাম বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরের তুলনায় কম। সাধারণত
কেরোসিন ইনকিউবেটর ডিম ফোটানোর জন্য ৩৮.০-৩৯.৪ সে. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
খ) বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর পদ্ধতি: ডিম ফোটানোর সর্বাধুনিক পদ্ধতি এটি। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো
একসাথে প্রায় এক লক্ষ ডিম ফোটানো যায়। তবে ধারণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ছোট, মাঝারি ও বড় আকৃতির
ইনকিউবেটর পাওয়া যায় যা প্রস্তুতকারক কোম্পানির ওপর নির্ভর করে। বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর এমন জায়গায়
বসাতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করে। ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর পূর্বে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে
হবে, সেই সাথে ইনকিউবেটর সঠিকভাবে কাজ করছে কি-না সেটাও পরীক্ষা করতে হবে। বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরের
প্রধান দুটি অংশ হচ্ছে সেটার ও হ্যাচার। সেটার হচ্ছে যেখানে ডিম বসানো হয়। এখানে নিয়মিত বিরতিতে ডিম
ঘোরানো হয়। আর হ্যাচার হচ্ছে ডিম ফোটানোর শেষ তিন দিন যে ট্রেতে ডিম রাখা হয়। অনেক ইনকিউবিটরে
সেটার ও হ্যাচার আলাদা নাও থাকতে পারে। সেটারে ডিম বসানোর জন্য খাঁজ/খোপ করা থাকে কিন্তু হ্যাচারে কোনো
খোপ থাকে না। ডিম বসানোর সময় ডিমের মোটা অংশ যেন উপর দিকে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডিম
৪৫ কোন করে সেটিং ট্রেতে বসাতে হবে।
বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটরে ডিম ফোটানো ব্যবস্থাপনা: সফলভাবে ডিম ফোটানোর জন্য নি¤েœাক্ত বিষয়সমূহ গুরুত্বসহকারে
পালন করা প্রয়োজন।
১. তাপমাত্রা: ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটরে ৯৯-১০০ ফারেনহাইট তাপমাত্রা রাখতে হবে। ডিম ফোটানোর
জন্য সঠিক তাপমাত্রা ইনকিউবেটরের প্রস্তুতকারক কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অতিরিক্ত
বা প্রয়োজনের কম তাপমাত্রা দুটোই ক্ষতিকারক। ডিমের চারিদিকে যেন সমভাবে তাপমাত্রা লাগে সেদিকে
খেয়াল রাখতে হবে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পূর্বের তিন দিন তাপমাত্রা ২-৩ ফারেনহাইট কম রাখতে
হবে।
২. বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা: ডিমের ভিতরে যেহেতু ভ্রƒণের জন্ম হয় ও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে, তাই সঠিক
পরিমাণে অক্সিজেন থাকা অপরিহার্য। ইনকিউবেটরের বায়ুতে স্বাভাবিক অক্সিজেনের পরিমাণ ২১% হওয়া
বাঞ্ছণীয়। অন্যদিকে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড (ঈঙ২)-এর মাত্রা ০.৫% বেশি হলে ডিম ফোটার হার কমে যায়।
এজন্য সঠিক জায়গায় ইনকিউবেটর রাখতে হবে যাতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে।
৩. আর্দ্রতা: মুরগির ডিমের ক্ষেত্রে প্রথম ১৮ দিন আর্দ্রতা লাগে ৫৫-৬২% এবং শেষ তিন দিন অর্থাৎ ১৯-২১ দিন
৬৫-৭৫%। আদর্শ আপেক্ষিক আর্দ্রতার চেয়ে কম হলে ভ্রƒæণ ডিমের খোসার একপাশে লেগে থাকে ফলে ডিম
থেকে বাচ্চা বের হতে পারে না। অনেক সময় ভ্রƒণ শুকিয়ে যায়। এজন্য প্রস্তুতকারক কোম্পানির নির্দেশনা
