মুরগির পরে পোল্ট্রি শিল্পে আরও যেসব পোল্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়, তাদের মধ্যে কোয়েল, হাঁস, রাজহাঁস ও
কবুতর অন্যতম। পোল্ট্রি শিল্পে তুলনামূলকভাবে জাপানি কোয়েল বর্তমানে বিকল্প পোল্ট্রি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এদের বিভিন্ন জাত ও উপজাতগুলোর পালকের রং, ওজন, আকার, আকৃতি, ডিম পাড়ার হার, ডিমের ওজন, বেঁচে থাকার
হার ইত্যাদিতে পার্থক্য থাকলেও ডিম ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় একই। নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশ হাঁস পালনের
জন্য বেশ উপযোগী। আমাদের দেশি হাঁস গড়ে বার্ষিক ৬০-৮০টি ডিম পাড়লেও সঠিকভাবে লালন-পালন করলে উন্নত
জাতের হাঁসপ্রতি বার্ষিক প্রায় ৩০০টি ডিম পাওয়া যায়। এদেশের অনেকেই শখের বশে ও মাংসের জন্য পারিবারিকভাবে
রাজহাঁস পালন করে থাকেন। যদিও এদেশে এখনও বাণিজ্যিকভিত্তিতে রাজহাঁসের খামার গড়ে ওঠেনি তবে
পারিবারিকভাবে পালন করে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। যদিও
বহুকাল ধরেই এদেশে কবুতর পোষা হয়, তবে সম্প্রতি পোল্ট্রি শিল্পে কবুতর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে।
কোন কোন প্রজাতি বা জাতের একজোড়া কবুতর এমনকি ৫-১০ লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়। কাজেই এদেশের বেকার যুবা
ও নারীরা সহজেই কবুতরের খামার গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ও দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে
পারেন। তবে কোয়েল, হাঁস, রাজহাঁস ও কবুতর পালন করে লাভবান হতে হলে মুরগির মতো এদের লালন-পালন পদ্ধতি
সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
জাপানি কোয়েল পোল্ট্রি শিল্পের নতুন সদস্য। বাণিজ্যিক জাপানি কোয়েলের অনেকগুলো জাত ও উপজাত
রয়েছে, যেমন- ফারাও, ব্রিটিশ রেঞ্জ, ইংলিশ হোয়াইট, ম্যানচুরিয়ান গোল্ডেন, টুক্সেডো ও ব্রাউন কোয়েল। জাত
ও উপজাতভেদে এদের গায়ের রং, ওজন, আকার, আকৃতি, ডিম পাড়ার হার, ডিমের ওজন, বেঁচে থাকার হার ইত্যাদিতে
পার্থক্য থাকলে উৎপাদন (ডিম ও মাংস) ক্ষমতা প্রায় একই।
কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো
জাপানি কোয়েল পালনের প্রথম ধাপই হলো ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো। বাচ্চা ফোটানোর লক্ষ্যে ডিম উৎপাদনের জন্য
প্যারেন্ট স্টকের বয়স ১০-৩০ সপ্তাহের মধ্যে হওয়া ভালো। উর্বর ডিম ফোটানোর জন্য স্ত্রী ঃ পুরুষ অনুপাত ১ঃ২ হওয়া
প্রয়োজন। কোয়েলের ডিম অত্যন্ত পাতলা খোসাবিশিষ্ট হওয়ায় সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে। ডিমের ওজন ৯-১১ গ্রাম
হলে ভালো। মুরগির ডিমের মতোই প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পদ্ধতিতে কোয়েলের ডিম ফোটানো যায়। জাপানি কোয়েলের ডিম
গড়ে ১৭ দিনে ফোটে।
বাচ্চা লালন পালন
জাপানি কোয়েলের প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় ৭-৮ গ্রাম। ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত কোয়েলের বাচ্চাগুলোকে লিটারে রেখে মুরগির
বাচ্চার মতো তাপ প্রদান করতে হবে যাকে ব্রæডিং বলে। ঘরটিকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
ব্রæডারের ভিতরের অর্থাৎ চিকগার্ডের মধ্যে প্রতি বাচ্চার জন্য ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ১২৫-১৪০ বর্গ সেমি জায়গা প্রয়োজন।
চিকগার্ডের মধ্যে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৪-৫ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ট্রেতে খাদ্য সরবরাহ করতে
হবে।
কোয়েল পালনে ব্রæডারের নিচে আদর্শ তাপমাত্রাবয়স তাপমাত্রা (সেলসিয়াস)
০-৭ দিন ৩৫০
সে.
৮-১৪ দিন ৩২.২০
সে.
১৫-২১ দিন ২৯.৫০
সে.
২২-২৮ দিন ২৬.৫০
সে.
