কবুতরের বাসস্থান সম্পর্কে জান কবুতরের খাদ্য এবং রোগ প্রতিরোধ

কবুতর বা পায়রা শান্তি প্রতীক। সেই আদিকাল থেকেই মানুষ কবুতর পালন করে আসছে। প্রাচীনকালে মানুষ
দেব-দেবীদের খুশি করার জন্য কবুতর উৎসর্গ করতো। তাছাড়া সংবাদ প্রেরণ, চিত্ত-বিনোদন এবং সুস্বাদু
মাংসের জন্য কবুতরের বহুল ব্যবহার ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশে মাংস, চিত্ত-বিনোদন, সৌন্দর্য, রেসিং এবং জাতীয়
ও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান উদ্বোভনীতে শান্তির প্রতীক হিসাবে আকাশে কবুতর ওড়ানো হয়। বর্তমানে এদেশে
বাণিজ্যিভিকিত্ততে কবুতর পালন করা হচ্ছে। কোন কোন প্রজাতি বা জাতের একজোড়া কবুতর এমনকি ৫-১০ লাখ
টাকায়ও বিক্রি হয়। কাজেই পোল্ট্্ির শিল্পে বর্তমানে কবুতর একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। বেকার যুবা ও নারীরা
সহজেই কবুতরের খামার গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়লণ করতে পারে। এখানে
কবুতর পালন ও ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
কবুতরের বাসস্থান
গ্রামে সাধারণত টিন বা খড়ের চালা ঘরের কার্নিশে মাটির হাড়ি বা টিন বেঁধে কবুতর পালন করা হয়। তাছাড়া কাঠের তৈরি
ছোট ছোট খোপ তৈরি করেও কবুতুর পালন করা হয়। কবুতরের খামারের জন্য উঁচু ও শুষ্ক সমতল ভূমি থাকা প্রয়োজন।
কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, বেজি ইত্যাদি যেন কবুতরের ঘরের নাগাল না পায় সেদিকে খেয়াল রেখে ঘর উঁচু করতে হবে।
এজন্য বাঁশের বা কাঠের খুঁটি পুঁতে তার উপর ঘর নির্মাণ করা যায়। প্রতিজোড়া কবুতরের জন্য একটি ঘর থাকা প্রয়োজন।
একজোড়া কবুতর যেন স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে ফিরতে পারে তা লক্ষ্য রেখেই ঘর নির্মাণ করতে হবে। ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস
চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘরে যেন বৃষ্টির পানি না ঢুকতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিজোড়া কবুতরের
জন্য ঘরে ৩০ সেমি লম্বা, ৩০ সেমি প্রশস্ত ও ৩০ সেমি উচ্চতাবিশিষ্ট খোপ বানাতে হবে। কবুতরের ঘর পাশাপাশি ও
বহুতল বিশিষ্ট্য হতে পারে। প্রতি তলায় খোপের সামনে ১২ সেমি বারান্দা এবং প্রতি খোপ ১০ সেমি ১০ সেমি মাপের
একটি করে দরজা রাখতে হবে। খাবার ও পানির পাত্র ঘরের কাছেই রাখতে হবে এবং প্রতিমাসে দু-একবার ঘরের ভিতরের বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে হবে।
কবুতরের বাচ্চা ফোটানা ও লালন পালন
কবুতর সাধারণত ডিম থেকে ফোঁটার পর ৫-৬ মাস বয়সে কবুতর বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। এরা ৬ মাস বয়স থেকে ডিম দিতে শুরু
করে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই পালাক্রমে ডিমে তা দেয়। কবুতরের নতুন জোড়া তৈরি করতে হলে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরকে
এক ঘরে ৭-১৪ দিন আবদ্ধ করে খাবার ও পনি দিতে হবে। কবুতরের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৮ দিন সময় লাগে।
জন্মের প্রথম দিন বাচ্চার গায়ে উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের লম্বা চুলের মতো কোমল পালক দেখা যায় যা পরবর্তীতে ঝরে পরে।
প্রথম ৪-৫ দিন এদের চোখের পাতা বন্ধ থাকে। এদের নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায়। প্রায় ৭ দিন বয়সে এদেও