অনুযায়ী আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৪. ডিম পরীক্ষাকরণ: সাধারণত ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর ৭-১০ দিনের মধ্যে প্রথম বার এবং ১৪-১৮ দিনের
মধ্যে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করা হয়। এজন্য এক ধরনের যন্ত্র (ক্যান্ডেলার) ব্যবহার করা হয়। একটি অন্ধকার ঘরে
ক্যান্ডেলার দ্বারা ডিম পরীক্ষা করা হয়। ডিম নিষিক্ত হলে তাতে রক্তজালিকার মতো দেখা যায়। যদি রক্তজালি
ডিমের মোটা অংশের দিকে থাকে তাহলে ভ্রƒণটি পরবর্তীতে বড় হবে এবং সুস্থ বাচ্চার জন্ম হবে। যদি সরু
অংশের দিকে অথবা ডিমের এক পাশে গায়ে থিতিয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে ভ্রƒণটি মারা গেছে এবং তার আর
বৃদ্ধি হবে না। এ ধরনের ডিম বাদ দিতে হবে। অনিষিক্ত ডিমে এ ধরনের কোন রক্তজালিকা থাকবে না। কাজইে
সেটি বাদ দিতে হবে। ১৪-১৮ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার ক্যান্ডেলিং বা পরীক্ষা করলে জীবিত ভ্রæণসম্পন্ন ডিমটি
সম্পূর্ণ কালো দেখাবে।
৫. ডিম নাড়াচাড়া করানো: আধুনিক ডিম ফোটানোর যন্ত্র বা ইনকিউবেটরের সকল মূলনীতি তৈরি হয়েছে কুঁচে
মুরগির ডিমে তা দেওয়া ও বাচ্চা ফোটানোর পদ্ধতি থেকেই। মুরগি ঠোঁট দিয়ে ডিম উল্টে-পাল্টে দেয় যাতে ডিম
সবদিকে সমান তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পায়। এই নীতি অনুসরণ করে আধুনিক ইনকিউবেটর যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে
যা টারনার বা ডিম নাড়ানোর যন্ত্র নামে পরিচিত। মেশিনে সেট করা নির্দেশনা অনুযায়ী ৯০ কোনে ডিম
ঘোরাতে পারে। দিন-রাত মিলে মোট ৬-৮ বার ডিম ঘোরালে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে ডিম ফোটানোর
হারও বেড়ে যায়।
সারসংক্ষেপ
ডিম সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি খাওয়ার জন্য ও অন্যটি বাচ্চা ফোটানোর জন্য। বাচ্চা ফোটানোর ডিম
নিষিক্ত বা উর্বর হতে হবে। উর্বর ডিম ৫৫-৫৮ গ্রাম হলে ভালো। উর্বর ডিমের বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে ডিম নির্বাচন করলে
ডিম থেকে বাচ্চা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আদিকাল থেকেই ডিম ফোটানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে।
সময়ের সাথে সাথে পরিচয় ঘটেছে কৃত্রিম পদ্ধতির। কৃত্রিম পদ্ধতিতে একসাথে অনেক ডিম ফোটানো যায়। বৈদ্যুতিক
ইনকিউরেটরে ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে কিছু বিষয়, যেমন- তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ু চলাচল ও ডিম নাড়াচাড়া ইত্যাদি
বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখতে হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.২
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। ফোটানোর ডিম কক্ষ তাপমাত্রায় গরমকালে সর্বোচ্চ কত দিন সংরক্ষণ করা উচিত?
(ক) ১-২ দিন (খ) ৩-৪ দিন
(গ) ৭-১০ দিন (ঘ) ১২-১৫ দিন
২। ডিম ফোটানোর প্রাকৃতি পদ্ধতি কোনটি?
(ক) মুরগির নিচে ডিম ফোটানো (খ) তুষ পদ্ধতি
(গ) কৈরোসিন ইনকিউরেটর (ঘ) বৈদ্যুতিক ইনকিউরেটর
৩। মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা পেতে কত দিন সময় লাগে?