কোয়েলের বাসস্থান
জাপানি কোয়েল মেঝে থেকে খাঁচায় পালন অধিকতর ভালো। কোয়েলের বাসস্থানটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঐ
ঘরে পর্যপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ৫০টি কোয়েল পালনের জন্য ১২০ সেমি দৈর্ঘ্য, ৬০ সেমি প্রস্থ ও
৫ সেমি উচ্চতার একটি খাঁচাই যথেষ্ট। খাঁচার মেঝেটি তারের জাল দিয়ে তৈরি হতে হবে। খাঁচার মেঝের জালের ফাঁক
হবে ৪ মিমি ৪ মিমি। গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়েলকে ১২ মাস খাঁচায় এবং মেঝেতে পালনে যথাক্রমে ১৩৫.৩ গ্রাম
এবং ১৪০.৩ গ্রাম দৈহিক ওজন হয় এবং মাসিক ডিম উৎপাদন বাড়ে যথাক্রমে ৬০% এবং ৫৮%।
খাদ্য, পানি ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা
জাপানি কোয়েলের স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য সুষম খাদ্য প্রয়োজন। যেমন- ০-৩ সপ্তাহ
বয়সের পাখির জন্য খাদ্যে আমিষের প্রয়োজন শতকরা ২৭%, ৪-৫ সপ্তাহে ২৪% এবং ৬ সপ্তাহ থেকে বাকি সময়ের জন্য
২২% প্রয়োজন। সাধারণত একটি পূর্ণ বয়ষ্ক কোয়েল প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। প্রতিটি বাচ্চার জন্য
১ মাস পর্যন্ত ১ মিমি পানির জায়গা দিতে হবে। খোলা পানি দেয়া যাবে না। এতে বাচ্চা সহজেই পানিতে পড়ে যাবে এবং
শরীর ঠান্ডা হয়ে মারাও যেতে পারে।
বিভিন্ন বয়সের জাপানি কোয়েলের খাদ্যতালিকা বা রেশনক্রমিক
নং
খাদ্য উপাদান (%) প্রারম্ভিক (স্টারটার) (০-৩ সপ্তাহ) বৃদ্ধির (গ্রোয়ার) (৪-৫
সপ্তাহ)
লেয়ার রেশন
(৬ সপ্তাহ)
সূত্র-১ সূত্র-২ সূত্র-১ সূত্র-২
১. গম ভাঙ্গা ৫০.০০ ৫০.০০ ৫৩.০০ ৫০.০০ ৫০.০০
২. চউলের মিহি কুঁড়া ০৭.০০ ০৬.০০ ০৯.০০ ০৮.০০ ০৯.০০
৩. তিলের খৈল ১৫.০০ ২৩.০০ ১৫.০০ ২৩.০০ ২৩.০০
৪. শুটকি মাছের গুঁড়া ২০.০০ ১৮.০০ ১৮.০০ ১৫.০০ ১২.০০
৫. ঝিনুকের গুঁড়া ০২.০০ ০২.৪০ ০৩.৫০ ০৩.৪০ ০৫.০০
৬. মাছের তেল ০১.০০ - ০১.০০ - -
৭. লবণ ০০.২৫ ০০.৩০ ০০.২৫ ০০.৩০ ০০.৪০
৮. ভিটামিন-মিনারেল
প্রিমিক্স
০০.২৫ ০০.৩০ ০০.২৫ ০০.৩০ ০০.৩০
কোয়েলের আদর্শ রেশনখাদ্য উপাদান ০-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত (%) ৪র্থ সপ্তাহ-শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত (%)
গম/ভুট্টা ভাঙ্গা ৪৮.০০ ৫০.০০
চালের কুঁড়া ৮.০০ ৮.০০
তিলের খৈল ২২.০০ ২০.০০
প্রোটিন কনসেনট্রেট ৯.০০ ৮.০০
সয়াবিন মিল ১০.০০ ১০.০০
ঝিনুকের গুঁড়া ২.৫০ ৩.৫০
লবণ ০.৫০ ০.৫০
মোট ১০০.০০ ১০০.০০
কোয়েলের খাদ্য গ্রহনের আদর্শ গাইড লাইনবয়স খাদ্যের পরিমাণ/কোয়েল/দিন
১ সপ্তাহ ৩-৪ গ্রাম
২য় সপ্তাহ ৭-৯ গ্রাম
৩য় সপ্তাহ ১১-১৪ গ্রাম
৪র্থ সপ্তাহ ১৫-১৮ গ্রাম
৫ম সপ্তাহ ১৮-২০ গ্রাম
৬ষ্ঠ সপ্তাহ হতে শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত ২০-২৪ গ্রাম
কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ইউনিট ১০
কোয়েল, হাঁস ও কবুতর পালন পদ্ধতি পৃষ্ঠা-১৪৭
কোয়েল পালনে আলোর ব্যবস্থাপনাবয়স প্রয়োজনীয় আলোক ঘন্টা
৪র্থ সপ্তাহ ১২ ঘন্টা
৫ম সপ্তাহ ১৩ ঘন্টা
৬ষ্ঠ সপ্তাহ ১৪ ঘন্টা
৬ষ্ঠ সপ্তাহ হতে শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত ১৬ ঘন্টা
সারসংক্ষেপ
কোয়েল একটি সৌখিন পাখি বর্তমানে এর মাংস এবং ডিম খুব জনপ্রিয়। কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো, বাচ্চা লালন
পালন, খাদ্য এবং পানি ব্যবস্থাপনা রেশন তৈরি করা এবং আলোক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ন কিছু ধাপ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.১
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। কোয়েলের প্রতিটি বাচ্চার ওজন কত?
(ক) ৮-১০ গ্রাম (খ) ৭-৮ গ্রাম
(গ) ১২-১৩ গ্রাম (ঘ) ১৪-১৫ গ্রাম
২। কোয়েল পাখির কতদিনে ডিম ফোটে বাচ্চা বের হয়?
(ক) ১৫-১৬ দিন (খ) ১৭-১৮ দিন
(গ) ২৩-২৪ দিন (ঘ) ২৯-৩০ দিন
৩। কোয়েল পাখির বাচ্চার প্রথম সপ্তাহে কতটুকু খাদ্যের প্রয়োজন হয়?
(ক) ৩-৪ গ্রাম (খ) ৫-৬ গ্রাম
(গ) ১০-১২ গ্রাম (ঘ) ১২-১৫ গ্রাম
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র