গায়ে পালক গঁজাতে শুরু করে। প্রায় ৮ দিন বয়সে পালকগুলো সজারুর কাটার মতো দেখায়। ১১ দিনে ডানার অর্ধেক
পালকে ঢেকে যায়। ১৯ দিনে ডানা ও লেজ পরিপূর্ণ হয়, ঠোঁট স্বাভাবিক হয় ও বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়। কবুতর সাধারণত ১২-১৫ বছর বাঁচে।
কবুতরের খাদ্য
কবুতর সাধারণত বিভিন্ন প্রকার শষ্যদানা, যেমন- গম, ভুট্টা, ধান, চাল, কাউন, জোয়ার, কালাই, খেশারি, সরিষা ইত্যাদি
খেয়ে থাকে। স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি এবং উৎপাদনে জন্য এদেরকে সুষম খাদ্য দেওয়া প্রয়োজন। কবুতরের খাদ্যে ১৫-
১৬% আমিষ থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি কবুতর দৈহিক ৩৫-৬০ গ্রাম দানাদান খাদ্য খেয়ে থাকে। কবুতরের বাচ্চার দ্রæত
বৃদ্ধি এবং বয়স্ক কবতরের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য ঝিনুকের চূর্ণ, চূনা পাথর কাঠ কয়লা চূর্ন, হাড়ের গুড়া ও লবণ দিয়ে খণিজ
মিশ্রণ তৈরি কওে সরবরাহ করতে হয়।
কবুতরের খাদ্য তালিকাশস্যদানা শতকরা হার
মডেল-১ মডেল-২ মডেল-৩ মডেল-৪
ভুট্টা ভাঙ্গা ৩৫ ৩০ ৩০ ২২
গর ভাঙ্গা ২০ ২০ ১০ ২৮
সরিষা দানা ১৫ ১৫ ১০ ১০
ছোলা ভাঙ্গা ২০ ২০ ৩০ ১৫
সয়াবিন মিল ৫ ১০ ১৫ ১৭
চালের কুঁড়া ৪.৫ ৪.৫ ৪.৫ ৭.৫
লবণ ০.৫ ০.৫ ০.৫ ০.৫
মোট ১০০ ১০০ ১০০ ১০০
কবুতরের বাচ্চার খাদ্য ও পানি
পাখির মধ্যে একমাত্র কবুতরই বাচ্চাকে প্রথম ৫-৭ দিন দুধ খাওয়ায়। এই জন্য প্রথম ৫-৭ দিন পর্যন্ত বাচ্চাদের কোন
বাড়তি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরের খাদ্যথলিতে হরমোনের প্রভাবে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি এক
ধরনের দুধজাতীয় বস্তু খেয়ে এ সময় এরা বাড়তে থাকে। এ দুধ পিজিয়ন মিল্ক বা কবুতরের দুধ নামে পরিচিত। স্ত্রী ও
পুরুষ উভয় কবুতরই ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাকে এই দুধ খাওয়ায়। ৭ দিন পর হতে একই নিয়মে অন্য খাবার খাওয়াতে থাকে।
১০ দিন বয়সের পর বাচ্চা নিজে খাদ্য খেতে আরাম্ভ করে। তবে বাচ্চা বড় হওয়া ও স্বাধীনভাবে ওড়াউড়ি করা ও নিজের
খাদ্য নিজে সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত বাবা-মা ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাকে খাদ্য খাওয়ায়। কবুতরের জন্য ঘরের কাছাকাছি মাটির গামলা বা পাত্রে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা রাখতে হয়। সারদিন এরা পাত্র থেকে পানি খাবে এবং গোসল করবে।
প্রতিদিন পানির পাত্র পরিষ্কার করে টিউবয়েলের পানি দিতে হবে।
কবুতরের রোগ ও তার প্রতিকার
কবুতরের রোগ-বালাই তুলনামূলকভাবে কম। তবে মাঝে মাঝে বসন্ত রোগ, কলেরা, রানীক্ষেত রোগ, অরনিথোসিস, রক্ত
আমাশায় ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে এবং প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
সারসংক্ষেপ
কবুতর একটি সৌখিন এবং জনপ্রিয় পোল্ট্রি প্রজাতি। এটি পালন করে লাভবান হতে হলে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা, যেমনবাসস্থান, বাচ্চা ফোটানো ও লালন-পালন, পানি এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৩
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। কতমাস বয়সে কবুতর প্রাপ্ত বয়স্ক হয়?
(ক) ৩-৪ মাস (খ) ৪-৫ মাস
(গ) ৫-৬ মাস (ঘ) ৭-৮ মাস
২। কবুতর গড়ে কত দিন বাঁচে?