(ক) ২৫ দিন (খ) ১৯ দিন
(গ) ২১ দিন (ঘ) ২৮ দিন
ব্যবহারিক ঃ উর্বর ডিম নির্বাচন
মূলতত্ত¡
ডিম থেকে ভালো বাচ্চা পাওয়ার জন্য উর্বর ডিম নির্বাচন জরুরী। উর্বর ডিম ছাড়া বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব নয়।
ব্যবহারিক পাঠের এ অংশে একটি বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার পরিদর্শন করে উর্বর ডিম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রয়োজন।
বিকল্প হিসেবে শ্রেণীকক্ষে কিছু ডিম এনে এ ব্যবহারিকটি সম্পন্ন করতে হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১) একটি বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার ২) ডিম ৩) খাতা, কলম ইত্যাদি
কাজের ধারা
১) প্রথমে শ্রেণী শিক্ষরের সাথে কয়েকজন ছাত্র মিলে একটা দল গঠন করে কলেজের নিকটবর্তী কোন বাণিজ্যিক
পোল্ট্রি খামার পরিদর্শনে বের হন।
২) খামারে গিয়ে তত্ত¡াবধায়কের সাহায্যে উর্বর ডিম আলাদা করুন।
৩) উর্বর ডিমের বৈশিষ্ট্য খাতায় নোট করুন।
সাবধানতা
১) খামার তত্ত¡াবধায়কের অনুমতি ছাড়া খামারের কোনো জিনিসপত্রে হাত না দেওয়া বা ব্যবহার না করা। ডিম যাতে
ভেঙ্গে না যায় এজন্য সতর্কতার সাথে ডিম ধরা।
ব্যবহারিকঃ হ্যাচারি পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রণয়ন
মূলতত্ত¡
প্রাকৃতিকভাবে মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটনোর রীতি প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। পারিবারিকভাবে অল্প
সংখ্যক ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। কৃত্রিমভাবে বাণিজ্যিক ডিম ফোটনোর খামার বা হ্যাচারিতে একসঙ্গে অনেক
বাচ্চা উৎপাদন হয়। ব্যবহারিক পাঠের এ অংশে গ্রামীণ পরিবেশে কিভাবে বাচ্চা উৎপাদন করা হয় তা দেখার জন্য একটি
বাড়িতে যেতে হবে। তাছাড়া কৃত্রিমভাকে বাচ্চা উৎপাদন করে এমন একটি বাণিজ্যিক হ্যাচারিও পরিদর্শন করতে হবে।।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১) মুরগি পালন করা হয় এমন একটি বাড়ি ২) একটি বাণিজ্যিক হ্যাচারি ৩) খাতা, কলম ইত্যাদি
কাজের ধারা
১) প্রথমে শ্রেণী শিক্ষকের সাথে কয়েকজন ছাত্র মিলে একটা দল গঠন করে কলেজের আশেপাশে মুরগি পালন করে
এমন একটি বাড়িতে যান।
সেই বাড়িতে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে কুঁচে মুরগি কিভাবে ডিমে তা দেয় তা পর্যবেক্ষণ করুন ও খাতায় নোট করুন।
২) এরপর শ্রেণী শিক্ষকের সাথে কয়েকজন ছাত্র মিলে আরেকটি দল গঠন করে কলেজের নিকটবর্তী কোনো
বাণিজ্যিক হ্যাচারি পরিদর্শনে বের হন।
৩) বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে কিভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয় তা হ্যাচারিম্যানের সহায়তায় দেখে নিনি এবং নোট
করুন।
৪) হ্যাচারির দৈনিক কার্যক্রম রেজিস্টার খাতা দেখে বুঝে নিন এবং নোট করুন।
৫) হ্যাচারির অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত বিষয় কিভাবে পালন করে তা খাতায় নোট করুন।
সাবধানতা
১) হ্যাচারিম্যানের অনুমতি ছাড়া হ্যাচারির কোন জিনিসপত্রে হাত না দেওয়া বা ব্যবহার না করা।
২) হ্যাচারির স্বাস্থ্যসম্মত বিষয় মেনে চলা।
সৃজনশীল প্রশ্ন
আলম সাহেব তাহিরপুর তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন
করতেন। তিনি যুব উণœয়ন কেন্দ্রে হাঁস-মুরগি পালনের উপর প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় যন্ত্রের মাধ্যমে কিভাবে ডিম থেকে
বাচ্চা উৎপাদন হয় তা দেখলেন ও শিখলেন। এরপর ডিম ফোটানোর মেশিণ কিনে বাচ্চা উৎপাদন শুরু করলেন।
(ক) লেয়ার কি?
(খ) হ্যাচিং ডিমের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে উল্লেখ করুন।
(গ) প্রশিক্ষণের সময় ডিম ফোটানো পদ্ধতিটি কী ছিল? তার বর্ণনা করুন।
(ঘ) আলমের পূর্বের ব্যবহৃত পদ্ধতি ও আধুনিক পদ্ধতির তুলনামূরক বিশ্লেষণ করুন।
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.১ ঃ ১। ক ২। ক ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.২ ঃ ১। গ ২। ক ৩। গ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র