(ক) ১০-১১ বছর (খ) ১২-১৩ বছর
(গ) ১৫-২০ বছর (ঘ) ১২-১৫ বছর
ব্যবহারিক : কোয়েলের দানাদার খাদ্য তৈরিকরণ
উদ্দেশ্য
এ পাঠ শেষে আপনি-
 নিজ হাতে জাপানি কোয়েলের আদর্শ রেশন বা খাদ্যতালিকা তৈরি করতে পারবেন।
কোয়েলের আদর্শ রেশনখাদ্য উপাদান ০-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত (%) ৪র্থ সপ্তাহ- শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত (%)
গম/ভুট্টা ভাঙ্গা ৪৮.০০ ৫০.০০
চালের কুঁড়া ৮.০০ ৮.০০
তিলের খৈল ২২.০০ ২০.০০
প্রোটিন কনসেনট্রেট ৯.০০ ৮.০০
সয়াবিন মিল ১০.০০ ১০.০০
ঝিনুকের গুঁড়া ২.৫০ ৩.৫০
লবণ ০.৫০ ০.৫০
মোট ১০০.০০ ১০০.০০
বিভিন্ন বয়সের কোলের পাখির খাদ্য তালিকাক্রমিক
নং
খাদ্য উপাদান
(শতকরা,%)
প্রারম্ভিক (স্টারটার) (০-৩ সপ্তাহ) বৃদ্ধি (গ্রোয়ার) (৪-৫ সপ্তাহ) লেয়ার রেশন
ফরমুলা (৬ সপ্তাহ) -১ ফরমুলা-২ ফরমুলা-১ ফরমুলা-২
১. গম ভাঙ্গা ৫০.০০ ৫০.০০ ৫৩.০০ ৫০.০০ ৫০.০০
২. চউলের মিহি কুঁড়া ০৭.০০ ০৬.০০ ০৯.০০ ০৮.০০ ০৯.০০
৩. তিলের খৈল ১৫.০০ ২৩.০০ ১৫.০০ ২৩.০০ ২৩.০০
৪. শুটকি মাছের গুড়া ২০.০০ ১৮.০০ ১৮.০০ ১৫.০০ ১২.০০
৫. ঝিনুকের গুড়া ০২.০০ ০২.৪০ ০৩.৫০ ০৩.৪০ ০৫.০০
৬. মাছের তেল ০১.০০ - ০১.০০ - -
৭. লবণ ০০.২৫ ০০.৩০ ০০.২৫ ০০.৩০ ০০.৪০
৮. ভিটামিন-মিনারেল
প্রিমিক্স
০০.২৫ ০০.৩০ ০০.২৫ ০০.৩০ ০০.৩০
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। রাহেলা বানু যুব উন্নয়নের একটি ট্রেনিংয়ে যান। সেখানে তাদের কিভাবে কোয়েল পালন করে লাভবান হওয়া যায় Ñ
সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়। রাহেলার মনে হয়, সত্যিতো সে কোয়েল পালন করে তার সংসারের উন্নতি
ঘটাতে পারে।
(ক) কোয়েলের বাচ্চা ফুটতে কতদিন লাগে?
(খ) “বিভিন্ন বয়সের কোয়েলের খাদ্য বিভিন্ন” Ñ ব্যাখ্যা করুন।
(গ) রাহেলা কীভাবে কোয়েল পালন করবে?
(ঘ) কি কি কারনে রাহেলা বানু কোয়েল পালন করতে চাইলেন বিশ্লেষণ করুন।
২। গ্রাম বাংলার সব জায়গায় হাঁস পালন করা হয়। কিন্তু মিনা গত বছর হাওরে বেড়াতে গিয়ে দেখে বিশাল পরিসরে হাঁস
পালন করা হচ্ছে। তাদের বাসস্থান ও খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বৈজ্ঞানিক উপায় সমূহ জানতে পারে। বাড়ি ফিরে সে তার
মাকে হাঁস পালনের উপকারিতা জানিয়ে পরামর্শ দিল।
(ক) হাঁসের খাদ্য কি কি?
(খ) গ্রাম বাংলায় কীভাবে হাঁস পালন করা হয়?
(গ) উন্নত পদ্ধতিতে হাঁস পালন লাভজনক Ñ যুক্তি দেখাও।
(ঘ) পুরুষ ও মাদী হাঁসকে পৃথক করার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনার মতামত ব্যক্ত করুন।
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.১ ঃ ১। খ ২। খ ৩। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.২ ঃ ১। খ ২। ঘ ৩। ক ৪। গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৩ ঃ ১। গ ২। ঘ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]